
১৮৮৫ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং ১৯০৬ সালে ঢাকায় মুসলিম লীগ দল দুটি ব্রিটিশদের তত্ত্বাবধানে জন্মলাভ করেছিল। কংগ্রেস দলে মুসলিমদের অংশগ্রহণ থাকলেও হিন্দু সম্প্রদায়ের আধিক্য, কর্তৃত্ব এবং গুরুত্ব ছিল অধিক। মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, হাকিম আজমল খান, ডা. আনসারী, সৈফুদ্দিন কিচলু, আসফ আলী প্রমুখ মুসলিম নেতারা কংগ্রেসে ছিলেন বটে, তবে কংগ্রেসের হিন্দুয়ানি চরিত্রের বদল করতে পারেননি। সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়ের কংগ্রেস দলে সম্পৃক্তির পেছনে অনগ্রসর মুসলিম সম্প্রদায়ের বিষয়টিও বিবেচনার দাবি রাখে। হিন্দু সম্প্রদায় অর্থ-বিত্তে, শিক্ষায়-সম্পদে ছিল অগ্রবর্তী। পাকিস্তান স্রষ্টা জিন্নাহও কংগ্রেসে ছিলেন। কংগ্রেসে থাকাবস্থায় তিনি মুসলিম লীগে যোগদান করেছিলেন। নেহরুদের দ্বারা ক্রমাগত কোণঠাসা হয়ে অনেকটা বাধ্য হয়ে কংগ্রেস ত্যাগ করে ধর্মনিরপেক্ষ জিন্নাহ জিগির তুলেছিলেন, দ্বিজাতিতত্ত্বের এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের পৃথক ভূমি। ব্যক্তিগত জীবনযাপনে সামগ্রিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ জিন্নাহ আচানক সাম্প্রদায়িক নেতারূপে আবির্ভূত হন। যার পেছনে সম্প্রদায়গত স্বার্থের চেয়েও অধিক ছিল ব্যক্তিগত ক্ষমতা ও কর্তৃত্বে¡র স্বার্থ। মুসলিম লীগে তিনি একক কর্তৃত্ব সহজেই প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন। মুসলিম লীগের একনায়ক ছিলেন জিন্নাহ। জিন্নাহর ইচ্ছা ব্যতিরেকে মুসলিম লীগের একটি সিদ্ধান্তও গৃহীত হওয়ার উপায় ছিল না। মুসলমানদের পৃথক ভূমির দাবি তুলে কংগ্রেসের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন। জাতীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা না করে নিজেদের ইচ্ছা পূরণে জিন্নাহর ওপর দায় চাপিয়ে দেশভাগে নীরবে মদদ জুগিয়েছিল। অবশ্য সম্প্রদায় বিভাজনের দ্বন্দ্বের পেছনে ব্রিটিশদের ইচ্ছাপূরণের স্বপ্ন জড়িত ছিল। অন্যদিকে, কংগ্রেস নেতৃত্ব নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষরূপেও প্রমাণ দিতে পারেনি। স্বয়ং গান্ধী অসাম্প্রদায়িক ছিলেন, কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ ছিলেন না। চূড়ান্ত দুই প্রধান দলের ক্ষমতার ভাগাভাগিতে অনিবার্য হয়ে পড়েছিল দেশভাগ।
পাঞ্জাব ও বাংলা খণ্ডিত হয়েছিল দেশভাগে। দুই প্রদেশের শীর্ষ রাজনীতিকদের দোষ ও ভুলের মাশুল দিয়েছিল দুই সম্প্রদায়ের অগণিত সাধারণ মানুষ। ১৯৪০ সালে ফজলুল হক কর্তৃক উত্থাপিত লাহোর প্রস্তাবকে দেশভাগের জন্য অনেকটা দায়ী করা হয়। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের দাবি লাহোর প্রস্তাবের অনুসরণে ছিল। স্বায়ত্তশাসনের দাবি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কখনো আমলে নেয়নি। এমন কি আওয়ামী লীগ নেতা সোহরাওয়ার্দী, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রিত্ব লাভের পরক্ষণে পূর্ব বাংলার ৯৮% স্বায়ত্তশাসনের দাবি পূরণের নির্জলা মিথ্যাচার করতে দ্বিধা করেননি। যুদ্ধজোটের এবং ইঙ্গ-মার্কিন সামরিক চুক্তির পক্ষে অবস্থান নিয়ে সোহরাওয়ার্দী আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মতাদর্শের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণে বিলম্ব করেননি। যার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ সভাপতি মওলানা ভাসানী কাগমারী সাংস্কৃতিক সম্মেলনে সোহরাওয়ার্দীকে সমুচিত জবাব দিয়েছিলেন। সোহরাওয়ার্দীঘনিষ্ঠ শেখ মুজিব সোহরাওয়ার্দীর জীবদ্দশায় স্বায়ত্তশাসনের দাবি কখনো তুলতে পারেননি। সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পরই শেখ মুজিব ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেছিলেন। ছয় দফা ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবেরই ধারাবাহিক। আগরতলা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত লে. ক. মোয়াজ্জেম হোসেন ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে মুক্তি লাভের পর স্বাধীনতার লক্ষ্যে গঠন করেছিলেন ‘লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়ন কমিটি’।
১৯৩৭ সালের নির্বাচনে বাংলায় কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগ পরস্পরের প্রবল প্রতিপক্ষ এবং ছিল চরম শত্রুতুল্য। তাদের পক্ষে যৌথ সরকার গঠন ছিল অসম্ভব।
কৃষক প্রজা পার্টির ফজলুল হক কংগ্রেসের সঙ্গে যৌথ সরকার গঠনের প্রস্তাবে প্রদেশ কংগ্রেস সম্মত হলেও, একমাত্র নেহরুর প্রবল বিরোধিতায় সে প্রস্তাব ভেস্তে যায়। নেহরুর সেই ভুল সিদ্ধান্তই বাংলায় সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বীজ বপন হয়েছিল। ফজলুল হক মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার অভিলাষে মুসলিম লীগের সঙ্গে যৌথ সরকার গঠন করে রাজনৈতিক পতন ডেকে এনেছিলেন। নিজের এবং দলের তো বটেই। পাশাপাশি মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পথ বাংলা প্রদেশে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। ফজলুল হকের দোষ-ভুলের মাশুল দিতে হয়েছে বাংলার উভয় সম্প্রদায়ের মানুষদের। শেষ জীবনে ফজলুল হক অকপটে বলেছেন, ‘আমার রাজনৈতিক জীবনে অনেক মিথ্যার ভ্রান্তি আছে। আত্মজীবনীতে সেই মিথ্যা ও ভ্রান্তি টেনে আনতে চাই না। মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয় যে জীবনী বা ইতিহাস, তা ডাস্টবিনে নিক্ষিপ্ত হয়। ... আত্মজীবনী লেখার কাজে আমি তাই কিছু সময় নিচ্ছি। অকপটে সব সত্য কথা বলার সাহস সঞ্চয় করছি।’ কিন্তু তিনি আত্মজীবনী লিখে যেতে পারেননি।
দেশভাগে বাংলার ন্যায় পাঞ্জাবেরও অভিন্ন ভাগ্যবরণ করতে হয়েছিল। পাঞ্জাবের অসাম্প্রদায়িক ইউনিয়নিস্ট পার্টির প্রধান সিকান্দার হায়াত খান প্রদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী। যিনি মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রবল বিরোধী ছিলেন। মোটেও পছন্দ করতেন না মুসলিম লীগ এবং দলটির একনায়ক জিন্নাহকে। আস্থা-দুর্বলতা কোনোটি ছিল না মুসলিম লীগ এবং জিন্নাহর প্রতি। অথচ শেষ পর্যন্ত চতুর জিন্নাহ অলৌকিক জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় তাকেও বগলদাবা করতে পেরেছিলেন। জিন্নাহর কাছে নিজেকে এবং অসাম্প্রদায়িক ইউনিয়নিস্ট পার্টিকে সঁপে দিয়ে পাঞ্জাবে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির দুয়ার উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। একদিকে মুসলিম সম্প্রদায়, অন্যদিকে হিন্দু ও শিখ সম্প্রদায়ের মিলিত শক্তি পরস্পরের মুখোমুখি। একে অপরের চরম শত্রুরূপে প্রকাশ্যে রণ সাজে প্রস্তুত। চূড়ান্ত রক্তাক্ত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। পাঞ্জাবের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা দেশভাগের চরম ট্র্যাজেডিরূপে ইতিহাসে স্থান পেয়েছে। মর্র্মান্তিক সেই দাঙ্গায় অগণিত মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। বাংলার ফজলুল হক এবং পাঞ্জাবের সিকান্দার হায়াত খানের রাজনৈতিক দোষ-ভুলের মাশুল দিয়েছিল অখণ্ড পাঞ্জাবের দুই সম্প্রদায়ের মানুষ। একমাত্র ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে বিনা অপরাধে অগণিত মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছিল। সে দায় অভিযুক্ত রাজনীতিকদের বহন করতেই হবে। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না।
লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, নতুন দিগন্ত
বদিউল আলম মজুমদার একজন অর্থনীতিবিদ, স্থানীয় সরকার ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ এবং উন্নয়নকর্মী। তিনি সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সম্পাদক। নির্বাচন পদ্ধতি, নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিকদের সম্পর্কে তিনি কথা বলেছেন দেশ রূপান্তরের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সম্পাদকীয় বিভাগের সাঈদ জুবেরী
দেশ রূপান্তর : আমাদের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পদ্ধতিগত বিষয় নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী? এর সীমাবদ্ধতাটাই বা কেমন?
বদিউল আলম মজুমদার : আমাদের তো First past the post system। অর্থাৎ নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থীদের মধ্যে যিনি সর্বোচ্চ ভোট পাবেন তিনি নির্বাচিত হবেন। এটার সীমাবদ্ধতা এখন সর্বজনবিদিত। প্রথমত সামান্য ভোটের ব্যবধানেই যে কেউ বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যায়। এতে ভোটের সামন্যতম পার্থক্য সত্ত্বেও আসনের ক্ষেত্রে বিরাট পার্থক্য হতে পারে। আরেকটা সমস্যা হলো, যেহেতু আসনভিত্তিক সেহেতু দ্বন্দ্ব, হানাহানি, মারামারি, ভোট জালিয়াতির প্রবণতা বেশি হয়। সহিংসতার সম্ভাবনা থাকে ব্যাপক। এই পদ্ধতিতে যারাই একবার নির্বাচিত হন তাদের অনেকটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হয়ে যায়। তাদের আর সরানো প্রায়শই আর সম্ভবপর হয় না। আরেকটা দুর্বলতা হলো যারা ধনী, অর্থকড়ির মালিক এই পদ্ধতি তাদের জন্য সুবিধাজনক। তারা মনোনয়ন কিনে এবং টাকা-পয়সা খরচ করে নির্বাচন জিততে পারে। এখানে জনপ্রিয়তা অনেক ক্ষেত্রে বিবেচিত হলেও যোগ্যতা গুরুত্ব পায় না। এমন অনেকগুলো দুর্বলতার কথা বলা যায় যেগুলো আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কার্যকারিতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।
দেশ রূপান্তর : রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচনী খরচ সংগ্রহ ও ব্যয়ের মধ্যে কোনো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নেই। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
বদিউল আলম মজুমদার : স্বচ্ছতা, জবাবদিহি তো কোথাও নেই। পুরো দেশেই এই দুটির অভাব। একটা হলো নিম্নমুখী দায়বদ্ধতা, জবাবদিহি। অর্থাৎ ভোটারের কাছে জবাবদিহি, ভোটারের কাছে দায়বদ্ধতা নেই। কারণ আমাদের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। এর সমান্তরাল যে দায়বদ্ধতা সংসদসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছে, সেটাও নেই। কারণ নানাভাবে অনির্বাচিতরা এখানে গিয়ে বসেছে। দায়বদ্ধতাহীনতার আরও বড় কারণ হলো আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর অকার্যকারিতা। নির্বাচন কমিশন একটা স্বাধীন সার্বভৌম সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। যেটার জনগণের কল্যাণে, জনগণের স্বার্থে কাজ করার কথা। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমাদের সাংবিধানিক বিধান পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানটিসহ অন্য সব প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক দলীয়করণ হয়েছে।
দেশ রূপান্তর : নির্বাচন কমিশন নিয়ে তো আস্থার সংকট আছে। প্রতিষ্ঠানটিকে সত্যিকার অর্থে শক্তিশালী ও কার্যকর করা কি সম্ভব?
বদিউল আলম মজুমদার : এর আগের দুটি নির্বাচন কমিশনে কৌশল করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, বর্তমান কমিশন করা হয়েছে আইনের বিধানের ব্যত্যয় ঘটিয়ে। কমিশন গঠনে যে আইন হয়েছে, সেটা একটা প্রহসন। মূলত আগের প্রজ্ঞাপনকে একটি দায়মুক্তির বিধানযুক্ত করে আইন বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনুসন্ধান কমিটির স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার কথা। এখানে কোনো স্বচ্ছতার চর্চা হয়নি। গতবার অন্তত শেষ দশজনের নাম প্রকাশ করেছিল তারা, এবার সেটাও করেনি। এছাড়া এই নির্বাচন কমিশন অনেকগুলো বিতর্কিত কাজ করেছে, ইভিএম থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দেওয়া পর্যন্ত। কাজেই এই নির্বাচন কমিশনের ওপর ব্যাপক আস্থাহীনতা রয়েছে, তারা নিজেরাও সেটা বলেছে। গাইবান্ধার উপনির্বাচনে রাঘব-বোয়ালদের দায়বদ্ধ না করেও যেসব চুনোপুঁটিদের দায়ী করেছে, অভিযোগ দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা কমিশনের আছে, কিন্তু তারা সেটা ব্যবহার করে না। পরিস্থিতি এমন যে কমিশন এখন আর নির্বাচন করে না, নির্বাচন চলে গেছে পুলিশ আর প্রশাসনের হাতে।
দেশ রূপান্তর : সংবিধান মোতাবেক যদি আগামী জাতীয় নির্বাচনগুলো রাজনৈতিক সরকারের অধীনেই হয়, তাহলে কি সংবিধান সংশোধন করে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানো উচিত?
বদিউল আলম মজুমদার : আমি মনে করি পঞ্চদশ সংশোধনী যেটা পাস হয়েছে সেটা অসাংবিধানিক। ২০১১ সালের ১০ মে আদালতের সংক্ষিপ্ত আদেশে বলা হয়েছে যে পরবর্তী দুই টার্ম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হওয়ার পরে এটা প্রসপেক্টিভলি বাতিল হবে। এই নির্দেশনা অমান্য করেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা হয়েছে। আমার মনে হয় সংবিধান থেকে একচুলও না নড়ার সরকারের যে অবস্থান, সেটা দুর্বল। কারণ এটা অসাংবিধানিক। বরং এর মাধ্যমে নির্বাচনী মাঠকে অসমতল করে ক্ষমতায় থাকার চিরস্থায়ী ব্যবস্থা করা হয়েছে।
দেশ রূপান্তর : সংস্কারের জন্য বিএনপি রূপরেখা দিয়েছে, সেখানে বলেছে যে দুইবারের বেশি কোনো ব্যক্তি ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। একে কীভাবে দেখছেন?
বদিউল আলম মজুমদার : সংস্কার প্রস্তাব আমরাও দিয়েছি। বিএনপিও দিয়েছে। এর আগে তিনজোটের রূপরেখার সংস্কার প্রস্তাব আছে, তারপর মহাজোটের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনা ২০০৫ সালে অনেকগুলো সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছেন। হ্যাঁ, সংস্কার করা দরকার, এটা ঠিক আছে। এর কোনো বিকল্প নেই। পদ্ধতি প্রক্রিয়ার পরিবর্তন করতেই হবে। কিন্তু সবচেয়ে বড় পরিবর্তন দরকার হলো আমাদের রাজনীতিবিদদের আচরণের। তারা কোনো কিছুই মানেন না। ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থে, দলীয় ও কোটারি স্বার্থে যেটা দরকার সেটাই তারা করেন। কোনো সংস্কারই কাজ করবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের রাজনীতিবিদদের আচরণ, চিন্তায় পরিবর্তন না আসে। এটাই হলো আমাদের বড় সমস্যা।
দেশ রূপান্তর : কিছুটা কি পরিবর্তন আসেনি? এখন বিরোধীদের আন্দোলনের যে অহিংস রূপ এবং সরকার ও পুলিশের যে আচরণ...
বদিউল আলম মজুমদার : এটা তো বিদেশিদের চাপের কারণে হচ্ছে, সবার ঘাড়ের ওপর খড়গ। ভিসানীতি-টিতিসহ এমন নানা কারণে কিছু কিছু পরিবর্তন মনে হচ্ছে। কিন্তু সত্যিকারের কোনো পরিবর্তন, মৌলিকভাবে তাদের কোনো বদল ঘটেনি।
দেশ রূপান্তর : নির্বাচন পদ্ধতি আলাপ শুরু হয়েছিল, দ্বিতীয় যে ব্যবস্থাটি প্রচলিত তা হলো সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা। কিছু বাম ও ইসলামি দলসহ জাতীয় পার্টিও এ পদ্ধতির পক্ষে প্রস্তাব দিয়েছে। আপনি বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
বদিউল আলম মজুমদার : এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। অনেক দেশেই এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে। আবার অনেক দেশে এটা আছে মিক্সড পদ্ধতি হিসেবে। কিছু First past the post system আর কিছু সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব। যেমন নেপালে, তারা একটা সমন্বিত পদ্ধতি অবলম্বন করেছে।
দেশ রূপান্তর : সংখ্যানুপাতিক হোক বা সমন্বিত, এতে কী ধরনের পরিবর্তন আসবে? বাংলাদেশের বাস্তবতায় এই পদ্ধতি কতটুকু প্রয়োগযোগ্য?
বদিউল আলম মজুমদার : পদ্ধতি-প্রক্রিয়ার পরিবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কারা এই প্রক্রিয়াটা কাজে লাগাবে? তাদের আচরণ, ন্যায়-নীতিবোধের ওপর সব নির্ভর করছে। আমাদের যে বর্তমান নির্বাচনী আইনকানুন, বিধিবিধান আছে এটা ব্যবহার করেই কিন্তু ২০০৮ সালে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। এর আগেও হয়েছে। কিন্তু এখন আমাদের রাজনীতিতিবিদ এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা ও ন্যায়নীতির চেতনাবোধই নেই। তাই আপনার প্রশ্ন অনুযায়ী ওটা কার্যকর হবে যদি আমাদের রাজনীতিবিদরা তাদের আচরণে পরিবর্তন আনেন। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতেও তারা টাকা-পয়সার বিনিময়ে মনোনয়ন দিতে পারেন।
দেশ রূপান্তর : সংখ্যানুপাতিকে সব দলই তাদের মনোনীতদের তালিকা প্রকাশ করবে, ভোটাররা দেখতে পারব যে কাদের তালিকায় কারা আছেন...। এতে মনোনয়ন বাণিজ্য কি একটু কঠিন হয়ে যাবে না?
বদিউল আলম মজুমদার : হ্যাঁ, সেটা বলতে পারেন। এটা অপেক্ষাকৃত ভালো। কিন্তু আমরা তো পুরো জাতিকে বিভক্ত করে ফেলেছি। বিভাজনটা এত প্রকট ও ব্যাপক এবং এখানে কতগুলো সিম্বল আর সেøাগানের ভিত্তিতেই সব হয়। বলা হয়ে থাকে যে কলাগাছ দাঁড় করালেও মার্কা দেখে লোকে ভোট দেয়। বড় দুই দলের মধ্যে কেনো তফাৎ নেই।
দেশ রূপান্তর : প্রায় তিন দশক ধরে দেশে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধি ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা চললেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের মুখ থেকে এর পক্ষে-বিপক্ষে কোনো কথা শোনা যায়নি। এর কারণ কী?
বদিউল আলম মজুমদার : কারণ এটা তাদের উভয়েরই স্বার্থের অনুকূল নয়। ওই পদ্ধতিতে তাদের স্বার্থরক্ষা একটু দুরূহ হবে। তাই সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধি ব্যবস্থা নিয়ে কোনো আলাপে তারা এগোয় না।
দেশ রূপান্তর : নির্বাচন নিয়ে নতুন কোনো পদ্ধতি কার্যকর করা কঠিন কেন?
বদিউল আলম মজুমদার : কারণ আমাদের দলগুলোই গণতান্ত্রিক নয়। তারা জনগণের স্বার্থে কাজ করে না। তারা কিছু কর্মসূচি দেয় কিন্তু সেটা তারা বাস্তবায়ন করে না। তারা যে নির্বাচনী ইশতেহার দেয়, সেটা দেওয়ার জন্যই দেয়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ যে ইশতেহার দিয়েছিল ‘দিন বদলের সনদ’, তার কি বাস্তবায়ন হয়েছে? সেটা বাস্তবায়ন হলেও তো আমরা অনেক পরিবর্তন দেখতে পেতাম। সেখানে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার ছিল যে দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার। তার কী হলো? তারা বলেছে দলীয়করণ বন্ধ হবে, সম্পদের হিসাব দেওয়া হবে। এগুলোর কোনটা বাস্তবায়ন হয়েছে?
দেশ রূপান্তর : নিয়ম অনুযায়ী স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এলাকার উন্নয়ন করবেন। কিন্তু বাংলাদেশে সংসদ সদস্যরা নির্বাচিত হয়ে মূলত এলাকার উন্নয়নমূলক কাজকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে কি এলাকাগুলোর উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে?
বদিউল আলম মজুমদার : এটা সংবিধান পরিপন্থী। বিচারপতি খায়রুল হকের একটা রায় আছে এটা নিয়ে। সাংসদদের এই উন্নয়নমূলক কাজ ওই রায়ের পরিপন্থী। তারা আইন মানেন না, বিধি মানেন না। নিয়মনীতি মানেন না।
দেশ রূপান্তর : জনগণও তো এলাকার উন্নয়নের জন্য সাংসদদের দ্বারস্থ হন।
বদিউল আলম মজুমদার : জনগণের তো বিকল্প নেই বলে সাংসদের কাছেই দাবি নিয়ে যেতে হয়। এটা আমাদের বর্তমান নির্বাচনব্যবস্থা বা পদ্ধতিরই একটি দুর্বলতা। এতে কোনো এলাকার উন্নয়ন হয়, কোনোটির হয় না। কিন্তু সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে গেলে পুরো দেশেরই সুষম উন্নয়ন হবে। সাংসদরা এলাকার চিন্তা বাদ দিয়ে সারা দেশ নিয়ে ভাবতে পারবেন। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে সুষম উন্নয়নের সম্ভাবনা তৈরি হবে।
দেশ রূপান্তর : সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নির্বাচন করা হলে সেই তালিকায় সাধারণত কেন্দ্রের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা শুরুর দিকে জায়গা করে নেবেন। সেক্ষেত্রে আঞ্চলিক নেতারা পিছিয়ে যেতে পারেন কিনা কিংবা তখন প্রতিনিধিত্ব রাজধানী-কেন্দ্রিক হয়ে যাবে না?
বদিউল আলম মজুমদার : দুটোই হতে পারে। আমরা যদি ন্যায়-নীতিবোধ প্রদর্শন করি, আমরা যদি মানুষের কথা চিন্তা করি, সত্যিকারভাবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কথা চিন্তা করি; তখন সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি হলে যারা কেবল অর্থবিত্তের মালিক নন কিন্তু তারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন, পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ তাদের মনোনয়ন পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। একই সঙ্গে একটি বড় দল যদি অবাঞ্ছিত ব্যক্তিদের মনোনায়ন দেয়, অন্য দলও তাই-ই করবে। এটাই বাস্তবতা। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো তো একে অপরের থেকে ভালো জিনিসগুলো শেখে না, অপকর্মের দিক থেকে তারা একে অন্যকে অনুকরণ করে।
দেশ রূপান্তর : আপাত দৃষ্টিতে এই পদ্ধতিতে ছোট দলগুলো লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায়। তবে দীর্ঘ মেয়াদে প্রত্যেকটি দলের অঞ্চলভিত্তিক কার্যক্রম দুর্বল হয়ে শুধু কেন্দ্রীয় তৎপরতার মধ্যেই রাজনীতি সীমাবদ্ধ হয়ে পড়তে পারে কিনা?
বদিউল আলম মজুমদার : হতে পারে। কিন্তু এগেইন, আমাদের নেতানেত্রীদের আচরণের প্রশ্ন আসে। তারা যদি গণতান্ত্রিক হন তাহলে আপনি যেটা বললেন সেটা হবে না। কিন্তু তারা যদি স্বৈরতান্ত্রিক হন তাহলে তো তারা যা ইচ্ছা তাই-ই করতে পারেন।
দেশ রূপান্তর : যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় তুলনামূলক ইতিবাচক ফল বয়ে আনছে। আপনি কী মনে করেন?
বদিউল আলম মজুমদার : দেখেন উচ্চকক্ষের উদ্দেশ্য হলো যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানিত ব্যক্তিদের নিয়ে আসা, যারা তাদের বুদ্ধি-বিবেচনা খরচ করে আইন প্রণয়নে ভূমিকা রাখতে পারেন। কিন্তু ভারতের দিকে তাকান। দুর্ভাগ্যবশত সেখানে উচ্চকক্ষে যাদের নিয়ে আসা হয় তারাও সব দলীয় লোকজন। রাজনীতিবিদরা রাজনীতি দ্বারা পারিচালিত হবেন, রাজনীতির স্বার্থে কাজ করবেন এটা স্বাভাবিক। উচ্চকক্ষের ধারণা ছিল যে এখানের সদস্যরা জাতির বৃহত্তর স্বার্থে রাজনীতিবিদদের দুর্বলতার কাউন্টার হিসেবে কাজ করবেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে সেটা কাজ করছে না। অবশ্য এখন অনেকে অন্য কথা বলছে। সেই প্রাচীন গ্রিসে যেমন, তারা তো নির্বাচন করে প্রতিনিধি করেনি। তারা নাগরিকদের থেকে প্রতিনিধি বেছে নিয়েছে। এখন এমনও কথা হচ্ছে যে, এইরকম দল ও দলীয় মনোনয়ন বাদ দিয়ে নাগরিকদের মধ্য থেকে লটারি করে প্রতিনিধি করলে বেটার মানুষজন সংসদে যাবেন। মানে তাহলে বেটার পিপল উইল রান দি গভার্নমেন্ট। ইনফ্যাক্ট, আমি মনে করি যে এটাও হতে পারে আপনার তিন পদ্ধতির সমন্বয়ও হতে পারে। একটা অংশ হলো যে সংখ্যানুপাতিক, একটা অংশ হলো প্রার্থীদের মধ্যে যিনি সর্বোচ্চ ভোট পাবেন সেভাবে এবং আরেকটা অংশ হলো মিনিমাম কিছু যোগ্যতার ভিত্তিতে প্যানেল তৈরি করে লটারির মাধ্যমে প্রতিনিধি হবেন। মানে এক-তৃতীয়াংশ সংখ্যানুপাতিক, এক-তৃতীয়াংশ কনস্টিটিউয়েন্সি ভিত্তিক এবং এক-তৃতীয়াংশ লটারির মাধ্যমে। এখন রাজনীতি যেমন পুরোপুরি দুর্বৃত্তায়িত, এর কাউন্টার ব্যালেন্স করতে হলে তেমন ব্যক্তিদের যুক্ত করতে হবে যারা সংসদে ওই দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি ও অনুগত্যের ঊর্ধ্বে উঠে ভূমিকা রাখতে পারবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে বিশ্ব। এর জন্য দায়ী পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ও গ্রিন হাউজ গ্যাসের লাগাম ছাড়া নিঃসরণ। গ্রিন হাউজ গ্যাসের ক্ষেত্রে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিয়ে যতটা কথা হচ্ছে তেমনটা দেখা যায় না মিথেনকে নিয়ে। শিল্পায়ন পূর্ববর্তী সময় থেকে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ১.২ ডিগ্রি বৃদ্ধির জন্য মিথেন গ্যাস তিন ভাগের এক ভাগের জন্য দায়ী। কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমনের ক্ষেত্রে যেমন জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার এবং জ্বালানি কোম্পানিগুলোর মুনাফা অর্জন একটি বড় বিষয়, একইভাবে মিথেন গ্যাস নির্গমনে বিশ্বের জীবাশ্ম জ্বালানি খাত একটি বড় ভূমিকা পালন করছে। অন্যদিকে, মিথেন নির্গমন এবং এ সম্পর্কিত আলোচনা বাংলাদেশের জন্য বেশি প্রাসঙ্গিক, কারণ কার্বন নিঃসরণের ক্ষেত্রে আমাদের ভূমিকা কম থাকলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে মিথেন নিঃসরণে বিশেষ করে ঢাকা শহরের মিথেন নিয়ে বিশ্বব্যাপী বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত আন্তঃরাষ্ট্রীয় প্যানেল (আইপিসিসি)-এর মতে, আজকের বায়ুমণ্ডলে মিথেনের উপস্থিতি গত আট লাখ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। মিথেন গ্যাস বিশ্বে ১৮ শতাংশ দূষণের জন্য দায়ী এবং শিল্পবিপ্লব-পূর্ব থেকে এ পর্যন্ত সংঘটিত ৩০ শতাংশ বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য দায়ী। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, ২০০৬ সাল থেকে বায়ুমণ্ডলে মিথেনের পরিমাণ ধারাবাহিক বাড়তে থাকে। জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর আগে বায়ুমণ্ডলে মিথেনের মাত্রা ছিল ০.৭ পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন)। বর্তমানে এটি ১.৯ পিপিএম-এরও বেশি। মিথেন গ্যাসের প্রায় পাঁচ ভাগের তিনভাগ নির্গমন হয়ে থাকে- জীবাশ্ম জ্বালানি, কৃষিকাজ, আবর্জনার স্তূপ থেকে। বাকিটা নির্গত হয় প্রাকৃতিক উদ্ভিজ্জ জীবাশ্ম থেকে। বৈশ্বিক জ্বালানি খাত সর্বমোট ৪০ শতাংশ মিথেন নিঃসরণের জন্য দায়ী। ২০২১ সালে জ্বালানি খাত সম্পর্কিত ১৩৫ মিলিয়ন টন মিথেন নিঃসরণ হয়েছে। অন্যদিকে বিভিন্ন সূত্রমতে এখন পর্যন্ত মিথেন নির্গমনের যে অফিশিয়াল তথ্য পাওয়া গেছে তার থেকে নির্গমন অনেক বেশি।
মিথেনের মাধ্যমে বিশ্ব উষ্ণায়নের হার কয়েকগুণ বেশি। ফলে মিথেন গ্যাস যদি নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাহলে তা গড় বৈশ্বিক তাপমাত্রা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে দ্রুত ভূমিকা রাখতে পারে। জলবায়ুতে এক ও দুই দশকের মধ্যে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কার্বন-ডাই-অক্সাইডের ক্ষেত্রে তা সম্ভব না। বিজ্ঞানীরা বলেন, বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের প্রভাব তিনশ বছর থেকে এক হাজার বছর পর্যন্ত থাকতে পারে। আবার মিথেন গ্যাসের একটা বড় অংশ নিঃসরণের পেছনে ব্যবস্থাপনাগত ও প্রযুক্তিগত দুর্বলতা দায়ী। এই ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতার কারণেই জ্বালানি খাত থেকে মিথেন গ্যাস পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায়। প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল উপাদান হচ্ছে মিথেন, ২০২১ সালের জীবাশ্ম জ্বালানি প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে যে মিথেন নির্গত বা অপচয় হয় তা যদি ধরে রাখা যেত তাহলে তা আরও ১৮০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার গ্যাস প্রতিস্থাপন করা যেত যা ইউরোপের ২০২১ সালের সারা বছরের গ্যাস ব্যবহারের সমান। এটা যেমন জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারকে কমাত এবং একই সঙ্গে বাতাসে গ্রিনহাউজ গ্যাস অপেক্ষাকৃত কমাতে সাহায্য করত। তেল ও গ্যাস খাত থেকে মিথেন ধরে রাখা ও অপচয় রোধের সুবিধা হচ্ছে, এর জন্য যে বিনিয়োগ দরকার তা অপচয় রোধ থেকেই তুলে আনা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এখন যা দরকার তা হচ্ছে মিথেন নিঃসরণ রোধে জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলোর কার্যকরী উদ্যোগ।
২৬তম গ্লাসগো বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন মিথেন গ্যাস নিঃসরণ কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের প্রায় ১৫০টি দেশ যাদের মধ্যে বিভিন্ন তেল ও গ্যাস উৎপাদনকারী দেশও আছে তারা তেল ও গ্যাস সেক্টর থেকে মিথেন গ্যাস নির্গমন ২০৩০ সালের মধ্যে ২০২০ তুলনায় ৩০ শতাংশ কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি বলছে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা গেলে তা হবে বিশ্বের সব ব্যক্তিগত গাড়ি, বাস, ট্রাক, দুই চাকা ও তিন চাকার যানবাহনের মাধ্যমের নির্গত দূষণ কমানোর সমকক্ষ। তবে ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি বলছে ২০৫০ সালের মধ্যে জ্বালানি খাতকে কার্বন-নিরপেক্ষ করতে হলে ২০৩০ সালের মধ্যে জ্বালানি খাত সংশ্লিষ্ট মিথেন নিঃসরণ ৭৫% কমিয়ে আনতে হবে।
শুরুতেই জলবায়ু পরিবর্তন এবং বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে মিথেন গ্যাসের প্রাসঙ্গিকতা উল্লেখ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকীর গবেষণা অনুযায়ী, মিথেন গ্যাসের উপস্থিতি অনুযায়ী ঢাকা দ্বিতীয়, বিশ্বের ৬১টি শহরের ওপর এই গবেষণা করা হয় যার শীর্ষে রয়েছে পাকিস্তানের করাচি শহর। ২০১৭ সালের ১০ নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভূ-উপগ্রহ থেকে নেওয়া ছবি বিশ্লেষণ করে গবেষণাটি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ঢাকার ৪৭ ভাগ মিথেনের জন্য দায়ী অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও উন্মুক্ত স্থানে বর্জ্য মজুদকরণ। পাশাপাশি ঢাকার মিথেনের পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে তিতাস গ্যাসের পাইপলাইনের অব্যবস্থাপনা ও ব্যবহারকারীদের অসচেতনতা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্রীষ্মে ঢাকার তাপমাত্রা রাজধানীর বাসিন্দাদের অসহনীয় ঠেকছে। মনে করা হয়, এই অবস্থার পেছনে ঢাকার বাতাসে মিথেনের উচ্চমাত্রায় উপস্থিতি দায়ী।
কার্বন-ডাই-অক্সাইডের নিঃসরণ যদি হয় মানুষের অপরিমিত ভোগ ও বর্তমান অর্থনৈতিক কাঠামোর ফল, সেই কাঠামোর অব্যবস্থাপনাই হচ্ছে মিথেনের সবচেয়ে বড় উৎস। গত কয়েশ বছর ধরে গড়ে ওঠা অর্থনৈতিক কাঠামো হয়তো রাতারাতি পরিবর্তন করা যাবে না। তবে দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মিথেন গ্যাস নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিয়ন্ত্রণের কোনো বিকল্প নেই। আর তার জন্য বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় এক ধরনের রূপান্তর দরকার। এই রূপান্তর প্রক্রিয়া হতে হবে পরিবেশবান্ধব। এই রূপান্তরকালীন মিথেন নিঃসরণ কমিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা এবং রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করা যেমন সমগ্র বিশ্বের জন্য এবং একইভাবে বাংলাদেশের জন্যও সমানভাবে প্রযোজ্য।
লেখক: উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
জনসাধারণ সম্পৃক্ত প্রায় সব কাজেই এখন প্রতিবন্ধকতা। এমন কোনো সেক্টর নেই, যেখানে দুর্নীতি আসন গাড়েনি। দেশকে যতই ডিজিটালি এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা হোক না কেন, অ্যানালগ মানসিকতার কিছু দুর্নীতিবাজ এবং ধান্দাবাজের কারণে পদে পদে সৃষ্টি করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা। সেখানে সরকারের শুভ উদ্যোগও সমালোচনার মুখে পড়ছে। আবার দীর্ঘদিন ধরে যেসব প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম এবং দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিকতা পেয়েছে, সেইসব জায়গায় স্বাভাবিকভাবে কোনো কাজের অগ্রগতি নেই। কিন্তু নগদ-নারায়ণে কাজ হয়ে যাচ্ছে মসৃণভাবে। এমন অবস্থায় দেশের মানুষের হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ভোগান্তি।
একটি দেশের জনগণ সম্পৃক্ত কিছু জরুরি কাজ থাকে। সেগুলো সরকারিভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বিশেষ করে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন, পাসপোর্ট, শিক্ষা সনদ সংক্রান্ত সমস্যা, মামলার নথি সংগ্রহ, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং ভূমি অফিসে জনসাধারণের নিয়মিত যাতায়াত করতে হয়। এসব সরকারি অফিসে ‘ঘুষ’ ছাড়া কোনো কাজ হয় না। আর হলেও, কবে হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এইরকম অনিশ্চয়তা এবং আতঙ্কের মধ্যে মানুষকে সময় কাটাতে হচ্ছে। ‘দুর্ভোগের ধারাপাত’ শিরোনামে গত শনিবার দেশ রূপান্তরে ৭টি সেক্টরকে চিহ্নিত করে, বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ‘এনআইডি সংশোধনে বছর পার’, ‘জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনে জীবন যায়’, ‘পাসপোর্টে ভুল কর্তাদের ভোগান্তি মানুষের’, ‘সার্টিফিকেটের এক ভুলে শত বিড়ম্বনা’, ‘মামলার নথি পেতে পৃষ্ঠা গুনে টাকা’, ‘তিন বছরেও হয় না ড্রাইভিং লাইসেন্স’ এবং ‘ভূমি অফিসে পথ হারানো বৃদ্ধা’ উপশিরোনামের প্রতিবেদনে সবিস্তারে বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। ৭টি প্রতিবেদনকে ব্যবচ্ছেদ করলে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ৭টি সেক্টরের প্রকৃত চিত্র সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, এসব সরকারি প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বেতন-ভাতা দিয়ে তাহলে কী ধরনের ‘সেবা’ প্রদানের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে?
জনগণ যদি কোনো ধরনের উপকারই না পায়, তাহলে তাদের দায়িত্বটা কী? শুধু মুখে মুখে অনলাইন বললে তো আর তা কার্যকর হচ্ছে না, সেই অফলাইনেই মানুষকে যেতে হচ্ছে। আসলে সরকারের বিভিন্ন সেক্টরে ডিজিটাল সেবার কোনো ধরনের ফলোআপ না থাকার ফলে, বিজ্ঞানসম্মত আধুনিক এই সেবাকে আমরা কোনোভাবেই জনবান্ধব করতে পারছি না। প্রতিবেদনগুলোতে বিভিন্ন সেক্টরের অবহেলা, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা এবং খামখেয়ালিপনাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। জানা যাচ্ছে এনআইডি সংশোধন করতে গিয়ে পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে অনেককে। নির্বাচন কমিশনের এনআইডি অনুবিভাগ নতুন এনআইডি তৈরি ও ভুল হলে তা সংশোধন করে। সংশোধনের ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা একের পর এক নানারকম কাগজ চেয়ে থাকেন। সঠিক কাগজ উপস্থাপনের পরও সংশোধন করতে হয়রানি হতে হয় নাগরিকদের। এদিকে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন সার্ভারের অবস্থা এই আছে, এই নেই। জন্মনিবন্ধন সনদ ব্যবহার করে ১৭ ধরনের সেবা পেতে সারা দেশের মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। পাশাপাশি মৃত্যুনিবন্ধন করতে না পারায় মৃত ব্যক্তি উত্তরাধিকারদের সম্পত্তি বণ্টন, পারিবারিক পেনশন প্রাপ্তিতেও হয়রানিতে পড়ছেন তারা। আবার পাসপোর্টের ক্ষেত্রে চলছে তুঘলকি কা-। কর্র্তৃপক্ষ ভুল করলেও, মাশুল গুনতে হচ্ছে পাসপোর্টধারীর। কিন্তু পাসপোর্টের সব সমস্যার সমাধান দালালের মাধ্যমেই করা যায়। তারা টাকার বিনিময়ে এসব কাজ করে দেয়। অন্যদিকে সার্টিফিকেট ভুলের সংশোধনও সেই একই অবস্থা। এদিকে মামলার নথি পেতে পৃষ্ঠা গুনে দিতে হয় টাকা। যদিও এ বিষয়ে টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। অন্যদিকে, ড্রাইভিং লাইসেন্সের ক্ষেত্রে চলছে চরম অরাজকতা। বিআরটিএর অনেক কাজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তারা করছে। এই প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির জন্য অনেকে ঠিকমতো ড্রাইভিং লাইসেন্স পাচ্ছেন না। লাইসেন্স না থাকায় ট্রাফিক পুলিশেরও পোয়াবারো। অন্যদিকে ভূমি অফিসে চলছে, সেই একই অবস্থা। সেখানেও অনলাইন রয়েছে। একটি ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন শেষে নামজারি করতে হয়। আবেদন নিয়ে ভূমি অফিসে কেউ গেলেই বলা হচ্ছে, কাগজপত্র এখন আর হাতে হাতে নেওয়া হয় না। অনলাইনে আবেদন করতে হবে। আবার টাকা দিলে সব হয়ে যায়। আসলে অ্যানালগ নিউরনে ঠাসা, দুর্নীতিপরায়ণ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডিজিটালি কনভার্ট করার পাশাপাশি তাদের স্বভাব-চরিত্রের একটা ‘এমআরআই’ করা দরকার। তাহলে জানা যেতে পারে, তাদের মস্তিষ্কের নিউরনের চৌম্বক তরঙ্গ আসলে কী ধরনের তথ্য প্রদান করছে? এইভাবে ইচ্ছাকৃতভাবে বিভিন্ন সেক্টরে সমস্যা তৈরি করে, জনগণকে ভোগান্তির মধ্যে ফেলার একটি দুরভিসন্ধি রয়েছে। এসব বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাব্যক্তিরা যতদিন নিজ কাজের প্রতি দায়িত্বশীল না হবেন, ততদিন এই সমস্যা থাকবেই। শুধু নামে থাকবে ডিজিটাল।
২০০১ সালের এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন কবি আজীজুল হক। তার জন্ম ২ মার্চ ১৯৩০ সালে মাগুরা জেলায়। সুবক্তা ও সংগঠক এই শিক্ষক-কবি জনকোলাহল থেকে দূরে নিজস্ব সৃষ্টিশীলতার জগতে জীবনযাপন করতে পছন্দ করতেন। তার বাবা মুনশি মোহাম্মদ জবেদ আলী ও মা রহিমা খাতুন। ১৯৫৬ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৭ সালে সাতক্ষীরা ডিগ্রি কলেজে অধ্যাপনার মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু হয়। ১৯৫৮ সালে তিনি মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে যোগ দেন এবং দীর্ঘদিন শিক্ষকতার পর ১৯৮৮ সালে অবসর গ্রহণ করেন। তার কবিতার উপজীব্য বিষয় মানুষ, সমাজ, সময়, দেশ, প্রকৃতিপ্রেম, নদ ও নারী। শব্দ চয়নের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অসাধারণ নিপুণ শিল্পী। প্রবন্ধ রচনার ক্ষেত্রে তার নিরীক্ষাধর্মী চিন্তাচেতনা পাঠকসমাজকে করেছে বিমুগ্ধ। তার কবিতায় একদিকে যেমন ইতিহাস ও ঐতিহ্যসচেতন শিল্পদৃষ্টি প্রতিভাত, অন্যদিকে অস্তিত্ববোধ ও ভাবনাপ্রসূত অনুষঙ্গ অভিনব মর্যাদায় সমৃদ্ধ হয়েছে। সাহিত্যক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৯৮৬ সালে যশোর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার, ১৯৮৯ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও মধুসূদন একাডেমি পুরস্কার, ১৯৯৪ সালে যশোর শিল্পীগোষ্ঠী পদক এবং ১৯৯৬ সালে চাঁদের হাট পদক অন্যতম।
অভিষেকে ২৬ মিনিট খেলে দুই অ্যাসিস্টের অবদান রাখতে পেরেছিলেন নেইমার। আল হিলাল জিতেছিল। কিন্তু পর পর দুম্যাচ খেললেন পুরো সময়। তেমন কিছুই করতে পারলেন না। ড্র করেছে আল হিলাল আবার।
এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচে শেষ দিকের গোলে ১-১ ড্র করে পরাজয় বাঁচিয়েছিল আল হিলাল। আজ সৌদি প্রো লিগে দামাক এফসির বিপক্ষে ম্যালকমের গোলে ৯ মিনিটে এগিয়ে গেলেও শেষপর্যন্ত তা ধরে রাখতে পারেনি।
সাত ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে তবুও শীর্ষেই রইলো আল হিলাল।
বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস আজ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে দিবসটি পালিত হবে। এ উপলক্ষে ২১টি বেসরকারি সংস্থা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘স্বল্প দূরত্বে হেঁটে ও সাইকেলে চলি, ব্যক্তিগত গাড়ি পরিহার করি’।
দিবসটি উপলক্ষে আজ শুক্রবার সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে ২১টি আয়োজক সংস্থার সম্মিলিত উদ্যোগে ধানমন্ডি-২৭-এর মোড় থেকে আবাহনী খেলার মাঠ পর্যন্ত ‘স্বল্প দূরত্বে হেঁটে ও সাইকেলে চলি, ব্যক্তিগত গাড়ি পরিহার করি’ শীর্ষক র্যালি আয়োজন করা হয়েছে।
২০০৬ সাল থেকে দেশে বেসরকারি উদ্যোগে দিনটি উদযাপন করা হচ্ছে। তবে ২০১৬ সাল থেকে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে এটি পালন শুরু হয়, যেখানে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্র্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) মুখ্য সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করে এসেছে। কিন্তু বিশ্বের অন্যতম যানজটপ্রবণ ঢাকা শহরে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা থাকা সত্ত্বেও সরকারিভাবে এ দিবসটি পালনের উদ্যোগ এই বছর নেওয়া হয়নি। বাংলাদেশে দিবসটি পালনের প্রায় দেড় যুগ পার হতে চললেও ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের কার্যকর ও ফলপ্রসূ পরিকল্পনা ও নীতির বাস্তবায়ন এখনো দেখা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, যানজটের বড় কারণ হলো এই ব্যক্তিগত গাড়ি। দেশে মেগা প্রকল্পগুলো ব্যক্তিগত গাড়িকে প্রাধান্য না দিয়ে গণপরিবহনকে প্রাধান্য দিয়ে করা উচিত। এখন গণপরিবহনের দিকে জোর না দেওয়ায় অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে ব্যক্তিগত গাড়ি, যা সড়কে বিশৃঙ্খলার জন্য দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিআরটিএ একটি সূত্র থেকে জানা যায়, দিন দিন ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। চলতি বছর আগস্ট পর্যন্ত মোট যানবাহন নিবন্ধন আছে ৫৮ লাখ ৩৭ হাজার ৫৮টি মতো। এর মধ্যে গণপরিবহনের সংখ্যা মাত্র ২ শতাংশের কম। আর বেশিরভাগই ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা গাড়ি।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বায়ুদূষণে বিশ্বে দুই বিলিয়ন শিশু প্রতিদিন বিষাক্ত বাতাসের সংস্পর্শে আসছে। এদের মধ্যে পাঁচ লাখের বেশি প্রতিবছর মারা যাচ্ছে। তবুও দেশে গণপরিবহনকে প্রাধান্য না দিয়ে বড় বড় অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। যার জন্য দেশে দিনের পর দিন ব্যক্তিগত গাড়ি বাড়ছে। এ অবস্থায় ভবিষ্যতে সড়কে নানারকম বিশৃঙ্খলার শঙ্কা থেকেই যাবে।
এদিকে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানান, প্রতি মাসের প্রথম রবিবার সব ধরনের ব্যক্তিগত গাড়ি বন্ধ করার রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ প্রয়োজন। নীতিনির্ধারকরা গণপরিবহন ব্যবহার করলেই সাধারণ মানুষের যাতায়াতের দুর্ভোগ উপলব্ধি করতে পারবেন, ফলে গণপরিবহনের মান বাড়তে পারে। টেকসই পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নগর এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়ির নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়াস সারা বিশ্বে বেগবান হলেও বাংলাদেশে এ প্রয়াস সীমিত। তাছাড়া ঢাকা শহরে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ব্যক্তিগত গাড়ির রেজিস্ট্রেশন দিয়ে চলছে বিআরটিএ। নগর পরিকল্পনা ও পরিবহন পরিকল্পনার মধ্যে সমন্বয় নেই, কর্র্তৃপক্ষগুলোর মধ্যেও নেই কার্যক্রমের সমন্বয়। ফলে নগরে গাড়ির চাপ বাড়ছে, মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়েছে যানজট।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘এক দফা এক দাবি, শেখ হাসিনা কখন যাবি জনগণ এখন আর এই কথা বলে না। বলে, এক দফা এক দাবি, শেখ হাসিনা এখন যাবি। আর যাবেনইবা কোথায়? এখন সেটাই দেখার বিষয়। সর্বশেষ গতকাল ইউরোপীয় ইউনিয়ন সাফ বলে দিয়েছে, তারা শেখ হাসিনার অধীনে হওয়া নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবেন না। কারণ তাদের যে প্রতিনিধিরা দেশে এসেছিলেন, তারা গিয়ে বলেছেন, নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই।’ গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বিএনপি আয়োজিত ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-সিলেট অভিমুখী ‘রোডমার্চ’ কর্মসূচির শুরুতে ভৈরবের বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সকালে অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির এক দফা দাবি আদায়ে এই রোডমার্চ শুরু হয়। কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রোডমার্চ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন গয়েশ^র চন্দ্র রায়।
এ সময় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওয়ারেস আলী মামুন, নির্বাহী কমিটির সদস্য লায়লা বেগম ও মজিবুর রহমান ইকবাল।
ওই জনসভায় গয়েশ্বর চন্দ্র আরও বলেন, ‘বিএনপির দাবি দেশে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন, যা হতে হবে নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। যার যার ভোট সে সে দেবে। সকালের ভোট রাতে হবে না।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ব্যবসার পরিবেশ পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগের লোকেরা ধ্বংস করছে। ফলে এতে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। দেশের মানুষ আজ অসহায় দ্রব্যমূল্য নিয়ে। চালের দাম, তেলের দাম, আলুর দাম, বিদ্যুতের দাম হু হু করে বেড়েছে। আজকে ব্যাংকগুলোতে টাকা চুরি করে আওয়ামী লীগের লোকেরা পাচার করছে বিদেশে। রিজার্ভ কমে গেছে। সরকারদলীয় লোকের দুর্নীতির কারণে আজ রিজার্ভ কমছে, দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হচ্ছে।’
দুপুরে সিলেট অভিমুখে তারুণ্যের রোডমার্চে যাত্রাপথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল বিশ্বরোড মোড়ে পথসভা হয়। এ সময় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তৃতাকালে গয়েশ্বর বলেন, ‘তারুণ্যের যে রোডমার্চ শুরু হয়েছে, তা সরকার পতনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। দেশ বাঁচাতে, মানুষ বাঁচাতে তরুণ সমাজ আজ জেগে উঠেছে। শেখ হাসিনা সরকারকে আর কোনো অশুভ শক্তিই রক্ষা করতে পারবে না।’ এ আন্দোলন ডু আর ডাই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
রোডমার্চটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমানায় পৌঁছলে দলের কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিকবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম খোকন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ মোহাম্মদ শামীম ও যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা এসএন তরুণ দেসহ দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নেতৃত্বে রোডমার্চকে স্বাগত জানিয়ে শোডাউন করা হয়।
পরে দুপুরে হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রিজ এলাকায় পথসভা করা হয়। পথসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মালিক জনগণ। সেই মালিকানা আমরা ফেরত দিতে চাই। ক্ষমতায় আসার জন্য আমরা আন্দোলন করছি না। জনগণের অধিকার আর মানুষের ভোটাধিকার ফেরাতে আমরা রাজপথে নেমেছি।’
রোডমার্চটি বিকেল ৪টায় সিলেটে এসে সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই রোডমার্চ সিলেটে পৌঁছে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। এরপর সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায় ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ নেতারা।
এদিকে বৃষ্টি হওয়ায় সমাবেশস্থল আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে নেতাকর্মীরা সেভাবে অবস্থান নিতে পারেননি। খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে অনেকে সমাবেশস্থলে এলেও বৃষ্টির কারণে তারা আশপাশের বিভিন্ন ভবনে আশ্রয় নেন। অবশ্য বেশ কিছু নেতাকর্মী ছাতা, ব্যানার-ফেস্টুন ইত্যাদি মাথায় দিয়ে মাঠেই অবস্থান করছিলেন। বৃষ্টিতে ভিজে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী সরকারবিরোধী স্লোগান দেন।
সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন জানান, রোডমার্চের সমাপনী সমাবেশে যোগ দিতে দুপুর থেকেই সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলা, পৌরসভা ও সিলেট মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মী মিছিল সহকারে এসে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জড়ো হতে থাকেন। তবে বৃষ্টির কারণে মাঠে অবস্থান কষ্টকর হয়ে পড়ে। এরপরও বৃষ্টিতে ভিজে শত শত নেতাকর্মী সেখানে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ সফল করেছেন। সভা শেষে রোডমার্চ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
* প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ও নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
রাজধানীর পল্টনে ব্যাংক থেকে ব্যবসায়ীর ২০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দুই পুলিশসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
জানা গেছে, আবদুল্লাহ আল মামুন নামে একজন ব্যবসায়ীর কর্মচারী আইএফআইসি ব্যাংকের পল্টন শাখায় ২০ লাখ টাকা জমা দিতে আসেন। তিনি এসে টাকা জমা দেওয়ার লাইনে দাঁড়ান। এ সময় পুলিশের ইউনিফর্ম পরা দুই ব্যক্তি তাকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে যান। পরে তার কাছে থেকে ২০ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে যান তারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। পরে সিটিটিভি ফুটেজ দেখে দুজন হকারকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ধারাবাহিকভাবে গ্রেপ্তার করা হয় অন্যদের। এ ঘটনায় পল্টন থানায় একটি মামলা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের (ডিএমপি) উপকমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ছিনতাইয়ের সঙ্গে দুজন পুলিশ কনস্টেবল জড়িত ছিল। তাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিভিলে থাকা তিন ব্যক্তি টাকার বিষয়ে ওই দুই পুলিশকে তথ্য দেয়। এরপর ইউনিফর্ম পরা দুই পুলিশ কনস্টেবল ব্যাংকে ঢুকে ওই ব্যক্তিকে বাইরে নিয়ে আসে। তার কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। দুই পুলিশ কনস্টেবল বরখাস্ত ছিল।
জানা গেছে, পল্টন থানা-পুলিশ ও ডিবির মতিঝিল জোনাল টিম সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ব্যাংকের সামনের ফুটপাতের হকার হৃদয় ও তার সহযোগী মঞ্জুকে আটক করে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের দেওয়া তথ্যে ডেমরা পুলিশ লাইনসে ক্লোজড হয়ে থাকা পুলিশের দুই সদস্য কনস্টেবল মাহাবুব ও কনস্টেবল আসিফকে ১০ লাখ টাকাসহ আটক করা হয়। এরপর বাসাবো থেকে ছিনতাইয়ের আরও ১০ লাখ টাকা ও মোটরসাইকেলসহ সোহেলকে আটক করে পুলিশ।
এ ঘটনার ভুক্তভোগী আবদুল্লাহ আল মামুন করপোরেট আইডিয়াসের মালিক। তিনি বলেন, নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই মার্কেটিং অফিসারের মাধ্যমে টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার জন্য পাঠানো হয়। টাকা নিয়ে ব্যাংকের ওই শাখায় যাওয়ার পর এ ঘটনা ঘটে। এরপর দ্রুত পুলিশকে জানাই।
এ ব্যবসায়ী আরও বলেন, পুলিশের পোশাক পরিহিত দুই লোক এসে আমাদের কর্মীকে ভয় দেখিয়ে টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে এটি শুনে বিস্মিত হয়েছিলাম। এখন জানলাম এ ছিনতাইকাণ্ডে শাহজাহানসহ আরও তিনজন রয়েছে। শাহজাহান আমার দীর্ঘদিনের কর্মী। আমাদের প্রতিষ্ঠান ঠিকাদারিতে জড়িত।
পুলিশ বলছে, পুরানা পল্টনে করপোরেট আইডিয়াসের অফিস থেকে টাকা জমা দেওয়া জন্য ব্যাংকের উদ্দেশ্যে যাত্রার পরপরই শাহজাহান, হৃদয় ও রাসেল পুলিশের দুই সদস্যকে খবর দেন। তারা পল্টনের আইএফআইসি ব্যাংকে গিয়ে টাকার ব্যাগসহ আজিমকে তুলে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে দুই পুলিশ সদস্য পোশাক পরিহিত অবস্থায় ছিনতাইয়ে অংশ নেন। এ সময় বাকি তিনজন আশপাশে পাহারায় ছিলেন।
পল্টন থানার ওসি সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরই ব্যাংকের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হয়। এরপর পুলিশের দুই সদস্যকে শনাক্তের পর অন্য তিনজনের বিষয়েও তথ্য বেরিয়ে আসে।
জানা গেছে, ব্যাংকের ওই শাখায় গিয়ে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা একটি হিসাব নম্বরে জমা দেওয়ার পরই ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের নামে ব্যাংকের বাইরে নিয়ে আসা হয়। তারা আজিমের টাকার উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। ব্যাগে থাকা টাকা হুন্ডির অর্থ বলে দাবি করেন পুলিশ সদস্যরা। এরপর জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে আজিমকে ব্যাংকের বাইরে নিয়ে যান। রাস্তায় এনে তাকে মোটরসাইকেলে তুলে দ্রুত মুগদা এলাকায় নেন। সেখানে টাকার ব্যাগ রেখে ছেড়ে দেওয়া হয় আজিমকে। এরপর ঘটনা ওই প্রতিষ্ঠানের মালিককে জানানোর পর পুলিশের একাধিক দল কাজ শুরু করে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার-২০২৩। মেলার প্রথম দিনে পর্যটকদের ব্যাপক সাড়া মিলেছে। ভারত ও বাংলাদেশ ছাড়াও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের জন্য যাবতীয় বিষয় নিয়ে মেলায় বসেছে অর্ধশতাধিক স্টল। মেলায় আসা দর্শনার্থীরাও হাতের লাগালেই ভ্রমণসংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য এবং ভ্রমণের ওপর অফার পাওয়ায় বেশ খুশি।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে আগত দর্শনার্থী ও স্টলগুলোতে থাকা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই মিলেছে।
মেলায় স্টল বসিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসও। স্টলটিতে দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি চালু হওয়া জাপানের নারিতা রুটে যাতায়াত করতে চাইলে মেলায় আসারা পাবেন ২০ শতাংশ ছাড়। এ ছাড়া কাঠমান্ডু, কলকাতা, দিল্লি, আবুধাবি, শারজা, দুবাই, দোহা, সিঙ্গাপুর ও ব্যাংকক রুটে মিলবে ১৫ শতাংশ ছাড়। এ ক্ষেত্রে বিমানের কল সেন্টারেও (০১৯৯০৯৯৭৯৯৭) সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন আগ্রহীরা।
এদিকে মেলা উপলক্ষে র্যাফেল ড্রর টিকিটও দিচ্ছে এয়ারলাইনসটি। প্রবেশপথে টিকিট কাটলে প্রথম দিনে থাকছে ঢাকা-দিল্লি-ঢাকা কাপল রিটার্ন টিকিট, দ্বিতীয় দিনে থাকছে ঢাকা-গুয়াংজু-ঢাকা রুটে কাপল রিটার্ন টিকিট এবং তৃতীয় দিনে ঢাকা-নারিতা-ঢাকা কাপল রিটার্ন টিকিট পাবেন র্যাফেল ড্রতে বিজয়ীরা।
মেলায় আসা দর্শনার্থীদের ভাষ্য, এরকম মেলার আয়োজন প্রতি তিন মাস পরপর করা প্রয়োজন। তাহলে মানুষের ভ্রমণের ওপর ভীতি কাটবে। তথ্য জানবে খোলামনে। আর এতে দেশের পর্যটন স্পটগুলোতেও তারা সহজে ঘুরতে যেতে চাইবে।
রংপুরের ‘আলী বাবা থিম পার্কে’র আকর্ষণীয় নানা বিষয় ভ্রমণপিপাসুদের জানাতে মেলায় স্টল দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার তৌহিদুল ইসলাম তৌহিদ। তিনি বলেন, ‘আমরা অফার দিচ্ছি না, তবে আমাদের পার্কে মানুষ কেন যাবে, কী কী দেখার মতো জিনিস দিয়ে আমরা পার্ক সাজিয়েছিÑ সেটা জানাতেই মেলায় আসা।’
ব্যাংকপাড়াখ্যাত মতিঝিল এখন মৃতপ্রায়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে না পারায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যত্র সরে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতির চাকা ঘোরানো মতিঝিলে আবাসিক ভবন, শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান তৈরি না হলে দেশের প্রধান এই বাণিজ্যিক অঞ্চল প্রাণ হারাবে বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তাদের মতে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বড় অবদান রয়েছে মতিঝিলের টাকার। শুধু তা-ই নয়, মতিঝিলে উপার্জিত অর্থে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে দুবাই, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, কানাডাসহ আরও অনেক দেশে। এখানকার উপার্জিত টাকা অনেকে জমা রেখেছেন সুইস ব্যাংকেও। শুধু উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি মতিঝিলে। এ যেন মা কাঁকড়ার আত্মত্যাগের গল্প। মা কাঁকড়া বাচ্চাদের আগলে রাখে বুকের ভেতর; যেদিন বাচ্চাগুলো বের হয়ে আসে, সেদিন খোলস ছাড়া মা কাঁকড়ার আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। মা কাঁকড়ার মতো দুঃখী ও ত্যাগী বাণিজ্যিক মতিঝিল।
ষাটের দশকে মতিঝিলে গড়ে ওঠে দেশের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল (সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট-সিবিডি)। সেই থেকে এখনো দেশের প্রধান বাণিজ্যিক অঞ্চল মতিঝিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১। এর মধ্যে সরকারি ৮টি, বেসরকারি ৪৫টি এবং বিদেশি ব্যাংক রয়েছে ৮টি। এ ছাড়া ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ৮১টি বীমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্ধেকের বেশির প্রধান কার্যালয় চলে গেছে কারওয়ান বাজার, গুলশান-বনানী ও উত্তরায়। নতুন করে যেসব ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পাচ্ছে, সেগুলোর প্রধান কার্যালয় মতিঝিলের বাইরে করা হচ্ছে।
জানা গেছে, মতিঝিলের আশপাশে পরিকল্পিত কোনো আবাসিক এলাকা, অভিজাত হোটেল, কাজের ফাঁকে অবসর কাটানোর মতো উন্মুক্ত স্থান, শপিং কমপ্লেক্স না থাকায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের সুবিধার জন্য অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কার্যালয়গুলোও মতিঝিলের বাইরের এলাকা, অর্থাৎ কারওয়ান বাজার, গুলশান অ্যাভিনিউ, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে গড়ে উঠছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দৈনিক বাংলা, শাপলা চত্বর, মধুমিতা সিনেমা হল এবং ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে এবং দিলকুশা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবন এবং বঙ্গভবনের পাশের এলাকাজুড়ে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল। বিশ্বের বাণিজ্যিক অঞ্চলের ভবনগুলো সুউচ্চ হয়ে থাকে। কিন্তু মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের পাশেই বঙ্গভবন। নিরাপত্তার কারণে বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর কোনো বহুতল ভবন করতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, মতিঝিলের প্লটগুলোর ‘নন-রেসট্রিকটেড’ উচ্চতা দেওয়া রয়েছে। কিন্তু বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর সাড়ে চারতলার বেশি উচ্চতার ভবনের অনুমোদন মেলে না। ফলে মূল্যবান ওই প্লটগুলোর সঠিক ব্যবহার করতে পারছেন না মালিকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার স্থাপনাগুলোর বেশিরভাগ জরাজীর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণও রয়েছে কয়েকটি ভবন। একটির সঙ্গে অন্যটি লাগানো। দুটি ভবনের মাঝখানে উন্মুক্ত জায়গা নেই বেশিরভাগ ভবনের। দিলকুশা এলাকার বঙ্গভবন লাগানো ভবনগুলোর মাঝখানেও কোনো ফাঁকা জায়গা দেখা যায় না।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, মতিঝিল এলাকার ফুটপাতগুলো হকারদের দখলে। ভাঙাচোরা এবড়োখেবড়ো সড়ক। সড়ক বিভাজকগুলো শ্রীহীন। এগুলোতে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হয়নি। প্রধান সড়ক থেকে একটু ভেতরে গেলে মতিঝিলের আরও করুণ দশা চোখে পড়ে। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকার সড়কের ফুটপাতে গড়ে উঠেছে চটের ছালা দিয়ে ঘেরা খাবারের হোটেল, চায়ের দোকান এবং নানা পণ্যের অস্থায়ী দোকান। সামান্য বৃষ্টিতে মতিঝিল এলাকার সড়কগুলো তলিয়ে থাকে পানির নিচে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত। ডিএসসিসি এলাকার জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ চলছে। খসড়া মাস্টারপ্ল্যানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে মূল্যায়ন করলে মতিঝিল ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে। যদিও এটা মানতে নারাজ ডিএসসিসির কারিগরি কমিটি।
মতিঝিল এলাকার বেহাল অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর মো. মোজাম্মেল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিল এলাকার সংস্কার ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে ডিএসসিসি। পরিত্যক্ত প্রায় ১০ কাঠা জায়গার ওপর একটি পার্ক তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মতিঝিলের সড়ক, নর্দমা, ফুটপাত ও সড়ক বিভাজকের অনেক সমস্যা রয়েছে। সেগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা দরকার। পর্যায়ক্রমে এ এলাকার বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে কাজ করবে ডিএসসিসি। তবে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের মূল সংস্কার ও আধুনিকায়নের দায়িত্ব রাজউকের। রাজউককে সেসব বিষয় পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব কাজে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা লাগলে করপোরেশন সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে তোলে রাজউক। রাজউক সূত্রে জানা যায়, ষাটের দশক থেকেই মতিঝিলের পুরোপুরি বাণিজ্যিক বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত। বিশে^র উন্নত দেশগুলোর বাণিজ্যিক অঞ্চলে শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান থাকে। আর কাছাকাছি এলাকায় পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা থাকে। মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার ক্ষেত্রে সেটা ছিল না। অভিজাত মানের হোটেল পূর্বাণী গড়ে উঠলেও আশপাশে সময় কাটানোর মতো ব্যবস্থা নেই। সে কারণে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দেশ-বিদেশ থেকে আসা লোকজন গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় থাকেন। মতিঝিলের সৌন্দর্য নিশ্চিত করতে ও আধুনিকায়নে যেসব বিষয়ে দৃষ্টি রাখা দরকার ছিল রাজউক ও সিটি করপোরেশন সেটা করেনি।
রাজউক সূত্রে আরও জানা যায়, ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধরা, উত্তরা। সেই সব এলাকা থেকে মানুষ মতিঝিলে আসেন। শহরের জনসংখ্যা বাড়ায় দিন দিন যানজট বাড়ছে। ওই সব এলাকা থেকে মতিঝিলে আসতে সড়কে এক থেকে দেড় ঘণ্টা চলে যায়। দৈনিক ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা কর্মঘণ্টার মধ্যে ৩০ শতাংশ সময় সড়কে নষ্ট হচ্ছে। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে চিন্তা করেছে, তার কর্মস্থল এমন একটা জায়গায় হবে যা তার আবাসনের কাছাকাছি। মতিঝিল থেকে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ও ভূমিকা রেখেছে।
কালের বিবর্তনে গুলশান হয়ে উঠেছে বাণিজ্যিক এলাকা। কারওয়ান বাজার, উত্তরায়ও গেছে কিছু। এসব জায়গায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক কার্যক্রমও সেখানে চলে গেছে। এসব এলাকার আশপাশে গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় তাদের বসবাস। আবাসিক এলাকা ছাড়া, পৃথিবীর কোথাও শতভাগ জায়গা শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা অথবা একই শ্রেণির কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহার হয় না।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মুখপাত্র মো. আশরাফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, নগর পরিকল্পনায় ভূমির ব্যবহার সম্পর্কে বলা হয়, যেকোনো জায়গার ব্যবহার হবে ২৪ ঘণ্টা। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল কর্মচঞ্চল থাকে মাত্র ১২ ঘণ্টা। এরপর ওই জায়গার ব্যবহার হয় না। রাতে নীরব ও ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়।
তিনি বলেন, যে মতিঝিলে দিনের বেলায় হাঁটা যায় না; গাড়ির কারণে, যানজটে; সেই মতিঝিলে রাত ৮টার পরে আবার একাও হাঁটা যায় না; অনিরাপদ বোধ হয়। এ জন্য যারা দিনে বাণিজ্য করতে আসেন, তারা মতিঝিল এলাকার হোটেলগুলোতে থাকেন না। অন্যদিকে গুলশান-বনানী এলাকায় থাকলে তারা শপিংয়ে যেতে পারেন, কফি শপে যেতে পারেন। এসব কারণে সারা বিশ্বে ভূমির মিশ্র ব্যবহারকে উৎসাহিত করেছে।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, মতিঝিল এলাকা যেহেতু ইতিমধ্যে তার আভিজাত্য হারিয়ে ফেলেছে, এ জন্য মতিঝিলের জমির শ্রেণিকে মিশ্র ব্যবহার হিসেবে ঢেলে সাজানোর প্রস্তুতি নিয়েছে রাজউক। সংশোধিত ড্যাপে সে বিষয়ে নির্দেশনা রাখা হয়েছে। পৃথিবীর নগর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ৫০, ৬০ বা ১০০ বছর অন্তর সেসব ঢেলে সাজানো হয়। সেটা বিবেচনায় নিয়েই মতিঝিল এলাকাকেও ঢেলে সাজাতে হবে। এখানে আবাসিকের বৈশিষ্ট্য দিতে হবে; কনডোমিনিয়াম গড়ে তুলতে হবে। ইতিমধ্যে রাজউক বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে ১৬ একর জায়গা নিয়ে একটি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে লাইব্রেরি, ওয়াকওয়ে থাকবে। বসার ব্যবস্থা থাকবে। মতিঝিল এলাকায় ঝিল ছিল, ওই ঝিলকে প্রাধান্য দিয়ে পার্কটি তৈরি করা হবে। বহুমুখী ব্যবহার ছাড়া মতিঝিলকে আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিলের আধুনিকায়ন ও ভূমির মিশ্র ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। তাহলে মতিঝিল সচল থাকবে; তবে ঢাকা শহর বড় হওয়ায় আরও বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে ওঠা ইতিবাচক। এসব পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা দরকার ছিল; কিন্তু ঢাকার ক্ষেত্রে সে রকম হয়নি। এটা দুঃখজনক। এ জন্য শহরে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ঢাকায় এখন অনেকগুলো বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেই সব অঞ্চলে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত বড় বড় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় মতিঝিলে রয়েছে। তবে ব্যবসা গুলশান, বনানী, উত্তরা, গাজীপুরে সরে যাওয়ায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও ব্যবসা কেন্দ্রের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে।
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০-৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির অঙ্ক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করছে, সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রমুখী করতে পারলে নির্বাচন বিতর্ক সামাল দিতে কোনো বেগ পেতে হবে না।
আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেওয়া নানা পরিকল্পনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা হলো ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। এ ছাড়া জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে নির্বাচন নিয়ে জনমত আওয়ামী লীগের পক্ষেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর আওয়ামী লীগ এ তিন পরিকল্পনাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান।
চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন। এর আগে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল সফর করে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর আওয়ামী লীগে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলে দাবি করছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।
তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিগত দুই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আওয়ামী লীগ তথা সরকারকে দেশ-বিদেশে বেশ বিপাকে ফেলেছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায় না সরকারি দল। সেজন্য আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে নামতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না ধরেই কমপক্ষে ৪০ ভাগ ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়ে যাবে। সেই নির্বাচনে এ সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে এলে ভোটের পরে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ করার যে চক্রান্ত বিএনপির রয়েছে, সেটি ব্যর্থ হয়ে যাবে। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করার অন্যতম কারণ হলো এটি।
সরকারের ওপর অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ ভোট দিতে পারলেই সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ৫০-৪০ শতাংশ ভোট কাস্টিং করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ। তা সম্ভব হলেই ভোট বিতর্ক এড়ানো যাবে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের পরে সব নির্বাচনেই ভোটার উপস্থিতি হতাশাজনক ছিল। এ বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে। কোনো কোনো ফোরামে আলোচনায় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে কম ভোটার উপস্থিতির উদাহরণ। তাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্য নির্ধারণ করে নির্বাচন প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা ধরে নিয়েই তিন পরিকল্পনায় সফল হতে পারবেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে আওয়ামী লীগ মনে করে নির্বাচন পর্যন্ত জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য বেঁধে রাখা পারলেই নির্বাচন পর্যন্ত আর সমস্যাগুলো বড় বাধা হয়ে আসবে না সরকারের সামনে। বাকিটা হলো ভোটের দিন লক্ষ্য অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি ঘটানো।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তেমন আধুনিক উদ্যোগ নেই। কম ভোট উপস্থিতির এটিও একটি কারণ। প্রত্যেক ভোটারকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে হবে এমনকি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, সেটি ইসিকে ভাবতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও কেন্দ্রে ভোটার আনতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। এ নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে কী কী উপায় নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে গবেষণা চলছে। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, স্বল্প সময়ে যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায়, সেগুলো আগামী নির্বাচনে করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের কর্মব্যস্ততা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনে সময় পেলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার চেয়ে পরিবারকে একটু সময় দেওয়াকে বেশি গুরুত্বের মনে করেন ভোটাররা।’ ভোট দেওয়ার প্রবণতা পৃথিবীর অনেক দেশেই কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি দল নির্বাচনে না যাওয়ায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে মনে করে না ভোটাররা। ফলে নির্বাচন বর্জন করা দলের ভোটাররা কেন্দ্রে যান না এবং দলের প্রার্থী বিজয়ী হবেন এ ভেবে আওয়ামী লীগের ভোটাররাও যান না। গত নির্বাচনগুলোতে ভোট কম পড়ার বড় কারণ এগুলো। তবে আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন তারা। জাফরউল্যাহ আরও বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেড়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের হিসাবে মোট ভোটারের প্রায় ৩৫ শতাংশই তাদের ভোটার। এবার দলীয় ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভোটার কেন্দ্রে আনার উদ্যোগ সফল হলে ভোট নিয়ে সব প্রশ্নই দূর করতে পারবে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ ও ’১৮ সালের দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের মধ্যে কম ভোটার উপস্থিতিও অন্যতম। তারা চান না এবার সেই প্রশ্ন উঠুক।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছোট ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণেও ঘাটতি রয়েছে। ফলে সরকার বড় বড় কাজ করছে ঠিকই, ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে সাধারণ জনগণের একটি অংশ সরকারের প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না, এমনটাই মনে করছেন তারা। তাই ভোটের আগে বাকি সময়ে ছোট বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তা পূরণ করা হলে সাধারণ জনগণের ওই অংশটি আওয়ামী লীগের ওপরই আস্থা রাখবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষকে। সংসার জীবনের কশাঘাতে পড়ে সরকারের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন ওই শ্রেণির মানুষের কাছে তেমন গুরুত্ব বহন করে না। সংসার সামলাতে যে বিষয়গুলো বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সেগুলোকে নির্বাচন পর্যন্ত কড়া মনিটরিংয়ে রেখে সামাল দেওয়া সম্ভব হলে মধ্যবিত্ত/নিম্নবিত্ত অংশের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলে তারা মনে করছেন। আর আস্থা অর্জন করতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে তাদের বিশ্বাস।
জনআকাক্সক্ষা পূরণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে বারবার একই চেহারা দেখছেন এলাকার মানুষ। অন্যদিকে জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে প্রতিবারই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন নির্বাচিত ওই জনপ্রতিনিধি। তাতে মানুষ বিরক্ত হন। এলাকার ভোটাররা মনে করেন, একজনকে কতবার ভোট দেব? এটি হলো জনআকাক্সক্ষা। এ জায়গায় নতুন মুখ নিয়ে আসা সম্ভব হলে মানুষের মধ্যে নতুন করে আশা জাগবে। রাজনীতিতে সক্রিয় নন, এমন লোকজনও আগ্রহী হবেন। নতুন প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে ভোটাররা আসবেন।
এদিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি বিপাকে পড়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়ে যাবে এ বিষয়টি বিএনপির কাছেও পরিষ্কার হয়ে গেছে। নির্বাচন সময়মতো হয়ে যাবে এটা এখন বিএনপিও বিশ্বাস করে। দলটি ভাবছে, আন্দোলন জমছে না, নির্বাচনও ঠেকানো যাবে না। আর সেটাই তাদের বিপাকের কারণ।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।