চট্টগ্রামের পুরাতন সার্কিট হাউজের মাঠে গ্রিন পার্ক করতে চান চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে মাঠের সামনে সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি এ আগ্রহের কথা জানান।
ঐতিহাসিক চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের মাঠকে জনগণের মুক্তাঙ্গন ঘোষণার দাবিতে’ সমাবেশ ও মানববন্ধন আয়োজন করে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম। এর সঙ্গে সংহতি জানায় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), চট্টগ্রাম।
সমাবেশে অংশ নিয়ে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, আমরা একটি পরিকল্পিত চট্টগ্রাম নগরী চাই। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের যে মাস্টারপ্ল্যান আছে সেখানেও এটা একটা সবুজ মাঠ আছে। সব আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যারা ‘ইটের পরে ইট মাঝে মানুষ কীট’- এ ধরণের চিন্তাভাবনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, আমাদের সবাইকে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা এর আগেও দেখেছি, সিআরবিতে একটা হাসপাতাল করার চিন্তাভাবনা করা হয়েছে। আমরা এখানে যারা আছি সবাই সেদিন প্রতিবাদ করেছিলাম। আমরা চাই রেলওয়ে হাসপাতাল (সিআরবিতে) একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল হোক, যেটা এখান থেকে মাত্র এক মিনিটের রাস্তা। সেখানে সর্বস্তরের চট্টগ্রামবাসী চিকিৎসা নিতে পারবে।
সার্কিট হাউজের মাঠটির জন্য ইতোমধ্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং উপদেষ্টাকে চিঠি লিখেছেন জানিয়ে শাহাদাত হোসেন বলেন, মাঠটি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে দিয়ে দিন, আমরা একটা গ্রিন পার্ক করব এখানে। মানুষ সেখানে আসবে হাঁটবে, ঘুরবে। এ ধরনের চিন্তাভাবনা নিয়ে আমি তাদেরকে চিঠি লিখেছিলাম কিন্তু অদ্যাবধি কোনো সাড়া দেননি। কিন্তু এখন শুনছি এখানে হাসপাতাল হবে। আমি তাদের অনুরোধ করছি, আমার (সিটি করপোরেশনের) কালুরঘাটে ৯ একর জায়গা আছে। ওই ৯ একর জায়গা নিয়ে ওখানে হাসপাতাল করুন, আমাকে এই জায়গাটা দিয়ে দেন, সবুজ পার্ক করব এখানে। আমি আপনাদের প্রস্তাব দিচ্ছি। এর থেকে ভালো প্রস্তাব হতে পারে না। আপনারা হাসপাতাল করলে সেখানকার অবহেলিত মানুষ সেবা পাবে।
তিনি বলেন, এখানে অনেক হাসপাতাল, কাছেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, আশেপাশে এত প্রাইভেট হাসপাতাল, এখানে আর হাসপাতাল প্রয়োজন নাই।
চট্টগ্রাম স্টেডিয়াম নিয়েও ষড়যন্ত্র হয়েছে। চট্টগ্রামের মানুষ প্রতিবাদ করেছে। এখন মাঠ সিজেকেএসের থাকবে। চট্টগ্রামের সমস্ত খেলোয়াড় এখানেই খেলবে। এ শহরকে আমাদের বাঁচাতে হবে। এই শহরকে যদি না বাঁচাই তাহলে পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না।
সমাবেশে কবি সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্বের একটি ব্যতিক্রম নগরী। এই নগরীকে রক্ষা করতে না পারলে উত্তর প্রজন্ম আমাদের দায়ী করবে। একে বলা হয় বাণিজ্যিক রাজধানী, কিন্তু এখানে একটিও পার্ক নেই, মাঠ নেই। শহরে ৫-৬ টা মাঠ ছিল। অথচ এখন শিশু কিশোররা খেলার মাঠ পায় না। এই মাঠটি আমরা সবাই মিলে রক্ষা করব। এর পিছনে যে পুরাতন সার্কিট হাউজ, সেটি একটি ব্রিটিশ বার্মিজ স্থাপনা। এখানে এরকম আর একটি স্থাপনাও নেই। সেটি এখন জাদুঘর, আর সামনের মাঠটি এর ল্যান্ডস্কেপ হিসেবে আছে। এখানে কোন স্থাপনা হতেই পারে না।
মানববন্ধনে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সভাপতি বর্ষীয়ান শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দর খান বলেন, এই মাঠটি এতদিন যেমন উন্মুক্ত ছিল তেমন সবার জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে।
অন্যদের মধ্যে স্থপতি জেরিনা হোসেন, অধ্যাপক ড. শফিক হায়দার, বিজয় মজুমদার ও অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া সমাবেশে বক্তব্য দেন। এছাড়া প্রকৌশলী এবিএম বাসেত, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী, স্থপতি শাহীনুল ইসলাম খান কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন।