
কেউ যদি বলেন মশা না থাকলে, এক শ্রেণির মানুষের পকেট ভারী হবে না; তাহলে কি বাড়তি বলা হবে? কেউ যদি বলেন, মশাবাহিত রোগের কারণেই বেঁচে আছেন লাখ লাখ মানুষ এটাও কি ভুল উক্তি? যারা এমন কথা বলেন, তাদের যুক্তিটাও কিন্তু ফেলে দেওয়ার মতো না।
তারা বলছেন, মশা কামড়াবে। এর ফলে মানুষের রোগ হবে। মানুষ যাবেন চিকিৎসকের কাছে। তারা আক্রান্ত রোগের বিরুদ্ধে ওষুধ দেবেন। এর জন্য আছে বিভিন্ন ওষুধের কারখানা। শুধু ওষুধ নয়। আছে কয়েল এবং অ্যারোসল। মশা না থাকলে, রোগ হবে না। রোগ না হলে, এসব ওষুধেরও দরকার হবে না। তখন কী অবস্থা হবে? সুতরাং মশাকে ভালোমতো যত্ন করতে হবে। তাদের প্রজনন বৃদ্ধি করার সুযোগ দিতে হবে। মানুষ যাতে ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, চিকুনগুনিয়া বা ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে! না হলে তো হবে না? মশার বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করার পর, মশা না থাকলে এই টাকাগুলো লস হবে না! বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়ে যাবে। সুতরাং মশাকে বাঁচাতে হবে। মানুষ রোগাক্রান্ত হবে। ডাক্তারের কাছে যাবে। চিকিৎসা নেবে। এর বাইরে সিটি করপোরেশন যে টাকা নয়ছয় করছে, সেটা তেমন কিছু না! মশা নিধনের নামে, এই প্রতিষ্ঠান ভুল পদ্ধতি প্রয়োগ করে, ২৭ বছরে গচ্চা দিয়েছে ১২৭৫ কোটি টাকা। এই টাকাটা কার! ক্ষতিটা কোন পক্ষের হলো?
গতকাল দেশ রূপান্তরের প্রথম পাতায় প্রকাশিত ‘মশার পেটে ১২৭৫ কোটি’ শীর্ষক সংবাদের মাধ্যমে জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের কাছ থেকেই। গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম দেখে তিনি বলেছিলেন, ঢাকা শহরে মশা নিধনে যে প্রক্রিয়ায় কাজ করা হয় তা ভুল।
মেয়রের এই স্বীকারোক্তি ধরে নিলে এত দিন যে ভুল পদ্ধতিতে মশা নিধনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে, তাতে এর পেছনে যে খরচ হয়েছে তা পুরোটাই গচ্চা গেছে। ডিএনসিসির বাজেট পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ওষুধ কেনা ও ছিটানোয় খরচ হয়েছে ৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। আর যন্ত্রপাতি কেনায় খরচ ৬৫ লাখ টাকা। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ওষুধ কেনা ও প্রয়োগে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭৬ কোটি টাকা। আর যন্ত্রপাতি কেনায় বরাদ্দ ২৫ কোটি টাকা। ডিএসসিসির মশক নিধন বিভাগের বর্তমান স্থায়ী জনবল ৩৭৫ জন। তারা সবাই সরকারি বেতন কাঠামোতে বেতন-ভাতা পেয়ে থাকেন। তাদের মাসিক গড় বেতন ন্যূনতম ৫০ হাজার টাকা। সেই হিসাবে ডিএসসিসি স্থায়ী জনবলের মাসে বেতন-ভাতা দিচ্ছে ১ কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার। গত ১১ বছরে বেতন-ভাতায় খরচ ২৪৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর বাইরে ডিএসসিসির মশক নিধন বিভাগে তিন বছর ধরে অস্থায়ীভাবে কাজ করছে ৭১০ জন। তাদের দৈনিক গড় বেতন ৫৫০ টাকা। সেই হিসাবে দৈনিক বেতন খাতে খরচ ৩ লাখ ৯০ হাজার ৫০০ টাকা। আর প্রতি মাসে ১ কোটি ১৭ লাখ ১৫ হাজার টাকা। এই হিসাবে ৩ বছর তাদের বেতন দেওয়া হয়েছে ৪২ কোটি ১৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
এই যে বছর বছর টাকা দেওয়া হচ্ছে, এই টাকাটা জনগণের। মশার কামড় খাবে জনগণ, রোগাক্রান্ত হবে জনগণ এবং আক্রান্ত রোগ থেকে সুস্থ অথবা মরবেও জনগণ। তাহলে, সমাধানটা কী হলো?
সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মশা নিধনে সত্যিই যদি আন্তরিক হয়, তাহলে দেশের জনগণকে প্রথমেই সচেতন করার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। এরপর যত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি রয়েছে, তার প্রয়োগও সহজ হয়ে যাবে। মশামুক্ত শহর গড়তে চাইলে অযথা কোটি কোটি টাকা গচ্চা না দিয়ে, এ বিষয়ে অভিজ্ঞদের পরামর্শমতো অগ্রসর হলেই সমাধান আসবে।
পানির স্বাভাবিক গতি এবং গন্তব্য নিয়ে আলোচনা করার প্রয়োজন কি আছে? এর স্বাভাবিক উত্তর হবে এটা তো সবাই জানে পানি ওপর থেকে নিচে প্রবাহিত হয় এবং নদী সৃষ্টির মাধ্যমে সাগরে গিয়ে মেশে। এর কোনো সীমানা নেই, দেশের নাম পাল্টায়, সীমানা পাল্টায় কিন্তু পানি বয়ে চলে সেই প্রাকৃতিক নিয়মেই। নদী বয়ে চলে উজান থেকে ভাটির দিকে। এই যে বিষয়টি এত স্বাভাবিক, সেই ব্যাপারটা নিয়ে অস্বাভাবিক জটিলতা তৈরি হচ্ছে কেন? একটু খোলাসা করে বলা যাক! ভারত বাংলাদেশের উজানে, সেখান থেকে পানি গড়িয়ে যাবে সমুদ্রে, মাঝখানে পড়েছে বাংলাদেশের ভূখণ্ড। বাংলাদেশের উজানের ১৫ গুণ বেশি অঞ্চলজুড়ে যে বৃষ্টিপাত হয় এবং হিমালয় থেকে বরফ গলে যে পানি আসে তা বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে বয়ে যায় সমুদ্রের পানে। প্রাকৃতিক এই নিয়মকে রাজনৈতিকভাবে বাধাগ্রস্ত করে চলেছে বাংলাদেশের উজানের দেশ ভারত। শুধু নৈতিকভাবে নয়, আন্তর্জাতিক সব বিধিবিধানকেও তোয়াক্কা করছে না তারা। একাধিক দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীকে আন্তর্জাতিক নদী বলা হয়ে থাকে। সেই বিবেচনায় ভারত থেকে বয়ে আসা ৫৪টি নদীই আন্তর্জাতিক নদী। কিন্তু ভারত সেগুলোর ওপর এক বা একাধিক বাঁধ দিয়ে পানির প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করেছে। সহজভাবে কঠিন কথাটা হলো, ভারত বাংলাদেশকে পানির ন্যায্য প্রাপ্যতা থেকে বঞ্চিত করছে এবং করেই চলেছে।
তিস্তার উজানে ভারত ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ সীমান্তের ৬০ কিলোমিটার উজানে ৫৪টি ফটক বিশিষ্ট গজলডোবা বাঁধ নির্মাণ করেছে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় অংশে সেচের সম্প্রসারণ ঘটানো। এই বাঁধ দিয়ে প্রথম পর্যায়েই প্রায় ১০ লাখ হেক্টর, অর্থাৎ ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় সেচ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে ২১০ কিলোমিটার দীর্ঘ খাল করেছে তারা। এসব খাল একদিকে পশ্চিম-দক্ষিণে অগ্রসর পশ্চিমবঙ্গের মালদহ এবং মুর্শিদাবাদ জেলা পর্যন্ত পৌঁছেছে, অন্যদিকে পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহার জেলা পর্যন্ত গেছে। অর্থাৎ গজলডোবা বাঁধ একটি বিস্তৃত পরিধিতে সেচ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে নির্মিত হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে এর ফটক বন্ধ থাকে বলে বাংলাদেশ পানি পায় না। এখন যে নতুন দুটি খাল খনন করা হচ্ছে, তা এই প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের বাস্তবায়নের অংশ। এ প্রসঙ্গে একটা বিষয় উল্লেখ করতে হয়, পদ্মার উজানে ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে পানি নিয়ে যাওয়া হয়েছে ভাগীরথী নদীতে। যার ফলে পদ্মা হারিয়েছে তার স্বাভাবিক প্রবাহ, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশ। এ নিয়ে বিরোধ এবং বিতর্ক চলছেই। কিন্তু এই ফারাক্কা দিয়ে পানি অপসারণের একটি উচ্চ সীমা আছে, যার থেকে বেশি পানি নিতে পারবে না। এই সীমাটা হলো ৪০ হাজার কিউসেক। সে কারণেই যে ফিডার ক্যানেল দিয়ে গঙ্গার পানি ভাগীরথী নদীতে নেওয়া হয় তার সক্ষমতা এভাবেই নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু গজলডোবার বাঁধের মাধ্যমে ভারত কর্র্তৃক তিস্তার পানি অপসারণের কোনো উচ্চ সীমা নির্ধারিত নেই। ফলে ভারত ভাটির দেশের কথা কোনোভাবেই বিবেচনায় না নিয়ে নতুন নতুন খাল খননের মাধ্যমে তিস্তা নদীর পানি অপসারণের ক্ষমতা বাড়িয়েই চলেছে। আর বাংলাদেশ অঞ্চলে তিস্তা হারাচ্ছে তার বেঁচে থাকার মতো পানি। ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের ব্যাপারে আলোচনা হয় যে, তিস্তার পানির ৩৯ শতাংশ পাবে ভারত, ৩৬ শতাংশ পাবে বাংলাদেশ আর ২৫ ভাগ পানি থাকবে তিস্তার নিজের জন্য। তিস্তা নিজে না বাঁচলে তার অববাহিকার জীববৈচিত্র্য বাঁচবে কীভাবে? এরপর ২০০৭ সালে স্থির করা হয় ৪০ শতাংশ ভারত, ৪০ শতাংশ বাংলাদেশ এবং ২০ শতাংশ রাখা হবে নদীর জন্য সংরক্ষিত। কিন্তু চুক্তি না হওয়ায় গজলডোবা থেকে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় পানি আসার পরিমাণ শূন্য। ২০০-৩০০ কিউসেক পানি, যা আসে তা গজলডোবার ভাটির উপনদী থেকে।
এ পর্যন্ত তিস্তার উজানে ভারতের অনেক বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। ভারতের একজন প্রখ্যাত গবেষক গৌরী নুলকার দেখিয়েছেন যে, তিস্তার উজানে এবং এর বিভিন্ন উপনদীর ওপর ভারত আরও প্রায় ১৫টি বাঁধ কিংবা ব্যারাজ নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। এখনই তিস্তার প্রবাহ যা দাঁড়িয়েছে তার ওপর এগুলো বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ অংশে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তার কোনো প্রবাহ যে অবশিষ্ট থাকবে না, তা এক রকম নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। এই ভয়াবহ বিপদকে বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এসব পরিকল্পনার বিরোধিতা করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ তিস্তা একটি আন্তর্জাতিক নদী।
ভারতের সঙ্গে তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন চুক্তি করার পাশাপাশি বাংলাদেশের জন্য জরুরি বিষয় হলো, জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক নদ-নদীসংক্রান্ত ১৯৯৭ সালের সনদে (কনভেনশনে) স্বাক্ষর করা। কারণ এই সনদে আন্তর্জাতিক নদ-নদীর প্রতি অংশীদারি দেশগুলোর আচরণ সম্পর্কে বিস্তারিত নীতিমালা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এতে স্বাক্ষর করলে এবং অন্যান্য দেশগুলোকেও স্বাক্ষর করতে উদ্বুদ্ধ করলে শুধু ভারত-বাংলাদেশ নয়, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তানসহ উপমহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে নদ-নদী সম্পর্কে বিরাজমান বিভিন্ন মতপার্থক্য নিরসনের সর্বসম্মত এবং আন্তর্জাতিক ভিত্তি সৃষ্টি হবে। অভিন্ন নদীর পানি পাওয়া এবং ব্যবহার করার ক্ষেত্রে ভাটির দেশের ন্যায়সঙ্গত স্বার্থ এই সনদে স্বীকৃত হয়েছে। ফলে এই সনদে স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় এই সনদে স্বীকৃত অধিকারগুলো আরও জোরের সঙ্গে তুলে ধরতে পারবে। আজকের যুগে যে কোনো রাষ্ট্র তার সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সমর্থন প্রত্যাশা করে। ফলে অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দেখাতে পারবে যে, তার দাবি যৌক্তিক এবং এতে আন্তর্জাতিক কনভেনশনের সমর্থন রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ নদ-নদীবিষয়ক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে তার দাবিগুলো তুলে ধরে দেখাতে পারবে যে, তার দাবিগুলোর ভিত্তি অনুরোধ বা সদিচ্ছা নয়, তা আন্তর্জাতিক আইন দ্বারাও স্বীকৃত। এসব জানা সত্ত্বেও বাংলাদেশ আজও কেন জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক নদ-নদীসংক্রান্ত ১৯৯৭ সালের সনদে (কনভেনশনে) স্বাক্ষর করেনি, তা মোটেও বোধগম্য হচ্ছে না। উজানের দেশ হিসেবে ভারত সুবিধাজনক স্থানে আছে, ফলে ভারতের গরজ নাও থাকতে পারে। কিন্তু ভারত স্বাক্ষর না করলে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করবে না কেন? উজানের দেশ স্বাক্ষর না করলে ভাটির দেশ স্বাক্ষর করতে পারবে না এমন কোনো বাধ্যবাধকতা রয়েছে বলে তো জানা নেই। বাংলাদেশের নদ-নদী কোনো বিচ্ছিন্ন সত্তা নয়। অন্যান্য নদ-নদী ও জলাধারগুলোর সঙ্গে এগুলো ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। কিন্তু প্রকল্প গ্রহণের সময় নদ-নদী ও জলাধারগুলোর এই পরস্পর সম্পর্কের বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়। যেমন ব্রহ্মপুত্র ডান তীর বাঁধ প্রকল্পের প্রসারণ হিসেবে তিস্তা নদীর ডান তীর ধরে কাউনিয়া পর্যন্ত বাঁধ নির্মিত হয়েছে। এর ফলে বহু শাখা নদী থেকে তিস্তা নদী বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আবার পরবর্তী সময় তিস্তা সেচ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের জন্য খাল খনন করা হয়েছিল। ফলে পূর্ব থেকে রয়ে যাওয়া যে অসংখ্য খাল-বিল-নদী-নালা তিস্তা অববাহিকায় ছিল, সেগুলো অবহেলিত হয়ে মৃতপ্রায় হয়ে পড়ে। যেমন বাংলাদেশের ভেতর তিস্তার ডান তীরে ৭টি এবং বাম তীরে ৫টি শাখা এবং উপনদী আছে। এগুলোর সঙ্গে তিস্তা নদীর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এগুলোকে সংযুক্ত করা হলে তিস্তার বর্ষাকালের প্রবাহ এসব নদী-নালা-খাল দিয়ে সারা অববাহিকায় বিস্তৃত হতে পারবে। শুষ্ক মৌসুমে এই সঞ্চিত পানি সেচের জন্য ব্যবহৃত হতে পারবে এবং ফিরতি প্রবাহের মাধ্যমে তা তিস্তা নদীর প্রবাহ বৃদ্ধি করতে পারবে। সুতরাং ভারতের কাছ থেকে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের পাশাপাশি বর্ষাকালের পানি ধরে রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। ইতিমধ্যেই তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের আওতায় আরও দুটি খাল খননের জন্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সেচ বিভাগ প্রায় ১ হাজার একর পরিমাণ জমির মালিকানা পেয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের উপস্থিতিতে সেচ বিভাগকে জমির মালিকানা হস্তান্তর করে। এ জমির মাধ্যমে তিস্তার পূর্ব তীরে দুটি খাল তৈরি করতে পারবে প্রশাসন। জলপাইগুড়ি জেলা দিয়ে বয়ে যাওয়া আরেক নদী জলঢাকার পানিপ্রবাহও খালের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হবে।
পশ্চিমবঙ্গ সেচ বিভাগের এক সূত্রের বরাত দিয়ে টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়, তিস্তা এবং জলঢাকার পানি টানার জন্য কোচবিহার জেলার চ্যাংড়াবান্ধা পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি খাল খনন করা হবে। আরেকটি খালের দৈর্ঘ্য হবে ১৫ কিলোমিটার। এটি তিস্তার বাম পাশের তীরবর্তী এলাকায় খনন করা হবে। এই খালটি খনন করা হলে প্রায় এক লাখ কৃষক সেচসুবিধার আওতায় আসবেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ পদক্ষেপের আওতায় জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার এলাকার আরও অনেক কৃষিজমি সেচের আওতায় আসবে। সাধারণভাবেই বলা যায় যে, তিস্তার পানি বাংলাদেশে না এসে চলে যাবে জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার এলাকায়। তাহলে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ পানি পাবে কীভাবে?
সিকিমের ৭ হাজার ফুট উচ্চতায় জন্ম নেয়া তিস্তা ৪১৪ কিলোমিটার পার হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদীতে মিশেছে। তিস্তা সিকিমের বৃহত্তম নদী, পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম নদী। এর ১১০ কিলোমিটার বাংলাদেশে অবস্থিত হলেও ১২৫০০ বর্গকিলোমিটার অববাহিকার জনবসতি ও কৃষি অধ্যুষিত বৃহত্তম অঞ্চলটাই বাংলাদেশে। ভারতের একতরফা পানি নেয়ার কারণে শুধু তিস্তা নয়, বাংলাদেশের খাদ্যভাণ্ডার বলে পরিচিত উত্তরবঙ্গ বিশেষত রংপুর অঞ্চল কি শুকিয়ে মরবে?
লেখক: রাজনৈতিক সংগঠক ও কলামিস্ট
২০০০ সাল। শুরুর দিকের কথা। তখন নিয়মিতভাবে এটিএন বাংলায় প্রচারিত হচ্ছে অপরাধ বিষয়ক অনুষ্ঠান ‘মুখ ও মুখোশ’। সেই হিসেবে স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের প্রথম ক্রাইম অনুষ্ঠান। গ্রন্থনা, উপস্থাপনা এবং পরিচালনার দায়িত্বে ছিলাম আমি। পাক্ষিক হিসেবে অনুষ্ঠানটি নিয়মিত প্রচারিত হতো। এ ক্ষেত্রে সেই সময়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রয়াত মো. নাসিম ভাইয়ের একান্ত সহযোগিতা মনে রাখার মতো। আর এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমানের আন্তরিক সহযোগিতা ও সমর্থনে মুক্তভাবে কাজ করতে পেরেছি। একদিকে জনকণ্ঠের বিনোদন পাতার দায়িত্ব, বিটিভিতে সংবাদ পাঠ এবং অন্যদিকে তখন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির (বাচসাস) সাধারণ সম্পাদক। এর বাইরে আবার এটিএন বাংলার অনুষ্ঠান। স্বাভাবিকভাবেই দিন-রাত পরিশ্রম করতে হতো। মোটেও সময় পেতাম না। যে কারণে ‘মুখ ও মুখোশ’ অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হতো পাক্ষিক হিসেবে।
অনুষ্ঠানের বিষয় নির্বাচনের পর, এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানাতাম। সমস্যা হতো না। কিন্তু ‘ফেনসিডিল’ পর্ব নিয়ে অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা শুনে, সেই সময়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন
এত ফেনসিডিল পাইবা কই?
জি, পাব। আস্তানা জেনেছি। শুনেছি, সেখানে প্রায় ৪০-৫০ হাজার বোতল মজুদ আছে।
কোথায়, বলো?
ক্ষমা করবেন, ভাই। এটা বলতে পারব না। ওদের কথা দিয়েছি। না হলে, আমাকে মেরে ফেলবে।
কিচ্ছু হবে না, আমাকে বলো।
প্লিজ, ভাই।
একপর্যায়ে নাসিম ভাইকে বলতে বাধ্য হলাম। কিন্তু সব না। শুধু বললাম ফার্মগেট, আগারগাঁও, তালতলা, শেওড়াপাড়া, কাজিপাড়া, মিরপুর-১০, মাজার রোড আর গাবতলীর মধ্যে এটা আছে। সোর্স দিয়ে বের করেন।
তিনি হাসলেন। বললেন তুমি তো, ঢাকা শহরের ৪ ভাগের ১ ভাগ বললা। এইটা আমিও জানি। স্পেসিফিক জায়গাটা বলো।
হাত জোড় করে ক্ষমা চাইলাম। তিনি হাসলেন। বললেন আচ্ছা, তোমার কাজ করো। সিকিউরিটি নিয়ে চিন্তা করো না।
ভাই, সেদিন সিকিউরিটি লাগবে না। পরে আপনার সিকিউরিটির লোক, সব বলে দেবে।
তিনি হাসলেন। বললেন, ঠিক আছে। কোনো সমস্যা হলে তুমি ‘বেনু’কে (এপিএস) বলো।
আমাদের বাসা, পশ্চিম শেওড়াপাড়া। শ^শুরবাড়ি পূর্ব শেওড়াপাড়ার ইব্রাহিমপুর। সেখানে কালা জাহাঙ্গীর, আব্বাসের আস্তানা। মিরপুর ১০ থেকে ১৪ নম্বর হয়ে, কচুক্ষেত পর্যন্ত ওদের নিয়ন্ত্রণ। আবার পশ্চিম শেওড়াপাড়া শামীম, প্রকাশ-বিকাশ, জুলু, বাকীর নিয়ন্ত্রণে। যেহেতু আমাদের বাসা পশ্চিমে, ফলে জুলু আর বাকীর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলি। মূলত উদ্দেশ্য ছিল, অন্ধকার জগতের তথ্য নেওয়া। ওরাও সহযোগিতা করত। পরবর্তী সময়ে, আগারগাঁওয়ের আরেক সন্ত্রাসীর গুলিতে মারা যায় শামীম।
যাই হোক। তখন শুধু শেওড়াপাড়া না, পুরো ঢাকা শহরেই সন্ত্রাসীর রাজত্ব। পুলিশ কর্তৃপক্ষ যদিও শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা করেছে, কিন্তু উল্লেখ করার মতো কেউ তখনো গ্রেপ্তার হননি। এমনি এক পরিস্থিতিতে, ফেনসিডিল পর্ব শুটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলাম। নিজস্ব সোর্সের তথ্য মতো, জুলু এবং বাকীর শরণাপন্ন হই। সব বলি। ওরা একবাক্যে বলে না, পারবা না। বিস্তারিত বোঝাই তাদের। এক সময় বাকী সম্মত হয়। কিছুক্ষণ পর, জুলুও সম্মতি দেয় শর্তসাপেক্ষে। পরদিন দুপুরে, স্পটে নিয়ে যাবে আমাকে। তবে ক্যামেরায় ওদের কাউকে আনা যাবে না। একই সঙ্গে স্পটের সুনির্দিষ্ট নামও বলা যাবে না। ওদের প্রস্তাবে, রাজি হলাম।
পরদিন বেলা ৩-৩০টার দিকে, ইউনিটসহ আগারগাঁও মোড়ে মাইক্রোবাস নিয়ে বসে আছি। একটু পরই, বেজে উঠল অপরিচিত একটি ফোন। তখন একটেল মোবাইল ব্যবহার করতাম। ইনকামিং কলে, টাকা কাটত। আবার কলার আইডির জন্য, আলাদা টাকা! কিন্তু মোবাইলে কলার আইডি ছিল না।
ফোনে ‘হ্যালো’ বলতেই, গায়েবি আওয়াজ!
গাড়ি সামনে আনেন। বিএনপি বস্তির সামনে। (তখন বাংলাদেশ বেতারের পাশে বস্তি ছিল। নাম ছিল বিএনপি বস্তি। বর্তমানে সেখানে রাস্তা হয়েছে। বিভিন্ন অফিস-হাসপাতাল আছে।)
কোথায় যাব?
সামনে আগান। বেতার অফিসের পাশের বস্তিতে নামেন। আমরা আপনাদের নিয়া যামু।
লাইন কেটে গেল। আমরাও গাড়ি সামনে নিলাম। থামলাম, তাদের কথামতো।
কিছুক্ষণ পর, ৭-৮ জন ষন্ডা টাইপের তরুণ আমাকে উদ্দেশ করে বললেন হাঁটতে থাকেন। কোনো কথা বলবেন না।
ওরা আমাদের এক রকম স্কট করে, জঙ্গল পেরিয়ে একটি টিলার ওপর নিয়ে গেল। আগারগাঁওয়ে এমন নির্জন জায়গা রয়েছে, কল্পনাও করিনি। সমতল থেকে বেশ উঁচু জায়গা। মাঝখানে, ছোট্ট খাল। সেই খাল, ঝোপঝাড় পেরিয়ে, ইউনিট নিয়ে টিলার ওপরে উঠলাম। দেখলাম, আরও ২০-২৫ জন ছেলে সশস্ত্র অবস্থায়। ওরা যেন চোখ দিয়ে, আমাদের গিলে খাচ্ছে! ইউনিটের প্রধান ক্যামেরাম্যান মিলু ভাই (সম্ভবত এখন এএফপিতে) ফিসফিসিয়ে বললেন ভাই, তওবা পড়েন। কিছু একটা হইতে পারে। আমিও পড়তাছি!
ভেতরে ভেতরে ভয় পেলাম। বেড়ে গেল হার্টবিট! জোর করে মুখে হাসি এনে ফিসফিসিয়ে বললাম আরে, কিছুই হবে না। আমি ওদের চিনি। এ ছাড়া আমাদের নিরাপত্তার সমস্যা নেই। আসলে, এটি সত্য না। তবু তাকে আশ^স্ত করলাম। মিনিট দশেক পর, একটি ঘর থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী জুলু বের হয়ে এলো। আমার উদ্দেশে বলল চা খাবা?
না। কাজ আছে। আমাদের শুটিংয়ের ব্যবস্থা করলেই হবে। এরপর জনকণ্ঠে যাব। হার্টবিট তখন, চরম পর্যায়ে। জীবনে এমন ভয় কখনো পাইনি।
জুলু, বিশাল দেহী একজনকে ইশারা করলেন। তিনি আমাদের উদ্দেশে বললেন আসেন।
লোকটি পরপর ৩টি টিনের ঘরের তালা খুলে দিলেন। সেটা গুদাম ঘরের মতো। একের পর এক, বড় বড় কার্টুন। পরে জানা গেল, প্রতি কার্টুনে ৫০০ বোতল! এ রকম প্রায় ৩০০ কার্টুন প্রতি ঘরে। এর মানে ৩ ঘরে আছে- ৪,৫০,০০০ বোতল ফেনসিডিল! তখন প্রতি বোতলের দাম, সম্ভবত ৭০-৮০ টাকা। বোঝা গেল, এখান থেকেই আগারগাঁও-মিরপুরে ফেনসিডিল সাপ্লাই হচ্ছে।
শুটিং শুরু হলো। ক্যামেরা প্যান হচ্ছে। সারি সারি কার্টুন। একটার মুখ খোলা। কাজ শেষে জুলুকে বললাম একজনকে দাও, কথা বলার জন্য? তার মুখ দেখাব না। পেছন দিয়ে সে কথা বলবে। আমি তার সামনে থাকব। একটু চিন্তা করে, বাকীর অনুরোধে জুলু রাজি হলো। আমরা শুটিং শেষ করে, জুলু-বাকীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিলাম।
যাওয়ার সময় জুলু বলল দেইখো, ভেজাল জানি না হয়?
না, হবে না। নিশ্চিত থাকো। তোমাদের নাম বা জায়গার নাম বলা হবে না।
অনুষ্ঠান প্রচার হলো। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডেকে পাঠালেন। সে আরেক ঘটনা। পরবর্তী সময়ে, সরকার পরিবর্তন হলো। একদিন পত্রিকা মারফত জানা গেল প্রথমে শীর্ষ সন্ত্রাসী জুলু ক্রসফায়ারে এবং পরে বাকীও অন্য সন্ত্রাসীর গুলিতে মারা গেছে।
লেখক : সাংবাদিক
পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে আজকাল একটা ধাঁধার খুব চর্চা হচ্ছে। তাদের যদি জিজ্ঞেস করেন, বিজেপি কেমন দল! একশো জনের মধ্যে অন্তত নব্বই জন উত্তর দেবে, বিজেপি চরম সাম্প্রদায়িক দল। মেরুকরণের রাজনীতি করা ছাড়া তাদের অন্য কোনো ইস্যু নেই।
বিজেপি যত অস্বীকার করুক না কেন, অভিযোগটা নিশ্চিত সত্য। খোদ প্রধানমন্ত্রী থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে ভাষায় মাঝেমধ্যে নির্দিষ্ট একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেন তা শালীনতা, শিষ্টাচারের যাবতীয় মাপকাঠি অতিক্রম করে যায়। বিজেপি সরকারের আমলে দেশে দাঙ্গা যে বেড়েছে তার জন্য আলাদা করে কোনো সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ দরকার নেই। একটু আধটু চোখ-কান খোলা থাকলেই বোঝা যায়। ফলে বিজেপি সাম্প্রদায়িক তা নিয়ে এ রাজ্যের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বড় অংশের কোনো সন্দেহ নেই।
সিপিআই-এম বা বাম দলগুলো সম্বন্ধে মোটের ওপর সংখ্যালঘুদের ধারণা তাদের আমলে আর যাই হোক সেভাবে দাঙ্গা হয়নি। তাহলে ধরেই নেওয়া যায় যে বামেরা ধর্মনিরপেক্ষ। আপাত সেকুলার বামেরা নিশ্চিত। কিন্তু আপনি মুসলিম অন্দরমহলে খোঁজ নিন, দেখবেন তাদের মূল্যায়নে বামেরা সূক্ষ্ম সাম্প্রদায়িক। দাঙ্গা তাদের সময় না হলেও মুসলমানদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা নিতেও বামেদের কেউ দেখেনি। সাচার কমিটির রিপোর্টে তো বটেই, আমি যে ছবি করেছিলাম, ‘মুসলমানের কথা’, তা দেখলেও বৈষম্য স্পষ্ট হয়ে যায়।
তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পেছনে মুসলমানদের বড় ভূমিকা ছিল। তারা অনেক স্বপ্ন নিয়ে চিরাচরিত বামপন্থি রাজনীতির সমর্থন ছেড়ে রাতারাতি দক্ষিণপন্থি তৃণমূলের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল দলে দলে। এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝতে পেরেছিলেন যে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকতে গেলে সংখ্যালঘুদের আস্থা অর্জন দরকার। তিনি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কাজের কাজ করুন না করুন, নিজের মুসলিম দরদী ইমেজ নির্মাণে প্রথম থেকেই সক্রিয় হলেন। ইমাম ও মুয়াজ্জিনের ভাতা বাড়ালেন। কবরখানা সংস্কার করলেন। আরও কিছু কিছু কাজ করলেন। তবে যেটুকু করলেন তার চেয়ে দ্বিগুণ করলেন বিজ্ঞাপন। ঈদের নামাজের দিন শত শত ধর্মভীরু মুসলমানের সঙ্গে রেড রোডে প্রকাশ্যে হিজাব মাথায় যোগ দিলেন। কথায় কথায় সভা-সমাবেশে ইনশাআল্লাহ বলতে লাগলেন। এই হাঁক ডাকে দেশ দেশান্তরে সংখ্যালঘুদের অধিকাংশের কাছে ‘আমি তোমাদের লোক’ বার্তাটি সযত্নে পৌঁছে দিলেন।
ফলে মুসলিম সমাজের উন্নতি ঘটুক না ঘটুক এ বঙ্গের রাজনীতিতে মেরুকরণ নতুন এক মাত্রা পেল। বিজেপি গরমাগরম বক্তৃতা দিয়ে জানান দিতে লাগল যে এ রাজ্য পাকিস্তান, নিদেনপক্ষে কাশ্মীর হবেই। গুজব ছড়িয়ে তারা সংখ্যাগুরু মনে দেশভাগের স্মৃতি উসকে দিয়ে বিদ্বেষ নির্মাণে সক্রিয় হলো। মমতা ব্যানার্জি সরকারের আপাত সংখ্যালঘু ‘প্রেম’ এ রাজ্যে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ভিত শক্ত করে তুলতে লাগল। সরকারিভাবেই এখন স্পষ্ট, পশ্চিমবঙ্গে আরএসএস ও সংঘ পরিবারের অন্যান্য শাখা সংগঠনের রমরমা বিপুলভাবে ক্রমেই বাড়ছে। আরএসএস, দুর্গা বাহিনী সরকারি স্কুলের ভেতরে অস্ত্র ট্রেনিং নিচ্ছে এরকম অজস্র ছবি মিডিয়াতে মাঝেমধ্যেই আমরা দেখতে পাই। রামনবমীর দিনে প্রশাসনের নাকের ডগায় উন্মত্ত অস্ত্র মিছিল এখন এ রাজ্যে দস্তুর হয়ে গেছে।
কোনো রাজ্যে সরকারের অন্তত পরোক্ষ মদদ না থাকলে আরএসএস প্রভাব বাড়াতে পারে না। এ রাজ্যে হিন্দু সংহতি নামে এক চরম সাম্প্রদায়িক সংগঠন আছে। অনেকে বলেন তাদের কর্মী-সমর্থকদের বড় অংশ তৃণমূল দলের সঙ্গেও যুক্ত। মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে বিরোধী বাম ও কংগ্রেসের বড় অভিযোগ যে তিনি বিজেপির বিপক্ষে লড়াইয়ের যত কথা প্রকাশ্যে বলেন তা নিতান্তই লোক দেখানো। আরএস নেতারাও ঠারেঠোরে স্বীকার করেন এ রাজ্য বিজেপি না জিতলেও হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির বিপুল বিস্তারে কোনো সমস্যা নেই। কয়েক মাস আগে মমতা ব্যানার্জি নিজে খোলাখুলিভাবে বলেছেন যে, আরএসএসে সবাই খারাপ নন। পরিণত রাজনীতিবিদের এটুকু নিশ্চয়ই অজানা নয়, যে দ্বন্দ্ব নিছক ব্যক্তি প্রশ্নের নয়, পুরোপুরি মতাদর্শের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের মুসলিম দরদ নিয়ে ইদানীং মুসলমান সমাজেই অনেক প্রশ্ন উঠছে।
দিন যত যাচ্ছে তত আতস কাচে ফেলে এই সরকার সংখ্যালঘু স্বার্থে কতটা কী করেছে তার বিশ্লেষণ ইতিমধ্যেই পুরোদমে শুরু হয়ে গেছে। প্রথমত মুসলিম সমাজ একটা কৌম বা একমাত্রিক নয়। এই সমাজেও বহু মাত্রা রয়েছে। বিশেষ করে কয়েক বছরের মধ্যে বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে মধ্যবিত্ত এক শ্রেণির জন্ম হয়েছে। অনেক ডাক্তার, প্রযুক্তিবিদ, অধ্যাপক উঠে এসেছেন। তরুণদের মধ্যেও শিল্পী-সাহিত্যিকদের অনেক নতুন নতুন নাম ইদানীং সামনে আসছে। যদিও পশ্চিমবঙ্গের তিরিশ শতাংশ বাঙালি মুসলমানের মধ্যে শতাংশের হিসাবে হয়তো এই মিডিল ক্লাস দুই শতাংশ মাত্র। তারা সরকারের নীতি ও কর্মপদ্ধতি নিয়ে মতামত দিতে শুরু করেছেন। সরকারি পর্যায়ে বাঙালি মুসলমানদের গুরুত্ব না থাকায় এই উদীয়মান মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে ক্ষুব্ধ করে তুলছে। তৃণমূল দলের সমস্যা হচ্ছে তাদের নির্দিষ্ট কোনো মতাদর্শ না থাকা। ফলে সংখ্যালঘুদের মধ্যেও তৃণমূল মুখ বলে যারা পরিচিত তাদের ভয় করলেও, নিজেদের সমাজ তাদের পছন্দ করে না। এখনো মুসলমানদের অধিকাংশই খুব গরিব। তাদের অর্থনীতি আজও মূলত কৃষিনির্ভর। গ্রামীণ সর্বহারার বড় অংশ মুসলিম ও তফসিলি, আদিবাসী। তাদের অনেকেই এ রাজ্যে চাকরি না পেয়ে ভারতের অন্যান্য রাজ্যে রুটি রোজগারের আশায় চলে যেতে বাধ্য হন। কভিডের সময় কঠিন পরিস্থিতিতে পরিযায়ী শ্রমিকদের যে ঢল নেমেছিল এ রাজ্যে, বলাবাহুল্য তার বড় সংখ্যক মানুষ মালদা, মুর্শিদাবাদ এবং অন্যান্য মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার।
২০১১ সালে তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এসেছে। আর এখন ২০২৩ সাল। সাচার কমিটির রিপোর্টে সংখ্যালঘুদের দুর্দশা ছিল নির্বাচনের আগে বামেদের বিরুদ্ধে মমতার বড় অস্ত্র। সেই রিপোর্ট আদৌ কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে তা নিয়ে স্বয়ং রাজেন্দ্র সাচার মৃত্যুর আগে সন্দিহান ছিলেন। বিশিষ্ট সমাজকর্মী হর্ষ মান্দার ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের একাধিক রিপোর্টেও সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিয়ে অনেক প্রশ্ন তোলা হয়েছে। নিরাপত্তা নিয়েও ইদানীংকালে মুসলিম জনসমাজে আতঙ্ক বাড়ছে। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে তো সমস্যা জটিল হচ্ছেই। এখানেও বেশ কিছু ঘটনা এই সরকারের নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। পশ্চিমবঙ্গের শিল্পাঞ্চল আসানসোলের এক নির্বাচনের আগে মর্মান্তিকভাবে স্থানীয় মসজিদের ইমাম রশিদির একমাত্র ছেলে খুন হন প্রকাশ্যে দিনের বেলায়। সেই ঘটনায় দোষীদের শাস্তি দূরের কথা, যার বিরুদ্ধে ঘটনায় ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ ওঠে, বিজেপির সেই নেতাই দল বদলে তৃণমূল কংগ্রেসে এলে তাকে শুধু স্বাগত জানানোই নয়, ঘটা করে উপনির্বাচনে প্রার্থীও করা হয়। গ্রামেগঞ্জে খোঁজ নিলে দেখবেন কত ওয়াক্ফ সম্পত্তি শাসক দলের নেতারা দখল করে রেখেছেন। সব সরকারের নির্দেশেই হচ্ছে এমন কথা বলব না। কিন্তু জনমনে দলের নেতাদের যাবতীয় কুকর্মের দায় সরকারের বিরুদ্ধেই যায়। মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়েও অনেক দুর্নীতির কথা কান পাতলেই শোনা যাবে। হাওড়ায়, ছাত্রনেতার রহস্যজনক মৃত্যু নিশ্চিত সংখ্যালঘুদের ব্যথিত করেছে। আরও ক্ষুব্ধ করেছে ভাঙ্গর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক তরুণ, মৃদুভাষী জনপ্রিয় নৌশাদ সিদ্দিকীকে প্রশাসনিকভাবে হেনস্তা করা।
এই লেখা লিখতে লিখতে জানলাম কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন শিক্ষানীতি মমতা সরকার মেনে নিয়েছেন। ধীরে ধীরে আরও অনেক নীতিই তিনি হয়তো মেনে নেবেন। ঈদে ছুটি যদি থাকে একদিন অন্যান্য সম্প্রদায়ের পরবে তা অনেক বেশি থাকে কেন, কেউ বলতে পারেন না। দুর্গাপূজা তো এখন পশ্চিমবঙ্গের ব্র্যান্ড। ফলে তার উৎসব তো একমাস হলেও অবাক হওয়ার নেই। ইদানীং ট্যুরিজমের নামে গঙ্গা আরতির চল বাড়ছে। বজরং, গণেশ, জগদ্ধাত্রী পূজা বাড়ছেই। নতুন এক কুম্ভ সেও এ রাজ্যে জায়গা করে নিয়েছে। প্রথমেই তাই লিখেছি, বিজেপি যদি সাম্প্রদায়িক হয়, যদি ধরেও নিই বামপন্থি দলগুলো সূক্ষ্ম সাম্প্রদায়িক। ধাঁধা ওটাই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
তৃণমূল তাহলে ঠিক কী!
লেখক: প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা ও লেখক
বাংলাদেশের উনিশতম রাষ্ট্রপতি, প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ জিল্লুর রহমান ২০১৩ সালের এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন। ১৯২৯ সালের ৯ মার্চ বর্তমান কিশোরগঞ্জের ভৈরবে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাবা মেহের আলী মিঞা ছিলেন আইনজীবী, ময়মনসিংহ লোকাল বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং জেলা বোর্ডের সদস্য। ১৯৪৫ সালে ভৈরব কেবি হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে ১৯৪৭ সালে আইএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫২ সালে ইতিহাসে বিএ (অনার্স) ও ১৯৫৪ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৭ সালে কলেজে পড়ার সময় ‘সিলেটের গণভোটে’ কাজ করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্যে আসেন জিল্লুুর রহমান। জিল্লুর রহমান বায়ান্নর ১৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলার ঐতিহাসিক ছাত্র সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন। ২০ ফেব্রুয়ারি যে ১১ ছাত্রনেতার নেতৃত্বে ২১ ফেব্রুয়ারিতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত হয়, জিল্লুর রহমান ছিলেন তাদের অন্যতম। ১৯৫৩ সালে তিনি ফজলুল হক হল ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালে কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন। বাষট্টির সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ছেষট্টির ৬ দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানসহ প্রতিটি গণ-আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সদস্য নিযুক্ত হন। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র পরিচালনা এবং জয়বাংলা পত্রিকার প্রকাশনায় যুক্ত ছিলেন তিনি। বাহাত্তর সালে গণপরিষদ সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নে অংশ নেন এবং ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৭৫ সালে ‘বাকশাল’ গঠিত হলে তিনি বাকশালের চার সেক্রেটারির একজন হন। ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর জিল্লুর রহমান একটানা প্রায় চার বছর কারাবন্দি ছিলেন। ২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি জিল্লুর রহমান বাংলাদেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। ২০১৩ সালের ২০ মার্চ সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জিল্লুর রহমান মৃত্যুবরণ করেন।
ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ১৮ আগস্ট ৯ বছরের শিশু আরাফাতের মৃত্যু হয়। সপ্তাহ না যেতেই ২৫ আগস্ট মারা যায় আরাফাতের ছোট বোন ৬ বছরের রাইদা। রাজধানীর মধ্যপাইকপাড়ার ছাপাখানা মোড়ের একটি বাসায় দুই সন্তান আরাফাত ও রাইদাকে নিয়ে থাকতেন মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও রাবেয়া আক্তার দম্পতি। সন্তানদের মৃত্যুর পর জীবনটাই বদলে গেছে তাদের। তছনছ হয়ে গেছে সাজানো সংসার। ইব্রাহিম ও রাবেয়া দম্পতির মতো বহু পরিবার এবার সর্বস্বান্ত হয়েছে ডেঙ্গুজ¦রের থাবায়। সন্তান হারানো এমন বাবা-মায়েরা পাগলপ্রায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর ডেঙ্গুতে শূন্য থেকে ২০ বছর বয়সী ১৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ১৮ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষ ৮৬ এবং নারী ৯১ জন। এবার শুধু শহর নয়, গ্রামেও ছড়িয়েছে ডেঙ্গু। সেখানেও মারা গেছে অনেক শিশু। এ বছর ডেঙ্গুতে শিশুমৃত্যু নিয়মিত ঘটনা হয়ে দেখা দিয়েছে। এই রোগে এত শিশুর মৃত্যু আগে কখনো হয়নি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এ বছর শূন্য থেকে ২০ বছর বয়সীরা আক্রান্ত হয়েছে ৬৩ হাজার ৯১৯ জন; যা মোট আক্রান্তের ৩২ শতাংশ। এর মধ্যে নারী ২৩ হাজার ৬১৭ এবং পুরুষ ৪০ হাজার ৩০২ জন। ডেঙ্গুতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। তথ্য বলছে, ডেঙ্গুতে শিশুদের আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর হার কম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়া শিশুদের যারা সুস্থ হয়ে উঠছে, তাদের মধ্যে ভবিষ্যতে শারীরিক জটিলতা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ডেঙ্গুর বর্তমান সংক্রমণের মধ্য দিয়ে শিশুদের জন্য নতুন ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। তাদের মানসিক বিকাশও বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ডেঙ্গুর এই পরিস্থিতি শিশুদের নতুন বিপদের দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার বিরূপ প্রভাব শিশুদের মধ্যে ভবিষ্যতে দেখা যেতে পারে। মস্তিষ্ক ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে এর প্রভাব থাকতে পারে। এতে তাদের মেধাবিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাদের যদি কিডনি কিংবা লিভারের মতো অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে সেই ভার সারা জীবন বহন করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শিশুদের মৃত্যু নিয়ে ভালোভাবে অ্যানালাইসিস করতে পারছি না। এসব মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে অটোপসি করতে পারলে ভালো হতো। বিভিন্ন দেশে মৃত্যু নিয়ে ডেথ রিভিউ বা অটোপসি করা হয়। এটি করতে পারলে বাংলাদেশে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যেত।’
এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। কোনো শিশুর শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হলে পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিআইসিইউ) চিকিৎসা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে, ১ মাস থেকে ১২ বছর বয়সী মুমূর্ষু শিশু রোগীদের পৃথক পিআইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দিতে হয়। তবে দেশে পিআইসিইউ সংকট রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে পিআইসিইউর জন্য স্বজনদের হাহাকার করতে দেখা গেছে। হাসপাতালগুলোতে দেখা গেছে ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ শিশুকে সেবা দিতে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা যেমন বেশি, সেখানে শিশু রোগীও উল্লেখযোগ্য। এই দুটি হাসপাতালে একেকটি শয্যায় একাধিক শিশু রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। ঢামেক হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের জন্য পৃথক ওয়ার্ড খুলেছে কর্তৃপক্ষ। ৭০ থেকে ৮০ জনের সেবা পাওয়ার কথা, কিন্তু সেখানে প্রতিদিন সেবা নিচ্ছে প্রায় ৩০০ শিশু। ঢামেক হাসপাতালের ২৫ শিশুকে একসঙ্গে পিআইসিইউতে সেবা দেওয়ার সক্ষমতা আছে। কিন্তু মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোনো পিআইসিইউ নেই।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখানে শিশুদের ওয়ার্ডেই ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পিআইসিইউ নেই, তবে এনআইসিইউ (নিউনেটাল আইসিইউ বা নবজাতকদের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র) আছে।
এদিকে শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের শরীরে ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গু শনাক্তে পরীক্ষা করা প্রয়োজন। শিশুদের ডেঙ্গুর চিকিৎসা প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শামীমা ইয়াসমীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিশুদের জ্বর আসার তিন দিনের মধ্যে পরীক্ষা করাতে হবে। এবার অনেকের মধ্যে হঠাৎ করে ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিচ্ছে। ফলে তারা দেরিতে চিকিৎসা নিতে আসছে। দেখা গেছে, ডেঙ্গুজ্বরে যেসব শিশু মারা গেছে, তারা বাড়ি থেকেই জটিলতা নিয়ে এসেছে। এখানে একটি বিষয় লক্ষ রাখতে হবে, শুধু প্লাটিলেট কমা আশঙ্কার নয়, রক্তচাপ কমে যাওয়া প্লাটিলেট কমার চেয়ে ভয়ের। তাই আমাদের শিশুদের রক্তচাপ নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে।’
স্যাংশন নিয়ে ভয় না পাওয়ার বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার মেথডিস্ট সেন্ট্রাল হলে নাগরিক সংবর্ধনায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি পাল্টা স্যাংশন দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।
সংবিধান অনুযায়ী সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে জানান তিনি। খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা ইস্যু সম্পর্কে প্রশ্ন রাখেন, সাজাপ্রাপ্ত কাউকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠায় কোন দেশ?
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন রেখে বলেন, পৃথিবীর কোন দেশের সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠায় বলতে পারেন? কোনো দেশে পাঠায়? তারা এটা দাবি করে। আমাদের কেউ কেউ আঁতেল আছে। তারা বলে, একটু কী সহানুভূতি দেখাতে পারেন না! সে এভারকেয়ার, বাংলাদেশের সবথেকে দামি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। আর রোজই শুনি এই মরে মরে, এই যায় যায়। বয়সতো আশির ওপর। মৃত্যুর সময় তো হয়ে গেছে। তার মধ্যে অসুস্থ। এখানে এত কান্নাকাটি করে লাভ নাই।
স্যাংশনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই। আপনাদেরও বলব, স্যাংশন নিয়ে মাথা ঘামাবেন না।
বিএনপি চেয়ারপারসন ‘অসুস্থ’ খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে শর্ত দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সেই শর্তের অন্যতম ইস্যু হচ্ছে, বিএনপিকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। এমন ঘোষণার পরপরই খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিদেশে যাওয়ার অনুমতি মিলবে। কিন্তু সরকারের সেই শর্তে রাজি নন খালেদা জিয়া। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কোনো শর্তের বিনিময়ে তিনি মুক্তি চান না। ফলে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার সরকারের যে চেষ্টা, সেটা এ দফায় সফল হচ্ছে না বলে মনে করছেন আন্দোলনে থাকা নেতারা। তাদের মতে, সরকার ফাঁদ পাতলেও এতে পা না দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে বেগম জিয়ার। বরং আন্দোলনে এ সরকারকে বিদায় করে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলতে চান তারা। একই সঙ্গে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করেই আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবেন। এ লক্ষ্যে প্রায় অর্ধশত দল নিয়ে গত প্রায় এক বছর ধরে আন্দোলনে রয়েছেন তারা।
শর্তের বিনিময়ে মুক্তির বিষয়টি তুলে ধরে গত রবিবার রাতে কিশোরগঞ্জে বিএনপির রোডমার্চের সমাপনী সমাবেশে দলটির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে শর্ত দেওয়া হয়েছিল তিনি যদি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে চান, তাহলে বিএনপিকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আসতে হবে। বিএনপি থেকে উত্তর দেওয়ার আগেই অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতাল থেকে খালেদা জিয়া বিদ্রোহ করে বলেছেন, তার জীবনে গণতন্ত্রের জন্য কোনো শর্ত নেই। ভোটের অধিকারের জন্য, এই দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য কোনো শর্ত নেই। কোনো শর্ত খালেদা জিয়ার নামের সঙ্গে যায় না এবং আমরাও তা মানি না।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খালেদা জিয়া ৫৪ দিন ধরে টানা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিতই খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থা খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। এ সময় বেশ কয়েকবার শারীরিকভাবে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়লে দলের কয়েকজন নেতার মাধ্যমে মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের দেওয়ার বক্তব্যের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি দলের মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির কয়েকজন সম্পাদক ও সদস্য খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন। সূত্রগুলো বলছে, একজন ভাইস চেয়ারম্যান ও স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য কথা প্রসঙ্গে এ ধরনের প্রসঙ্গেও ইঙ্গিত দিলে খালেদা জিয়ার শর্ত দিয়ে মুক্ত হতে চান না বলে পুনর্ব্যক্ত করেন। যদিও এর আগে শর্ত দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসার বিষয়ে দল যাতে সম্মত না হয়, সে কথা নেতাদের আগেই বলে রেখেছিলেন একসময় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া এ নেত্রী। কোনো অবস্থায় শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়া যাবে না এবং এ ব্যাপারে কোনো ধরনের সমঝোতাও নয়Ñ এ ব্যাপারেও খালেদা জিয়ার স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে হাসপাতালে দেখা করেন। সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে এসে মঞ্চের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের এ আন্দোলনে উনার সমর্থন আছে। আমাদের একজন নেতা (ওই বৈঠকে) বলেছেন, সরকার একটা নির্বাচনের জাল বিছানোর চেষ্টা করছে। উনি (খালেদা জিয়া) বলেছেন, কোনো অবস্থায় এ সরকারের অধীনে নির্বাচনী ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।’
এর আগে ৮ মে রাতে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় সাক্ষাৎ শেষে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছিলেন, কেউ কেউ বলছেন আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাওয়া উচিত। এমন প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া তাদের বলেছেন, প্রশ্নই আসে না। এ বিষয়ে আমি কোনো অনুমতি দেব না।
এই প্রেক্ষাপটে বিএনপি মনে করছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি এখন সরকারের বিদায়ের ওপর নির্ভর করছে। আন্দোলনে এ সরকারকে বিদায় করতে না পারলে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলবে না। তাই এখন আন্দোলনের মাধ্যমে এ ইস্যুর সমাধান করবে তারা। এজন্য চলমান এক দফার আন্দোলনের সঙ্গে এখন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসা ইস্যুটি জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করতে চান তারা। এতে সরকারবিরোধী আন্দোলন বড় ধরনের মোড় নিতে পারে বলে তাদের বিশ্বাস।
গতকাল সোমবার স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে সভায় খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়। আগামী ৫ অক্টোবর বিএনপি ঘোষিত রোডমার্চ কর্মসূচি শেষ হবে। এর আগেই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি।
জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু বলেন, ‘দাবার ঘুঁটি হিসেবে খালেদা জিয়াকে ব্যবহারের চিন্তা তারা কীভাবে করে সেটাই বোধগম্য নয়। সরকারের এ ধরনের চিন্তা বা পরিকল্পনা কোনো কাজে আসবে না।’
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে বিএনপিপ্রধানের পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদনের ওপর গত রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই। যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
আবার গতকাল নিজ কার্যালয়ে সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতি কিংবা আপিল বিভাগে আবেদন করতে পারেন। তবে তার আগে তাকে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জেলে যেতে হবে। রাষ্ট্রপতি বা আপিল বিভাগের খালেদা জিয়ার পরিবার আবেদন করবে না বলে দলীয় আইনজীবী সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশে আইনের শাসন নেই বলেই বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে ভয়ংকর তামাশা করা হয়েছে। যে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়া এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন, সেখানে বলা হয়েছে, তাকে “দেশে চিকিৎসা নিতে হবে”, তার বদলে “দেশে বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন” বলাই যথেষ্ট। এর বাইরে দলের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নেই।’
এদিকে চিকিৎসক সূত্র জানা গেছে, বর্তমানে খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। গতকাল তার আলট্রাসনোগ্রাম ও ইকো করা হয়েছে।
দেশে এ বছর ভয়বাহ আকার ধারণ করছে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু জ্বর। প্রায় প্রতিদিনই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা। অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছর নানা ধরনের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গুর জীবানুবাহী এডিস মশা এবং ডেঙ্গুজ্বরের উপসর্গেও।
বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে, মৃত্যুর সংখ্যা পার করেছে হাজারের ঘর। এমন অবস্থায় সাধারণ মানুষের মনে জাগছে নানা রকম প্রশ্ন। এমনই কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তক সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলা। যা দেয়া হল এখানে,
ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণু বহনকারী মশার নাম এডিস এজিপ্টি যা আমাদের দেশে ডেঙ্গু মশা নামেই বেশি পরিচিত।
এডিস মশা কামড়ানোর কারণেই ডেঙ্গু জ্বর হয়। যদিও এই মশা কামড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে জ্বর হয় না।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা সাবেরা গুলনাহার বলেন, ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হবার পর থেকে লক্ষ্মণ দেখা দিতে পাঁচ থেকে সাত দিন সময় লাগে।
এই সময়কে বলা হয় ইনকিউবেশন পিরিয়ড।
সাধারণত এডিস মশা কামড়ানোর পাঁচ থেকে সাত দিন মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর আসে। আর এই জ্বর থাকে পাঁচ থেকে ছয় দিন পর্যন্ত।
চিকিৎসকদের মতে, ডেঙ্গু ভাইরাসের চার রকম সেরোটাইপ পাওয়া যায়। এগুলো হলো- ডেন - ১, ডেন - ২, ডেন - ৩ এবং ডেন - ৪।
সহজ কথায়, একজন মানুষ তার সারা জীবনে সর্বোচ্চ চার বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারেন।
অর্থাৎ একবার একটি ধরনে আক্রান্ত হবার পর তা সেরে গেলে, তার শরীরে যে এন্টিবডি তৈরি হয়, তা সারা জীবনের জন্য কাজ করে।
এরপর যদি তিনি পুনরায় আক্রান্তও হন, সেটি হবে ডেঙ্গুর ভিন্ন কোন ধরন।
অধ্যাপক গুলনাহার বলছেন, যতদিন রক্তে ভাইরাস থাকবে, ততদিন রোগীর শরীরে জ্বর থাকবে।
কেবলমাত্র রক্ত জীবাণুমুক্ত হলেই ডেঙ্গু জ্বর সেরে যায় একজন আক্রান্ত ব্যক্তির।
অধ্যাপক গুলনাহার বলছেন, প্রথমবার ডেঙ্গু হলে অনেকেই তা বুঝতে পারেন না। সামান্য শরীর ব্যথা ও একটু জ্বরের লক্ষ্মণ থাকলেও সাধারণত এসময় সর্দিকাশিও থাকে না।
একে ব্রেকবোন ফিভারও বলা হয়। পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যেই এই জ্বর ভালো হয়ে যায়।
তবে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে, অর্থাৎ অন্য আরেকটি সেরোটাইপে আক্রান্ত হলে রোগীর শরীরে জটিলতা তৈরি হয়।
কারণ প্রথম বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর শরীরে যে এন্টিবডি তৈরি হয়, সেটার সঙ্গে নতুন ভাইরাসের এন্টিজেনের এক ধরনের রিএকশন হয়। যার ফলে হেমোরেজ বা প্লাটিলেট কমে যাওয়ার মতো জটিলতা তৈরি হয়।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে, ক্ষেত্রবিশেষে প্রথমে খুব জ্বর ওঠার পর তা কমে যায়। এসময় কিছুটা সুস্থ বোধ হলেও, এটিই আসলে সবচেয়ে জটিল পর্যায়। কেননা এসময়েই আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে প্লাটিলেট কমে যায় এবং রক্তপাতের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
এ সময় সুস্থ বোধ করায় শিশুরাও খেলাধুলা করতে চায়। তবে এটা একেবারেই করা যাবে না। এই সময়ে যেকোনো ধরনের পরিশ্রমের কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে এবং সম্পূর্ণ বিশ্রাম করতে হবে।
কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলছেন, একটি পূর্ণ বয়স্ক এডিস মশা গড়ে ১৫-৪০ দিন বাঁচে।
মূলত তাপমাত্রার ওপর এডিস মশার আয়ু নির্ভর করে।
যেমন, শীতকালে এডিস মশা বেশি বাঁচে, আবার গরম কালে এডিস মশার বৃদ্ধি ও বংশবিস্তার দ্রুত হয় বলে এ সময়ে এডিস মশা কম বাঁচে।
একসময় বলা হতো ডেঙ্গু মশা শুধুমাত্র দিনের বেলা কামড়ায়। কিন্তু সে ধারণা এখন আর কাজ করছে না।
কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, এডিস মশা তার চরিত্র বদলেছে। এখন দিনে বা রাতে সব বেলাতেই কামড়াতে পারে এডিস এজিপ্টি, বিশেষ করে রাতে যদি ঘর আলোকিত থাকে।
কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাসার বলেছেন, ল্যাবে করা পরীক্ষায় দেখা গেছে, একটি এডিস মশা জীবদ্দশায় গড়ে চার থেকে ছয় বার কামড়ায়।
কেবল মাত্র স্ত্রী মশাই কামড়ায়। ফলে একমাত্র স্ত্রী এডিস মশাই ডেঙ্গুর জীবাণু বহন করে। আর স্ত্রী এডিস মশাও কেবল মাত্র পেটে ডিম থাকা অবস্থাতে কামড়ায়।
এডিস মশা কামড়ালেই ডেঙ্গু হয়- এমন একটি ভুল ধারনা অনেকের মধ্যেই প্রচলিত রয়েছে, যা সঠিক নয়।
আরেকটি ভুল ধারনা হলো যে আক্রান্ত কাউকে কামড়ানোর পর পরই সুস্থ একজনকে কামড়ালে তারও ডেঙ্গু জ্বর হবে।
কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, এডিস মশার মাধ্যমে তখনই একজন ব্যক্তি ডেঙ্গু আক্রান্ত হবেন, যখন মশাটি ভাইরাস ইনফেক্টেড অথবা ভাইরেমিক হবে।
একটা এডিস মশা ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে কামড়ে যখন ভাইরাস ছড়ানোর উপযোগী হয় তখন এটাকে বলা হয় ভাইরেমিক। মূলত আক্রান্ত কাউকে কামড়ানোর পর ডেঙ্গু মশাকে ভাইরাস বিস্তারের উপযোগী হতে একটি জীবনচক্র পূরণ করতে হয়।
অর্থাৎ আক্রান্ত কাউকে কামড়ানোর মাধ্যমে মশার দেহে ভাইরাসটি প্রবেশ করে। এরপর ডিম পারা এবং বংশবিস্তারের মাধ্যমে ওই মশা ডেঙ্গুর ভাইরাস ছড়াতে সক্ষম হয়, অর্থাৎ ভাইরেমিক হয়। এরপর যতদিন মশাটি বেঁচে থাকবে ততদিন পর্যন্ত ডেঙ্গুর জীবাণু ছড়াতে পারবে।
এছাড়াও জীবাণু বহনকারী ওই মশা যত ডিম পারে, তার সবগুলোতেই ভাইরাস থেকে যায়। আর সেই ডিম যদি প্রকৃতিতে অনুকূল পরিবেশ পায় তবে সেখান থেকে জন্মানো মশার কামড়েও ডেঙ্গুর ভাইরাস ছড়াতে পারে। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ট্রান্সওভারিয়াল ট্রান্সমিশন।
এভাবে ভাইরাসের বাহক হয়ে পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ ডেঙ্গু মশা জন্মাতে পারে বলে জানান কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার।
ডেঙ্গু কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়, এটি কেবল মাত্র মশার মাধ্যমেই ছড়ায়। মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না।
অর্থাৎ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে স্পর্শ করলে, একই বিছানায় ঘুমালে কিংবা তার ব্যবহৃত কিছু ব্যবহার করলে, অন্য কারো এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই।
এডিস মশা ব্যতীত স্পর্শ বা অন্য কোনভাবে এই রোগ ছড়ানোর উপায় নেই।
এমনকি অন্য প্রজাতির মশার মাধ্যমেও ডেঙ্গু ছড়ায় না।
রোগীকে স্বাভাবিক সব ধরণের নরম খাবার খেতে দেয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা
ডেঙ্গু হলে রোগীকে স্বাভাবিক সব ধরণের নরম খাবার খেতে দেয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
অধ্যাপক গুলনাহার বলেন, ডেঙ্গু হলে রোগীর শরীরে পানি স্বল্পতা হয়। তাই এই সময় তরল জাতীয় খাবার বেশি খাওয়াতে হয়।
সেইসাথে বাড়িতে ফল থেকে বের করা জুস, স্যুপ, ডাবের পানি, ওরস্যালাইন, বা অন্যান্য তরল খাবার প্রচুর পরিমাণে দেয়া যেতে পারে। এগুলো শরীরের পানি এবং ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
তবে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে খাবারে কিছু বিধিনিষেধ থাকতে পারে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
“খাবারের মধ্যে ভারসাম্য থাকতে হবে, অনেককে দেখেছি দিনে ১০-১২টা ডাব খেতে, অনেকে লিটারে লিটারে পানি খাচ্ছে এগুলো অস্বাভাবিক।
আবার কিছু না করাও ঠিক না। যদি কারও দিনে তিন চার ঘণ্টা পর পর প্রস্রাব হয়, প্রস্রাবের রং হলুদ না হয়, তারমানে তার আর্দ্রতা স্বাভাবিক আছে” বলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক অনিরুদ্ধ ঘোষ।
বাড়ির আশপাশ যতটা সম্ভব পরিষ্কার রাখতে চেষ্টা করুন।
ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব কিংবা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন এবং ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত তিন বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম রাখতে পারেন সঙ্গে।
সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করতে পারেন।
যেখানে সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির পাশাপাশি ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
বাড়ির ছোট সদস্যদের ফুল হাতা জামা পরিয়ে রাখুন এবং মশা যাতে না কামড়াতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। প্রয়োজনে মশা নিধন ক্রিম ব্যবহার করুন।
তিনি জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য প্রণীত আইনের অধীনে ধানমন্ডিতে যে বাড়ি পেয়েছিলেন শেখ রেহানা, বিএনপি ক্ষমতায় এসে সে বাড়ি উচ্ছেদ করে। সেখানে পুলিশ ফাঁড়ি করছে আর ‘লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে’ সেই পুলিশ ফাঁড়ি উদ্বোধন করেছে খালেদা জিয়া। ছেলে কোকোর মৃত্যুর পর তাকে (শেখ হাসিনা) খালেদা জিয়ার বাড়িতে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা কীভাবে খালেদা জিয়ার জন্য আমার কাছ থেকে আরও সহানুভূতি আশা করে।’
লন্ডনের মেথোডিস্ট সেন্ট্রাল হল ওয়েস্টমিনস্টারে তার সম্মানে আয়োজিত একটি কমিউনিটি সংবর্ধনায় তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গণতন্ত্রের কথা বলা বিএনপির পক্ষে শোভা পায় না কারণ তারা জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে ধোকাবাজি খেলেছে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি একটি প্রহসনমূলক নির্বাচন করে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার দেড় মাসের মধ্যেই দেশের জনগণ তাদের ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে। তিনি বলেন, দেশের জনগণ কখনই ভোট কারচুপিকারীদের ক্ষমতায় বসতে দেয় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার প্রধান হিসেবে তার ওপর ন্যস্ত নির্বাহী ক্ষমতা দিয়ে এতিমদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতির মামলায় কারাদণ্ড স্থগিত করার পর খালেদা জিয়াকে তিনি বাড়িতে থাকতে দিয়েছেন। খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে তার কিছুই করার নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি আইন অনুযায়ী যা করতে পারেন তাই করেছেন। অনেকেই এখন যুক্তি দিচ্ছেন, ‘আইন নিজের গতিতে চললেও খালেদা জিয়ার প্রতি আমি বেশি সহানুভূতি দেখাতে পারি’।
অনুষ্ঠানের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান শরীফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজেদুর রহমান ফারুক।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।