নিরীক্ষা ব্যবস্থার ব্যর্থতায় দেশ থেকে কয়েক লাখ কোটি টাকা পাচার সহজ হয়েছে বলে মনে করে ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউনট্যান্টস বাংলাদেশ (আইসিএমএবি)। লাখ লাখ কোটি টাকার যে খেলাপি ঋণ তাদের নিরীক্ষকদের দায় দেখে আইসিএমবি।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টনে ইআরএফ অডিটোরিয়ামে ‘আয়োজিত অডিট আওতা সম্প্রসারণে সংস্কার প্রস্তাব’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি মাহতাব উদ্দিন এসব কথা বলেন। মাহতাব উদ্দিন বলেন, শুধু লাখ কোটি টাকার পাচার নয়, ব্যাংকগুলোর লাখ লাখ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের দায়ও নিরীক্ষকরা এড়াতে পারে না।
আইসিএমএবি সভাপতি বলেন, দেশের অডিট বা নিরীক্ষা প্রতিবেদন ব্যবস্থার দুর্বলতার সুযোগেই দেশের ব্যাংক, আর্থিক খাত ও পুঁজিবাজার থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া সহজ হয়। নিম্নমানের নিরীক্ষা প্রতিবেদনের কারণেই পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে। একই কারণে দেশি ভালো প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে ভয় পায় বলেও মন্তব্য করা হয়।
তিনি আরও বলেন, বিগত দেড় দশকের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের নিরীক্ষা ইকোসিস্টেম সম্পূর্ণরূপে অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। যার বিরূপ প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতিতে। আনুমানিক ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নিম্নমানের নিরীক্ষা বিনিয়োগকারীদের আস্থা ক্ষুণœ করেছে। যার ফলে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
আইসিএমএবির পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে দাবি করা হয়, মানসম্মত নিরীক্ষা হলে দেশের খেলাপি ঋণ ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেত না। এ সময় জানানো হয়, বাংলাদেশে নিরীক্ষা করতে পারে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। যেখানে নেপালে তা ৯ হাজার, পাকিস্তানে ১০ হাজারের বেশি। এ অবস্থায় কোম্পানি আইনে যেসব প্রতিষ্ঠানে সিএ ও সিএমএ প্রতিষ্ঠান অডিট বা নিরীক্ষা করে না সেসব প্রতিষ্ঠানে নিরীক্ষা করার সুযোগ দাবি করে আইসিএমএবি। এজন্য অর্থবিল পাস হওয়ার আগেই দেশের নিরীক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের স্বার্থে আইন সংশোধনের দাবি জানানো হয়।
আইসিএমএবি সভাপতি বলেন, দেশের আর্থিক খাতের দুর্বলতা, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা দূরীকরণের ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার কর্তৃক ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এফআরসি কর্তৃক সংজ্ঞায়িত প্রফেশনাল অ্যাকাউনট্যান্ট (সিএ ও সিএমএ) দ্বারা লিমিটেড কোম্পানি ছাড়া সব প্রতিষ্ঠান নিরীক্ষা করানোর বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু একটি স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় অর্থবিল থেকে সিএমএদের বাদ দেওয়া হয়েছে। জাতীয় স্বার্থে এবং আর্থিক সুশাসন নিশ্চিতের লক্ষ্যে সিএমএদের সুযোগ দিয়ে সে বিধানটি আবার বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার জোর দাবি জানাচ্ছি।