শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

শ্রীলঙ্কার সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি চায় ঢাকা চেম্বার

আপডেট : ১৮ জুন ২০২৫, ১২:১৬ এএম

বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে দুদেশের মধ্যকার অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) দ্রুত স্বাক্ষরের আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। এ ছাড়া সমুদ্র অর্থনীতি, গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণ এবং বন্দর ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তিবিষয়ক সহায়তা বাংলাদেশের এ খাতে দক্ষতা উন্নয়নে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে ঢাকা চেম্বারের পক্ষ থেকে।

শ্রীলঙ্কা সফররত ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার সিলন চেম্বার অব কমার্সের বাণিজ্য আলোচনা সভা হয় ‘হিল্টন কলম্বো রেসিডেন্স’ হোটেলে। শ্রীলঙ্কার শিল্প ও উদ্যোক্তা উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী সুনীল হন্দুন্নেত্তি এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন। এ সময় ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ, শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস, বাংলাদেশে নিযুক্ত শ্রীলঙ্কা হাইকমিশনার ধর্মপাল বীরাক্কোদি এবং শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের সভাপতি ড. আসাঙ্কা রতœায়েক বক্তব্য প্রদান করেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনার ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান। তিনি বলেন, তরুণ দক্ষ মানবসম্পদ এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য অপার সম্ভাবনার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। দুদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে তিনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে এফটিএ স্বাক্ষরের ওপর জোরারোপ করেন। সেই সঙ্গে কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, সমুদ্র অর্থনীতি, তথ্যপ্রযুক্তি, আর্থিক খাত, পর্যটন, নবায়নযোগ্য জ¦ালানি এবং লজিস্টিক ব্যবস্থাপনায় দুদেশের সমন্বিত বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর তিনি জোরারোপ করেন। 

এ সময় ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, সার্কভুক্ত দুদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এখনো তা কাক্সিক্ষত মাত্রায় পৌঁছায়নি। তবে দুদেশের বেসরকারি খাতের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যেতে পারে। বাংলাদেশের লজিস্টিক অবকাঠামো, পর্যটন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা, নির্মাণ, নবায়নযোগ্য জ¦ালানি, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্য এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগে শ্রীলঙ্কার উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসতে পারেন।

সেই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে ওষুধ, তৈরি পোশাক, পাদুকা, ইলেকট্রনিকস, পাটজাত পণ্য আমদানির জন্য শ্রীলঙ্কার উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান ঢাকা চেম্বারের সভাপতি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রীলঙ্কার শিল্প ও উদ্যোক্তা উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী সুনীল হন্দুন্নেত্তি বলেন, শুধু বাণিজ্যিক সুবিধা নয়, আঞ্চলিক অগ্রগতির স্বার্থ অর্জনের জন্য দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ অতীব গুরুত্বপূর্ণ। দুদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগে প্রচুর সম্ভাবনা থাকলেও তা কাজে লাগানো যায়নি।

তিনি আরও বলেন, দুদেশের বিনিয়োগকারীদের জন্য টেক্সটাইল, ওষুধ, জাহাজ নির্মাণ এবং ডিজিটাল পরিষেবা প্রভৃতি খাত অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী শ্রীলঙ্কার উদ্যোক্তাদের সহায়তা প্রদানে তার সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, পাশাপাশি বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের শ্রীলঙ্কায় বিনিয়োগে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা প্রদানে সে দেশের সরকার বদ্ধ পরিকর।

দুর্নীতি প্রতিরোধে শ্রীলঙ্কান সরকার কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে নানা সুবিধা দিয়েছে বলে তিনি জানান। মন্ত্রী আরও বলেন, শ্রীলঙ্কায় বাণিজ্য কাঠামোর সহজীকরণ, লজিস্টিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং নন-ট্যারিফ প্রতিবন্ধকতা হ্রাসে দেশটি একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে, যা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য সহায়ক হবে। এ ছাড়া তিনি দুদেশের বাণিজ্য সংগঠনগুলোর মধ্যকার কার্যকর সংযোগ স্থাপনের ওপর জোরারোপ করেন, যার মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে।

অনুষ্ঠানের সূচনা বক্তব্যে সিলন চেম্বারের চেয়ারম্যান ডুমিন্ডা হুলানগামুয়া বলেন, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে শ্রীলঙ্কার অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু, সার্কভুক্ত দেশ দুটোর মধ্যে বাণিজ্যিক পরিসংখ্যান পারস্পরিক বাণিজ্যের প্রকৃত সম্ভাবনার প্রতিফলন ঘটায় না, তবু এখনই সময় এসেছে পারস্পরিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির। বাংলাদেশের বেসরকারি খাতকে অত্যন্ত ব্যবসাবান্ধব ও সহনশীল হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কা সবসময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে। তিনি বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীদের শ্রীলঙ্কার সম্ভাবনাময় বিভিন্ন খাতে, বিশেষ করে পর্যটন এবং লজিস্টিক খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।

দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের পাশাপাশি দুদেশের বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের মধ্যকার সম্পর্ক জোরদারকরণের লক্ষ্যে ডিসিসিআই এবং সিলন চেম্বারের মধ্যকার সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ এবং সিলন চেম্বারের চেয়ারম্যান ডুমিন্ডা হুলানগামুয়া নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এই সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত