মানিকগঞ্জের সিংগাইরে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া নাতনিকে ইভটিজিংয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে থানায় অভিযোগ জানানোই কাল হয়ে দাঁড়াল আজগর আলীর জন্য। অভিযোগ দায়েরের পরদিনই স্থানীয় চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও ইভটিজার আল আমিনের (৫০) নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসীর হামলায় নির্মমভাবে খুন হন তিনি।
নিহত আজগর আলী (৫০) জয়মন্টপ ইউনিয়নের রায়দক্ষিণ গ্রামের বাসিন্দা ও মৃত আব্দুল রশিদ খানের ছেলে। পেশায় মুদি দোকানদার ছিলেন আজগর। আর অভিযুক্ত আল আমিন একই এলাকার কালু পরামানিকের ছেলে।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে রায়দক্ষিণ পূর্ব পাড়ায় সিনহা মেডিকেলের পাশের কবরস্থানের সামনে, নিজ দোকানের সামনে এ নৃশংস হামলার ঘটনা ঘটে।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, আজগরের নাতনি—যিনি মেয়ের ঘরের সন্তান এবং স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে—স্কুলে যাওয়া-আসার পথে দীর্ঘদিন ধরে ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছিলেন। অভিযোগ ওঠে, অভিযুক্ত ব্যক্তি এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারি আল আমিন। বিষয়টি নিয়ে আজগর আলী থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের পর আল আমিনের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান শুরু হলে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি ১৫-২০ জনের একটি দল নিয়ে আজগরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। রামদা, চাপাতি ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আজগরের হাত, পা, মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা নিশ্চিত করে পালিয়ে যায় তারা।
আহত অবস্থায় স্থানীয়রা আজগরকে উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে রাতেই চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. রাকিব আল শুভ বলেন, ‘রোগীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তার শরীরের বিভিন্ন অংশে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।’
নিহতের ছেলে লিয়াকত জানান, তার বাবার মরদেহ বর্তমানে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। তিনি আরও জানান, হামলায় জড়িতদের পরিচয় জানা গেলেও পুলিশ তদন্তের স্বার্থে নাম প্রকাশে নিষেধ করেছে।
ঘটনার বিষয়ে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুয়েল মিঞা জানান, আজগর আলী হত্যার ঘটনায় পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এরপর আইনি প্রক্রিয়া শেষে মামলাটি সিংগাইর থানায় হস্তান্তর করা হবে।
এদিকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সিংগাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জে ও এম তৌফিক আজম জানান, আল আমিনকে প্রধান আসামি করে যৌন নিপীড়ন ও হত্যার অভিযোগে থানায় দুটি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।