
‘লাইব্রেরি’ শব্দের মনস্তাত্ত্বিক আবহে চোখে পড়বে সাজানো-গোছানো বইয়ের তাক, চুপচাপ পরিবেশ আর নিঃশব্দে বই পড়া। চাইলে কোনো বই খাতায় এন্ট্রি করে বাড়িতে নিয়ে পড়া। তৃণমূল কৃষকের নাগালে এর সবটুকুই সহজসাধ্য করার পাশাপাশি ‘কৃষকের বাতিঘর’ নামক লাইব্রেরির আরও একটি বিশেষ দিকের মাত্রা যুক্ত করেছে, তা হলো এ লাইব্রেরিতে মানুষ যতটা আসে, তার থেকে বেশিমাত্রায় লাইব্রেরিই চলে যায় এলাকার কৃষক পরিবারের কাছে।
এমন ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলাতে অবস্থিত ‘কৃষকের বাতিঘর’ নামক লাইব্রেরি। দীর্ঘদিন ধরে এমন পাঠকবান্ধব কাজ করে যাচ্ছে এলাকার জ্ঞানপিপাসু মানুষদের জন্য। বিশেষ করে নিরক্ষর কৃষকদের উন্নয়নে রাখছে বিশেষ ভূমিকা। লাইব্রেরিটির কার্যক্রমে দেখা যায়, তারুণ্যে উদ্দীপ্ত একদল তরুণ-তরুণী নিয়ে গঠিত গ্রন্থাগারের স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যরা গ্রামের কৃষকদের কাছে, এমনকি মাঠে কর্মরত চাষিদের কাছে গিয়ে তাদের বই পড়ে শুনিয়ে তাদের না জানা কৃষিবিষয়ক ধারণার পথকে সুগম করছে। সেখানে রয়েছে চাষের আধুনিকতা, জীবনমান উন্নয়নের গল্প, সাহিত্য, ভ্রমণসহ নানাবিধ বিষয়। এ ছাড়া গ্রামীণ নারীদের উন্নয়নেও একই ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে এ গ্রন্থাগার। যা জীবনমান উন্নয়নে সহায়তা করছে গ্রামের চাষি এবং সাধারণ মানুষদের।
‘কৃষকের বাতিঘর’ লাইব্রেরির উদ্যোক্তা ও সাধারণ সম্পাদক হোসাইন মোহাম্মদ সাগর বলেন, দেশ এগিয়ে গেলেও আমাদের গ্রামের কৃষকরা এখনো অনেক পিছিয়ে। এ পিছিয়ে পড়া কৃষকদের উন্নয়নের জন্যই আমাদের এ কার্যক্রম। আমাদের একটি সংগঠনও আছে একই নামে। এ লাইব্রেরি এবং সংগঠনের মাধ্যমে আমরা কৃষকদের জীবনমান উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক চর্চা, গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার উন্নয়ন, মানবিক মূল্যবোধ উন্নয়ন, কৃষকদের আধুনিক চাষে উদ্বুদ্ধ করা ও চাষাবাদসংক্রান্ত যেকোনো প্রয়োজনে সহযোগিতা করা, গ্রামের নারীদের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়পড়–য়া শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা, কৃষক-নারী ও শিশুদের উন্নয়নসহ গ্রামীণ জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্নভাবে উন্নয়নমূলক সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে ভূমিকা পালনের চেষ্টা করি। এটি সম্পূর্ণরূপে অলাভজনক ও স্বেচ্ছাশ্রমে উদ্বুদ্ধকরণের একটি দৃষ্টান্ত।
‘কৃষকের বাতিঘর’ সবার জন্যই উন্মুক্ত হলেও কৃষকরাই এখানে অগ্রাধিকার বিবেচিত। এ ছাড়া প্রান্তিক ও তৃণমূল জনপদের শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্যান্য বই পড়তে উদ্বুদ্ধ করা, নেতৃত্ব শেখানো। স্বেচ্ছাসেবকরা কৃষকদের বই পড়ে শোনানোর আগে নিজেরাই বইটি ভালো করে পড়ে নেন যাতে বইটি পড়ে কৃষকদের ভালোমতো বোঝাতে পারেন। এদিক থেকে তাদের উন্নয়নটাও অনেক বেশি। যেসব তরুণ-তরুণী স্বেচ্ছাসেবক সদস্য যতবেশি সহজসাধ্য করে বই পড়ে শোনাতে পারে, তাদের অধিক উৎসাহ জোগাতে মাঝেমধ্যে পুরস্কার দেওয়া হয়।
লাইব্রেরির স্বেচ্ছাসেবক কলেজশিক্ষার্থী জিনিয়া ইসলাম বলেন, আমরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে কৃষক এবং গ্রামের নারীদের বিভিন্ন বিষয়ে বই পড়ে শোনাই, বিশেষ করে যারা নিরক্ষর। তাদের যে জানার কত আগ্রহ, কত প্রশ্ন, সেগুলোর উত্তর দিতে পারলে, সঠিক তথ্য জানাতে পারলে আমাদের ভালো লাগে। আর এগুলো করতে গিয়ে আমরা যারা স্বেচ্ছাসেবক আছি, তারাও নতুন নতুন অনেক কিছু জানতে পারি। ভালো কাজের জন্য লাইব্রেরি থেকে বই উপহার পাই। আমাদের জন্য এটা খুবই আনন্দের।
সুবিধাভোগী কৃষক এবং লাইব্রেরির সদস্য মো. ইয়াসিন বলেন, এ লাইব্রেরির কাজের ফলে আমরা এখন অনেক কিছু সহজেই জানতে পারি। যেমন আগে ফসল চাষ করতাম বাপ-দাদার কাছ থেকে শেখা পদ্ধতিতে। কিন্তু এখন লাইব্রেরির আপা-ভাইয়াদের কাছ থেকে আমাদের নতুন নতুন চাষাবাদের কৌশল সম্পর্কে জানতে পারছি। এতে ফসল ভালো হয়। আর মাঝেমধ্যে গান-কবিতা-গল্পও শোনান, আবার পুরস্কারও দেন।
যুবসমাজকে সুস্থ সুন্দর জীবন দিতে হলে বইয়ের কোনো বিকল্প নেই। বই পারে একটি সুন্দর সমাজ দিতে। কৃষকের বাতিঘর লাইব্রেরির মাধ্যমে সেই কাজটি যেমন খুব সুন্দরভাবে হচ্ছে, ঠিক তেমনি লাভবান হচ্ছেন কৃষকরাও। কেননা তারা পড়তে না পারলেও এ লাইব্রেরির মাধ্যমে জানতে পারছেন প্রয়োজনীয় চাষ পদ্ধতিসহ নানান বিষয়।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর এবং সরকারি স্কুল-কলেজের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের উচ্চশিক্ষার অনুমতি নিয়ে বড় ধরনের বাণিজ্য শুরু হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, সরকারি কর্মচারীদের প্রেষণে (চাকরিরত রেখেই সরকারি এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে সংযুক্তি বা পড়ালেখার অনুমতি) ছাড়া নিয়মিত কোর্সে উচ্চশিক্ষার সুযোগ নেই। মাউশি অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ শাখা সে নিয়ম মেনে চললেও তা মানছে না প্রশাসন শাখা। নিয়ম ভেঙে প্রেষণ ছাড়াই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত কোর্স করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। আর এ কাজে অধিদপ্তরের কর্মচারীদের একটি সিন্ডিকেট বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানতে চাইলে মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কর্মচারীরা চাইলে উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয়ে বিএডসহ অন্যান্য কোর্স করতে পারেন। কারণ সেখানে ছুটির দিনে ক্লাস ও পরীক্ষা হয়। এর বাইরে সাধারণত নিয়মিত কোনো কোর্সে তাদের ভর্তির অনুমতি দেওয়া হয় না। এরপরও যদি কেউ কোনো ধরনের অনুমতি নিয়ে থাকে, তাহলে আমরা খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’
মাউশি সূত্রে জানা গেছে, এত দিন কর্মচারীদের মধ্যে উচ্চশিক্ষার তেমন কোনো আগ্রহই ছিল না। কিন্তু ২০২১ সালের ২২ আগস্ট নতুন করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা প্রকাশিত হয়। সেখানে সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার পদে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের পদোন্নতির সুযোগ রাখা হয়। এতে ১৩তম পদভুক্ত প্রধান সহকারী, হিসাবরক্ষক কাম প্রধান সহকারী, অডিটর, প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক বা সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটর এবং ১৪তম গ্রেডভুক্ত উচ্চমান সহকারী, প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক, প্রধান সহকারী, হিসাবরক্ষক-কাম-ক্লার্ক বা হিসাবরক্ষক, সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর বা ব্যক্তিগত সহকারী কাম স্ট্যানোটাইপিস্টরা পদোন্নতি পাবেন। তারা ১০ম গ্রেডভুক্ত সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের মোট পদের শতকরা ২০ ভাগ পদে এই পদোন্নতি পাবেন। তবে ওই পদে পদোন্নতির জন্য সাত বছরের চাকরির অভিজ্ঞতাসহ কমপক্ষে দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতক অথবা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিসহ ব্যাচেলর অব এডুকেশন (বিএড) ডিগ্রি থাকতে হবে। এই বিধিমালা জারির কথা জানতে পেরে এর কিছুদিন আগে থেকেই মূলত কর্মচারীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের তোড়জোড় শুরু হয়। যারা স্নাতকে দ্বিতীয় শ্রেণি, তারা বিএড করছেন। আর যারা স্নাতকে তৃতীয় শ্রেণি, তারা বিএডের পাশাপাশি মাস্টার্স কোর্স করছেন।
মাউশি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, মোট সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের ২০ শতাংশ হিসাব করলে ৯৯টি পদে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া নতুন বিধিমালা অনুযায়ী, ১০ম গ্রেডভুক্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ আরও ১৭টি পদে কর্মচারীদের একই ধরনের পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের কারোরই সাধারণত বিএড ডিগ্রি নেই। কিন্তু সরকারি কর্মচারীদের প্রেষণ ছাড়া যেহেতু নিয়মিত কোর্সে ভর্তির সুযোগ নেই, তাই এ নিয়ে একটি সিন্ডিকেটের সৃষ্টি হয়েছে। তারা প্রশাসন শাখার মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরও নিয়মিত কোর্সে ভর্তির অনুমতি নিয়ে দেয়। এভাবে ইতিমধ্যে প্রায় এক শর ওপরে কর্মচারী উচ্চশিক্ষার অনুমতি নিয়েছেন। আর এ জন্য প্রত্যেক কর্মচারীকে দুই লাখ থেকে চার লাখ টাকা পর্যন্ত ওই সিন্ডিকেটকে দিতে হয়েছে। তবে ওই সিন্ডিকেট কর্মচারীদের জানিয়েছে, উচ্চশিক্ষার অনুমতি পাওয়া মানেই পদোন্নতি অনেকটা নিশ্চিত। কারণ পদোন্নতির জন্য যতগুলো পদ আছে, তার কাছাকাছি সংখ্যককে উচ্চশিক্ষার অনুমতি দেওয়া হবে। সিন্ডিকেটের কথামতোই দুই-আড়াই মাস ধরে নিয়মিত কোর্সে ভর্তির অনুমতি দেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন শুধু উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএড করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এতে আগে যারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার অনুমতি নিয়েছেন, তাদেরই শুধু পদোন্নতি পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, উচ্চশিক্ষার অনুমতি বাণিজ্যের সিন্ডিকেটে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রশাসন শাখার পরিচালক, উপপরিচালক ও সহকারী পরিচালকের চারজন ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ)। এ ছাড়া প্রশাসন শাখার আরও দু-একজন কর্মচারী এই সিন্ডিকেটে রয়েছেন। তারাই মূলত অর্থের লেনদেন করেছেন।
নাম প্রকাশ না করে সম্প্রতি উচ্চশিক্ষার অনুমতি নিতে আসা একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত দুই-তিন বছর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে বিএড করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সেখানে মূলত ভর্তি হলেই পাস করা যায়। আর এখন যদি আবার অনুমতি বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে যারা অনুমতি পেয়েছে, তাদের পদোন্নতিই নিশ্চিত করে দেওয়া হলো। তাই আমাদের দাবি, নিয়মবহির্ভূতভাবে আগে যত অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তা বাতিল করতে হবে।’
২০১৫ সালের ৬ ডিসেম্বর জারি করা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উচ্চশিক্ষাবিষয়ক নীতিমালার ধারা ৬-এ বলা হয়েছে, প্রচলিত বিধান অনুযায়ী উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষাছুটি সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত মঞ্জুর করা যাবে। এই ছুটি প্রেষণের সঙ্গেও যেকোনো মেয়াদে দেওয়া যাবে। প্রেষণ শেষ হওয়ার পরেও প্রয়োজন হলে প্রেষণের সঙ্গে সংযুক্ত করে শিক্ষাছুটি মঞ্জুর করা যাবে; অর্থাৎ এতে বোঝা যায়, প্রেষণ বা শিক্ষাছুটি ছাড়া কোনো অবস্থাতেই সরকারি চাকরিজীবীদের নিয়মিত কোর্সে পড়ালেখার সুযোগ নেই। অথচ দেশ রূপান্তরের হাতে প্রেষণ বা শিক্ষাছুটি ছাড়াই মাউশি অধিদপ্তরের কর্মচারীদের নিয়মিত কোর্সে উচ্চশিক্ষার একাধিক আদেশ রয়েছে। এ বছরের ৬ জুলাই মাউশি অধিদপ্তরের সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. হাইদুল ইসলাম, ময়মনসিংহ অঞ্চলের সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটর মুহাম্মদ আবুল কালাম ও মোহাম্মদ আব্দুস ছালামকে প্রাইম ইউনিভার্সিটির সামার সেমিস্টার-২০২২-এ বিএড প্রোগ্রামে ভর্তির অনুমতি দেওয়া হয়। সেখানে তিনটি শর্ত দেওয়া হয়েছে। তা হলো অধ্যয়নকালে কর্মস্থলে স্বাভাবিক দায়িত্ব পালনে কোনোরূপ বিঘ্ন সৃষ্টি হতে পারবে না, পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য কোনো প্রকার টিএ/ডিএ পাবেন না এবং শুধু পরীক্ষার দিনগুলোতে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি বা ছুটি নিতে হবে। এই আদেশে স্বাক্ষর করেন অধিদপ্তরের উপপরিচালক (সাধারণ প্রশাসন) বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস।
এ বছরের ২৪ মার্চ একই শর্তে মাউশি অধিদপ্তরের উচ্চমান সহকারী মো. মোতাহের হোসেন, সাঁটলিপিকার আছমা পারভীন ও ডেটা এন্ট্রি অপারেটর পারভীন আকতারকে দি পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ে মাস্টার্স কোর্সে ভর্তির অনুমতি দেওয়া হয়। ২০২০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি লালবাগ সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ জিয়াউল হক আকন্দ ও করণিক-কাম-মুদ্রাক্ষরিক শিকদার আরিফুজ্জামানকে উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে এমএ কোর্সে ভর্তির অনুমতি দেওয়া হয়। ২০২০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি হিসাবরক্ষক মো. হাসিবুল আলম মির্জা, মো. আব্দুর রাজ্জাক ম-ল, মো. মাহবুবুল আলম ও মো. রজব আলী খন্দকারকে পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, বগুড়ায় বিএড কোর্সে ভর্তির অনুমতি দেওয়া হয়। ২০২০ সালের ৪ জুলাই হিসাবরক্ষক রঘুনাথ পাল, ১২ জুলাই সঞ্জয় কুমার পালকে পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, বগুড়ায় বিএড কোর্সে ভর্তির অনুমতি দেওয়া হয়।
এ ছাড়া ২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর ডেটা এন্ট্রি অপারেটর মো. জামাল হোসেন, হিসাবরক্ষক ইসমাইল হোসেন, ডেটা এন্ট্রি অপারেটর মো. মোবারক হোসেন, হিসাবরক্ষক-কাম-ক্লার্ক আবদুল কাইয়ুম, হিসাবরক্ষক মোহাম্মদ ইয়াজুল হক, হিসাবরক্ষক মো. রেজাউল করিম ও কাজী মো. আরমিনকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিভিন্ন বেসরকারি কলেজে বিএড কোর্সে ভর্তির অনুমতি দেওয়া হয়। এভাবে আরও একাধিক কর্মচারীকে নিয়ম ভেঙে নিয়মিত কোর্সে ভর্তির অনুমতি দেওয়া হয়। অথচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৯২-এর ৪৬ নম্বর ধারা মোতাবেক প্রণীত ব্যাচেলর অব এডুকেশন (বিএড) কোর্সটিকে সম্পূর্ণ পূর্ণকালীন কোর্স বলা হয়।
মাউশি অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ শাখা সরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের উচ্চশিক্ষার অনুমতি দেয়। কিন্তু তারা নিয়মিত কোর্সে কোনো শিক্ষককে ভর্তির অনুমতি দেন না। ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর এক আদেশে, শেরপুরের শ্রীবরদী সরকারি কলেজের সহকারী শিক্ষক মো. মোরশেদুজ্জামানকে উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে এমপিএড কোর্সে ভর্তির আবেদন বিবেচনা করা যাচ্ছে না বলে জানানো হয়। আদেশের মন্তব্যে বলা হয়, বেসরকারি (উত্তরা ইউনিভার্সিটি) হতে এমপিএড কোর্স করার সুযোগ নেই।
মাউশি অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ড. প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের উচ্চশিক্ষার অনুমতি দিই। তবে চাকরিরত অবস্থায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কোনো ধরনের কোর্স করার সুযোগ নেই। আমাদের শিক্ষকদের যাদের বিএড নেই, তাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানে বিএড করার জন্য প্রেষণ দেওয়া হয়। এ ছাড়া অন্য কোনো কোর্সে ফেলোশিপ পেলেও তাদের প্রেষণের ব্যাপারটি বিবেচনা করা হয়।’
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার তার প্রেস সচিব ইহসানুল করিম গণমাধ্যমকে জানান, বিকেল ৪টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ সংবাদ সম্মেলন হবে। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ দিনের সফর শেষে গত সোমবার রাত ১টার দিকে দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ১৫ সেপ্টেম্বর সরকারপ্রধান রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে যান। সেখানে তিনি রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া এবং রাজা তৃতীয় চার্লস আয়োজিত সংবর্ধনায়ও যোগ দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে লন্ডন ত্যাগ করেন। ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দেন। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে বৈঠক এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
এরপর শেখ হাসিনা ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় গত রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় (বাংলাদেশ সময় সোমবার ভোর সাড়ে ৪টা) দেশের উদ্দেশে যাত্রা করেন। ফেরার পথে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৭টায় প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিশেষ ফ্লাইটটি লন্ডনের স্টানস্টেড বিমানবন্দরে পৌঁছায়। লন্ডনে দুই ঘণ্টার যাত্রাবিরতি দিয়ে সোমবার রাত ১টার দিকে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ফ্লাইটটি ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
এবার ব্যাংকক থেকেই দেশে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিজয়নগরের হোটেল ফার্সে বেলা ১১টায় এই সংবাদ সম্মেলন হবে। যদিও রওশনপন্থিদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তার শারীরিক অবস্থা তুলে ধরতেই এই সংবাদ সম্মেলন। সেখানে জাপার রাজনৈতিক পরিস্থিতিও উঠে আসতে পারে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কী বিষয়ে হঠাৎ এই সংবাদ সম্মেলন, সে নিয়ে খোলাসা করেননি নেতারা।
এই সংবাদ সম্মেলনে রওশন এরশাদের একটি ভিডিও বার্তা প্রচার করা হবে। তবে ওই ভিডিও বার্তায় কী থাকতে পারে, তাও পরিষ্কার করছেন না কেউ।
এ ব্যাপারে রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ্ গতকাল বুধবার রাতে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের বার্তাগুলো দেব। এতে তার শারীরিক ও রাজনৈতিক বার্তা থাকবে। রাজনৈতিক আপডেটের মধ্যে নতুন কিছু থাকতে পারে।’
দুই সপ্তাহ নীরব থাকার পর আবার সরব হলেন রওশন এরশাদ। সর্বশেষ গত ২০ সেপ্টেম্বর তিনি ব্যাংকক থেকে জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে সাংগঠনিক আদেশ দিয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। ওই চিঠিতে মসিউর রহমান রাঙ্গা, জিয়াউল হক মৃধাসহ দল থেকে এ পর্যন্ত অব্যাহতি, বহিষ্কার ও কমিটি থেকে বাদ দেওয়া নেতাকর্মীদের দলে ফিরিয়ে আনতে বলেন। কিন্তু সেই চিঠি কোনো গুরুত্ব পায়নি পার্টিতে; বরং ওই চিঠির পর জাপার আরও দুই জ্যেষ্ঠ নেতাকে দলের সব ধরনের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এমন পরিপ্রেক্ষিতে ঠিক ১৫ দিন পর রওশনের ডাকা সংবাদ সম্মেলন ঘিরে জাপার ভেতর ও বাইরে বেশ কৌতূহল দেখা দিয়েছে। ওই সংবাদ সম্মেলনে কী ধরনের নির্দেশনা আসতে পারে, বা নতুন কী বার্তা দিতে পারেন, তা ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না জাপার নেতারা; বিশেষ করে রওশন এরশাদের যে ভিডিও বার্তা প্রচার করা হবে, তাতে কী রয়েছে, সেটাও খোলাসা করেননি রওশনপন্থি নেতারা।
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু আগের মতোই রওশনের এসব বার্তাকে আমলে নিচ্ছেন না বলে জানান। তিনি বলেন, এই সম্মেলনের সঙ্গে জাতীয় পার্টির কোনো সম্পর্ক নেই।
এ নিয়ে দেড় মাসে চার ধরনের নির্দেশনা এলো জাপার প্রয়াত প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদের থেকে। দীর্ঘদিন নীরব থাকার পর প্রথম চিঠি পাঠান ৩১ আগস্ট। সেখানে আগামী ২৬ নভেম্বর পার্টির দশম জাতীয় সম্মেলন করার নির্দেশ দেন এবং সম্মেলনের জন্য আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দেন। পরের চিঠি পাঠান ১০ সেপ্টেম্বর। সেখানে তিনি পুরোপুরি সুস্থ আছেন এবং শিগগির দেশে ফিরবেন বলে জানান। এর ১০ দিন পর ২০ সেপ্টেম্বর তৃতীয় চিঠি পাঠান। এর ১৫ দিন পর এবার সংবাদ সম্মেলনের ডাক দিলেন।
এরশাদের মৃত্যুর পর জাপার কর্র্তৃত্ব নিয়ে রওশনের সঙ্গে দেবর জি এম কাদেরের দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে ওঠে। পরে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের হস্তক্ষেপে সমঝোতা হয় দুজনের। তারপর কাদের দলের চেয়ারম্যান হন, আর রওশন হন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা। এরপর দল মোটামুটি জি এম কাদেরের নেতৃত্বে একধরনের শৃঙ্খলার মধ্য দিয়েই চলছিল। কিন্তু তিন বছর পর গত ৩০ আগস্ট আকস্মিকভাবে রওশনের নামে দলের কাউন্সিল ডাকা হয়। সেই থেকে শুরু হয় নতুন অস্থিরতা।
এর পাল্টা হিসেবে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরাও রওশনকে বাদ দিয়ে কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করতে স্পিকারকে চিঠি দেন। যদিও সে বিষয়ে সুরাহা এখনো হয়নি। রওশনের ‘পক্ষে’ কথা বলায় বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গাকে দলের সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এমনকি রওশনপন্থিদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় দলের সব ধরনের পদ থেকে তিন নেতাকে অব্যাহতি ও এক নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছেন জি এম কাদের। মূলত জাতীয় পার্টিতে কোণঠাসা গ্রুপটিই রওশনের ওপর ভর করছে বলে দলের নেতারা জানিয়েছেন। দলীয় শৃঙ্খলা নিশ্চিতে আরও কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে কাজ শুরু করেছে তদন্ত কমিটি। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) মঙ্গলবার রাতে এ কমিটি গঠন করে। পিজিসিবির নির্বাহী পরিচালক মো. ইয়াকুব ইলাহী চৌধুরীকে প্রধান করে গঠিত কমিটি গতকাল বুধবার থেকে কাজ শুরু করেছে। আগামী শুক্রবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিদ্যুৎ বিভাগকে দুটি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের একটি এবং তৃতীয়পক্ষের একটি কমিটি বিভ্রাটের কারণ খুঁজে বের করতে কাজ করবে। কমিটি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেবে।
মঙ্গলবার দুপুর ২টা ৪ মিনিটে হঠাৎ করেই রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, ময়মনসিংহসহ দেশের বেশ কিছু অঞ্চলে দেখা দেয় এ বিদ্যুৎ বিপর্যয়। বিপর্যয়ের কারণে রাজধানীসহ দেশের ৬০ ভাগ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েন। বন্ধ হয়ে যায় পেট্রলপাম্প, ফিলিং স্টেশনগুলো। সংকট দেখা দেয় পানির, মেডিকেলের স্বাভাবিক কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হয়। বিদ্যুৎ না থাকায় নানা ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে চট্টগ্রামেও। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের মধ্যে দেখা দেয় নানা শঙ্কা।
একই সময়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সিলেট বিভাগও। বিভিন্ন মার্কেট ও দোকানপাট অচল হয়ে পড়ে। নরসিংদীতে বিদ্যুৎ না থাকায় বন্ধ হয়ে যায় জেলার ১২ হাজারেরও বেশি শিল্প-কারখানার উৎপাদন।
এ ছাড়া টাঙ্গাইল, শেরপুর, যশোর, সুনামগঞ্জ, রাঙ্গামাটি, লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন জেলা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সর্বস্তরের মানুষ। এরই মধ্যে ঘোড়াশাল ও টঙ্গীসহ কয়েকটি পাওয়ার প্ল্যান্ট চালু করা হয়। চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জের কিছু এলাকায়ও বিদ্যুৎ আসতে শুরু করে। ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়তে থাকে। রাত ৯টার দিকে পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে একই সঙ্গে এত গ্রিডে কীভাবে বিপর্যয় হলো তা নিশ্চিত করে কিছু জানাতে পারেনি পিজিসিবি। ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়।
তার একাডেমিক পরিচিতি রয়েছে দেশে ও বিদেশে, মান্য রাজনীতিক, বরেণ্য আইনজীবী তিনি; বাংলাদেশের সংবিধানপ্রণেতা। তিনি ড. কামাল হোসেন। ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব¡ পালন করেছেন। ১৯৭২ সালে আইনমন্ত্রী এবং ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব¡ পালন করেছেন। এখন তিনি রাজনীতিতে ‘প্রায় অনুপস্থিত’। দীর্ঘ বিরতি দিয়ে হঠাৎ দু-একটি রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অল্প ক্ষণের জন্য হাজির হন। আবার বিরতিতে চলে যান। ঠিক এ মুহূর্তে এই হচ্ছে তার রাজনৈতিক হাল-হকিকত। তবু স্বীকার করতে হয়, তিনি একজন মান্য এবং গণ্য ব্যক্তি।
দেশে রুটিন লোডশেডিং চলছে এখন, জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগ রয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রভৃতি ইস্যু রয়েছে, তবু এ মুহূর্তে গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. কামাল হোসেন অনুপস্থিত। রাজনীতিতে অনুপস্থিতই বলা যায় তাকে। সম্প্র্রতি তার দলের একাংশের নেতারা দল ছেড়ে গিয়ে নতুন ‘গণফোরাম’ করে মাঠে নেমেছেন। তারা তাকে তাদের উপদেষ্টা রেখেছিলেন। অতিসম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে উপদেষ্টা পদ থেকে তাকে অব্যাহতিও দিয়েছেন তারা।
তার রাজনীতিতে দীর্ঘ বিরতি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ড. কামাল হোসেন কি রাজনীতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছেন! এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে। তারা ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে তাদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি ড. কামাল হোসেন সম্পর্কে তার মূল্যায়নে বলেছেন, ‘সংবিধান ও আইন বিষয়ে অভিজ্ঞ একজন মানুষ ড. কামাল হোসেন। তবে তার বাইরে গিয়ে এখন পর্যন্ত তিনি একজন রাজনৈতিক নেতা হয়ে উঠতে পারেননি। তার একাডেমিক তথা পন্ডিতি পরিচয়টাই এখনো মুখ্য। গণমানুষের নেতা তিনি নন। হতে পারবেন কি না, সন্দেহ।’ ড. কামাল হোসেনের সর্বশেষ অবস্থান বিষয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইনাঙ্গনে ড. কামাল হোসেন যতটা সফল, রাজনীতিতে ততটা সফল নন। কারণ, তিনি রাজপথের রাজনীতি করেন না। সাধারণ মানুষ কখন কী চায় তা তিনি বোঝেন না। আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর গণফোরাম প্রতিষ্ঠা করলেও তাতে সফল হননি। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ কয়েকটি দল নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে যথায়থ ভূমিকা রাখতে না পারায় বিএনপি তার ওপর দোষ চাপায় এবং এখনো চাপাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর পক্ষে লড়তে গিয়ে তার স্নেহধন্য হন ড. কামাল। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে সংবিধান প্রণয়নের দায়িত্ব দেন। প্রথমে তাকে আইন, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন। তখন তার ভূমিকা ভালো ছিল। পরে বিভিন্ন সময়ে তার কর্মকান্ডের কারণেই বিতর্কিত হয়েছেন তিনি। তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির পক্ষে থাকার ঘোষণা দিলেও পরে বিদেশি কোম্পানির আইনজীবী হয়েছেন। বহু আগেই কামাল হোসেনের রাজনৈতিক ইমেজের অবনতি হয়েছে। এখন তিনি বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত; দীর্ঘদিন রাজনীতিতে প্রায় অনুপস্থিত।’
১৯৩৭ সালের ২০ এপ্রিল বরিশালের শায়েস্তাবাদে জন্মগ্রহণ করেন ড. কামাল হোসেন। তিনি একাধারে আইনজীবী, রাজনীতিক ও মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সঙ্গে তাকেও পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। তিনি মুজিবের সঙ্গে ১০ জানুয়ারি লন্ডন হয়ে বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিনি বরাবরই সোচ্চার। ব্যক্তিগত সততা, ন্যায্যতা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রবক্তা হিসেবে তাকে সম্মান করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে রাজনীতির মাঠে অনুপস্থিতি এবং সমসাময়িক ইস্যুতে যথা ভূমিকা পালন করতে না পারায় তার ইমেজসংকট তৈরি হয়েছে।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ড. কামাল হোসেন দীর্ঘদিন রাজনীতিতে নেই। ফোনও ধরেন না। তার মেয়ে ব্যারিস্টার সারা হোসেন তার পক্ষে ফোন ধরেন। দীর্ঘ বিরতি দিয়ে হঠাৎ করে হাজির হন তিনি। একবার বলেন রাজনীতি করবেন না। আবার বলেন, রাজনীতি করবেন।’
বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর ড. কামাল হোসেন বিদেশে চলে যান। পরে দেশে ফিরে নব্বইয়ে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে থেকে লড়াই করেছেন। এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালে নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনের পরে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনে সূক্ষ্ম কারচুপির অভিযোগ তোলেন। তখন বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কামাল হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে।’ একপর্যায়ে তাকে আওয়ামী লীগ ছাড়তে হয়। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা সাইফ উদ্দিন আহমেদ মানিককে নিয়ে গণফোরাম গঠন করেন তিনি।
২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে ড. কামালের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে একটি জোট গড়ে ওঠে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলোচনার জন্য গণভবনে গিয়ে সংলাপও করেন তিনি। কিন্তু নির্বাচনের আগে ও পরে যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় বিএনপি তার সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কামাল হোসেন গণমানুষের নেতা নন, হতে পারেননি। তার মতো একজন সিনিয়র সিটিজেনের কাছে এই ক্রান্তিকালে যে ভূমিকা জনগণ আশা করে, তা তিনি পালন করতে পারছেন না।’
টুকু বলেন, ‘গত সংসদ নির্বাচনের পর আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল সংসদে যোগ না দেওয়ার। কিন্তু ড. কামাল হোসেনের নির্দেশে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ সংসদে যোগ দেন; পরে এম মোকাব্বির খান যোগ দেন। নির্বাচনের আগে যেসব পরিকল্পনা ছিল, তার বাস্তবায়ন হয়নি। নির্বাচনের আগের দিন রাতে পুলিশের সহযোগিতায় সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরা হয়েছে। দিনের বেলা ভোট দিতে পারেনি সাধারণ ভোটাররা। অথচ ভোট দিয়ে কামাল হোসেন বললেন সুষ্ঠু ভোট হয়েছে। এসব কারণে আমাদের দলের শীর্ষ নেতারা ক্ষুব্ধ হন তার ওপর। এবার সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্যের উদ্যোগ নেওয়া হলেও কামাল হোসেনের সঙ্গে বৈঠক হয়নি। বিএনপি তার থেকে দূরে আছে, দূরে থাকবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন একাধিক অনুষ্ঠানে গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. কামাল হোসেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা হিসেবে যে ভূমিকা রেখেছেন তার সমালোচনা করে বলেন, ‘কামাল হোসেন যখন নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নেন, তখনই আমার খটকা লেগেছিল। নির্বাচন ও নির্বাচনের পরে তার ভূমিকা সন্তোষজনক ছিল না।’
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন কখনো রাজনীতিক ছিলেন না। উনি বিশ্বখ্যাত আইনজীবী। আওয়ামী লীগ থেকে সরে এলেও প্রতিটি ক্রাইসিসে এখনো আওয়ামী লীগের পক্ষে অবস্থান নেন তিনি। ২০১৮ সালে যখন বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট করেছিল, তখন আমি অনেকবার বিষয়টি তুলে ধরেছিলাম। কিন্তু বিএনপি পাত্তা দেয়নি। পরে অবশ্য কামাল হোসেনের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছিল বিএনপি। তিনি বিএনপির সঙ্গে জোট করেছেন আর পক্ষ নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের। এখন রাজনীতি থেকে দূরে রয়েছেন; জনগণের কাছে তিনি সমালোচিত ব্যক্তি। নিজের সম্মান নিজেই রাখতে পারছেন না। ১৯৭১ সালে আমাদের যুদ্ধের ময়দানে রেখে পাকিস্তানের করাচিতে শ^শুরবাড়িতে চলে গিয়েছিলেন।’
১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন ঢাকা-১৪ আসন থেকে নির্বাচিত হন। কামাল হোসেন জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ারের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কর্মকান্ডে সক্রিয় আছেন।
১৯৯২ সালে গণফোরাম প্রতিষ্ঠা করে এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন ড. কামাল হোসেন। এখন দলটি দুই ভাগে বিভক্ত। এক গ্রুপে রয়েছেন দলটির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি মোস্তফা মোহসিন মন্টু। দুই গ্রুপই আলাদা আলাদা জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠন করে।
মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে তিনি (ড. কামাল হোসেন) বলে আসছেন আর রাজনীতি করবেন না। অবসর নেবেন। কিন্তু দেখা যায়, হঠাৎ দু-এক দিন কর্মসূচিতে অংশ নেন। যখন সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবে না বলছে, তখন শুনছি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে তার দল। এসব করলে তার যে ইমেজ অবশিষ্ট আছে তা-ও আর থাকবে না। একমাত্র তার পরিবারই পারে তার ইমেজ রক্ষা করতে।’
সুব্রত বলেন, ‘আমরা ড. কামাল হোসেনকে বলেছি, আপনি সংবিধানপ্রণেতা, বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক। জাতির বিবেক হিসেবে থাকুন, নিজের সম্মান রক্ষা করুন। সমস্যা হলো, আমাদের দেশে কেউ একবার নিচের লেভেল থেকে ওপরে উঠে গেলে আবার জিরোতে না আসা পর্যন্ত থামেন না। ওনার পতনের সময় এসেছে। সিদ্ধান্ত তাকে ও তার পরিবারকে নিতে হবে। তিনি কি সম্মান রেখে চলবেন, নাকি মরার আগে জিরো হবেন।’
ভারতীয় বংশোদ্ভূত বুকার পুরস্কারজয়ী ঔপন্যাসিক সালমান রুশদি তার ওপর সংঘটিত ছুরি হামলা নিয়ে প্রথমবারের মতো কথা বলেছেন। মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ফিরে আসা রুশদি এখনো পুরোপুরি সেরে ওঠেননি। কিন্তু বেঁচে ফেরায় তিনি নিজেকে ‘ভাগ্যবান’ মনে করছেন। পাশাপাশি প্রকাশ করেছেন কৃতজ্ঞতা।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনটি সম্প্রতি দ্য নিউইয়র্কারকে দেওয়া রুশদির একটি সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।
২০২২ সালের আগস্টে নিউইয়র্কে একটি সাহিত্যবিষয়ক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন রুশদি। এ সময় মঞ্চে তার ওপর হামলা চালান ২৪ বছর বয়সী যুবক হাদি মাতার। নিউ জার্সির এই বাসিন্দা সেদিন রুশদিকে ১০ থেকে ১৫ বার ছুরিকাঘাত করেন। এতে নিজের রক্তের ওপর লুটিয়ে পড়েন রুশদি। এর জের ধরে প্রায় ছয় সপ্তাহ হাসপাতালে কাটাতে হয় এই লেখককে। পরে এক চোখের দৃষ্টিশক্তিও হারিয়ে ফেলেন তিনি।
দ্য নিউইয়র্কারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রুশদি বলেন, ‘আমি অনেকটাই ভাল হয়েছি। যা ঘটেছিল তা বিবেচনা করে দেখলে খুব একটা খারাপ নেই। বড় ক্ষতগুলো সেরে গেছে। তবে বুড়ো আঙুল, তর্জনী ও তালুর নিচের অর্ধেকটা অনুভব করছি। আমাকে প্রচুর হাতের থেরাপি নিতে হচ্ছে। যদিও আমাকে বলা হয়েছে শারীরিকভাবে আমি উন্নতি করছি’।
রুশদি জানান, আঙ্গুলের কিছু অংশে অনুভূতি না থাকায় লিখতে অসুবিধা হচ্ছে তার। তিনি বলেন, ‘আমি উঠে দাঁড়াতে পারছি। হাঁটতে পারছি চারপাশে। তবে আমার শরীরে এমন কিছু অংশ আছে যেগুলো নিয়মিত চেকআপ করতে হবে। এটা ছিল একটি মারাত্মক আক্রমণ’। তিনি জানান, ছুরি হামলার ঘটনায় মানসিকভাবে আঘাত পেয়েছেন। এর ফলে তাকে নিরাপত্তার বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করতে হবে।
১৯৮১ সালে ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ উপন্যাস দিয়ে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেন রুশদি। শুধু যুক্তরাজ্যেই বইটির ১০ লাখের বেশি কপি বিক্রি হয়েছিল। ১৯৮৮ সালে চতুর্থ উপন্যাস ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ লেখার পর থেকে প্রাণনাশের হুমকি পেয়ে আসছিলেন এই লেখক। এই উপন্যাস লেখার জন্য রুশদিকে ৯ বছর আত্মগোপনে থাকতে হয়। উপন্যাসটিতে ইসলাম ধর্মের অবমাননা করা হয়েছে বলে মনে করেন মুসলিমরা।
উপন্যাসটি প্রকাশের এক বছর পর ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি রুশদির মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করেন। সেই সঙ্গে তার মাথার দাম হিসেবে ঘোষণা করেন ৩ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার। রুশদি ২০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। মঙ্গলবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত হচ্ছে তার লেখা নতুন উপন্যাস ‘ভিক্টরি সিটি’। পুরুষতান্ত্রিক বিশ্বকে উপেক্ষা করে এই নারী কীভাবে একটি শহরকে পরিচালনা করেছেন, সে গল্পই উঠে এসেছে বইটিতে।
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন হিরো আলম বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘সদরের কেন্দ্র সব দখল হয়্যা গ্যাছে। ডিসি-এসপিক কয়্যাও কোনো কাম হচ্চে না। সদরের আশা সব শ্যাষ। কাহালু-নন্দীগামের অনেক কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেকছি। ভোট খুব সুষ্ঠু হচ্চে। মাঠের অবস্থা ভালো। কাহালু-নন্দীগ্রামে নিশ্চিত এমপি হচ্চি।’
এর আগে, সকালে সদর উপজেলার এরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান তিনি। ভোট দেওয়ার পর হিরো আলম বলেন, ‘বগুড়া-৬ আসনে আগে থেকেই গোলযোগের আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই সত্যি হয়েছে। নির্বাচনি এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে বগুড়া-৪ আসনে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। এভাবে সুষ্ঠু ভোট হলে এই আসনে আমিই বিজয়ী হবো।’
এদিকে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট বাদে অন্য এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সকালে হিরো আলমসহ তিনজন প্রার্থী এ অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করা হয়।
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ লাখ ৫০ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা খরচের হিসাব ধরে বাজেট প্রস্তাব প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে সরকার। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৭২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা বেশি। অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে খরচের বেশিরভাগ অর্থ জোগাড়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৯ শতাংশ বাড়ানো হবে। আসছে জুনের প্রথমভাগে জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আগামী বাজেট হবে জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ বাজেট। তাই এখানে নেওয়া কোনো পদক্ষেপে যেন আওয়ামী লীগ সরকার সমালোচনার মুখে না পড়ে এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের থাকছে বিশেষ নজর। এ ছাড়া রয়েছে অর্থনৈতিক সংকট। তাই সংকট ও নির্বাচন দুটোই মাথায় রাখতে হচ্ছে সরকারের নীতিনির্ধারকদের।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে মোটাদাগে একটি রূপরেখা পাঠানো হয়েছে। নতুন পরিকল্পনার পাশাপাশি গত তিন মেয়াদে সরকার কী কী উন্নয়ন করেছে আগামী বাজেট প্রস্তাবে তা মনে করিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং উচ্চপর্যায়ের সরকারি নীতিনির্ধারকদের উপস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো আগামী বাজেটের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আর গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি পাঠিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে হিসাব ধরে অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট প্রস্তাব প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে তা কয়েক দফা খতিয়ে দেখা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। তিনি প্রয়োজনীয় সংশোধন, যোগ-বিয়োগ করে আবারও অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। বাজেট প্রস্তাব চূড়ান্ত হওয়ার আগেও অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে থাকে।
ডলার সংকটে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র বা এলসি খুলতে পারছেন না সাধারণ ব্যবসায়ীরা। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় পণ্যের দাম বাড়ছে। কাঁচামাল সংকটে বিপাকে শিল্প খাত। ব্যাংক খাতে অস্থিরতা। নতুন চাকরির সুসংবাদ নেই বললেই চলে। দফায় দফায় জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। খুব শিগগিরই এসব সংকট কেটে যাবে বলে মনে করছেন না অর্থনীতিবিদরা। অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে ঋণদাতা সংস্থার কঠিন শর্তের বেড়াজালে আছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতেই আগামী অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশি^ক অস্থিরতা মোকাবিলায় সরকার কী কী পদক্ষেপ নেবে তা আগামী বাজেটে স্পষ্ট করা হবে। দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট দূর করতে একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথাও বলা হবে। তবে শত সংকটের মধ্যেও আগামী বাজেটে ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী যতটা সুবিধা দেওয়া সম্ভব তা দিতে সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে বাজেট প্রস্তুত কমিটির কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষভাবে কাঁচামাল আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দিতে হিসাব কষা হচ্ছে।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডলার সংকটে আমদানি রপ্তানি প্রায় বন্ধ। ব্যবসা-বাণিজ্যে সংকটকাল চলছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বাজেটে আমাদের দাবি অনুযায়ী নগদ সহায়তা দিতে হবে। রাজস্ব ছাড় দিতে হবে। কর অবকাশ ও কর অব্যাহতি বাড়াতে দিতে হবে।’
ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া সংস্কারের শর্ত মানার অঙ্গীকার করে সরকার ঋণ পেয়েছে। শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে ঋণের যেকোনো কিস্তি আটকে দিতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। পর্যায়ক্রমে প্রতি অর্থবছরের বাজেটে এসব সংস্কার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করে বাস্তবায়ন করা হবে। আসছে বাজেটে শর্ত মানার চেষ্টা থাকবে। বিশেষভাবে অতীতের মতো ঢালাওভাবে কর অব্যাহতি দেওয়া হবে না। আর্থিক খাতের সংস্কারের কিছু ঘোষণা থাকবে। বিশেষভাবে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জোর দেওয়া হবে। আইএমএফের সুপারিশে এরই মধ্যে ভ্যাট আইন চূড়ান্ত হয়েছে। আয়কর আইন মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন হয়েছে। শুল্ক আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ে আছে। এ তিন আইন অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণ করা হবে। আসছে বাজেটে টেকসই অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করার কথা বলা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কিছু উদ্যোগের কথা শোনানো হবে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঋণদাতা সংস্থার শর্ত মানার কথা বলা হলেও সব আগামী বাজেটে একবারে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে হবে। না হলে অর্থনীতির গতি কমে যাবে।’
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এনবিআর-বহির্ভূত খাত এবং এনবিআর খাতের জন্য মোট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১৯ শতাংশ বাড়িয়ে ধরা হতে পারে। এতে লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা হবে। এনবিআর এ লক্ষ্যমাত্রা কমানোর জোরালো আবেদন করেছে। কিন্তু তা আমলে আনেননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) হিসেবে, ৩৪ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা আয়কর হিসেবে এবং ৩১ শতাংশ বা বাকি ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা শুল্ক হিসেবে সংগ্রহ করার কথা বলা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রার কথা শুধু বললেই হবে না। কীভাবে অর্জিত হবে, সেটি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা না থাকলে প্রতিবারের মতো ঘাটতি থাকবে। রাজস্ব ঘাটতি হলে অর্থনীতিতে আয় ব্যয়ের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত।’
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এনবিআর উৎসে করের আওতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। সম্পদশালীদের ওপর নজর বাড়ানো হবে। শুধু বেশি সম্পদ থাকার কারণে অতিরিক্ত কর গুনতে হবে। সারচার্জ বহাল রাখা হবে। সুপারট্যাক্স গ্রুপকে উচ্চহারে গুনতে হবে কর। আগামী অর্থবছরেও অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা থাকবে। অর্থ পাচারোধে আইনের শাসন কঠোর করা হবে। অর্থ পাচার আটকাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হবে। করপোরেট কর কমানোর দাবি থাকলেও তা মানা হবে না। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় করমুক্ত আয় সীমা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করতে খোদ অর্থমন্ত্রী বললেও রাজস্ব আদায় কমে যাবে এমন যুক্তি দেখিয়ে এনবিআর রাজি নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে। কমানো হবে শিল্পের অধিকাংশ কাঁচামাল আমদানি শুল্ক। ডলারের ওপর চাপ কমাতে বেশি ব্যবহৃত পণ্য আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দেওয়া হবে। বিলাসবহুল পণ্য আমদানি কমাতে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হবে। তৈরি পোশাক খাতের সব সুবিধা বহাল রাখা হবে। শিল্পের অন্যান্য খাতেও কতটা সুবিধা বাড়ানো যায় তা নিয়ে এনবিআর হিসাব করছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া বাজেট প্রস্তুতিবিষয়ক প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন প্রকল্পে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং ঘাটতি ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হতে পারে। আগামী অর্থবছরে জিডিপির ৬ শতাংশ ঘাটতি ধরে ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হতে পারে বলে জানা যায়। ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে ভর্তুকি কমানোর চাপ থাকলেও আগামীবার এ খাতে বেশি ব্যয় ধরা হতে পারে। এ খাতে ১ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে। চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি ব্যয় আছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ অনুমোদন করে। ঋণদাতা সংস্থাটির কাছ থেকে বাংলাদেশ ছয় কিস্তিতে তিন বছরে ৪৭০ কোটি ডলার পাচ্ছে। ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের দিন আইএমএফ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নিয়ে পূর্বাভাস দেয়। সংস্থাটি বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে হতে পারে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা হতে পারে ৭ দশমিক ১ শতাংশ।
এতে রিজার্ভ সম্পর্কে বলা হয়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কমে দাঁড়াবে ৩ হাজার কোটি ডলার। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে তা ধারাবাহিকভাবে বাড়বে এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছর শেষে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।