মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

পাক বাহিনীর তাণ্ডব মনে পড়লে এখনো ভয় পান ভানু হাজরা

আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:১১ পিএম

১৯৭১ সালের ১ মে। ৫০ জন চা-শ্রমিককে একসঙ্গে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। চা-শ্রমিকদের সেই স্মৃতিরক্ষার্থে শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া বধ্যভূমিতে রয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। বধ্যভূমির সামনে একটি ফলকে লেখা র১৯৭১ সালে এই স্থানে মারা যাওয়া চা–শ্রমিকদের নামগুলো।

৭৩ বছর বয়সী ভানু হাজরা ভাড়াউড়া চা বাগানের বাসিন্দা। ১৯৭১ সালের ১ মে পাকিস্তানি বাহিনীর তাণ্ডব আজও ভুলতে পারেননি তিনি। সে সময় তিনি ১৯ বছরের যুবক ছিলেন।

তিনি বলেন, ‘ঐদিন সকাল ১০-১১টার দিকে আউট সিগন্যালের দিক থেকে গ্রাম পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে পাঁচ-ছয়জন পাঞ্জাবি বাগানে আসে। চা–বাগানের পুরুষদের সবাইকে একটি জায়গায় যেতে বলে, পাঞ্জাবিরা নাকি কথা বলতে চায়। জোর করে সবাইকে চা–বাগানের পশ্চিম দিকের একটি জায়গায় জড়ো করা হয়। শ্রমিকেরা কিছু বুঝে উঠার আগেই হঠাৎ গুলি করা শুরু করে তারা। আমরা বাগান থেকে প্রচণ্ড গুলির শব্দ শুনছিলাম। একটু পর গুলির শব্দ থামলে আমরা সেখানে যাই। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি, রক্তে লাল হয়ে আছে চারপাশ। একজনের ওপর একজন লাশ হয়ে পড়ে আছে। আমার বাবাও মাংগুয়া হাজরাও ছিলেন সেই কাতারে। আমি আর মা মিলে বাবাকে লাশের ভেতর থেকে টেনে বের করি। তিনি তখনো বেঁচে ছিলেন। বাড়িতে নিয়ে আসার পর তিনি মারা যান। সেদিন আমার বাবাসহ অন্তত ৫০ জন চা–শ্রমিক মারা যান এই বধ্যভূমিতে। সেই সময় আমরা খুব অসহায় হয়ে পড়েছিলাম। এখনো সেই স্মৃতি মনে হলে ভয় লাগে।’

ভাড়াউড়া বধ্যভূমিতে শহীদ ফাগু হাজরার ছেলে বিজয় হাজরা বলেন, ‘সেদিনের ঘটনার পর এখানে সব লাশ একত্র করে মাটিচাপা দেওয়া হয়। সেদিনই আমরা চা–বাগান ছেড়ে পালাই। মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের লোকজন এসে এখানে মাটি তুলে মাথার খুলি গণনা করে ও বধ্যভূমি চিহ্নিত করে গেছে। এখানে যারা মারা গিয়েছিলেন, তাদের নাম উল্লেখ করে আমি নিজ উদ্যোগে একটি নামফলক করেছি।

শ্রীমঙ্গলের ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক, কবি ও লেখক দীপেন্দ্র ভট্টাচার্যের লেখা ‘ফিরে দেখা’ বইয়ে এই বধ্যভূমিতে চা–শ্রমিকদের নির্মমভাবে হত্যার ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। সেই বই থেকে জানা যায়, পাকিস্তানি বাহিনী শ্রীমঙ্গল দখল করে ১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিল। ওই দিন পাকিস্তান বিমানবাহিনী শ্রীমঙ্গলে শেলিং করে। ৩০ এপ্রিল বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টার দিকে পাকিস্তান বিমানবাহিনী শ্রীমঙ্গলে প্রবেশ করে। ২৭ এপ্রিলের শেলিংয়ে শ্রীমঙ্গলের দুজন নিহত ও একজন আহত হন। নিহত দুজনের একজন গৌরাঙ্গ মল্লিক ও অপরজন বাসাবাড়িতে কাজ করা জনৈক এক নারী। ৩০ এপ্রিল শ্রীমঙ্গলে আস্তানা করার পর দিন ১লা মে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের তাণ্ডবলীলা শুরু করে। শহরের পাশের ভাড়াউড়া চা–বাগানে বহু চা–শ্রমিককে একসঙ্গে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে।

 

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত