
গত তিন মাসে দেশের শীর্ষ ১০ ওষুধ কোম্পানির অর্ধশতাধিক ওষুধের দাম বেড়েছে। কোম্পানিগুলো হলো স্কয়ার, বেক্সিমকো, এসকেএফ, অপসোনিন, ইনসেপ্টা, এরিস্টোফার্মা, সানোফি, রেডিয়েন্ট, রেনেটো ও একমি। এসব কোম্পানি তাদের উৎপাদিত এসব ওষুধের দাম সর্বনিম্ন ৬ থেকে সর্বোচ্চ ৮২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে।
এসব ওষুধের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যথা উপশম, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, কোলেস্টেরল, ঠান্ডা, কাশি, হাঁপানি, অ্যালার্জি, গ্যাস্ট্রিক, উচ্চ রক্তচাপ, আমাশয়, জ্বর ও ডায়াবেটিসের ওষুধ। এ ছাড়া জন্মনিরোধক সামগ্রী কনডম, ডায়াবেটিক রোগীর সুগার মাপার মেশিন ও স্ট্রিপ, নেবুলাইজার মেশিন, রক্তচাপ মাপার মেশিনের দামও বেড়েছে।
রাজধানীর মিটফোর্ড, শাহবাগ ও মগবাজারের ওষুধের বাজার ঘুরে ও ফার্মেসির বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এই চিত্র পাওয়া গেছে।
ওষুধ কোম্পানির কর্মকর্তারা বলেছেন, ডলারের দাম বাড়ায় টাকার ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ অবমূল্যায়ন হয়েছে। ওষুধের কাঁচামাল, প্যাকেজিং ও বিদ্যুৎ সবকিছুতেই দাম বেড়েছে। কিন্তু সেভাবে ওষুধের মূল্য সমন্বয় হয়নি। সে জন্য তারা এটাকে মূল্যবৃদ্ধি না বলে উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে সংগতি রেখে দামের সমন্বয় বলছেন।
এ ব্যাপারে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও উপপরিচালক আইয়ুব হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার নিয়ন্ত্রিত ওষুধের মধ্যে গত জুনে ৫৩টি ওষুধের দাম সমন্বয় করেছে সরকার। এ রকম ১১৭টি জেনেরিকের বিভিন্ন ওষুধের মূল্য সরকার নিয়ন্ত্রণ করে। বাকি ওষুধগুলোর মূল্যবৃদ্ধির জন্য কোম্পানিগুলো আবেদন করে। আমরা সেটা যৌক্তিক হলে অনুমোদন দিয়ে দিই। কোম্পানিগুলো ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়েই মূল্যবৃদ্ধি করে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির পরিচালক জাকির হোসেন রনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত বছরের জুনের দিকে প্রথম যখন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর তাদের নিয়ন্ত্রিত ওষুধের মধ্যে ৫৩টি ওষুধের দাম বাড়াল, এরপর থেকে ‘টপ টেন’ (শীর্ষ ১০) কোম্পানির অন্যান্য ওষুধের দামও বাড়ছে। যাদের প্রাত্যহিক ওষুধ লাগে, দাম বাড়লেও তাদের ওষুধ কিনতে হবেই। ফলে বাধ্য হয়ে রোগীরা মাঝারি মানের যেসব কোম্পানি আছে, তাদের ওষুধ কম দামে কিনবেন। মানহীন ওষুধের দিকে ঝুঁকবেন। স্কয়ারের, সর্বোচ্চ ৮২% : শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে স্কয়ার কোম্পানির ওষুধ। ১৮ ধরনের ওষুধের সর্বনিম্ন ৬ থেকে সর্বোচ্চ ৮২ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়িয়েছে কোম্পানিটি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে শিশুদের নাকের ড্রপ এন্টাজল (০০.৫%) ও প্রাপ্তবয়স্কদের নাকের ড্রপ এন্টাজলের (০.১%)। প্রথমটি ১১ থেকে ১৮ টাকা ও দ্বিতীয়টি ১১ থেকে ২০ টাকা হয়েছে। এই ওষুধের দাম যথাক্রমে ৬৪ ও ৮২ শতাংশ বেড়েছে।
আমাশয় রোগীদের পেটের সমস্যায় ব্যবহৃত প্রতি পিস প্রোবায়ো ক্যাপসুল ১৬ থেকে ২৫ টাকা হয়েছে। দাম বেড়েছে ৯ টাকা বা ৫৬ শতাংশ। ডায়াবেটিসের প্রতিটি কমপ্রিট (৪০ এমজি) ট্যাবলেট ৭ থেকে ৮, কাশির তুসকা প্লাস (১০০ মিলি) সিরাপ ৮০ থেকে ৮৫ ও ক্যালসিয়ামের এক কৌটা নিউরো-বি ট্যাবলেটের দাম ২৭০ থেকে ৩০০ টাকা হয়েছে।
গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ অ্যান্টাসিড প্লাস ১০টি ট্যাবলেটের এক পাতার দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা হয়েছে। অ্যান্টিবায়োটিক সেফ-৩ (২০০ মিগ্রা) ট্যাবলেট প্রতিটি ৩৫ থেকে ৪০ ও সেফ-৩ (৪০০ মিগ্রা) ৫০ থেকে ৬০ টাকা হয়েছে। উচ্চ রক্তচাপের ট্যাবলেট বিসকোর (২.৫ মিগ্রা) ৬ থেকে ৭ ও অ্যালার্জির প্রতিটি ফেক্সো (১২০ মিগ্রা) ট্যাবলেট ৮ থেকে ৯ টাকা হয়েছে।
অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট সেফোটিল প্লাস (৫০০ এমজি) এক পাতা (১২টা) ৫০ থেকে ৬০ ও মোক্সাসিল (১০০ মিলি) সিরাপ ৪৭ থেকে ৭০ টাকা হয়েছে। অর্থাৎ এই দুই ধরনের ওষুধের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ২০ শতাংশ ও ৪৯ শতাংশ। অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট জিম্যাক্স (৫০০ মিগ্রা) প্রতিটি ৩০ থেকে ৪০ টাকা হয়েছে। এটি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট রোগ ব্রংকাইটিস এবং নিউমোনিয়াসহ নিম্ন শ্বাসনালির সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যবহার করা হয়। ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি’র ঘাটতি পূরণে ব্যবহৃত ক্যালবো-ডি ট্যাবলেটের একটি কৌটা (৩০টি) ২১০ থেকে ২৪০ টাকা হয়েছে। ঠান্ডা, সর্দি, চুলকানি ও অ্যালার্জির ট্যাবলেট ফেক্সো (১২০ মিগ্রা) ৮ থেকে ৯ টাকা হয়েছে। কাশির সিরাপ ওকফ ১০০ থেকে ১১০ টাকা হয়েছে।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৫% বেক্সিমকোর : এই কোম্পানির চার ওষুধের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে শিশুদের জ্বরের চিকিৎসায় ব্যবহৃত নাপা ড্রপ ও নাপা সিরাপ (৬০ মিলি)। প্রথমটি ১৫ থেকে ২০ টাকা ও দ্বিতীয়টি ২০ থেকে ৩৫ টাকা হয়েছে। এই দুই ড্রপের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ৩৩ শতাংশ ও ৭৫ শতাংশ। অ্যাটোভা (১০ মিগ্রা) ট্যাবলেটের দাম ১০ থেকে ১২ টাকা ও অ্যাটোভা (২০ মিগ্রা) ১৮ থেকে ২০ টাকা হয়েছে। এ ওষুধ দুটি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার হয় ও প্রচুর বিক্রি হয়।
তৃতীয় সর্বোচ্চ দাম দুই কোম্পানির : মূল্যবৃদ্ধির তৃতীয় নম্বরে আছে এসকেএফ ও অপসোনিন। এই দুই কোম্পানির প্রচুর বিক্রি হয় এমন চারটি ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে এসকেএফের তৈরি শিশুদের জিংক সিরাপ (১০০ মিলি) ৩৫ থেকে ৫০ টাকা হয়েছে। বেড়েছে ৪৩ শতাংশ।
অপসোনিন ফার্মা লিমিটেডের উচ্চ রক্তচাপের প্রতি পিস বিসলল-ম্যাক্স (২.৫ এমজি) ট্যাবলেট ৬ থেকে ৮ ও ১৪টির এক পাতা বিসলল (৫ এমজি) ট্যাবলেট ৮৪ থেকে ১১২ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া গ্যাস্ট্রিকের প্রতিটি ফিনিক্স (২০ এমজি) ট্যাবলেট ৫ থেকে ৭ টাকা হয়েছে।
সর্বোচ্চ ২৫-৩৩% তিন কোম্পানির : তিন কোম্পানির ৯টি ওষুধের দাম বেড়েছে। এই ওষুধগুলো সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। এর মধ্যে ইনসেপ্টার তৈরি উচ্চ রক্তচাপের প্রতি পিস ওসারটিল (৫০ এমজি) ট্যাবলেট ৮ থেকে ১০ ও গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট ওমিডন (১০ এমজি) ৩ থেকে ৪ টাকা হয়েছে। বেড়েছে ৩৩ শতাংশ।
এরিস্ট্রোফার্মার মাল্টিভিটামিন ১৫টি ট্যাবলেটের এক কৌটা ১০৫ থেকে ১৩৫ ও ৩০টি ট্যাবলেটের এক কৌটা ২১০ থেকে ২৭০ টাকা হয়েছে। টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ট্যাবলেট ৩০টির এক বক্স লিনাগ্লিপ (৫ মিগ্রা) ৬০০ থেকে ৬৬০ টাকা হয়েছে। উচ্চ রক্তচাপের ট্যাবলেট ৩০টির এক বক্স রুভাসটিন (৫ মিগ্রা) ৩০০ থেকে ৩৬০ টাকা হয়েছে।
সানোফি কোম্পানির ডায়াবেটিক রোগীদের লেনটাস ফ্লেক্সপেন ইনসুলিন ১২২০ থেকে ১৫০০ টাকা ও লেনটাস পেনফিল রিফিল ৭৮৪ থেকে ৯৮২ টাকা হয়েছে।
প্রায় সব ওষুধের দাম বেড়েছে রেডিয়েন্টের : ফার্মেসির ওষুধ বিক্রেতারা জানিয়েছেন, রেডিয়েন্ট ফার্মার প্রায় সব ওষুধের দামই বেড়েছে। এসব ওষুধের বিক্রিও বেশি। এমন কিছু ওষুধ আছে, যার বিক্রি দেশের তিন শীর্ষ ওষুধ কোম্পানির বিক্রির চেয়ে বেশি। এর মধ্যে ঘুমের ওষুধ রিভোট্রিল (০.৫ মিগ্রা) ১০টি ট্যাবলেটের এক পাতার দাম ৮০ থেকে ৯০, রিভোট্রিল (১ মিগ্রা) ৯০ থেকে ১১০ ও রিভোট্রিল (২ মিগ্রা) ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা হয়েছে।
এই কোম্পানির আরেকটি ঘুমের ওষুধ লেক্সোটানিল (৩ মিগ্রা) এক পাতার দাম ৮০ থেকে ৯০ টাকা হয়েছে। ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি জাতীয় ট্যাবলেট কোরালক্যাল-ডি’র এক পাতা ১১০ থেকে ১২০ ও কোরালক্যাল-ডিএক্স ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা হয়েছে। মন্টিলুকাস্ট গ্রুপের ঠা-ার ওষুধ জাইফ্লো (১০ মিগ্রা) এক পাতা ট্যাবলেট (১০টা) ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা হয়েছে। পেইনকিলার ন্যাপ্রোসিন (৫০০ মিগ্রা) ট্যাবলেট এক পাতা (১০টা) আগে ছিল ১৫০, এখন ১৬০ টাকা।
দাম বেড়েছে স্যালাইন ও কনডমের : এসএমসি কোম্পানির মুখে খাওয়ার স্যালাইন ওরস্যালাইন-এন প্রতি প্যাকেটের দাম ১ থেকে ৬ টাকা হয়েছে। একই কোম্পানির জন্মনিরোধক সামগ্রী সেনসেশন কনডম প্রতি প্যাকেট ২৫ থেকে ৪০, প্যানথার কনডম ১৫ থেকে ২৫ টাকা হয়েছে। অর্থাৎ এই দুই ধরনের কনডমের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ৬০ ও ৬৬ শতাংশ।
একমি ও রেনেটারও দাম বাড়িয়েছে : একমি কোম্পানির মন্টিকুলাস্ট গ্রুপের অ্যালার্জি ও ঠা-ার ওষুধ মোনাস (১০ মিগ্রা) প্রতি ট্যাবলেটের দাম ১৬ থেকে ১৭ টাকা ৫০ পয়সা হয়েছে। রেনেটার তৈরি অ্যালার্জির প্রতি পিস ফেনাডিন (১২০ এমজি) ট্যাবলেট ৮ থেকে ৯ টাকা হয়েছে। দাম বেড়েছে ১২ শতাংশ।
বেড়েছে অন্যান্য সামগ্রীর দাম : ওষুধ বিক্রেতারা জানান, জার্মানের নামকরা কোম্পানি অ্যাকু-চেক উৎপাদিত ডায়াবেটিক রোগীর সুগার মাপার মেশিন অ্যাকু-চেকের দাম আগে ছিল ২৬৫০ টাকা, এখন হয়েছে ৩২০০ টাকা। একই কোম্পানির সুগার মাপার স্ট্রিপ অ্যাকু-কে স্ট্রিপ ১১২০ থেকে ১৩০০ টাকা হয়েছে। এগুলো ছাড়াও আমদানি করা নেবুলাইজার মেশিন, রক্তচাপ মাপার মেশিন প্রতিটির দাম কমবেশি ৫০০-৭০০ টাকা বেড়েছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি, অনিয়ম থামছেই না। টেন্ডার ও নিয়োগ বাণিজ্যসহ সব ধরনের কর্মকা- চালাচ্ছে তারা। বেবিচকের পাশাপাশি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসও দুর্নীতি ও অনিয়মে পিছিয়ে নেই।
দুটি প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ অনিয়ম থামাতে একের পর এক নজরদারি করলেও কিছুতেই তা নিয়ন্ত্রণে আসছে না। বিশেষ করে সিভিল এভিয়েশনের প্রকৌশল শাখা বেশি দুর্নীতিতে জড়িত। ছদ্মনামে টেন্ডার ভাগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এই শাখার শীর্ষ কর্তা থেকে শুরু করে কর্মচারীরা পর্যন্ত টেন্ডারে ভাগ বসাচ্ছেন। বিভিন্ন পেশার লোকজনও প্রভাব খাটিয়ে টেন্ডার ভাগিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ দুটি সংস্থার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চোখ পড়েছে তাদের ওপর। আপাতত ৮২ কর্মকর্তার একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে নোটিস দেওয়া শুরু হয়েছে। এতে কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নজরদারিতে রাখা হয়েছে বেশ কয়েকজনকে। সময়মতো তাদের আইনের আওতায় নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, কয়েক মাস আগে বেবিচকের নির্বাহী প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানসহ ৯ কর্মকর্তার দুর্নীতি অনুসন্ধানে ৭টি প্রকল্প কাজের যাবতীয় নথিপত্র তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বেবিচক চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো চিঠিতে সাত ধরনের প্রকল্প কাজসহ ৯ ধরনের নথিপত্র তলব করা হয়েছে। এলটিএমের মাধ্যমে ৫০ লাখ টাকার ওপরে সম্পাদিত কাজের ছক প্রয়োজনীয় নথিপত্র হিসেবে বিবেচিত। এর মধ্যে রয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম, কমিটির সিদ্ধান্ত, কার্যাদেশ ও পরিশোধিত অর্থের বিল-ভাউচার, টার্মিনাল ভবনের ছাদে ওয়াটারপ্রুফ কাজের অনুমোদিত প্রাক্কলন, দরপত্র, বিজ্ঞপ্তি (পেপার কাটিং), দাখিলকৃত দরপত্র, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সিদ্ধান্তের কার্যাদেশ, এমবি ও ঠিকাদারকে পরিশোধিত বিল-ভাউচার; বেবিচকের কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদিত প্রাক্কলন, দরপত্র বিজ্ঞপ্তিসমূহ (পেপার কাটিং), দাখিলকৃত দরপত্রসমূহ, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সিদ্ধান্তের কার্যাদেশ, এমবি ও ঠিকাদারকে পরিশোধিত বিল-ভাউচার, বেবিচকের এমটি ভবন নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদিত প্রাক্কলন, দরপত্র বিজ্ঞপ্তিসমূহ (পেপার কাটিং), দাখিলকৃত দরপত্রসমূহ, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সিদ্ধান্ত, কার্যাদেশ, এমবি ও ঠিকাদারকে পরিশোধিত বিল-ভাউচারের ফটোকপি ও ডিভিশন-৩-এর ভবনের সিকিউরিটি গেট নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদিত প্রাক্কলন, ঠিকাদার কর্তৃক দাখিলকৃত দরপত্র, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সিদ্ধান্তের কার্যাদেশ, এমবি ঠিকাদারকে পরিশোধিত বিল-ভাউচারসহ ওই প্রকল্পের নথির ফটোকপি, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমপোর্ট কার্গো ভবনের পার্কিং শেড নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদিত প্রাক্কলন, বিজ্ঞপ্তি (পেপার কাটিং), ঠিকাদার কর্তৃক দাখিলকৃত দরপত্রসমূহ, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সিদ্ধান্ত, কার্যাদেশ, এমবি ও পরিশোধিত বিল-ভাউচার চাওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি বেবিচকের নতুন ভবন নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদিত প্রাক্কলন, দরপত্র বিজ্ঞপ্তি, ঠিকাদার কর্তৃক দাখিলকৃত দরপত্র, মূল্যায়ন কমিটির সিদ্ধান্তের কার্যাদেশ, এমবি, ঠিকাদারকে পরিশোধিত বিল-ভাউচারের কাগজপত্র দিতে বলা হয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলীর পাশাপাশি প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধেও অভিযোগ আছে। এর আগে ২০১৯ সালের জুন মাসে শাহজালাল, শাহ আমানত, সিলেট ওসমানী ও কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৫ প্রকল্পের ফাইল তলব করা হয়েছিল। তৎকালীন অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও দুদকের সহকারী পরিচালক জাহিদ কামাল নথিপত্র তলব করেছিলেন। ওই সময় প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানসহ ৯ কর্মকর্তার ব্যক্তিগত নথিও তলব করা হয়েছিল। কিন্তু সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি তারা। আবারও বিষয়টি সচল করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমার জিরো টলারেন্স নীতি। যারা অপরাধ করবে তারা শাস্তি পাবেই। দুদককে সব ধরনের সহায়তা করা হবে। বেবিচকে শুদ্ধি অভিযান চালানো হচ্ছে। প্রকৌশল শাখাসহ সব বিভাগে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’
সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই দুদক বেবিচক ও বিমানের কর্মকা- নিয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে। কোন কোন খাতে বেশি দুর্নীতি হয় সেই তথ্য উদঘাটন করে সংস্থাটি। বেবিচকের ৩৬টি খাত নিয়ে বেশি অভিযোগ ওঠায় তদন্ত শুরু হয়েছে। সেবাকে বাণিজ্য বানিয়ে কেউ কেউ অর্থ কামাচ্ছেন। ইতিমধ্যে দুদক একটি তালিকা করেছে। তালিকায় বলা হয়েছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এয়ার কন্ডিশনার ডাক্ট স্থাপন, এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম আপগ্রেডেশন, বিমানবন্দরে কাউন্টার এবং কনভেয়ার বেল্ট স্থাপন, তার যন্ত্রাংশ সরবরাহ, নতুন বোর্ডিং ব্রিজ স্থাপন, পুরাতন বোর্ডিং ব্রিজের যন্ত্রাংশ সরবরাহ ও স্থাপন, বিমানবন্দরের বিভিন্ন স্থানে স্থাপনের জন্য এলইডি লাইট কেনা ও ফিটিংস, বাগানে আলোকসজ্জা, এইচটি ও এলটি সুইচগিয়ার স্থাপন কাজের নামে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।
তাছাড়া বিমানবন্দরের ফ্লোর মাউন্টেড এবং ওয়াল মাউন্টেড প্যানেল স্থাপন, বিমানবন্দরে বিভিন্ন সাইজের পাওয়ার ক্যাবল সরবরাহ, এয়ারফিল্ড গ্রাউন্ড লাইটিং সিস্টেম স্থাপন, রানওয়ে, টেক্সিওয়ে, এপ্রোন লাইট ও লাইট ফিটিংস সরবরাহ, আবাসিক ভবনে ইন্টারনাল ইলেকট্রিফিকেশনের কাজ, সিএএবির নতুন সদর দপ্তরের ভবনে বিভিন্ন ইকুইপমেন্ট সরবরাহসহ ইএম সংক্রান্ত কাজ, টার্মিনাল বিল্ডিংসহ বিমানবন্দরের অন্যান্য ভবনের ডেকোরেশন সংক্রান্ত কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইএম কাজ, বিভিন্ন স্থানে এপ্রোন মাস্ট লাইট স্থাপন, সিসিআর বিল্ডিং-সংশ্লিষ্ট সব ইএম কাজ, রানওয়ে লাইটিংয়ের জন্য বিভিন্ন সাইজের কেব্ল সরবরাহ ও সংস্থাপন কাজেও জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। আর এসব অনিয়মের পেছনে ছিলেন বেবিচকের প্রকৌশল বিভাগসহ আরও কয়েকটি বিভাগের কর্তাব্যক্তিরা।
পাশাপাশি বিমানের কাছে বছরের পর বছর আটকে থাকা বকেয়ার তিন হাজার ৯২ কোটি ৬৬ লাখ ৭০ হাজার ৪৫২ টাকা আদায় এবং এর পেছনের কারণ জানতে মাঠে নেমেছে দুদক। ২০২০ সালের ১৪ অক্টোবর বিমানের কাছে চিঠি দিলেও কোনো জবাব পায়নি তারা। পরে আবারও চিঠি দেয় দুদক। বাধ্য হয়ে বিমান সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়। এসব বিষয় নিয়ে অনুসন্ধানের জন্য আগামী মাসে বলাকা ও বেবিচক কার্যালয়ে যাবেন দুদক কর্মকর্তারা।
এই বিষয়ে দুদকের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘টাওয়ার বোর্ডিং ব্রিজসহ বড় বড় কেনাকাটা, অবকাঠামো উন্নয়ন, সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা, বিমানবন্দরের দোকান ও বিলবোর্ড ভাড়া, পরামর্শক নিয়োগ, কর্মকর্তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণসহ নানা খাতে দুর্নীতি হয়েছে। বেবিচকের অধিকাংশ ইঞ্জিনিয়ারের বিদেশে একাধিক বাড়ি রয়েছে। কাগজপত্র ঠিক রেখে কাজের কোয়ালিটি কম্প্রোমাইজ করে যেনতেন কাজের মাধ্যমে ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়াররা অর্থ ভাগবাটোয়ারা করে থাকেন। ছদ্মনামে তারা টেন্ডার ভাগান। আবার নানা পেশার মানুষ প্রভাব খাটিয়ে টেন্ডার ভাগিয়ে নিচ্ছেন। তাদের তালিকাও আমরা করছি। ইতিমধ্যে বিমান ও বেবিচকের ৮২ কর্মকর্তার প্রোফাইল সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বেবিচকের এটিএস অ্যান্ড অ্যারোড্রামস বিভাগের সিনিয়র ড্রাফটম্যান আবদুস সোবহান ও তার স্ত্রী মিসেস সালমাকে দুদক চিঠি দিয়েছে। তাছাড়া দুর্নীতি করে ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে কানাডায় পালিয়ে যাওয়া বেবিচকের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুল খালেক ও নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহীদুজ্জামানের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে দুদক।’
বেবিচকের প্রকৌশল শাখার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নানা পেশার লোকজন প্রভাব খাটিয়ে টেন্ডার ভাগিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে দিচ্ছে। তাদের কাছে আমরা অসহায়। তাদের কথা না শুনলে পত্রপত্রিকায় আজেবাজে সংবাদ ছাপিয়ে দেওয়া হয়। তারা দীর্ঘদিন ধরে এসব অপকর্ম করছে। কারা কারা এসব অপকর্ম করছে তাদের নামও দুদককে আমরা জানিয়েছি। আর এসবের পেছনে আমাদের শীর্ষ কর্তারা জড়িত। বিষয়টি আমরা দুদককে অবহিত করেছি। দুদকও বলেছে, তারা বিষয়টির নজরদারি করছে।’ ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘দুদকের নোটিসে অনেকের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। নিজেদের রক্ষা করতে তারা তদবিরও করছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বেশি পরিমাণে বিশাল আকারের জাপানি বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সরকারের বাস্তবসম্মত নীতির কারণে বাংলাদেশ বিনিয়োগ, শিল্পায়ন ও রপ্তানির এক আঞ্চলিক কেন্দ্র হতে যাচ্ছে।
টোকিওতে ওয়েস্টিন হোটেলের গ্যালাক্সি বলরুমে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিটের উদ্বোধনকালে তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার এ কথা বলেন।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের বাস্তবসম্মত নীতি এবং দূরদৃষ্টির কারণে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবে বিনিয়োগ, শিল্পায়ন এবং এ অঞ্চলে এবং এর বাইরে বিভিন্ন গন্তব্যে রপ্তানির আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।’
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ (বিডা) যৌথভাবে ‘বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ’ শীর্ষক এ সম্মেলনের আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে জাপান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (জেসিসিআই) এবং বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশ ও জাপানের বেসরকারি কোম্পানির মধ্যে ১১টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর (এমওইউ) বিনিময় করা হয়।
সম্মেলনে উপস্থাপনা করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
বাংলাদেশে বিনিয়োগে রিটার্ন ধারাবাহিকভাবে বেশি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ছাড়াও বাংলাদেশের ব্যবসাবান্ধব রাজস্ব ও অ-আর্থিক নীতি ও প্রণোদনা, স্থিতিশীল গণতন্ত্র, বিচক্ষণ শাসন ও নেতৃত্ব বিদেশি বিনিয়োগে ভালো রিটার্নের নিশ্চয়তা দিচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে আপনাদের আশ্বস্ত করতে পারি যে, বাংলাদেশ বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের জন্য অটুট ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা দেয়। তাই আমরা বিশেষ করে জাপানি বিনিয়োগকারীসহ বিশ্বের সব বিনিয়োগকারীকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগগুলো দেখার জন্য স্বাগত জানাই।’
তিনি বলেন, ‘তবে প্রকৃত বিনিয়োগ এখনো কম। আমরা জাপানের কাছ থেকে আরও বিনিয়োগ চাই। আমি আপনাদের সবাইকে বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগের সম্ভাবনাগুলো অনুসন্ধান করতে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ১৭ কোটি মানুষের দেশ যেটি নিজেই একটি ক্রমবর্ধমান বাজার এবং প্রায় তিন বিলিয়ন ভোক্তার একটি বৃহৎ বাজারের কেন্দ্রস্থলে এর অবস্থান ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য একটি বিশাল আকর্ষণ প্রদান করে।
শেখ হাসিনা বলেন, এইচএসবিসি গ্লোবাল রিসার্চ প্রজেকশন রিপোর্ট ইঙ্গিত করে যে, বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্য ও জার্মানিকে ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী নবম বৃহত্তম ভোক্তা বাজার হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় ও জাপানি বিনিয়োগকারীদের মনে করিয়ে দেন যে, যেহেতু তারা সচেতন যে কভিড-১৯ মহামারী বিশ্বব্যাপী বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে।
তিনি বলেন, ‘তবে আমরা কার্যকর পদক্ষেপ এবং হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সংকট মোকাবিলা করতে পেরেছি। আমাদের অর্থনীতি শক্তিশালী স্থিতিস্থাপকতা দেখিয়েছে, প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেছে এবং এখনো অস্থির বিশ্ব আর্থিক পরিস্থিতি এবং সরবরাহের দিকের সীমাবদ্ধতার চাপকে ধরে রেখেছে। বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেছে এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপি বৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ১ শতাংশ ধরে রেখেছে। ইউক্রেন যুদ্ধ সত্ত্বেও আমরা চলতি অর্থবছরে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার অর্জন করছি।’
বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আইসিটি, ইলেকট্রনিকস, অবকাঠামো, চামড়া, টেক্সটাইল, আতিথেয়তা ও পর্যটন, ভারী শিল্প, রাসায়নিক ও সার এবং এসএমইর মতো বিভিন্ন খাতে সুযোগ অনেক বেড়েছে।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের সরকার ব্যবসা করার উপায়গুলো সাবলীল, সহজতর এবং কার্যকর করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশি বিনিয়োগের জন্য তার সরকার ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাই-টেক এবং সফটওয়্যার পার্ক নির্মাণ করছে। তিনি বলেন, ‘আমি জাপানি বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে চাই যে, বাংলাদেশ আপনাদের জন্য প্রস্তুত এবং সেখানে গেলে আপনাদের দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা হবে। আপনারা ব্যবসার সুবিধার জন্য প্রয়োজনীয় সব সংস্থা এবং কাঠামো সুবিধার জন্য তৈরি করা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে বিশেষ করে সরকারি-বেসরকারি যৌথ অর্থনৈতিক সংলাপের (পিপিইডি) মতো উচ্চপর্যায়ের যৌথ প্ল্যাটফরম রয়েছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি ১১ এপ্রিল ২০২৩-এ অনুষ্ঠিত পঞ্চম পিপিইডি বৈঠকের ফলাফলকে বাংলাদেশ স্বাগত জানায়।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘যেহেতু বাংলাদেশ ২০২৬ সালের মধ্যে এলডিসি থেকে স্নাতক হতে চলেছে, আমরা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের জন্য একটি অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি সম্ভব করার জন্য জাপানের সঙ্গে কাজ করছি।’
বাংলাদেশি ও জাপানি কোম্পানিগুলোর মধ্যে সহযোগিতা দেখে প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য যেসব কোম্পানি আজ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আমি তাদের সফল অংশীদারত্ব কামনা করছি। আমরা জাপানি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বিশেষ করে আড়াইহাজারে জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চলে আরও বিনিয়োগ আশা করি।’
জাপানে বসবাসরত অনাবাসী বাংলাদেশি এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মানুষের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা তাদের রেমিট্যান্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন।
গত বছর বাংলাদেশ জাপানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বিস্ময়করভাবে উন্নয়নের মডেলে পরিণত হওয়া জাপানের একজন একনিষ্ঠ ভক্ত।
আলোচনার শুরুতেই গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি দ্রুতই জাপান আমাদের নতুন দেশকে স্বীকৃতি দেয়। তারপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে জাপান সফর করেন এবং দুদেশের দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বের ভিত্তি স্থাপন করেন।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) লোকমান হোসেন মিয়া প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী নিশিমুরা ইয়াসুতোশি, জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেইটিআরও) চেয়ারম্যান ইশিগুরো নোরিহিকো, জেসিসিআইর কেন কোবায়াশিসহ জাপান ও বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সিইও এবং শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা-টোকিও বিনিয়োগ সম্পর্ক উচ্চপর্যায়ে নেওয়ার আহ্বান : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে ৫০ বছরের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মূল্যায়ন করে পরে উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে জাপানের সঙ্গে আমাদের গত ৫০ বছরের ঈর্ষণীয় সহযোগিতা আগামী ৫০ বছর এবং তারপরও অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। আসুন, আমাদের ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্পর্ককে আরও উচ্চস্তরে নিয়ে যাই।’
গতকাল সকালে টোকিওর ওয়েস্টিনের সাকুরায় জাপানিজ বিজনেস লিডারদের (সিইও) সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
সরকারপ্রধান বলেন, গত পাঁচ দশকে আমাদের দুদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের দৃষ্টান্তমূলক ফলাফল দেখে আগামী বছরগুলোতে বাংলাদেশে জাপানের বৃহত্তর পদযাত্রার প্রত্যাশা আমাদের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি জাপানের ব্যবসায়ীদের মতামতকে গুরুত্ব দেন এবং তাদের পরামর্শগুলো নোট করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সংযোগের কেন্দ্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পরিকল্পিত অবকাঠামোগত ভিত্তি তৈরি করছে। আজ (গতকাল) আমি আপনাদের খোলামেলা এবং উৎপাদনশীল ধারণাগুলো শুনে খুশি হয়েছি। এটি আমাদের বন্ধুপ্রতিম উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও প্রসারিত ও শক্তিশালী করবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও জাপানের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা জাপানের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সন্তোষ প্রকাশ করেন। বৈঠকে জাপানের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।
নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশ-জাপান অংশীদারত্বকে এগিয়ে নিয়ে যাবে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধে সোচ্চার সমর্থন জানানোর জন্য জাপানিদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে আশা প্রকাশ করেন, নতুন প্রজন্ম আগামী বছরগুলোতে দুদেশের মধ্যকার ‘দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব’ এবং ‘ঈর্ষণীয় অংশীদারত্বকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আত্মবিশ্বাসী যে জাপানের জনগণ অতীতের মতোই আমাদের প্রয়োজনে সরকারের পাশাপাশি সব সময় আমাদের পাশে থাকবে। ৫০ বছর ধরে বিদ্যমান আমাদের দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব এবং ঈর্ষণীয় অংশীদারত্বকে আগামী বছরগুলোতে আমাদের নতুন প্রজন্ম এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
টোকিওর আকাসাকা প্যালেস গেস্ট হাউজে গতকাল চার জাপানি নাগরিককে ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার অনার’ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি এই মহৎ অনুষ্ঠানে আমাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই যেখানে আমরা শুধু আমাদের বন্ধুদের সম্মান করছি না, বরং জাপানের সঙ্গে বন্ধুত্বের বন্ধনও উদযাপন করছি।’
প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা মানবতার স্বার্থে সোচ্চার হয়েছিলেন এবং প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন সেসব মহান ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আয়োজিত মহৎ অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, ‘তাদের মধ্যে যেসব জাপানি নাগরিক ছিলেন তারাও আজ (গতকাল) আমাদের সঙ্গে আছেন। এটি বাংলাদেশ এবং এর জনগণের জন্য একটি শুভ উপলক্ষ।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপানের জনগণ তখন বাংলাদেশের দুর্দশাগ্রস্ত মানবতার পাশে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশের তালিকায় আটজন সম্মানিত ব্যক্তি রয়েছেন, যাদের ২০১২ সালের ২৭ মার্চ এবং ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর ‘ফ্রেন্ড অব লিবারেশন ওয়ার অনার’ দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছে।
এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা এবং সঞ্চালনা করেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন চার জাপানির সম্মানে প্রশংসাপত্র পাঠ করেন। তারা হলেন জাপান রেড ক্রস সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ইমেরিটাস তাদাতেরু কোনো, অধ্যাপক গ্যালপ পেমা, রাজনৈতিক নেতা হিদেও তাকানো (মরণোত্তর) এবং ফটো সাংবাদিক তাইজো ইচিনোসে (মরণোত্তর)। অনুষ্ঠানে সম্মাননা গ্রহীতাদের পক্ষে অধ্যাপক গ্যালপ তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
আঞ্চলিক শান্তির জন্য রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে ঢাকা-টোকিওর গুরুত্বারোপ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী কিশিদা ফুমিও একমত হয়েছেন যে, রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী বাস্তুচ্যুতি আশ্রয়দাতা কমিউনিটির ওপর চাপ বাড়াবে এবং এই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে।
গতকাল এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, উভয় নেতা এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য এই সংকটের চূড়ান্ত সমাধান হিসেবে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য একটি ‘টেকসই, নিরাপদ, স্বেচ্ছামূলক ও মর্যাদাপূর্ণ’ প্রত্যাবাসন কার্যক্রম বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন।
শেখ হাসিনা এই বাস্তুচ্যুত জনসংখ্যার দ্রুত প্রত্যাবাসনের জন্য এই বাস্তুচ্যুতির মূল কারণগুলোর সমাধান করে একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে মিয়ানমার কর্র্তৃপক্ষের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি ভাসানচরে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনে প্রথম দেশ হিসেবে জাপানের মানবিক সহায়তাসহ এই বাস্তুচ্যুত শরণার্থীদের জন্য জাপানের সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী কিশিদা তাদের প্রতি জাপানের ক্রমাগত সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে ভাসানচরসহ বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠী ও বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের জন্য অতিরিক্ত সহায়তা প্রদানের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। তিনি আরও বলেন, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে আনুমানিক ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ইয়েনের ওপরে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পূর্ববর্তী সহায়তার পরিমাণ প্রায় ১৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
দুই প্রধানমন্ত্রী প্রত্যাবাসনের পর তাদের স্বনির্ভর জীবনের জন্য শিক্ষা ও দক্ষতা প্রশিক্ষণের মতো উপযুক্ত সহায়তা প্রদানের গুরুত্বের ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেন। তারা আসিয়ানের পাঁচ দফা ঐকমত্য বাস্তবায়নের জন্য মিয়ানমার কর্র্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
যৌথ বিবৃতিতে দুই প্রধানমন্ত্রী আইনের শাসনের ভিত্তিতে বহুপাক্ষিকতার প্রতি তাদের সমর্থন নিশ্চিত করেছেন। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গুরুতর সমস্যাগুলো মোকাবিলা করতে নিরাপত্তা পরিষদের প্রাথমিক সংস্কারসহ জাতিসংঘকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করার জন্য তাদের দৃঢ়সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী কিশিদা জাপানের স্থায়ী সদস্য হওয়াসহ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারে ধারাবাহিক সমর্থনের জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশে বিশ্বমানের শিশু গ্রন্থাগার নির্মাণ করবে জাপান : বিশ্বখ্যাত স্থপতি তাদাও আন্দো কর্র্তৃক প্রতিষ্ঠিত তাদাও আন্দো আর্কিটেক্ট অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস ঢাকায় একটি শিশু গ্রন্থাগার নির্মাণ করবে। টোকিওতে আকাসাকা প্রাসাদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় তাদাওয়ের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল এ কথা জানায়।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচরাইটার এম নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
সাক্ষাতের আগে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর (বিএনএম) এবং তাদাও আন্দো আর্কিটেক্ট অ্যাসোসিয়েটসের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেন বিএনএম মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান এবং তাদাও আন্দো। জাপানের অনুদানে বাংলাদেশে একটি শিশু গ্রন্থাগার নির্মাণের জন্য এ এমওইউ সই হয়।
সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস এবং বীরদের গৌরব সংরক্ষণের জন্য সারা দেশে জাদুঘর নির্মাণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। দেশ স্বাধীন করার ক্ষেত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানকে সংরক্ষণ করতে সরকার তার বাসভবনকে জাদুঘরে রূপান্তর করেছে।
তাদাও আন্দো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
পরাজয়ের ভয়ে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয় না : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত চক্র কীভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে, কারণ তারা মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে এবং জনগণের কোনো উন্নয়ন চায় না এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যে তারা নির্বাচনে পরাজয়ের আশঙ্কা করে।
তিনি বলেন, ‘অনেকে বলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই এবং বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয় না। বিএনপি কোন মুখ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবে, ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ২৯টি আসন পেয়েছিল এবং নির্বাচনের ন্যায্যতা সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হয়নি। তারা ২০টি দল, কিন্তু তারা মাত্র ২৯টি আসন পেয়েছিল এবং পরে তারা উপনির্বাচনে আরও একটি আসন পেয়েছিল।’
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট পরাজয়ের ভয়ে ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচন বয়কট করেছিল।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল ওয়েস্টিন টোকিওতে আয়োজিত জাপানে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন এবং অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিন আহমেদ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে কিছু লোক আছে যারা দেশে গণতন্ত্র দেখে না এবং যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে এবং মানুষ হত্যার পর লাশ গুম করে তাদের পক্ষ নিচ্ছে।
তিনি প্রশ্ন তোলেন যে, তাদের কোনো মানবাধিকার ছিল না কারণ তারা তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, তার মা ও ভাইদের হত্যার পরেও মামলা করতে পারেনি কারণ খুনিরা ইনডেমনিটি আইন প্রণয়ন করে তাদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল। তিনি বলেন, হত্যাকারীরা শাস্তির বদলে উপহার পেয়েছে। বাসস
কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে গত মঙ্গলবার ২২৯ মিটার দীর্ঘ ও ১২ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের (জাহাজের পানির নিচের গভীরতা) জাহাজ ভেড়ানোর পর এবার নিয়মিতভাবে জাহাজ ভেড়ানোর জন্য বার্থিং আদেশ জারি করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি কনজারভেটর ক্যাপ্টেন ফরিদুল আলম স্বাক্ষরিত আদেশে, মাতারবাড়ী চ্যানেলে কয়লাবাহী একটি জেটিতে ২৩০ মিটার দীর্ঘ ১২ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের এবং অন্য জেটিতে ১৫০ মিটার দীর্ঘ ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ (তেলবাহী) ভেড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অন্য একটি অস্থায়ী জেটিতে (লাইটার জাহাজ ভেড়ানোর জন্য) ১৫০ মিটার দীর্ঘ ও ৬ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারবে বলে বলা হয়েছে। আর এ আদেশ বিশে^র বিভিন্ন বন্দর থেকে মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে জাহাজ ভেড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক আদেশ বলেই বিবেচিত। ফলে গভীর সমুদ্রবন্দরেরও যাত্রা হয়ে গেল। এই নীল চ্যানেল দিয়েই আগামীর অর্থনীতির সম্ভাবনা দেখছে বাংলাদেশ।
গভীর সমুদ্রবন্দরটি হওয়ার কথা ছিল সোনাদিয়ায়। ২০১৬ সালে মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অর্থায়ন করে জাপান। আর সেই কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পকে আরও যুগোপযোগী করতে গভীর সমুদ্রবন্দরের জন্য জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে জেটি নির্মাণে। ফলে দেশের গভীর সমুদ্রবন্দরের অংশীদার এখন জাপান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে জাপান সফর করছেন। আর এ সময়ে যাত্রা হলো গভীর সমুদ্রবন্দরের।
গভীর সমুদ্রবন্দর নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভূরাজনীতির কথা উল্লেখ করে অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম বলেন, ‘ভূরাজনীতির কারণেই সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর হয়নি। জাপানের বিগ বি (বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ)-এর আওতায় মাতারবাড়ীতে বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগ এবং আর তা ব্যবহার করে এখন গভীর সমুদ্রবন্দরের যুগে দেশ।’
গভীর সমুদ্রবন্দর হিসেবে মাতারবাড়ীর সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মাতারবাড়ী হবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নেভিগেশন হাব। এখান থেকেই ভারতের বিভিন্ন রাজ্য, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ডে পণ্য পাঠানো যাবে। আর সেই পথেই এগোচ্ছে মাতারবাড়ী।’
মাতারবাড়ী বন্দরের জন্য ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ কৃত্রিম চ্যানেল যেমন তৈরি করা হয়েছে, তেমনি দক্ষিণ আমেরিকায় পাহাড়ি পথ কেটে নির্মাণ করা হয়েছে পানামা খাল। প্রশান্ত মহাসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষাকারী খাল। এই খাল দিয়ে ৩৬৬ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ চলাচল করতে পারে। এসব জাহাজকে বলা হয়ে থাকে ‘পানাম্যাক্স’ জাহাজ। বিশ্ব সমুদ্র বাণিজ্যে বেশি পণ্য নিয়ে চলাচলকারী পানাম্যাক্স আকারের এসব জাহাজ এখন ভিড়তে পারবে কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে। এসব জাহাজে কনটেইনার যেমন বেশি থাকে তেমনি বাল্কেও (খোলা পণ্য আনতে ব্যবহৃত জাহাজ) বেশি পণ্য আনা যায়। সমুদ্রগামী এসব জাহাজ গভীর সমুদ্র ছাড়া অন্যান্য বন্দরে ভিড়তে পারে না। এখন সিঙ্গাপুর থেকে আসা বড় জাহাজগুলো মাতারবাড়ী বা কুতুবদিয়ায় ছোট জাহাজের (লাইটার জাহাজ) পণ্য খালাস করে চলে যায়। এসব জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়তে পারে না। চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বোচ্চ ২০০ মিটার দীর্ঘ ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারে।
এদিকে মাতারবাড়ীতে কয়লাবাহী পণ্যের জেটির দৈর্ঘ্য ৫০০ মিটার। বর্তমানে এ জেটিতে দুটি জাহাজ ভেড়ানো যাবে। আগামীতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের আওতায় আরও ৪০০ মিটার ও ৩৬০ মিটার দীর্ঘ দুটি জেটি তৈরি করছে। যা আগামী জুন থেকে নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার কথা। বর্তমানে কয়লাবাহী পণ্যের জেটিতেই গভীর সমুদ্রবন্দরের শর্ত পূরণকারী জাহাজ ভেড়ানোর আদেশ জারি করা হলো।
ক্যাপ্টেন ফরিদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা এখন গভীর সমুদ্রবন্দরের স্বীকৃতি পেয়ে গেছি। গত মঙ্গলবার ২২৯ মিটার ও ১২ দশমিক ৪ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানোর মাধ্যমে আমরা সেই সক্ষমতা অর্জন করেছি। আমাদের চ্যানেলে ১৬ মিটার ড্রাফটের জাহাজও ভেড়াতে পারবে। তবে প্রাথমিকভাবে ১২ দশমিক ৫ মিটার পর্যন্ত আদেশ জারি করা হলো।’
কিন্তু চ্যানেলের গভীরতা থাকার পরও ১০ মিটারের জাহাজ ভেড়ানোর আদেশ করা হলো কেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওই জেটিতে তেলবাহী জাহাজ ভিড়বে। তাই আমরা ড্রাফট কমিয়ে দিয়েছি। কারণ তেলবাহী জাহাজের ড্রাফট এর বেশি হয় না।’
মাতারবাড়ী অলরেডি গভীর সমুদ্রবন্দর হিসেবে যাত্রা শুরু করে দিয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ হাইড্রোগ্রাফার আরিফুর রহমান। তিনি বলেন, ‘একটি গভীর সমুদ্রবন্দরের জন্য টাগবোট ও পাইলট বোটসহ যা থাকা প্রয়োজন সেগুলোর সমন্বয়ে গত মঙ্গলবার ২২৯ মিটার দীর্ঘ ও ১২ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়িয়ে প্রমাণ করে দিয়েছে। আগামী মাসে আরও জাহাজ ভিড়বে।’
তবে এসব জাহাজের সবই বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা নিয়ে ভিড়বে উল্লেখ করে মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ (কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড-সিপিজিসিবিএল) প্রকল্পের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এখন থেকে নিয়মিতভাবে এমন বড় জাহাজ দিয়ে কয়লা আনা হবে। এসব কয়লা দিয়েই পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা হবে।’
২০১৬ সালে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প নেয় সরকার। জাইকার অর্থায়নে সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বঙ্গোপসাগর থেকে মাতারবাড়ী পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ, ১৪ মিটার ড্রাফট (গভীরতা) এবং ২৫০ মিটার চওড়া চ্যানেল নির্মাণ হয় বিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায়। তবে ‘মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প’র আওতায় ড্রাফট বাড়িয়ে ১৮ মিটারে এবং চওড়া আরও ১০০ মিটার বাড়িয়ে ৩৫০ মিটারে উন্নীত করা হয়। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্মিত এ প্রকল্পের বাজেট ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ ১৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে জাইকার ঋণ ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ ৫ হাজার টাকা, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (নিজস্ব তহবিল) ২ হাজার ২১৩ কোটি ২৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা এবং বাংলাদেশ সরকারের ২ হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
দেশে দিন দিন আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বাড়ছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের ৯২ শতাংশ পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়ে থাকে। কিন্তু এখানে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে বড় জাহাজ ভিড়তে পারে না। এ বন্দরের সর্বোচ্চ গভীরতা ১০ মিটার। তাই বড় দৈর্ঘ্য ও বেশি ড্রাফটের জাহাজ ভেড়াতে মাতারবাড়ীর বিকল্প নেই। মাতারবাড়ী চালু হলে এর সঙ্গে চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা বন্দরের নেটওয়ার্ক আরও বাড়বে। কারণ বড় জাহাজগুলো মাতারবাড়ীতে পণ্য নিয়ে আসবে। সেখান থেকে ছোট জাহাজে করে দেশের অন্যান্য বন্দরে পণ্য পরিবহন অনেক সহজ হবে। ফলে গভীর সমুদ্রবন্দরের সুবিধা ভোগ করবে দেশ।
গণপরিবহনের বিশৃঙ্খলায় সড়কে দুর্ঘটনা বাড়ছে। প্রতিদিন ঝরছে তরতাজা প্রাণ। রাজধানী ঢাকা এবং জাতীয় সড়ক ও মহাসড়কে গণপরিবহনের শৃঙ্খলা ফেরাতে চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। নানা সময়ে নানা হাঁকডাক হলেও এসবে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এত ব্যর্থতার মধ্যেও হাতিরঝিল চক্রাকার বাস সার্ভিস দেশে শৃঙ্খলিত বাস চলাচলে অনন্য উদাহরণ তৈরি করেছে। প্রকল্প এলাকায় একটি কোম্পানির আওতায় স্বতন্ত্র বাস সার্ভিস চালুর পর সাত বছরেও ঘটেনি কোনো দুর্ঘটনা।
হাতিরঝিল প্রকল্পটি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক)। প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালের অক্টোবরে হাতিরঝিল প্রকল্প অনুমোদন করে সরকার। প্রকল্প প্রক্রিয়ার শুরু থেকে হাতিরঝিলের ভেতরে ও বাইরে বাস ঢুকতে না দেওয়ার পরামর্শ ছিল। দেশের খ্যাতিমান পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি ও প্রকৌশলীরা প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে যুক্ত ছিলেন। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকায় চক্রাকার বাসসেবা চালুর সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর হাতিরঝিল চক্রাকার বাস সার্ভিসের উদ্বোধন করা হয়। চারটি বাস দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে চলাচল করছে ১৪টি বাস। বিকল্প হিসেবে আরও ৬টি প্রস্তুত রাখা হয়। সকাল ৭টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বাসগুলো চলাচল করে। প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার যাত্রী চলাচল করে। ৫ থেকে ৭ মিনিট অন্তর বাসগুলো স্টপেজ ছেড়ে যায়। সর্বনিম্ন ভাড়া ১৫ টাকা। আর পুরো প্রকল্প এলাকা ঘুরে আসতে খরচ হয় ৪০ টাকা। এই বাসরুটের দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। শুরু থেকে এইচআর ট্রান্সপোর্ট হাতিরঝিল চক্রাকার বাস সার্ভিস পরিচালনা করছে। প্রকল্প সূত্রে আরও জানা যায়, দুই ধরনের বাস রয়েছে হাতিরঝিলে। ৩২ সিটের ৮টি বাস এবং ২২ সিটের ৬টি বাস। সিটগুলো রাউন্ট সিস্টেম। গোলাকার হয়ে বাসের ভেতরে বসেন যাত্রীরা। এতে খোলামেলা পরিবেশ পাওয়া যায়। চক্রাকার বাস সার্ভিসের স্টপেজ রয়েছে, বউবাজার, কুনিপাড়া, শুটিং ক্লাব, মেরুল বাড্ডা, রামপুরা, মহানগর প্রজেক্ট ও মধুবাগ।
১৯ এপ্রিল ২০২৩। সরেজমিন ঘুরে দেখা হয় হাতিরঝিল চক্রাকার বাস সার্ভিস। দুপুর ২টায় টিকিট নিয়ে স্টপেজের সামনে লাইনে থাকা যাত্রীরা শৃঙ্খলিতভাবে বাসে উঠলেন। সরকারি ছুটির কারণে বাসে যাত্রীর চাপ কম ছিল। আমাকে বহন করা বাসে যাত্রী ছিল ১৪ জন। নির্দিষ্ট স্টপেজে বাস থামে, যাত্রীরা নেমে যাচ্ছেন। যাত্রীদের মধ্যে কোনো হুড়োহুড়ি লক্ষ করা যায়নি। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ চড়ছেন হাতিরঝিল চক্রাকার বাসে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হয় বাসগুলো। এজন্য যাত্রীরা চলাচলে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
বাসে কথা হয় মহানগর প্রজেক্টের বাসিন্দা ডা. হাসিবুল হাসান শান্তর সঙ্গে। তিনি বলেন, বাস সার্ভিস চালু হওয়ার পর থেকে নিয়মিত বাসে চলাচল করি। খুব দ্রুত চলাচল করা যায়। যানজটের কবলে পড়তে হয় না। শৃঙ্খলিতভাবে চলাচল করে। চলাচল আরামদায়ক। অবশ্য শহরের অন্যান্য বাসের তুলনায় এখানে ভাড়া একটু বেশি।
ওই বাসে কথা হয় বেগুনবাড়ি এলাকার বাসিন্দা ও কারওয়ান বাজার মাছ বাজারের শ্রমিক মো. আজিজুল ইসলামের সঙ্গে। লুঙ্গি পরে বাসে বসা এই শ্রমিক আগ্রহী হয়ে দেশ রূপান্তরকে বলেন, হাতিরঝিলের চক্রাকার বাসের কারণে আমরা খুব সহজে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারি। যানজটের ধকল সামলাতে হয় না। অন্য এলাকা দিয়ে চলাচল করতে অনেক সময় লাগে।
সরকার সড়ক ও পরিবহন ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে না পারায় দেশে দুর্ঘটনা বাড়ছে। দেশের সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি নিয়ে কাজ করে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। এই ফাউন্ডেশনের হিসাব বলছে, দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বাড়ছে। ২০২১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৬ হাজার ২৮৪ জন। ২০২২ সালে মারা গেছেন ৬ হাজার ৫৮৪ জন।
সড়কে কোন পরিবহন কত চলবে সেটা নির্ধারণ করতে পারছে না সরকার। এ জন্য বেড়ে যাচ্ছে যানবাহনের সংখ্যা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাব বলছে, গত মার্চ মাস পর্যন্ত দেশের যানবাহনের সংখ্যা ৫৬ লাখ ৮৬ হাজার ৯১৭টি। এরই মধ্যে ঢাকার যানবাহনের সংখ্যা ১৯ লাখ ৮৬ হাজার ১১৪টি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) তথ্যমতে, পদ্মা করিডর চালু হওয়ার পর গত বছরের ২৫ জুন থেকে গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত ২৭৯ দিনে ২২২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে মারা গেছেন ২৬৪ জন। এ হিসাব বলছে, পদ্মা করিডরে দিনে প্রায় একজন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছেন।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ও গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. সামছুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাংলাদেশে বিশৃঙ্খল গণপরিবহনব্যবস্থা বিরাজমান। এ জন্য বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে। বিশ^ব্যাপী কোম্পানিভিত্তিক গণপরিবহন পরিচালনা করা হয়, সেখানে প্রতিযোগিতা থাকে না। আর প্রতিযোগিতা না থাকলে সেখানে দুর্ঘটনা ঘটার কারণ থাকে না। বিশ^ব্যাপী এই পদ্ধতি জনপ্রিয় হলেও এ দেশে এই পদ্ধতিও ব্যর্থ হতে বসেছে। ঢাকায় দুই মেয়র বাসরুট রেশনালাইজেশন পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে রীতিমতো নাকাল হচ্ছেন। এ পদ্ধতির সফলতা দেখাতে না পারলে মানুষ এতে বিশ্বাস রাখবেন না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে শৃঙ্খলিত গণপরিবহনের একমাত্র উদাহরণ হাতিরঝিল চক্রাকার বাস সার্ভিস। প্রকল্পের শুরু থেকে বুয়েট যুক্ত ছিল। সেখানে আমরা রাজউককে পরামর্শ দিয়েছিলাম এককভাবে স্বতন্ত্র বাস সার্ভিস পরিচালনা করতে। রাজউক সেটার সফল বাস্তবায়ন করতে পেরেছে। যার সুফল নগরবাসী ভোগ করছেন। চালু হওয়ার পর থেকে প্রায় সাত বছর সময়ে সেখানে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। কোনো আহত বা নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি।
হাতিরঝিল চক্রাকার বাস সার্ভিস পরিচালনা করেন এইচআর ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির সুপারভাইজার শওকত হোসেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, হাতিরঝিল চক্রাকার বাস সার্ভিস খুব ভালোভাবে পরিচালিত হচ্ছে। রাজউক আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দিচ্ছে, আমরা সেভাবে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। যাত্রীরাও আমাদের সেবায় সন্তুষ্ট। তবে ভাড়া একটু বেশি হওয়ায় অনেক সময় যাত্রীরা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। নির্ধারিত এলাকায় উন্নতমানের সেবা নিশ্চিত করতে এর চেয়ে কম ভাড়ায় বাস চালাতে অসম্ভব হবে।
জানতে চাইলে হাতিরঝিল প্রকল্প পরিচালক ও রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস দেশ রূপান্তরকে বলেন, হাতিরঝিল ঢাকার ভেতরে হলেও এটা একটা পর্যটন এলাকা। এ জন্য শুরুতে স্বতন্ত্র বাস সার্ভিসের পরামর্শ আসে। সে সময় বুয়েট এবং অন্য বিশেষজ্ঞরা আমাদের সঙ্গে কাজ করেন। সবাই বাংলাদেশি, তাদের পরামর্শক্রমে এটা করা হয়েছে। তিনি বলেন, হাতিরঝিল চক্রাকার বাস সার্ভিস খুব ভালো সেবা দিচ্ছে। যাত্রীরাও খুশি। পর্যটন এলাকা এবং যাত্রীসেবার মান ঠিক রাখতে সাধারণ বাসের চেয়ে ভাড়া একটু বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা সেনানিবাসে শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক রাষ্ট্রপতি পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় সালাম প্রদান করে। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
এর আগে রাষ্ট্রপ্রধান শিখা অনির্বাণে পৌঁছলে ভারপ্রাপ্ত সেনাবাহিনী প্রধান ও সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আবদুল হান্নান তাকে স্বাগত জানান।
শিখা অনির্বাণ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ। যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সৈনিকদের স্মৃতিকে জাতির জীবনে চির উজ্জ্বল রাখতে এ স্মৃতিস্তম্ভে সার্বক্ষণিক শিখা প্রজ¦ালন করে রাখা হয়। খবর বাসসের।
বাইডেনসহ পাঁচ বিশ্বনেতা রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ পাঁচ বিশ্বনেতা গতকাল মো. সাহাবুদ্দিনকে বাংলাদেশের প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঐতিহাসিক দায়িত্ব গ্রহণের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন।
২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে ২৪ এপ্রিল অফিসে শপথ নেওয়ার পরে মো. সাহাবুদ্দিন অফিসে উপস্থিত হওয়ার পরও বিশ্বনেতাদের অভিবাদন অব্যাহত রয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিস্তো, কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ট টোকায়েভ, বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো ও সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালাইন বেরসেট পৃথক বার্তায় তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানসহ পাঁচ বিশ্বনেতার শুভেচ্ছাসংবলিত পৃথক বার্তা গতকাল পৌঁছেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী অংশীদারত্ব আমাদের সবার জন্য আরও শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গঠনে সহায়তা করেছে। একসঙ্গে আমরা আমাদের দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়ন সম্প্রসারিত করেছি। একসঙ্গে আমরা দুর্নীতি মোকাবিলা ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা চালিয়ে যাচ্ছি। আর এভাবে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত বিশ্ব তৈরি করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশের মধ্যে অংশীদারত্ব আরও গভীর করতে এবং গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে, মানবাধিকারের অগ্রগতি ও গণতান্ত্রিক নীতি রক্ষাসহ আমাদের অভিন্ন মূল্যবোধের পক্ষে দাঁড়াতে একসঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে।
রিপাবলিক অব ফিনল্যান্ডের প্রেসিডন্ট সাউলি নিনিস্তো তার অভিনন্দনবার্তায় বলেন, ‘আমি দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় অঙ্গনে আমাদের দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের সহযোগিতা ও সুসম্পর্ক অব্যাহত রাখতে আগ্রহী।’
কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ট টোকায়েভ আশা করেন, তার (সাহাবুদ্দিন) দূরদর্শী নেতৃত্ব ও সুসমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা বাংলাদেশকে এক নতুন উচ্চতায় ও আরও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে এবং দুই দেশের জনগণের স্বার্থে ঐতিহ্যগত বন্ধুত্বের পাশাপাশি যে অংশীদারত্বও রয়েছে, তা আরও সুদৃঢ় হবে।
বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো বলেন, বেলারুশ শিল্প সহযোগিতা, যান্ত্রিক প্রকৌশল, বৈদ্যুতিক পরিবহন, কৃষি, ফার্মেসি, বিজ্ঞান ও শিক্ষার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী।
অভিনন্দনবার্তায় সুইস কনফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট অ্যালাইন বেরসেট বলেন, সুইজারল্যান্ড একটি উন্নয়ন ভবিষ্যৎ গড়তে বাংলাদেশের প্রচেষ্টায় অবিচল অংশীদার ছিল ও তা অব্যাহত থাকবে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) হলের আসন দখল করে রাখার বিরুদ্ধে অনশনরত ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়সহ তাকে সমর্থন দেওয়া কয়েকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।তারা বলেন, ওই স্থানে গত বুধবার রাত থেকে অনশনে ছিলেন প্রত্যয়। তাকে মারধরের পর অ্যাম্বুলেন্সে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায় হামলায় জড়িতরা। এ সময় প্রত্যয়ের দাবির সঙ্গে সংহতি জানানো প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা হয়।
জানা গেছে, তিন দাবিতে গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনের খেলার মাঠে অনশনে বসেন প্রত্যয়। তিনি ওই হলের আবাসিক ছাত্র। তার অন্য দুটি দাবি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করা ও হলের গণরুমে অবস্থান করা বৈধ ছাত্রদের আসন নিশ্চিত করা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এবং নবীন শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছিলেন। ওই সময় ক্যাম্পাসে লোডশেডিং চলছিল। হঠাৎ করেই প্রত্যয়সহ তার সঙ্গে থাকা অন্যদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
হামলায় জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচী, মার্কেটিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সৃষ্টি, চারুকলা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মনিকা, বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৮তম ব্যাচের সুরসহ আরও কয়েকজন আহত হন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, হামলায় ৩০ থেকে ৪০ জন অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের কয়েকজন হলেন ছাত্রলীগ নেতা ও রসায়ন বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী গৌতম কুমার দাস, তুষার, ফেরদৌস, নোবেল, গোলাম রাব্বি, মুরসালিন, মুরাদ, সোহেল, তানভীর, রায়হান, রাহাত, সৌমিক, তারেক মীর, সজীব ও নাফিস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, আমরা যারা প্রত্যয়ের সঙ্গে ছিলাম তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর প্রত্যয়কে দেখতে চিকিৎসক এসেছিলেন। তখন তারা অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলা করে সেটি ফিরিয়ে দেয়। প্রক্টরকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি আসেননি। একাধিক ছাত্রীর দিকেও চড়াও হয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মীর মশাররফ হোসেন হলের এক শিক্ষার্থী অসুস্থ এমন একটি ফোনকল পেয়ে তারা অ্যাম্বুলেন্স পাঠায়। তবে কে কল দিয়েছিল সে সম্পর্কে চিকিৎসা কেন্দ্রের কেউ বলতে পারেননি।
তবে যে ফোন নাম্বার থেকে কল দেওয়া হয়েছিল সেটিতে যোগাযোগ করে দেখা যায় নাম্বারটি শাখা ছাত্রলীগের নেতা গৌতম কুমার দাসের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ১৫ হাজার শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। দরকার হলে আমি পদত্যাগ করব।
এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে রাতেই বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিল নিয়ে তারা এ রাত পৌনে ১টায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন।
তবে অনশনরত শিক্ষার্থী সামিউলের ওপর হামলারে পেছনে ছাত্রলীগের কোনো হাত নেই বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি, মীর মশাররফ হোসেন হলের অনশনরত ওই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। তবে সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীরা করেছে। সেখানে ছাত্রলীগের একজনও জড়িত নয়।’
রাজধানীর বনানীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে জামায়াতে ইসলামীর বনানী শাখার ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের মধ্যে বনানী থানা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি আব্দুর রাফি রয়েছেন।
বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওয়ারলেস গেটে অবস্থিত নবাবী রেস্টুরেন্টে গোপন মিটিং করাকালে বনানী থানা জামায়াতে ইসলামী আমির তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাফিসহ ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আটক ১০ জনের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাও রয়েছেন।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।