
পানির স্বাভাবিক গতি এবং গন্তব্য নিয়ে আলোচনা করার প্রয়োজন কি আছে? এর স্বাভাবিক উত্তর হবে এটা তো সবাই জানে পানি ওপর থেকে নিচে প্রবাহিত হয় এবং নদী সৃষ্টির মাধ্যমে সাগরে গিয়ে মেশে। এর কোনো সীমানা নেই, দেশের নাম পাল্টায়, সীমানা পাল্টায় কিন্তু পানি বয়ে চলে সেই প্রাকৃতিক নিয়মেই। নদী বয়ে চলে উজান থেকে ভাটির দিকে। এই যে বিষয়টি এত স্বাভাবিক, সেই ব্যাপারটা নিয়ে অস্বাভাবিক জটিলতা তৈরি হচ্ছে কেন? একটু খোলাসা করে বলা যাক! ভারত বাংলাদেশের উজানে, সেখান থেকে পানি গড়িয়ে যাবে সমুদ্রে, মাঝখানে পড়েছে বাংলাদেশের ভূখণ্ড। বাংলাদেশের উজানের ১৫ গুণ বেশি অঞ্চলজুড়ে যে বৃষ্টিপাত হয় এবং হিমালয় থেকে বরফ গলে যে পানি আসে তা বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে বয়ে যায় সমুদ্রের পানে। প্রাকৃতিক এই নিয়মকে রাজনৈতিকভাবে বাধাগ্রস্ত করে চলেছে বাংলাদেশের উজানের দেশ ভারত। শুধু নৈতিকভাবে নয়, আন্তর্জাতিক সব বিধিবিধানকেও তোয়াক্কা করছে না তারা। একাধিক দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীকে আন্তর্জাতিক নদী বলা হয়ে থাকে। সেই বিবেচনায় ভারত থেকে বয়ে আসা ৫৪টি নদীই আন্তর্জাতিক নদী। কিন্তু ভারত সেগুলোর ওপর এক বা একাধিক বাঁধ দিয়ে পানির প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করেছে। সহজভাবে কঠিন কথাটা হলো, ভারত বাংলাদেশকে পানির ন্যায্য প্রাপ্যতা থেকে বঞ্চিত করছে এবং করেই চলেছে।
তিস্তার উজানে ভারত ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ সীমান্তের ৬০ কিলোমিটার উজানে ৫৪টি ফটক বিশিষ্ট গজলডোবা বাঁধ নির্মাণ করেছে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় অংশে সেচের সম্প্রসারণ ঘটানো। এই বাঁধ দিয়ে প্রথম পর্যায়েই প্রায় ১০ লাখ হেক্টর, অর্থাৎ ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় সেচ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে ২১০ কিলোমিটার দীর্ঘ খাল করেছে তারা। এসব খাল একদিকে পশ্চিম-দক্ষিণে অগ্রসর পশ্চিমবঙ্গের মালদহ এবং মুর্শিদাবাদ জেলা পর্যন্ত পৌঁছেছে, অন্যদিকে পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহার জেলা পর্যন্ত গেছে। অর্থাৎ গজলডোবা বাঁধ একটি বিস্তৃত পরিধিতে সেচ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে নির্মিত হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে এর ফটক বন্ধ থাকে বলে বাংলাদেশ পানি পায় না। এখন যে নতুন দুটি খাল খনন করা হচ্ছে, তা এই প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের বাস্তবায়নের অংশ। এ প্রসঙ্গে একটা বিষয় উল্লেখ করতে হয়, পদ্মার উজানে ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে পানি নিয়ে যাওয়া হয়েছে ভাগীরথী নদীতে। যার ফলে পদ্মা হারিয়েছে তার স্বাভাবিক প্রবাহ, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশ। এ নিয়ে বিরোধ এবং বিতর্ক চলছেই। কিন্তু এই ফারাক্কা দিয়ে পানি অপসারণের একটি উচ্চ সীমা আছে, যার থেকে বেশি পানি নিতে পারবে না। এই সীমাটা হলো ৪০ হাজার কিউসেক। সে কারণেই যে ফিডার ক্যানেল দিয়ে গঙ্গার পানি ভাগীরথী নদীতে নেওয়া হয় তার সক্ষমতা এভাবেই নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু গজলডোবার বাঁধের মাধ্যমে ভারত কর্র্তৃক তিস্তার পানি অপসারণের কোনো উচ্চ সীমা নির্ধারিত নেই। ফলে ভারত ভাটির দেশের কথা কোনোভাবেই বিবেচনায় না নিয়ে নতুন নতুন খাল খননের মাধ্যমে তিস্তা নদীর পানি অপসারণের ক্ষমতা বাড়িয়েই চলেছে। আর বাংলাদেশ অঞ্চলে তিস্তা হারাচ্ছে তার বেঁচে থাকার মতো পানি। ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের ব্যাপারে আলোচনা হয় যে, তিস্তার পানির ৩৯ শতাংশ পাবে ভারত, ৩৬ শতাংশ পাবে বাংলাদেশ আর ২৫ ভাগ পানি থাকবে তিস্তার নিজের জন্য। তিস্তা নিজে না বাঁচলে তার অববাহিকার জীববৈচিত্র্য বাঁচবে কীভাবে? এরপর ২০০৭ সালে স্থির করা হয় ৪০ শতাংশ ভারত, ৪০ শতাংশ বাংলাদেশ এবং ২০ শতাংশ রাখা হবে নদীর জন্য সংরক্ষিত। কিন্তু চুক্তি না হওয়ায় গজলডোবা থেকে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় পানি আসার পরিমাণ শূন্য। ২০০-৩০০ কিউসেক পানি, যা আসে তা গজলডোবার ভাটির উপনদী থেকে।
এ পর্যন্ত তিস্তার উজানে ভারতের অনেক বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। ভারতের একজন প্রখ্যাত গবেষক গৌরী নুলকার দেখিয়েছেন যে, তিস্তার উজানে এবং এর বিভিন্ন উপনদীর ওপর ভারত আরও প্রায় ১৫টি বাঁধ কিংবা ব্যারাজ নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। এখনই তিস্তার প্রবাহ যা দাঁড়িয়েছে তার ওপর এগুলো বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ অংশে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তার কোনো প্রবাহ যে অবশিষ্ট থাকবে না, তা এক রকম নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। এই ভয়াবহ বিপদকে বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এসব পরিকল্পনার বিরোধিতা করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ তিস্তা একটি আন্তর্জাতিক নদী।
ভারতের সঙ্গে তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন চুক্তি করার পাশাপাশি বাংলাদেশের জন্য জরুরি বিষয় হলো, জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক নদ-নদীসংক্রান্ত ১৯৯৭ সালের সনদে (কনভেনশনে) স্বাক্ষর করা। কারণ এই সনদে আন্তর্জাতিক নদ-নদীর প্রতি অংশীদারি দেশগুলোর আচরণ সম্পর্কে বিস্তারিত নীতিমালা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এতে স্বাক্ষর করলে এবং অন্যান্য দেশগুলোকেও স্বাক্ষর করতে উদ্বুদ্ধ করলে শুধু ভারত-বাংলাদেশ নয়, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তানসহ উপমহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে নদ-নদী সম্পর্কে বিরাজমান বিভিন্ন মতপার্থক্য নিরসনের সর্বসম্মত এবং আন্তর্জাতিক ভিত্তি সৃষ্টি হবে। অভিন্ন নদীর পানি পাওয়া এবং ব্যবহার করার ক্ষেত্রে ভাটির দেশের ন্যায়সঙ্গত স্বার্থ এই সনদে স্বীকৃত হয়েছে। ফলে এই সনদে স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় এই সনদে স্বীকৃত অধিকারগুলো আরও জোরের সঙ্গে তুলে ধরতে পারবে। আজকের যুগে যে কোনো রাষ্ট্র তার সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সমর্থন প্রত্যাশা করে। ফলে অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দেখাতে পারবে যে, তার দাবি যৌক্তিক এবং এতে আন্তর্জাতিক কনভেনশনের সমর্থন রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ নদ-নদীবিষয়ক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে তার দাবিগুলো তুলে ধরে দেখাতে পারবে যে, তার দাবিগুলোর ভিত্তি অনুরোধ বা সদিচ্ছা নয়, তা আন্তর্জাতিক আইন দ্বারাও স্বীকৃত। এসব জানা সত্ত্বেও বাংলাদেশ আজও কেন জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক নদ-নদীসংক্রান্ত ১৯৯৭ সালের সনদে (কনভেনশনে) স্বাক্ষর করেনি, তা মোটেও বোধগম্য হচ্ছে না। উজানের দেশ হিসেবে ভারত সুবিধাজনক স্থানে আছে, ফলে ভারতের গরজ নাও থাকতে পারে। কিন্তু ভারত স্বাক্ষর না করলে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করবে না কেন? উজানের দেশ স্বাক্ষর না করলে ভাটির দেশ স্বাক্ষর করতে পারবে না এমন কোনো বাধ্যবাধকতা রয়েছে বলে তো জানা নেই। বাংলাদেশের নদ-নদী কোনো বিচ্ছিন্ন সত্তা নয়। অন্যান্য নদ-নদী ও জলাধারগুলোর সঙ্গে এগুলো ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। কিন্তু প্রকল্প গ্রহণের সময় নদ-নদী ও জলাধারগুলোর এই পরস্পর সম্পর্কের বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়। যেমন ব্রহ্মপুত্র ডান তীর বাঁধ প্রকল্পের প্রসারণ হিসেবে তিস্তা নদীর ডান তীর ধরে কাউনিয়া পর্যন্ত বাঁধ নির্মিত হয়েছে। এর ফলে বহু শাখা নদী থেকে তিস্তা নদী বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আবার পরবর্তী সময় তিস্তা সেচ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের জন্য খাল খনন করা হয়েছিল। ফলে পূর্ব থেকে রয়ে যাওয়া যে অসংখ্য খাল-বিল-নদী-নালা তিস্তা অববাহিকায় ছিল, সেগুলো অবহেলিত হয়ে মৃতপ্রায় হয়ে পড়ে। যেমন বাংলাদেশের ভেতর তিস্তার ডান তীরে ৭টি এবং বাম তীরে ৫টি শাখা এবং উপনদী আছে। এগুলোর সঙ্গে তিস্তা নদীর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এগুলোকে সংযুক্ত করা হলে তিস্তার বর্ষাকালের প্রবাহ এসব নদী-নালা-খাল দিয়ে সারা অববাহিকায় বিস্তৃত হতে পারবে। শুষ্ক মৌসুমে এই সঞ্চিত পানি সেচের জন্য ব্যবহৃত হতে পারবে এবং ফিরতি প্রবাহের মাধ্যমে তা তিস্তা নদীর প্রবাহ বৃদ্ধি করতে পারবে। সুতরাং ভারতের কাছ থেকে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের পাশাপাশি বর্ষাকালের পানি ধরে রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। ইতিমধ্যেই তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের আওতায় আরও দুটি খাল খননের জন্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সেচ বিভাগ প্রায় ১ হাজার একর পরিমাণ জমির মালিকানা পেয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের উপস্থিতিতে সেচ বিভাগকে জমির মালিকানা হস্তান্তর করে। এ জমির মাধ্যমে তিস্তার পূর্ব তীরে দুটি খাল তৈরি করতে পারবে প্রশাসন। জলপাইগুড়ি জেলা দিয়ে বয়ে যাওয়া আরেক নদী জলঢাকার পানিপ্রবাহও খালের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হবে।
পশ্চিমবঙ্গ সেচ বিভাগের এক সূত্রের বরাত দিয়ে টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়, তিস্তা এবং জলঢাকার পানি টানার জন্য কোচবিহার জেলার চ্যাংড়াবান্ধা পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি খাল খনন করা হবে। আরেকটি খালের দৈর্ঘ্য হবে ১৫ কিলোমিটার। এটি তিস্তার বাম পাশের তীরবর্তী এলাকায় খনন করা হবে। এই খালটি খনন করা হলে প্রায় এক লাখ কৃষক সেচসুবিধার আওতায় আসবেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ পদক্ষেপের আওতায় জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার এলাকার আরও অনেক কৃষিজমি সেচের আওতায় আসবে। সাধারণভাবেই বলা যায় যে, তিস্তার পানি বাংলাদেশে না এসে চলে যাবে জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার এলাকায়। তাহলে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ পানি পাবে কীভাবে?
সিকিমের ৭ হাজার ফুট উচ্চতায় জন্ম নেয়া তিস্তা ৪১৪ কিলোমিটার পার হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদীতে মিশেছে। তিস্তা সিকিমের বৃহত্তম নদী, পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম নদী। এর ১১০ কিলোমিটার বাংলাদেশে অবস্থিত হলেও ১২৫০০ বর্গকিলোমিটার অববাহিকার জনবসতি ও কৃষি অধ্যুষিত বৃহত্তম অঞ্চলটাই বাংলাদেশে। ভারতের একতরফা পানি নেয়ার কারণে শুধু তিস্তা নয়, বাংলাদেশের খাদ্যভাণ্ডার বলে পরিচিত উত্তরবঙ্গ বিশেষত রংপুর অঞ্চল কি শুকিয়ে মরবে?
লেখক: রাজনৈতিক সংগঠক ও কলামিস্ট
২০০০ সাল। শুরুর দিকের কথা। তখন নিয়মিতভাবে এটিএন বাংলায় প্রচারিত হচ্ছে অপরাধ বিষয়ক অনুষ্ঠান ‘মুখ ও মুখোশ’। সেই হিসেবে স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের প্রথম ক্রাইম অনুষ্ঠান। গ্রন্থনা, উপস্থাপনা এবং পরিচালনার দায়িত্বে ছিলাম আমি। পাক্ষিক হিসেবে অনুষ্ঠানটি নিয়মিত প্রচারিত হতো। এ ক্ষেত্রে সেই সময়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রয়াত মো. নাসিম ভাইয়ের একান্ত সহযোগিতা মনে রাখার মতো। আর এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমানের আন্তরিক সহযোগিতা ও সমর্থনে মুক্তভাবে কাজ করতে পেরেছি। একদিকে জনকণ্ঠের বিনোদন পাতার দায়িত্ব, বিটিভিতে সংবাদ পাঠ এবং অন্যদিকে তখন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির (বাচসাস) সাধারণ সম্পাদক। এর বাইরে আবার এটিএন বাংলার অনুষ্ঠান। স্বাভাবিকভাবেই দিন-রাত পরিশ্রম করতে হতো। মোটেও সময় পেতাম না। যে কারণে ‘মুখ ও মুখোশ’ অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হতো পাক্ষিক হিসেবে।
অনুষ্ঠানের বিষয় নির্বাচনের পর, এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানাতাম। সমস্যা হতো না। কিন্তু ‘ফেনসিডিল’ পর্ব নিয়ে অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা শুনে, সেই সময়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন
এত ফেনসিডিল পাইবা কই?
জি, পাব। আস্তানা জেনেছি। শুনেছি, সেখানে প্রায় ৪০-৫০ হাজার বোতল মজুদ আছে।
কোথায়, বলো?
ক্ষমা করবেন, ভাই। এটা বলতে পারব না। ওদের কথা দিয়েছি। না হলে, আমাকে মেরে ফেলবে।
কিচ্ছু হবে না, আমাকে বলো।
প্লিজ, ভাই।
একপর্যায়ে নাসিম ভাইকে বলতে বাধ্য হলাম। কিন্তু সব না। শুধু বললাম ফার্মগেট, আগারগাঁও, তালতলা, শেওড়াপাড়া, কাজিপাড়া, মিরপুর-১০, মাজার রোড আর গাবতলীর মধ্যে এটা আছে। সোর্স দিয়ে বের করেন।
তিনি হাসলেন। বললেন তুমি তো, ঢাকা শহরের ৪ ভাগের ১ ভাগ বললা। এইটা আমিও জানি। স্পেসিফিক জায়গাটা বলো।
হাত জোড় করে ক্ষমা চাইলাম। তিনি হাসলেন। বললেন আচ্ছা, তোমার কাজ করো। সিকিউরিটি নিয়ে চিন্তা করো না।
ভাই, সেদিন সিকিউরিটি লাগবে না। পরে আপনার সিকিউরিটির লোক, সব বলে দেবে।
তিনি হাসলেন। বললেন, ঠিক আছে। কোনো সমস্যা হলে তুমি ‘বেনু’কে (এপিএস) বলো।
আমাদের বাসা, পশ্চিম শেওড়াপাড়া। শ^শুরবাড়ি পূর্ব শেওড়াপাড়ার ইব্রাহিমপুর। সেখানে কালা জাহাঙ্গীর, আব্বাসের আস্তানা। মিরপুর ১০ থেকে ১৪ নম্বর হয়ে, কচুক্ষেত পর্যন্ত ওদের নিয়ন্ত্রণ। আবার পশ্চিম শেওড়াপাড়া শামীম, প্রকাশ-বিকাশ, জুলু, বাকীর নিয়ন্ত্রণে। যেহেতু আমাদের বাসা পশ্চিমে, ফলে জুলু আর বাকীর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলি। মূলত উদ্দেশ্য ছিল, অন্ধকার জগতের তথ্য নেওয়া। ওরাও সহযোগিতা করত। পরবর্তী সময়ে, আগারগাঁওয়ের আরেক সন্ত্রাসীর গুলিতে মারা যায় শামীম।
যাই হোক। তখন শুধু শেওড়াপাড়া না, পুরো ঢাকা শহরেই সন্ত্রাসীর রাজত্ব। পুলিশ কর্তৃপক্ষ যদিও শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা করেছে, কিন্তু উল্লেখ করার মতো কেউ তখনো গ্রেপ্তার হননি। এমনি এক পরিস্থিতিতে, ফেনসিডিল পর্ব শুটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলাম। নিজস্ব সোর্সের তথ্য মতো, জুলু এবং বাকীর শরণাপন্ন হই। সব বলি। ওরা একবাক্যে বলে না, পারবা না। বিস্তারিত বোঝাই তাদের। এক সময় বাকী সম্মত হয়। কিছুক্ষণ পর, জুলুও সম্মতি দেয় শর্তসাপেক্ষে। পরদিন দুপুরে, স্পটে নিয়ে যাবে আমাকে। তবে ক্যামেরায় ওদের কাউকে আনা যাবে না। একই সঙ্গে স্পটের সুনির্দিষ্ট নামও বলা যাবে না। ওদের প্রস্তাবে, রাজি হলাম।
পরদিন বেলা ৩-৩০টার দিকে, ইউনিটসহ আগারগাঁও মোড়ে মাইক্রোবাস নিয়ে বসে আছি। একটু পরই, বেজে উঠল অপরিচিত একটি ফোন। তখন একটেল মোবাইল ব্যবহার করতাম। ইনকামিং কলে, টাকা কাটত। আবার কলার আইডির জন্য, আলাদা টাকা! কিন্তু মোবাইলে কলার আইডি ছিল না।
ফোনে ‘হ্যালো’ বলতেই, গায়েবি আওয়াজ!
গাড়ি সামনে আনেন। বিএনপি বস্তির সামনে। (তখন বাংলাদেশ বেতারের পাশে বস্তি ছিল। নাম ছিল বিএনপি বস্তি। বর্তমানে সেখানে রাস্তা হয়েছে। বিভিন্ন অফিস-হাসপাতাল আছে।)
কোথায় যাব?
সামনে আগান। বেতার অফিসের পাশের বস্তিতে নামেন। আমরা আপনাদের নিয়া যামু।
লাইন কেটে গেল। আমরাও গাড়ি সামনে নিলাম। থামলাম, তাদের কথামতো।
কিছুক্ষণ পর, ৭-৮ জন ষন্ডা টাইপের তরুণ আমাকে উদ্দেশ করে বললেন হাঁটতে থাকেন। কোনো কথা বলবেন না।
ওরা আমাদের এক রকম স্কট করে, জঙ্গল পেরিয়ে একটি টিলার ওপর নিয়ে গেল। আগারগাঁওয়ে এমন নির্জন জায়গা রয়েছে, কল্পনাও করিনি। সমতল থেকে বেশ উঁচু জায়গা। মাঝখানে, ছোট্ট খাল। সেই খাল, ঝোপঝাড় পেরিয়ে, ইউনিট নিয়ে টিলার ওপরে উঠলাম। দেখলাম, আরও ২০-২৫ জন ছেলে সশস্ত্র অবস্থায়। ওরা যেন চোখ দিয়ে, আমাদের গিলে খাচ্ছে! ইউনিটের প্রধান ক্যামেরাম্যান মিলু ভাই (সম্ভবত এখন এএফপিতে) ফিসফিসিয়ে বললেন ভাই, তওবা পড়েন। কিছু একটা হইতে পারে। আমিও পড়তাছি!
ভেতরে ভেতরে ভয় পেলাম। বেড়ে গেল হার্টবিট! জোর করে মুখে হাসি এনে ফিসফিসিয়ে বললাম আরে, কিছুই হবে না। আমি ওদের চিনি। এ ছাড়া আমাদের নিরাপত্তার সমস্যা নেই। আসলে, এটি সত্য না। তবু তাকে আশ^স্ত করলাম। মিনিট দশেক পর, একটি ঘর থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী জুলু বের হয়ে এলো। আমার উদ্দেশে বলল চা খাবা?
না। কাজ আছে। আমাদের শুটিংয়ের ব্যবস্থা করলেই হবে। এরপর জনকণ্ঠে যাব। হার্টবিট তখন, চরম পর্যায়ে। জীবনে এমন ভয় কখনো পাইনি।
জুলু, বিশাল দেহী একজনকে ইশারা করলেন। তিনি আমাদের উদ্দেশে বললেন আসেন।
লোকটি পরপর ৩টি টিনের ঘরের তালা খুলে দিলেন। সেটা গুদাম ঘরের মতো। একের পর এক, বড় বড় কার্টুন। পরে জানা গেল, প্রতি কার্টুনে ৫০০ বোতল! এ রকম প্রায় ৩০০ কার্টুন প্রতি ঘরে। এর মানে ৩ ঘরে আছে- ৪,৫০,০০০ বোতল ফেনসিডিল! তখন প্রতি বোতলের দাম, সম্ভবত ৭০-৮০ টাকা। বোঝা গেল, এখান থেকেই আগারগাঁও-মিরপুরে ফেনসিডিল সাপ্লাই হচ্ছে।
শুটিং শুরু হলো। ক্যামেরা প্যান হচ্ছে। সারি সারি কার্টুন। একটার মুখ খোলা। কাজ শেষে জুলুকে বললাম একজনকে দাও, কথা বলার জন্য? তার মুখ দেখাব না। পেছন দিয়ে সে কথা বলবে। আমি তার সামনে থাকব। একটু চিন্তা করে, বাকীর অনুরোধে জুলু রাজি হলো। আমরা শুটিং শেষ করে, জুলু-বাকীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিলাম।
যাওয়ার সময় জুলু বলল দেইখো, ভেজাল জানি না হয়?
না, হবে না। নিশ্চিত থাকো। তোমাদের নাম বা জায়গার নাম বলা হবে না।
অনুষ্ঠান প্রচার হলো। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডেকে পাঠালেন। সে আরেক ঘটনা। পরবর্তী সময়ে, সরকার পরিবর্তন হলো। একদিন পত্রিকা মারফত জানা গেল প্রথমে শীর্ষ সন্ত্রাসী জুলু ক্রসফায়ারে এবং পরে বাকীও অন্য সন্ত্রাসীর গুলিতে মারা গেছে।
লেখক : সাংবাদিক
পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে আজকাল একটা ধাঁধার খুব চর্চা হচ্ছে। তাদের যদি জিজ্ঞেস করেন, বিজেপি কেমন দল! একশো জনের মধ্যে অন্তত নব্বই জন উত্তর দেবে, বিজেপি চরম সাম্প্রদায়িক দল। মেরুকরণের রাজনীতি করা ছাড়া তাদের অন্য কোনো ইস্যু নেই।
বিজেপি যত অস্বীকার করুক না কেন, অভিযোগটা নিশ্চিত সত্য। খোদ প্রধানমন্ত্রী থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে ভাষায় মাঝেমধ্যে নির্দিষ্ট একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেন তা শালীনতা, শিষ্টাচারের যাবতীয় মাপকাঠি অতিক্রম করে যায়। বিজেপি সরকারের আমলে দেশে দাঙ্গা যে বেড়েছে তার জন্য আলাদা করে কোনো সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ দরকার নেই। একটু আধটু চোখ-কান খোলা থাকলেই বোঝা যায়। ফলে বিজেপি সাম্প্রদায়িক তা নিয়ে এ রাজ্যের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বড় অংশের কোনো সন্দেহ নেই।
সিপিআই-এম বা বাম দলগুলো সম্বন্ধে মোটের ওপর সংখ্যালঘুদের ধারণা তাদের আমলে আর যাই হোক সেভাবে দাঙ্গা হয়নি। তাহলে ধরেই নেওয়া যায় যে বামেরা ধর্মনিরপেক্ষ। আপাত সেকুলার বামেরা নিশ্চিত। কিন্তু আপনি মুসলিম অন্দরমহলে খোঁজ নিন, দেখবেন তাদের মূল্যায়নে বামেরা সূক্ষ্ম সাম্প্রদায়িক। দাঙ্গা তাদের সময় না হলেও মুসলমানদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা নিতেও বামেদের কেউ দেখেনি। সাচার কমিটির রিপোর্টে তো বটেই, আমি যে ছবি করেছিলাম, ‘মুসলমানের কথা’, তা দেখলেও বৈষম্য স্পষ্ট হয়ে যায়।
তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পেছনে মুসলমানদের বড় ভূমিকা ছিল। তারা অনেক স্বপ্ন নিয়ে চিরাচরিত বামপন্থি রাজনীতির সমর্থন ছেড়ে রাতারাতি দক্ষিণপন্থি তৃণমূলের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল দলে দলে। এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝতে পেরেছিলেন যে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকতে গেলে সংখ্যালঘুদের আস্থা অর্জন দরকার। তিনি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কাজের কাজ করুন না করুন, নিজের মুসলিম দরদী ইমেজ নির্মাণে প্রথম থেকেই সক্রিয় হলেন। ইমাম ও মুয়াজ্জিনের ভাতা বাড়ালেন। কবরখানা সংস্কার করলেন। আরও কিছু কিছু কাজ করলেন। তবে যেটুকু করলেন তার চেয়ে দ্বিগুণ করলেন বিজ্ঞাপন। ঈদের নামাজের দিন শত শত ধর্মভীরু মুসলমানের সঙ্গে রেড রোডে প্রকাশ্যে হিজাব মাথায় যোগ দিলেন। কথায় কথায় সভা-সমাবেশে ইনশাআল্লাহ বলতে লাগলেন। এই হাঁক ডাকে দেশ দেশান্তরে সংখ্যালঘুদের অধিকাংশের কাছে ‘আমি তোমাদের লোক’ বার্তাটি সযত্নে পৌঁছে দিলেন।
ফলে মুসলিম সমাজের উন্নতি ঘটুক না ঘটুক এ বঙ্গের রাজনীতিতে মেরুকরণ নতুন এক মাত্রা পেল। বিজেপি গরমাগরম বক্তৃতা দিয়ে জানান দিতে লাগল যে এ রাজ্য পাকিস্তান, নিদেনপক্ষে কাশ্মীর হবেই। গুজব ছড়িয়ে তারা সংখ্যাগুরু মনে দেশভাগের স্মৃতি উসকে দিয়ে বিদ্বেষ নির্মাণে সক্রিয় হলো। মমতা ব্যানার্জি সরকারের আপাত সংখ্যালঘু ‘প্রেম’ এ রাজ্যে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ভিত শক্ত করে তুলতে লাগল। সরকারিভাবেই এখন স্পষ্ট, পশ্চিমবঙ্গে আরএসএস ও সংঘ পরিবারের অন্যান্য শাখা সংগঠনের রমরমা বিপুলভাবে ক্রমেই বাড়ছে। আরএসএস, দুর্গা বাহিনী সরকারি স্কুলের ভেতরে অস্ত্র ট্রেনিং নিচ্ছে এরকম অজস্র ছবি মিডিয়াতে মাঝেমধ্যেই আমরা দেখতে পাই। রামনবমীর দিনে প্রশাসনের নাকের ডগায় উন্মত্ত অস্ত্র মিছিল এখন এ রাজ্যে দস্তুর হয়ে গেছে।
কোনো রাজ্যে সরকারের অন্তত পরোক্ষ মদদ না থাকলে আরএসএস প্রভাব বাড়াতে পারে না। এ রাজ্যে হিন্দু সংহতি নামে এক চরম সাম্প্রদায়িক সংগঠন আছে। অনেকে বলেন তাদের কর্মী-সমর্থকদের বড় অংশ তৃণমূল দলের সঙ্গেও যুক্ত। মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে বিরোধী বাম ও কংগ্রেসের বড় অভিযোগ যে তিনি বিজেপির বিপক্ষে লড়াইয়ের যত কথা প্রকাশ্যে বলেন তা নিতান্তই লোক দেখানো। আরএস নেতারাও ঠারেঠোরে স্বীকার করেন এ রাজ্য বিজেপি না জিতলেও হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির বিপুল বিস্তারে কোনো সমস্যা নেই। কয়েক মাস আগে মমতা ব্যানার্জি নিজে খোলাখুলিভাবে বলেছেন যে, আরএসএসে সবাই খারাপ নন। পরিণত রাজনীতিবিদের এটুকু নিশ্চয়ই অজানা নয়, যে দ্বন্দ্ব নিছক ব্যক্তি প্রশ্নের নয়, পুরোপুরি মতাদর্শের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের মুসলিম দরদ নিয়ে ইদানীং মুসলমান সমাজেই অনেক প্রশ্ন উঠছে।
দিন যত যাচ্ছে তত আতস কাচে ফেলে এই সরকার সংখ্যালঘু স্বার্থে কতটা কী করেছে তার বিশ্লেষণ ইতিমধ্যেই পুরোদমে শুরু হয়ে গেছে। প্রথমত মুসলিম সমাজ একটা কৌম বা একমাত্রিক নয়। এই সমাজেও বহু মাত্রা রয়েছে। বিশেষ করে কয়েক বছরের মধ্যে বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে মধ্যবিত্ত এক শ্রেণির জন্ম হয়েছে। অনেক ডাক্তার, প্রযুক্তিবিদ, অধ্যাপক উঠে এসেছেন। তরুণদের মধ্যেও শিল্পী-সাহিত্যিকদের অনেক নতুন নতুন নাম ইদানীং সামনে আসছে। যদিও পশ্চিমবঙ্গের তিরিশ শতাংশ বাঙালি মুসলমানের মধ্যে শতাংশের হিসাবে হয়তো এই মিডিল ক্লাস দুই শতাংশ মাত্র। তারা সরকারের নীতি ও কর্মপদ্ধতি নিয়ে মতামত দিতে শুরু করেছেন। সরকারি পর্যায়ে বাঙালি মুসলমানদের গুরুত্ব না থাকায় এই উদীয়মান মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে ক্ষুব্ধ করে তুলছে। তৃণমূল দলের সমস্যা হচ্ছে তাদের নির্দিষ্ট কোনো মতাদর্শ না থাকা। ফলে সংখ্যালঘুদের মধ্যেও তৃণমূল মুখ বলে যারা পরিচিত তাদের ভয় করলেও, নিজেদের সমাজ তাদের পছন্দ করে না। এখনো মুসলমানদের অধিকাংশই খুব গরিব। তাদের অর্থনীতি আজও মূলত কৃষিনির্ভর। গ্রামীণ সর্বহারার বড় অংশ মুসলিম ও তফসিলি, আদিবাসী। তাদের অনেকেই এ রাজ্যে চাকরি না পেয়ে ভারতের অন্যান্য রাজ্যে রুটি রোজগারের আশায় চলে যেতে বাধ্য হন। কভিডের সময় কঠিন পরিস্থিতিতে পরিযায়ী শ্রমিকদের যে ঢল নেমেছিল এ রাজ্যে, বলাবাহুল্য তার বড় সংখ্যক মানুষ মালদা, মুর্শিদাবাদ এবং অন্যান্য মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার।
২০১১ সালে তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এসেছে। আর এখন ২০২৩ সাল। সাচার কমিটির রিপোর্টে সংখ্যালঘুদের দুর্দশা ছিল নির্বাচনের আগে বামেদের বিরুদ্ধে মমতার বড় অস্ত্র। সেই রিপোর্ট আদৌ কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে তা নিয়ে স্বয়ং রাজেন্দ্র সাচার মৃত্যুর আগে সন্দিহান ছিলেন। বিশিষ্ট সমাজকর্মী হর্ষ মান্দার ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের একাধিক রিপোর্টেও সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিয়ে অনেক প্রশ্ন তোলা হয়েছে। নিরাপত্তা নিয়েও ইদানীংকালে মুসলিম জনসমাজে আতঙ্ক বাড়ছে। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে তো সমস্যা জটিল হচ্ছেই। এখানেও বেশ কিছু ঘটনা এই সরকারের নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। পশ্চিমবঙ্গের শিল্পাঞ্চল আসানসোলের এক নির্বাচনের আগে মর্মান্তিকভাবে স্থানীয় মসজিদের ইমাম রশিদির একমাত্র ছেলে খুন হন প্রকাশ্যে দিনের বেলায়। সেই ঘটনায় দোষীদের শাস্তি দূরের কথা, যার বিরুদ্ধে ঘটনায় ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ ওঠে, বিজেপির সেই নেতাই দল বদলে তৃণমূল কংগ্রেসে এলে তাকে শুধু স্বাগত জানানোই নয়, ঘটা করে উপনির্বাচনে প্রার্থীও করা হয়। গ্রামেগঞ্জে খোঁজ নিলে দেখবেন কত ওয়াক্ফ সম্পত্তি শাসক দলের নেতারা দখল করে রেখেছেন। সব সরকারের নির্দেশেই হচ্ছে এমন কথা বলব না। কিন্তু জনমনে দলের নেতাদের যাবতীয় কুকর্মের দায় সরকারের বিরুদ্ধেই যায়। মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়েও অনেক দুর্নীতির কথা কান পাতলেই শোনা যাবে। হাওড়ায়, ছাত্রনেতার রহস্যজনক মৃত্যু নিশ্চিত সংখ্যালঘুদের ব্যথিত করেছে। আরও ক্ষুব্ধ করেছে ভাঙ্গর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক তরুণ, মৃদুভাষী জনপ্রিয় নৌশাদ সিদ্দিকীকে প্রশাসনিকভাবে হেনস্তা করা।
এই লেখা লিখতে লিখতে জানলাম কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন শিক্ষানীতি মমতা সরকার মেনে নিয়েছেন। ধীরে ধীরে আরও অনেক নীতিই তিনি হয়তো মেনে নেবেন। ঈদে ছুটি যদি থাকে একদিন অন্যান্য সম্প্রদায়ের পরবে তা অনেক বেশি থাকে কেন, কেউ বলতে পারেন না। দুর্গাপূজা তো এখন পশ্চিমবঙ্গের ব্র্যান্ড। ফলে তার উৎসব তো একমাস হলেও অবাক হওয়ার নেই। ইদানীং ট্যুরিজমের নামে গঙ্গা আরতির চল বাড়ছে। বজরং, গণেশ, জগদ্ধাত্রী পূজা বাড়ছেই। নতুন এক কুম্ভ সেও এ রাজ্যে জায়গা করে নিয়েছে। প্রথমেই তাই লিখেছি, বিজেপি যদি সাম্প্রদায়িক হয়, যদি ধরেও নিই বামপন্থি দলগুলো সূক্ষ্ম সাম্প্রদায়িক। ধাঁধা ওটাই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
তৃণমূল তাহলে ঠিক কী!
লেখক: প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা ও লেখক
কেউ যদি বলেন মশা না থাকলে, এক শ্রেণির মানুষের পকেট ভারী হবে না; তাহলে কি বাড়তি বলা হবে? কেউ যদি বলেন, মশাবাহিত রোগের কারণেই বেঁচে আছেন লাখ লাখ মানুষ এটাও কি ভুল উক্তি? যারা এমন কথা বলেন, তাদের যুক্তিটাও কিন্তু ফেলে দেওয়ার মতো না।
তারা বলছেন, মশা কামড়াবে। এর ফলে মানুষের রোগ হবে। মানুষ যাবেন চিকিৎসকের কাছে। তারা আক্রান্ত রোগের বিরুদ্ধে ওষুধ দেবেন। এর জন্য আছে বিভিন্ন ওষুধের কারখানা। শুধু ওষুধ নয়। আছে কয়েল এবং অ্যারোসল। মশা না থাকলে, রোগ হবে না। রোগ না হলে, এসব ওষুধেরও দরকার হবে না। তখন কী অবস্থা হবে? সুতরাং মশাকে ভালোমতো যত্ন করতে হবে। তাদের প্রজনন বৃদ্ধি করার সুযোগ দিতে হবে। মানুষ যাতে ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, চিকুনগুনিয়া বা ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে! না হলে তো হবে না? মশার বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করার পর, মশা না থাকলে এই টাকাগুলো লস হবে না! বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়ে যাবে। সুতরাং মশাকে বাঁচাতে হবে। মানুষ রোগাক্রান্ত হবে। ডাক্তারের কাছে যাবে। চিকিৎসা নেবে। এর বাইরে সিটি করপোরেশন যে টাকা নয়ছয় করছে, সেটা তেমন কিছু না! মশা নিধনের নামে, এই প্রতিষ্ঠান ভুল পদ্ধতি প্রয়োগ করে, ২৭ বছরে গচ্চা দিয়েছে ১২৭৫ কোটি টাকা। এই টাকাটা কার! ক্ষতিটা কোন পক্ষের হলো?
গতকাল দেশ রূপান্তরের প্রথম পাতায় প্রকাশিত ‘মশার পেটে ১২৭৫ কোটি’ শীর্ষক সংবাদের মাধ্যমে জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের কাছ থেকেই। গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম দেখে তিনি বলেছিলেন, ঢাকা শহরে মশা নিধনে যে প্রক্রিয়ায় কাজ করা হয় তা ভুল।
মেয়রের এই স্বীকারোক্তি ধরে নিলে এত দিন যে ভুল পদ্ধতিতে মশা নিধনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে, তাতে এর পেছনে যে খরচ হয়েছে তা পুরোটাই গচ্চা গেছে। ডিএনসিসির বাজেট পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ওষুধ কেনা ও ছিটানোয় খরচ হয়েছে ৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। আর যন্ত্রপাতি কেনায় খরচ ৬৫ লাখ টাকা। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ওষুধ কেনা ও প্রয়োগে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭৬ কোটি টাকা। আর যন্ত্রপাতি কেনায় বরাদ্দ ২৫ কোটি টাকা। ডিএসসিসির মশক নিধন বিভাগের বর্তমান স্থায়ী জনবল ৩৭৫ জন। তারা সবাই সরকারি বেতন কাঠামোতে বেতন-ভাতা পেয়ে থাকেন। তাদের মাসিক গড় বেতন ন্যূনতম ৫০ হাজার টাকা। সেই হিসাবে ডিএসসিসি স্থায়ী জনবলের মাসে বেতন-ভাতা দিচ্ছে ১ কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার। গত ১১ বছরে বেতন-ভাতায় খরচ ২৪৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর বাইরে ডিএসসিসির মশক নিধন বিভাগে তিন বছর ধরে অস্থায়ীভাবে কাজ করছে ৭১০ জন। তাদের দৈনিক গড় বেতন ৫৫০ টাকা। সেই হিসাবে দৈনিক বেতন খাতে খরচ ৩ লাখ ৯০ হাজার ৫০০ টাকা। আর প্রতি মাসে ১ কোটি ১৭ লাখ ১৫ হাজার টাকা। এই হিসাবে ৩ বছর তাদের বেতন দেওয়া হয়েছে ৪২ কোটি ১৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
এই যে বছর বছর টাকা দেওয়া হচ্ছে, এই টাকাটা জনগণের। মশার কামড় খাবে জনগণ, রোগাক্রান্ত হবে জনগণ এবং আক্রান্ত রোগ থেকে সুস্থ অথবা মরবেও জনগণ। তাহলে, সমাধানটা কী হলো?
সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মশা নিধনে সত্যিই যদি আন্তরিক হয়, তাহলে দেশের জনগণকে প্রথমেই সচেতন করার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। এরপর যত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি রয়েছে, তার প্রয়োগও সহজ হয়ে যাবে। মশামুক্ত শহর গড়তে চাইলে অযথা কোটি কোটি টাকা গচ্চা না দিয়ে, এ বিষয়ে অভিজ্ঞদের পরামর্শমতো অগ্রসর হলেই সমাধান আসবে।
বাংলাদেশের উনিশতম রাষ্ট্রপতি, প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ জিল্লুর রহমান ২০১৩ সালের এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন। ১৯২৯ সালের ৯ মার্চ বর্তমান কিশোরগঞ্জের ভৈরবে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাবা মেহের আলী মিঞা ছিলেন আইনজীবী, ময়মনসিংহ লোকাল বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং জেলা বোর্ডের সদস্য। ১৯৪৫ সালে ভৈরব কেবি হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে ১৯৪৭ সালে আইএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫২ সালে ইতিহাসে বিএ (অনার্স) ও ১৯৫৪ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৭ সালে কলেজে পড়ার সময় ‘সিলেটের গণভোটে’ কাজ করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্যে আসেন জিল্লুুর রহমান। জিল্লুর রহমান বায়ান্নর ১৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলার ঐতিহাসিক ছাত্র সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন। ২০ ফেব্রুয়ারি যে ১১ ছাত্রনেতার নেতৃত্বে ২১ ফেব্রুয়ারিতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত হয়, জিল্লুর রহমান ছিলেন তাদের অন্যতম। ১৯৫৩ সালে তিনি ফজলুল হক হল ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালে কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন। বাষট্টির সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ছেষট্টির ৬ দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানসহ প্রতিটি গণ-আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সদস্য নিযুক্ত হন। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র পরিচালনা এবং জয়বাংলা পত্রিকার প্রকাশনায় যুক্ত ছিলেন তিনি। বাহাত্তর সালে গণপরিষদ সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নে অংশ নেন এবং ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৭৫ সালে ‘বাকশাল’ গঠিত হলে তিনি বাকশালের চার সেক্রেটারির একজন হন। ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর জিল্লুর রহমান একটানা প্রায় চার বছর কারাবন্দি ছিলেন। ২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি জিল্লুর রহমান বাংলাদেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। ২০১৩ সালের ২০ মার্চ সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জিল্লুর রহমান মৃত্যুবরণ করেন।
আগের ইনিংসের মতোই ব্যর্থ উসমান খাজা। পারেননি ডেভিড ওয়ার্নারও। প্রথম ইনিংসের দুই সেঞ্চুরিয়ানও ফিরে গেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংয়ে তাই খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায় নেই অস্ট্রেলিয়া। তবুও তৃতীয় দিন শেষে এগিয়ে আছে তারা।
ওভালে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে ২৯৬ রানে আটকে দেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট হারিয়ে ১২৩ রান করে অসিরা। এগিয়ে আছে ২৯৬ রানে।
দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিংয়ের শুরুটা ভালো করেছে ভারত। অস্ট্রেলিয়াকে চেপে ধরেছে তারা।
দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও উসমান খাজা ফেরেন ২৪ রানের মধ্যেই। মারনাস লাবুশান ও স্টিভেন স্মিথের ৬২ রানের জুটি ভাঙেন রবীন্দ্র জাদেজা, পরে ট্রাভিস হেডকেও ফেরান এই স্পিনার। টেস্ট ক্যারিয়ারে অষ্টমবারের মতো স্মিথকে আউট করেছেন জাদেজা।
তৃতীয় দিন শেষে মারনাস লাবুশানের সঙ্গে অপরাজিত আছেন ক্যামেরুন গ্রিন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: অস্ট্রেলিয়া: ৪৬৯ ও ৪৪ ওভারে ১২৩/৪ (লাবুশেন ৪১*, স্মিথ ৩৪; জাদেজা ২/২৫, উমেশ ১/২১)ভারত ১ম ইনিংস: ৬৯.৪ ওভারে ২৯৬ (রাহানে ৮৯, শার্দূল ৫১, জাদেজা ৪৮; কামিন্স ৩/৮৩, গ্রিন ২/৪৪, বোল্যান্ড ২/৫৯)।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।