টোকিওতে আগামী বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পযয়োর নিয়মিত বৈঠক—ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি)। বৈঠকে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আসন্ন জাপান সফর।
বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্বাঞ্চল বিষয়ক সচিব ড. মো. নজরুল ইসলাম। অপরদিকে জাপানের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকবেন দেশটির ভাইস মিনিস্টার ফর ফরেন অ্যাফেয়ার্স।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, এফওসি বৈঠকের অন্যতম প্রধান আলোচ্য বিষয় হবে ড. ইউনূসের টোকিও সফর এবং তার সঙ্গে জাপানি নেতৃত্বের সম্ভাব্য দ্বিপক্ষীয় বৈঠক।
জানা গেছে, মে মাসের শেষ সপ্তাহে জাপান সফরে যাচ্ছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সফরের অংশ হিসেবে তিনি ২৯-৩০ মে টোকিওতে অনুষ্ঠিতব্য নিক্কেই ফোরাম সম্মেলন–এ অংশগ্রহণ করবেন। এ ছাড়া, সফরের সময় ড. ইউনূসের জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে একটি উচ্চপর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেইসঙ্গে সম্মেলনের ফাঁকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও নীতিনির্ধারকদের সঙ্গেও তার কয়েকটি বৈঠক নির্ধারিত রয়েছে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।
বাণিজ্য ও বিনিয়োগ হবে মূল আলোচ্য বিষয়
ড. ইউনূসের সফরের পাশাপাশি এফওসি বৈঠকে বাংলাদেশ-জাপান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হবে। এর মধ্যে রয়েছে: বাণিজ্য সম্প্রসারন, জাপানি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা, উন্নয়ন প্রকল্পে জাইকা ও অন্যান্য সংস্থার ভূমিকাবৃদ্ধি।
ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্প, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর, এবং ইপিজেড উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে জাপানের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা জোরদার হওয়ার কথা রয়েছে।
এফওসি বৈঠককে সামনে সোমবার ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনইচি পররাষ্ট্র সচিব এম জসীম উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে রাষ্ট্রদূত সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা আশা করছি, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক আরও গভীর হবে। জাপান বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও উন্নয়ন সহযোগী, এই সম্পর্ককে আমরা আরও জোরদার করতে চাই।”
বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে ৫০ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্ক চলমান। এই সময়ে জাপান বাংলাদেশের অন্যতম দাতা দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। প্রতিরক্ষা, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ও প্রযুক্তি খাতে জাপানের বিনিয়োগ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ড. ইউনূসের সফরকে কেন্দ্র করে নতুন করে এই সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলোতে গতি সঞ্চারের সম্ভাবনা দেখছে কূটনৈতিক মহল।
এদিকে এফওসি বৈঠকের নেতৃত্ব দেওয়া নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বেশ কিছু বৈঠক হয় বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়। বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজ গতকাল সিদ্ধান্ত হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম নেতৃত্ব দেবেন।
জাপানের সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক হওয়ার বিষয়ে গত মাসে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। হঠাৎ করে নির্ধারিত এফওসি স্থগিত করার জন্য নোট ভার্বালের (কূটনৈতিকপত্র) মাধ্যমে জাপানের কর্তৃপক্ষকে জানানোর নির্দেশ দেন পররাষ্ট্র সচিব। নির্দেশ মোতাবেক সোমবার এ বিষয়ে নোট ভার্বালের মাধ্যমে জাপানের কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। প্রস্তুতিমূলক বৈঠক স্থগিতের বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার অফিস অবহিত হলে সেখান থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়, পররাষ্ট্র সচিবের অনুপস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষ সহকারী লুৎফে সিদ্দিকী ওই বৈঠকে নেতৃত্ব দেবেন। শেষে সিদ্ধান্ত হয় যে বৈঠকে নেতৃত্ব দেবেন সচিব (দ্বিপাক্ষিক) নজরুল ইসলাম।