চট্টগ্রামে গুলিবিদ্ধ মো. আরিফ (১৫) নামে এক ছাত্রদলকর্মী মারা গেছেন। বুধবার (১১ জুন) দুপুরে নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এর আগে রবিবার (৮ জুন) রাত সাড়ে ১০টার দিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের সন্দ্বীপ কলোনি এলাকায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয় সন্দ্বীপ কলোনির বাসিন্দা ফয়েজ উদ্দিনের ছেলে আরিফ। তিনি সন্দ্বীপ কলোনি ইউনিট ছাত্রদলের একজন কর্মী ছিল।
নিহত কিশোরের পরিবারের অভিযোগ, সন্দ্বীপ কলোনির দাগি ‘সন্ত্রাসী’ মো. সুমন ও তার ভাই ভুট্টু’র অনুসারীরা আরিফকে গুলি করে হত্যা করেছে। পুলিশ জানায়, সন্দ্বীপ কলোনিতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই সহোদর ‘ভুট্টো-সুমন’ ও ‘সাখাওয়াত’ নামে দুটি পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। সুমন মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ড শাখার সভাপতি এবং সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। সাখাওয়াত স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা হিসেবে পরিচিত।
গত রবিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় সশস্ত্র লোকজন নিয়ে কলোনিতে আসেন সুমন ও ভুট্টু। বিষয়টি জানতে পেরে তাদের ধাওয়া দেন স্থানীয় লোকজন। ওই সময় ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে তারা পালিয়ে যান। এর মধ্যে একটি গুলি এসে লাগে আরিফের পেটে। পরে আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার পর কলোনিতে সুমনের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেন বিক্ষুব্ধ লোকজন। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় পুলিশ ঘটনায় ব্যবহৃত একটি অটোরিকশা উদ্ধার করে। নিহত আরিফের বড় ভাই আলাউদ্দিন তার ভাইকে গুলি করে মারার পেছনে সুমনকে দায়ী করে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাটহাজারী অঞ্চল) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, গুলিবিদ্ধ আরিফ চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা গেছে। এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. ইলিয়াস নিহত আরিফকে ছাত্রদল কর্মী উল্লেখ করে হত্যার বিচার দাবি করেন। সন্দ্বীপ কলোনি এলাকায় সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আস্তানা গুঁড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান প্রশাসনের কাছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, সুমন দুর্ধর্ষ একজন সন্ত্রাসী। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পর সুমন গ্রেপ্তার হলেও আবার জামিনে বেরিয়ে আসেন। এরপর সন্দ্বীপ কলোনির পাহাড়ি এলাকায় বিভিন্ন সন্ত্রাসীকে নিরাপদ আশ্রয় দেন সুমন। যাতে পাহাড়ি খাসজায়গা তার দখলে থাকে।
এক সময় সাগরে বিলীন হয়ে গেলে সুমন ও ভুট্টুর পূর্ব-পুরুষরা সন্দ্বীপ থেকে ১ নং দক্ষিণ পাহাড়তলীর অধীন জঙ্গল দক্ষিণ পাহাড়তলী মৌজায় পাহাড় ঘেরা জনপদে সরকারি খাস জায়গায় বসতি গড়ে তুলেন। সুমনদের মতো সাগরে বাপ-দাদার ভিটেবাড়ি হারানো শত শত পরিবার জঙ্গল দক্ষিণ পাহাড়তলীতে বসতি গড়ে তোলো। পরে ওই এলাকাটি সন্দ্বীপ কলোনি হিসেবে পরিচিতি পায়।
প্রায় দুই দশক আগে অভিযুক্ত সুমন ও ভুট্টু সন্দ্বীপ কলোনির পাহাড়ে সরকারি খাস জায়গা দখল করে বাণিজ্য শুরু করে। গড়ে তোলো নিজস্ব একটি সন্ত্রাসী বাহিনী। পটপরিবর্তনের পর যখন যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এসেছে রঙ পরিবর্তন করে তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকেছে এই সন্ত্রাসী বাহিনী। পাহাড়ে সরকারি খাস জমি বিক্রি করে সুমন ও ভুট্টু এখন অঢেল সম্পত্তির মালিক বনে গেছেন।