রোববার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

পাকিস্তান বাংলাদেশ চীন

ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও গভীর করার অঙ্গীকার

আপডেট : ২২ জুন ২০২৫, ০৭:২২ এএম

চীনের ইউনান প্রদেশে বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তান ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও গভীর করার অঙ্গীকার করেছে। এই সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত ভূদৃশ্যে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে।

শুক্রবার বাংলাদেশ-চীন-পাকিস্তানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী/পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের উদ্বোধনী বৈঠকের পর এই ঘোষণা করা হয়। পাকিস্তান পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৈঠকে চীনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান ওয়েইদং, বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী এবং পাকিস্তানের অতিরিক্ত পররাষ্ট্রসচিব ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে প্রাথমিক অধিবেশনে যোগ দেন। নতুন ত্রিপক্ষীয় ফোরামের লক্ষ্য হলো সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি, আরও বাণিজ্য ও বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে কাজ করা।

চীনের ইউনান প্রদেশে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তান ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও গভীর করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। এই পদক্ষেপ দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত মানচিত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। শুক্রবার তিন দেশের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের উদ্বোধনী বৈঠকের পর এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

চীনের পক্ষে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান ওয়েইদং। বাংলাদেশের পক্ষে অংশ নেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী এবং পাকিস্তানের পক্ষে অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ ভিডিও লিঙ্কে প্রাথমিক অধিবেশনে যুক্ত হন।

অর্থনৈতিক কূটনীতি ও আঞ্চলিক সংযোগের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ঢাকা-ইসলামাবাদ-বেইজিং বৈঠকে তিন দেশই বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, ডিজিটাল অর্থনীতি, পরিবেশ সুরক্ষা, সমুদ্রবিজ্ঞান, সবুজ অবকাঠামো, শিক্ষা ও সংস্কৃতিসহ একাধিক খাতে পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর জোর দেয়। আলোচনার ভিত্তিতে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা এই ত্রিপক্ষীয় সম্পর্ককে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই উদ্যোগ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এতে এমন দুই প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও পাকিস্তান একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছে, যারা দীর্ঘদিন কূটনৈতিকভাবে দূরত্ব বজায় রেখেছিল। ২০২৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকে নতুন নেতৃত্বে ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্কে দৃশ্যত উষ্ণতা এসেছে।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন নতুন প্রশাসন সক্রিয়ভাবে আঞ্চলিক সম্পর্ক পুনর্গঠনে এগিয়ে এসেছে। মার্চে তার বেইজিং সফরের সময় তিস্তা নদী পুনর্গঠন ও মংলা বন্দরে বিনিয়োগে চীনের আগ্রহ তুলে ধরা হয়। যা আগে ভারতকেন্দ্রিক কূটনৈতিক অবস্থান থেকে বাংলাদেশে একটি বড় নীতিগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।

এদিকে চীন নিজেও দক্ষিণ এশিয়ায় তার প্রভাব বাড়াতে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’-এর পাশাপাশি এই ত্রিপক্ষীয় সংযোগকে নতুন করিডর হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে চীনের উপস্থিতি বাড়ানো এবং ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত ঘেঁষ চীনা বিনিয়োগের পরিকল্পনা ভারতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের জন্য একটি নতুন উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠতে পারে।

সম্ভাবনার পাশাপাশি জিও-পলিটিক্যাল ভারসাম্যের নতুন খেলায় তিন দেশ যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও, এতে দীর্ঘমেয়াদি সংযোগ প্রকল্প, প্রতিরক্ষা সংলাপ ও আন্তর্জাতিক ফোরামে সমন্বিত অবস্থানের মতো বিষয় যুক্ত হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে এর প্রভাব আগামী দিনে আরও সুস্পষ্ট হবে।

এখনো পর্যন্ত পরবর্তী বৈঠকের সময়সূচি ঘোষণা করা হয়নি। তবে তিন দেশের সদিচ্ছা এবং কৌশলগত প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় এ উদ্যোগ যে আরও গতি পাবে সে বিষয়ে পর্যবেক্ষক মহল নিশ্চিত।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত