সেমিনারে বক্তারা
সামাজিক সুরক্ষায় সুশাসনের ঘাটতি প্রকট
| ৩১ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০
করোনাভাইরাসের প্রভাবে বহু মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়ায় সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন এই খাতের বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে সত্যিকারের যোগ্য ব্যক্তিরা যাতে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে ঢুকতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করতে যত দ্রুত সম্ভব একটি ডাটাবেইস তৈরির তাগিদ দিয়েছেন তারা। গতকাল শনিবার ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ডিজেএফবি) ও বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি) আয়োজিত অনলাইন সেমিনারে বক্তারা আরও বলেন, প্রতি বছর বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে যে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়, তার বড় একটি অংশই চলে যায় সরকারি চাকুরেদের পেনশনের পেছনে। এতে নিম্ন আয়ের মানুষদের কাছে সামাজিক সুরক্ষার বরাদ্দের পরিমাণ খুব কম পৌঁছে। তাই বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে মোট জিডিপির চার শতাংশে উন্নীত করার প্রস্তাব করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
‘কভিড ১৯ : সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি ও স্বাস্থ্য অধিকার’ শিরোনামের সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মফিদুল ইসলাম, অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট-এর নির্বাহী পরিচালক জামিল এইচ চৌধুরী, ডিজেএফবির সভাপতি হুমায়ুন কবীর, এনজিও সংগঠক শাহ মবিন জিন্নাহ, মমতাজ আরা বেগম, এস এম হারুন আর রশিদ লাল, ড. জাহিদ মাসুদ, শিক্ষক রাবেয়া বিনতে করিমসহ অন্যরা। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন ডিজেএফবির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সুশান্ত সিনহা।
মূল প্রবন্ধে ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, কভিড -১৯ এর কারণে নতুন করে অসংখ্য মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। তাদের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। সেটি করতে হলে এই খাতে অর্থ বরাদ্দ বাড়াতে হবে। নাজনীন আহমেদ বলেন, করোনার সময়ে অর্থনীতির যে বিষয়টি আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে সেটি হলো কর্মসংস্থান। অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছে। আয় কমে গেছে। বৈশ্বিক বাজারে সংকট চলছে। তাই রপ্তানি আয়ও কমে গেছে। কর্মসংস্থানের সঙ্গে দরিদ্রতার সম্পর্ক রয়েছে। করোনার সময় দেশে আয় বৈষম্য ও দারিদ্র্যের হারও বেড়েছে। এটা চিন্তার বিষয়।
নাজনীন আহমেদ বলেন, স্বাস্থ্য খাতে যে দুর্নীতি হচ্ছে, তা কভিড-১৯ এর সময় সবার সামনে উঠে এসেছে। স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির লাগাম টানতে হবে। টিকা নিয়ে মানুষের মধ্যে যে দুশ্চিন্তা চলছে, তা দূর করতে হবে। একই সঙ্গে সামাজিক সুরক্ষা খাতে যাতে দরিদ্র মানুষরাই পায়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান নিজেও স্বীকার করেন যে, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে একসময় ভুলত্রুটি ছিল। অবশ্য সেটি এখন অনেকটাই কমে এসেছে। জনপ্রতিনিধিরা এখন দরিদ্র মানুষ বাছাইয়ে বেশ সতর্কতা অবলম্বন করছে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার বলে আমিও মনে করি। সেই চেষ্টা অবশ্য চলছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এই খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমি গ্রামের ছেলে। আমি দেখেছি, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে কীভাবে উপকৃত হয়। কভিডের কারণে দরিদ্রতার হার বেড়েছে। এটা ঠিক।
সেমিনারে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মফিদুল ইসলাম বলেন, জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি) ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। সেটি বাস্তবায়নে সরকার চলমান অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনতে বিভিন্ন কর্মপন্থা ঠিক করেছে। তিনি বলেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় কভিড-১৯ মোকাবিলায় সর্বোচ্চ জোর দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দারিদ্র্য ও কর্মসংস্থানের ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে। কারণ, কভিডের কারণে নতুন করে অনেকে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। অনেকে কাজ হারিয়েছে। মফিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য খাতে এখন বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়। এটি এখন জিডিপির এক শতাংশ। এই বরাদ্দ বাড়িয়ে দুই শতাংশ করার পরিকল্পনা রয়েছে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়।
অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট-এর নির্বাহী পরিচালক জামিল এইচ চৌধুরী বলেন, গত বছর মার্চে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের পর বহু মানুষ ঋণ করে নিদারুণ কষ্টে দিন কাটিয়েছে। সরকারের অনেক সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি আছে। তবে সেটি গ্রামকেন্দ্রিক। শহরকেন্দ্রিক কর্মসূচি নেই। কভিডের সময় দেশের স্বাস্থ্য সেবা কতটা নাজুক সেটা ফুটে উঠেছে। কতজন দরিদ্র মানুষ নিজেদের কভিড পরীক্ষা করিয়েছেন আমরা জানি না। নিম্ন আয়ের মানুষরা টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে কতটা অগ্রাধিকার পাবে, সেখানেও আছে দুশ্চিন্তা। সেমিনারে জানানো হয়, চলতি অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা মোট বাজেটের ১৭ শতাংশ। মোট জিডিপির তিন শতাংশ। অবশ্য এর মধ্যে বড় একটি অংশ চলে যায় পেনশনের পেছনে। সত্যিকারের দরিদ্র মানুষের কাছে বরাদ্দ পৌঁছে মোট জিডিপির মাত্র ১.২৪ শতাংশ।”
শেয়ার করুন
| ৩১ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০

করোনাভাইরাসের প্রভাবে বহু মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়ায় সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন এই খাতের বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে সত্যিকারের যোগ্য ব্যক্তিরা যাতে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে ঢুকতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করতে যত দ্রুত সম্ভব একটি ডাটাবেইস তৈরির তাগিদ দিয়েছেন তারা। গতকাল শনিবার ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ডিজেএফবি) ও বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি) আয়োজিত অনলাইন সেমিনারে বক্তারা আরও বলেন, প্রতি বছর বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে যে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়, তার বড় একটি অংশই চলে যায় সরকারি চাকুরেদের পেনশনের পেছনে। এতে নিম্ন আয়ের মানুষদের কাছে সামাজিক সুরক্ষার বরাদ্দের পরিমাণ খুব কম পৌঁছে। তাই বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে মোট জিডিপির চার শতাংশে উন্নীত করার প্রস্তাব করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
‘কভিড ১৯ : সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি ও স্বাস্থ্য অধিকার’ শিরোনামের সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মফিদুল ইসলাম, অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট-এর নির্বাহী পরিচালক জামিল এইচ চৌধুরী, ডিজেএফবির সভাপতি হুমায়ুন কবীর, এনজিও সংগঠক শাহ মবিন জিন্নাহ, মমতাজ আরা বেগম, এস এম হারুন আর রশিদ লাল, ড. জাহিদ মাসুদ, শিক্ষক রাবেয়া বিনতে করিমসহ অন্যরা। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন ডিজেএফবির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সুশান্ত সিনহা।
মূল প্রবন্ধে ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, কভিড -১৯ এর কারণে নতুন করে অসংখ্য মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। তাদের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। সেটি করতে হলে এই খাতে অর্থ বরাদ্দ বাড়াতে হবে। নাজনীন আহমেদ বলেন, করোনার সময়ে অর্থনীতির যে বিষয়টি আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে সেটি হলো কর্মসংস্থান। অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছে। আয় কমে গেছে। বৈশ্বিক বাজারে সংকট চলছে। তাই রপ্তানি আয়ও কমে গেছে। কর্মসংস্থানের সঙ্গে দরিদ্রতার সম্পর্ক রয়েছে। করোনার সময় দেশে আয় বৈষম্য ও দারিদ্র্যের হারও বেড়েছে। এটা চিন্তার বিষয়।
নাজনীন আহমেদ বলেন, স্বাস্থ্য খাতে যে দুর্নীতি হচ্ছে, তা কভিড-১৯ এর সময় সবার সামনে উঠে এসেছে। স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির লাগাম টানতে হবে। টিকা নিয়ে মানুষের মধ্যে যে দুশ্চিন্তা চলছে, তা দূর করতে হবে। একই সঙ্গে সামাজিক সুরক্ষা খাতে যাতে দরিদ্র মানুষরাই পায়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান নিজেও স্বীকার করেন যে, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে একসময় ভুলত্রুটি ছিল। অবশ্য সেটি এখন অনেকটাই কমে এসেছে। জনপ্রতিনিধিরা এখন দরিদ্র মানুষ বাছাইয়ে বেশ সতর্কতা অবলম্বন করছে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার বলে আমিও মনে করি। সেই চেষ্টা অবশ্য চলছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এই খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমি গ্রামের ছেলে। আমি দেখেছি, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে কীভাবে উপকৃত হয়। কভিডের কারণে দরিদ্রতার হার বেড়েছে। এটা ঠিক।
সেমিনারে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মফিদুল ইসলাম বলেন, জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি) ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। সেটি বাস্তবায়নে সরকার চলমান অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনতে বিভিন্ন কর্মপন্থা ঠিক করেছে। তিনি বলেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় কভিড-১৯ মোকাবিলায় সর্বোচ্চ জোর দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দারিদ্র্য ও কর্মসংস্থানের ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে। কারণ, কভিডের কারণে নতুন করে অনেকে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। অনেকে কাজ হারিয়েছে। মফিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য খাতে এখন বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়। এটি এখন জিডিপির এক শতাংশ। এই বরাদ্দ বাড়িয়ে দুই শতাংশ করার পরিকল্পনা রয়েছে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়।
অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট-এর নির্বাহী পরিচালক জামিল এইচ চৌধুরী বলেন, গত বছর মার্চে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের পর বহু মানুষ ঋণ করে নিদারুণ কষ্টে দিন কাটিয়েছে। সরকারের অনেক সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি আছে। তবে সেটি গ্রামকেন্দ্রিক। শহরকেন্দ্রিক কর্মসূচি নেই। কভিডের সময় দেশের স্বাস্থ্য সেবা কতটা নাজুক সেটা ফুটে উঠেছে। কতজন দরিদ্র মানুষ নিজেদের কভিড পরীক্ষা করিয়েছেন আমরা জানি না। নিম্ন আয়ের মানুষরা টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে কতটা অগ্রাধিকার পাবে, সেখানেও আছে দুশ্চিন্তা। সেমিনারে জানানো হয়, চলতি অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা মোট বাজেটের ১৭ শতাংশ। মোট জিডিপির তিন শতাংশ। অবশ্য এর মধ্যে বড় একটি অংশ চলে যায় পেনশনের পেছনে। সত্যিকারের দরিদ্র মানুষের কাছে বরাদ্দ পৌঁছে মোট জিডিপির মাত্র ১.২৪ শতাংশ।”