
সিআইএ জাদুঘর। এটি সম্ভবত বিশে^র সবচেয়ে অদ্ভুত এবং বিশেষ জাদুঘর। যেখানে রয়েছে আন্তর্জাতিক রাজনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার নানা নিদর্শন; ইতিহাসের আবরণে ঢাকা। আরও রয়েছে বিশে^র বিখ্যাত ও কুখ্যাত ব্যক্তিদের স্মৃতিস্মারক। তবে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার অভ্যন্তরীণ ‘অতি গোপনীয়’ এই জাদুঘরটিতে সাধারণ দর্শনার্থীর প্রবেশ নিষেধ। লিখেছেন নাসরিন শওকত
জাদুঘর শব্দটি শোনা মাত্রই ইতিহাস ও প্রাচীন সময়ের রোমাঞ্চ জেগে ওঠে মনে। এর সঙ্গে যদি ‘গোয়েন্দা’ ও ‘গোপনীয়’ এ দুটি শব্দ জুড়ে দেওয়া হয় তাহলে সেই রোমাঞ্চ বেড়ে যায় আরও কয়েক গুণ। সাধারণত জাদুঘর দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে । কিন্তু অদ্ভুত শোনালেও এমন জাদুঘরও আছে যেখানে সাধারণের প্রবেশ নিষেধ! এমনই এক জাদুঘর হলো সিআইএ জাদুঘর, যা ‘টপ সিক্রেট মিউজিয়াম’ বা ‘অতি গোপনীয় জাদুঘর’। ভার্জিনিয়ার ল্যাংলেতে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র সদর দপ্তর। এর ভেতরেই রয়েছে সিআইএ’র অতি গোপনীয় এই জাদুঘর। যেখানে সাধারণ দর্শনার্থীর প্রবেশ একেবারেই নিষিদ্ধ! এত গোপনীয়তা ও নিষেধাজ্ঞা, সংগতভাবেই প্রশ্ন ওঠে , অতি গোপনীয় এই জাদুঘরের অন্দরে কী আছে? তবে এমন প্রশ্নের চেয়ে বরং জানতে চাওয়া ভালো, আন্তর্জাতিক রাজনীতির ঐতিহাসিক এই সংগ্রহশালায় কী নেই! জাদুঘরটির অনন্য সংগ্রহশালায় নিদর্শনগুলোকে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবে সিআইএর তৎপরতার কালানুক্রমিক ক্রমে সাজানো হয়েছে। আরও স্পষ্ট করে বললে, সিআইএ জাদুঘরে ১৯৪৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সময়ের ৬০০টিরও বেশি ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে। যার মধ্যে পাওয়া যাবে স্নায়ুযুদ্ধকালের গুপ্তচরসামগ্রী থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের আলকায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেনের বন্দুক ও ইরাকের প্রয়াত সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হুসেনের লেদার জ্যাকেট।
এই জাদুঘরের মূল দর্শনার্থীরা হলেন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র নিজস্ব কর্মীবাহিনী। এর পাশাপাশি কিছু বিশিষ্ট কর্মকর্তাও দর্শনার্থী হিসেবে এই নিদর্শনগুলো দেখার সুযোগ পেয়ে থাকেন। এই জাদুঘরে শুধু গোয়েন্দা সংস্থাটির সাফল্যের দিকটিই তুলে ধরা হয়নি। কিউবায় ফিদেল ক্যাস্ত্রোকে উৎখাত করার সিআইএ মিশনের বিপর্যয়কর ভুল ও ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র খুঁজে পাওয়ার ব্যর্থতার প্রসঙ্গও উদাহরণ হিসেবে তুলে রাখা হয়েছে।
সিআইএ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা হলো সিআইএ বা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি। এটি অনানুষ্ঠানিকভাবে একটি সংস্থা হলেও ঐতিহাসিকভাবে একটি কোম্পানি হিসেবে পরিচিত, যা যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের হয়ে একটি বেসামরিক বিদেশি গোয়েন্দা সেবা সংস্থা হিসেবে কাজ করে থাকে। পেশাদার এ সংস্থাটিকে বিশে^র বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জাতীয় নিরাপত্তা-সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাত করা ও বিশ্লেষণের জন্য কাজ করতে হয়। এজন্য প্রাথমিকভাবে মানব বুদ্ধিমত্তাকে (হিউমিন্ট) কাজে লাগিয়ে থাকে তারা। যাতে গোপনে ওই কাজ করা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কমিউনিটির (আইসি) প্রধান সদস্য হিসেবে সিআইএকে জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক বরাবর রিপোর্ট করতে হয়। প্রাথমিকভাবে গোয়েন্দা এই সংস্থাটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও তার মন্ত্রিপরিষদের জন্য গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহের দিকে মনোযোগ দিয়ে থাকে। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ১৯৪৬ সালে ২২ জানুয়ারি তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যান একটি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দল গঠন করেছিলেন। পরের বছর ১৯৪৭ সালের জাতীয় নিরাপত্তা আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে গোয়েন্দা ওই দলটিই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থায় রূপান্তরিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অন্য নিরাপত্তা সংস্থার মতো সিআইএকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মতো কাজ করতে হয় না। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সিআইএ প্রধানত বিদেশ থেকে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করে থাকে। এজন্য সংস্থাটিকে দেশের মধ্যে খুব কম গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। সিআইএ আইন দ্বারা অনুমোদিত একমাত্র বেসরকারি সংস্থা, যারা প্রেসিডেন্টের নির্দেশে গোপন কোনো কাজ সম্পাদন ও তদারকি করার অধিকার রাখে।
কেন এই জাদুঘর
গূঢ় বিষয়াবলীর পর্যবেক্ষণ রয়েছে মার্কিন গোয়েন্দাদের লুকানো বিশ্ব ‘সিআইএ জাদুঘর’-এ। প্রাথমিক অবস্থায় ‘অতি গোপনীয়’ এই জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৮৮ সালে। তখন গোয়েন্দা এই সংস্থাটির কর্মীদের তাদের পেশার অনন্য ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার লক্ষ্যে জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। তখন এর সংগ্রহশালার মধ্যে গুরুত্ব পেয়েছে সিআইএর দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের আগের ও এর কৌশলগত সেবা কার্যালয় থেকে শুরু করে বর্তমান সিআইয়ের কার্যকলাপ। ১৯৭২ সালে সংস্থাটির সাবেক নির্বাহী পরিচালক উইলিয়াম ই. কোলবি সংস্থাটিতে একটি জাদুঘর নির্মাণের ধারণা দিয়েছিলেন। যা নানা ঐতিহাসিক তাৎপর্যের নিদর্শনে পূর্ণ থাকবে। ২০০২ সালে ভার্জিনিয়ার গোয়েন্দা ভবনে জাদুঘরটি স্থাপিত হয়। পরে সেটি সিআইএ’র লেংলের সদর দপ্তরে স্থানান্তর করা হয়েছিল। সংস্কার করে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে নতুন জাদুঘরটি উদ্বোধন করা হয় গোয়েন্দা সংস্থাটির ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে সমানে রেখে। তবে জাদুঘরটির দরজা সাধারণের জন্য উন্মুক্ত না হলেও এর ভার্চুয়াল দরজা খোলা রয়েছে সবার জন্য।
গোয়েন্দা সংস্থাটির সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব ইন্টেলিজেন্স জাদুঘরটির পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে। এটি সিআইএর জাতীয় সংরক্ষণাগার। সংরক্ষণাগারটি গোয়েন্দা, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের বিভিন্ন নিদর্শন সংগ্রহ , সংরক্ষণ, নথিভুক্ত করার পাশাপাশি প্রদর্শনীর আয়োজন করে থাকে। এই সংরক্ষণাগারে বর্তমানে ৩ হাজার ৫০০টি ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে। গোপনীয় এই নিদর্শনগুলোকে ইদানীং আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মুক্ত করা হয়েছে। এর আগে জাদুঘরটি জর্জ বুশ সেন্টার ফর ইন্টেলিজেন্স কম্পাউন্ডে অবস্থিত ছিল। তখন এর নিদর্শনগুলো সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত ছিল না এবং কোনো দর্শনার্থী চাইলেও সেখানে পরিদর্শনও করতে পারতেন না। সিআইএর অতি গোপনীয় এই জাদুঘরটির অন্য অংশীদারও রয়েছে। এর মধ্যে প্রেসিডেন্টের লাইব্রেরি, অন্যসব প্রধান জাদুঘর ও প্রতিষ্ঠান অন্যতম। যাদের দায়িত্ব হলো জনসাধারণের জন্য প্রদর্শনীর আয়োজন করা। আর এ প্রদর্শনীর লক্ষ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তর অভিজ্ঞতার আলোকে গোয়েন্দা পেশার নৈপুণ্যকে জনসাধারণের সামনে তুলে ধরা। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সম্প্রদায়ের সংস্থাগুলোর মধ্যে সিআইএ জাদুঘরের আবার প্রতিপক্ষও রয়েছে। নাম তার ন্যাশনাল ক্রিপ্টোলজিক জাদুঘর।
সংগৃহীত নিদর্শন
সিআইএ জাদুঘরে এ পর্যন্ত যত নিদর্শন সংগৃহীত হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের আগের সিআইএর কৌশলগত সেবা কার্যালয় (ওএসএস) ও বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কার্যকলাপের সঙ্গে সম্পর্কিত নানা নিদর্শন। এ ছাড়া রয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার ইতিহাস ও মিশনের সঙ্গে সম্পর্কিত নিদর্শনসমূহও। এই জাদুঘরটিতে সংগৃহীত নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে পোশাক, সরঞ্জাম, অস্ত্র ও স্মৃতিচিহ্ন। যে চিহ্নগুলো ঐতিহাসিকভাবে ও বর্তমান সময়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর করা নকশা, তৈরি বা ব্যবহার করা চিহ্ন। এর সঙ্গে ইউনিট বা ব্যক্তিদের তৈরি করা অন্য আরও স্বতন্ত্র নিদর্শনও রয়েছে, যা গোয়েন্দা মিশনকে এগিয়ে নিতে বিশেষভাবে পরিচালিত গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছিল।
১৯৪৭ সালে সিআইএর প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকের সময় থেকে শুরু করে স্নায়ুযুদ্ধ পর্যন্ত চলার সময় এবং ২০০১-এর ১১ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী হামলার নিদর্শনগুলোকে তুলে ধরা হয়েছে এই সংগ্রহে, যা সন্ত্রাস থেকে সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমের তৎপরতাকে স্পষ্ট করে তুলেছে। ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ারে হামলায় যাদের আত্মীয়রা মারা গেছেন, তাদের পরিবার এই জাদুঘরের জন্য মূল্যবান কিছু নিদর্শন দার করেছেন। যেগুলো এই জাদুঘরের প্রদর্শনীতে রাখা আছে।
‘অতি গোপনীয়’ জাদুঘর
জাদুঘর হিসেবে বিশ্বরাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ সময়ের স্মৃতিকে গোপনীয় হিসেবে লুকিয়ে রাখা অসম্ভব প্রায়। তাই অতি গোপনীয়তার বেড়াজাল ছিন্ন করতেই হয় একসময়। যেমন বিরল এই অবস্থান থেকে সরে আসতে হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএকেও। লক্ষ্য বিশ^বাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা। তাই সিআইএর সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব ইন্টেলিজেন্স কর্তৃপক্ষকেও এই জাদুঘরের দ্বার খুলে দিতে হয়েছে। এর অন্দরে অভ্যর্থনা জানাতে হয়েছে সংবাদমাধ্যমকে। সিআইএর ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ভার্জিনিয়ার ল্যাংলের সদর দপ্তরের নতুন ‘সিআইএ জাদুঘর’টির উদ্বোধন করা, যা আকারে বেশ বড় ও নির্মিত হয়েছে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে। সেখানে প্রদর্শিত নিদর্শনগুলো যেন গোয়েন্দা সম্প্রদায়ের মধ্যে সুপরিচিত গল্পগুলো সম্পর্কে বলে চলেছে। যদিও সেখানে ‘সিআইএ’ ভবনের দেয়ালের বাইরে কথা রয়েছে অনেক কম। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তদারকি করে থাকে বেসরকারি গ্রুপ জাতীয় নিরাপত্তা সংরক্ষণাগার (ন্যাশনাল সিকিউরিটি আর্কাইভ)। ওয়াশিংটনভিত্তিক এই সংস্থাটির প্রধান টম ব্ল্যানটন বলেছেন, ‘একটি সংস্থা হিসেবে সিআইএর ৭৫ বছরের দীর্ঘ রেকর্ডের দিকে তাকালে দেখা যায়, এটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশে^র বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গুরুতর তথ্য সংগ্রহ করেছে এবং তা খুব ভালো উপায়ে আমাদের সামনে তুলে ধরেছে। যার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তাকেই সুরক্ষিত করা হয়েছে।’
অতি গোপনীয় জাদুঘর সিআইএর অন্দরে দুই সপ্তাহ আগে ঘুরে দেখার আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন বিবিসি, গার্ডিয়ানসহ নামকরা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের কয়েকজন সাংবাদিক। সেখান থেকে ঘুরে এসে জাদুঘরটির বর্ণনা দিয়েছেন বিবিসির প্রতিরক্ষাবিষয়ক প্রতিনিধি গর্ডন করেরা। তার চোখেই না হয় দেখা যাক কী কী আছে এর অন্দরে। জাদুঘরটিতে ৬০০টি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন ঐতিহাসিকভাবে প্রদর্শন করা আছে। এর মধ্যে আশির দশকের সেই স্নায়ুযুদ্ধকালের গুপ্তচর সামগ্রী রয়েছে। যার মধ্যে গোপন বার্তা পেট কাটা মরা ইঁদুর, গোপন ক্যামেরাসহ সিগারেটের প্যাকেট, কবুতরের ছদ্মবেশে থাকা গোপন ক্যামেরা কিংবা বিস্ফোরক মদের গ্লাস রাখা আছে।
তবে এসব নিদর্শনকে ছাপিয়ে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে সিআইএর সাম্প্রতিক বিখ্যাত কয়েকটি অপারেশনের ডামির বিস্তারিত উপস্থাপন। ওই ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা নানা নিদর্শনও সেখানে স্থান পেয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তানের কাবুলে আয়মান আল-জাওয়াহিরিকে হত্যার মিশনে তৈরি করা তার বাড়ির নমুনা ও পাশেই রাখা তার পোশাকও। এরপর ধারাবাহিকভাবে প্রদর্শন করা হয়েছে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে আলকায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার জন্য অপারেশন ‘নেপচুন স্পিয়ার’ ও এর পরিকল্পনায় ব্যবহার করা লাদেনের বাড়িটির একটি মডেল। এর ঠিক পাশেই রয়েছে লাদেনের একে-৪৭ রাইফেলটি। এখানে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের চিত্রও তলে ধরা হয়েছে নিপুণ হাতে। যেখানে ক্ষমতাচ্যুত ইরাকি প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের লেদার জ্যাকেট ও তার শখের দুটি স্বর্ণের রাইফেলও রয়েছে।
গোপন এই জাদুঘরের দ্বিতীয় অংশের অর্ধেক স্থানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সুনির্দিষ্ট কিছু অপারেশন। ১৯৬০-এর দশকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি সাবমেরিন, যা সমুদ্রের নিচে কোথাও হারিয়ে যায়। পরে যা সমুদ্রের নিচে শনাক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র। ধনকুবের হাওয়ার্ড হিউয়ের সঙ্গে ওই সাবমেরিনটির অবশিষ্টাংশ ও তাতে কী প্রযুক্তি আছে তা জানার জন্য সাবমেরিনটি উদ্ধারে সে সময় কাজ করেছিল সিআইএ। বলা হয়ে থাকে, গ্লোমার এক্সপ্লোরার নামের একটি জাহাজে করে সমুদ্রের নিচে খনির সন্ধান করতে চেয়েছিলেন হাওয়ার্ড হিউ। ফলে সোভিয়েত আমলের ওই সাবমেরিনের একটি মডেল উপস্থাপন করা হয়েছে ওই জাদুঘরে। সিআইএর ওই মিশনটি আংশিকভাবে সফল হয়েছিল।
এসব নিদর্শন দেখে মনে হবে যেন এর মাধ্যমে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর শুধু তার সফলতার আখ্যানই উপস্থাপন করেছে। কিন্তু না তবে কর্তৃপক্ষ জাদুঘরের আরেকটি কর্নারও করেছে। যেখানে গোয়েন্দা সংস্থাটির একাধিক মিশনের ব্যর্থতার কথায়ও মনে করিয়ে দিয়েছে। গুরুত্বের সঙ্গে তুলে আনা হয়েছে লাতিন আমেরিকার কিংবদন্তি নেতা কিউবার ফিদেল ক্যাস্ত্রোকে ক্ষমতাচ্যুত করার মিশন ‘বে অব পিগস’-এর স্মৃতিস্মারক। যে মিশনে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছিল সিআইএ।
জাদুঘরটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব সম্পর্কে বলতে গিয়ে এর পরিচালক রবার্ট জেড ববায়ার বলেন, ‘ইতিহাসের দিক থেকে এটা শুধু একটি জাদুঘরই নয়, এটা হলো অপারেশনাল জাদুঘর। আমরা এসব নিয়ে সিআইএর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলি। আমাদের ইতিহাস ঘুরে দেখি। দেখি তা কতটা ভালো বা মন্দ ছিল। আমাদের কর্মকর্তারা যেন তাদের ইতিহাস বুঝতে পারেন, তা নিশ্চিত করি আমরা। যাতে তারা ভবিষ্যতে আরও ভালো কাজ করতে পারেন। আমাদের সফলতা থেকে শিক্ষা নিতে হয়। ব্যর্থতা বলে দেয় ভবিষ্যৎ আরও ভালো হতে হবে।’
রান্না করতে গিয়ে অনেক সময়ই কড়াইয়ে খাবার লেগে যায়। মাছ অথবা কোনো ভাজাভাজির সময় এ সমস্যা বেশি করে হয়। তা ছাড়া, গ্রেভিযুক্ত কোনো খাবার তৈরির ক্ষেত্রেও অনেক সময় কড়াইয়ে লেগে যায়। আর একবার তলায় লেগে গেলে খাবারের স্বাদও নষ্ট হয়ে যায়। আবার কড়াই পরিষ্কার করতেও সমস্যা হয়। তাই রান্নার সময় কয়েকটি নিয়ম মেনে চললে কড়াইয়ে খাবার লেগে যাবে না। দেখে নিন কী করবেন
কড়াই ঠিকমতো গরম না হলে খাবার লেগে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেজন্য রান্না করার আগে কড়াই ভালো করে গরম করে নেওয়া জরুরি। একটু বেশি আঁচে কড়াই গরম করতে বসিয়ে তাতে খানিকটা পানি ছিটিয়ে দিন। পানি সঙ্গে সঙ্গে শুকিয়ে গেলে বুঝবেন কড়াই ঠিকঠাক গরম হয়েছে।
কড়াইয়ে রান্না বসিয়ে ঘন ঘন নাড়তে থাকুন। এদিক-এদিক চলে যাবেন না। ঘন ঘন খুন্তি দিয়ে নাড়তে থাকুন। প্রয়োজনে অল্প পানি দিয়ে দিন। আর নাড়ার সময় খুন্তি নিচ থেকে ওপরে চালান। তাহলে কড়াইয়ের তলায় খাবার লেগে যাবে না।
মাছ ভাজার সময় কড়াইয়ে লেগে যাওয়ার কারণ কড়াই এবং তেল ঠিকমতো গরম না হওয়া। তাই কড়াই এবং তেল আগে ভালো করে গরম করে নিতে হবে, তাহলে খাবার লেগে যাবে না। প্রথমে কড়াই ভালো করে গরম করে তাতে তেল ঢালুন। তারপর তেল ভালো করে গরম হয়ে বুদ বুদ এলে তবেই রান্না শুরু করুন। এতে কড়াইয়ে খাবার লেগে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।
অল্প আঁচে রান্না করুন, আঁচ কখনোই একেবারে বাড়িয়ে রাখবেন না। সর্বদা মিডিয়াম আঁচে রান্না করুন, তাহলে কড়াইয়ে খাবার লেগে যাবে না। আঁচ অতিরিক্ত বাড়িয়ে দিলে খাবার সেদ্ধ হওয়ার আগেই পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
‘ফোল্ডএবল’ ডিসপ্লে বানানোর পরিকল্পনা ছেড়ে স্লাইডএবল ডিসপ্লে প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকছে স্যামসাং ডিসপ্লে। ‘স্লাইডএবল’ পিসি নির্মাণের লক্ষ্যে একযোগে কাজ করছে প্রথমসারির দুই প্রতিষ্ঠান স্যামসাং ও ইনটেল। সম্প্রতি এ অভিনব প্রযুক্তি ভাবনার প্রথম প্রোটোটাইপও দেখিয়েছে তারা।
২৭ সেপ্টেম্বর ইনটেলের ‘ইনোভেশন’ আয়োজনে মূল বক্তব্য দিতে মঞ্চে হাজির হয়েছিলেন স্যামসাং ডিসপ্লের প্রধান নির্বাহী জেএস চই; ১৩ ইঞ্চির একটি ট্যাবলেট পিসির প্রোটোটাইপ নিয়ে এসেছিলেন তিনি, স্লাইড করলেই যা ১৭ ইঞ্চির মনিটরে পরিণত হয়। ‘আমরা পিসির জন্য প্রথম ১৭ ইঞ্চি স্লাইডএবল ডিসপ্লের ঘোষণা দিচ্ছি,’ মঞ্চে বলেন চই। ‘এই ডিভাইসটি বড় স্ক্রিন আর বহনযোগ্যতা উভয় চাহিদাই মেটাবে’ বলে দাবি করেন তিনি।
প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ভার্জ বলছে, আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, পিসির ক্ষেত্রে ‘ফোল্ডএবল’ ডিসপ্লে বানানোর ভাবনা ছেড়ে স্লাইডএবল ডিসপ্লে প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকছে স্যামসাং ডিসপ্লে। পিসির আকার ও গঠনে নতুনত্ব আনতে কবছর ধরেই কাজ করছে ইনটেল। মাইক্রোসফট ফোল্ডএবল ডিভাইসের জন্য উইন্ডোজ ১০এক্স পরিকল্পনা বাতিল করার আগ পর্যন্ত ইনটেল দুই স্ক্রিনের এবং ফোল্ডএবল ডিসপ্লে নিয়ে কাজ করছিল বলে জানিয়েছে ভার্জ।
এ ধরনের নতুন প্রযুক্তিকে তুলে ধরতে প্রয়োজন বিভিন্ন সফটওয়্যার ও অ্যাপের সহায়তা। কিন্তু ইনটেল কীভাবে ‘স্লাইডএবল পিসি’র ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেবে, সে বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়। মঙ্গলবারের আয়োজনে স্যামসাং ডিসপ্লে ও ইনটেল যে ১৩ ইঞ্চির ট্যাবলেট পিসি দেখিয়েছে কার্যত সেটি ‘স্লাইডিং মেকানিজম’-এর মাধ্যমে একটি ১৭ ইঞ্চি আকারের ‘ফ্লেক্সিবল’ মনিটরে পরিণত হয়।
আয়োজনে নতুন ‘ইউনিসন’ সফটওয়্যারও দেখিয়েছে ইনটেল। কোম্পানিটির নিজস্ব চিপনির্ভর কম্পিউটারগুলোর সঙ্গে স্মার্টফোনের সংযোগ স্থাপন সহজ করে দেবে সফটওয়্যারটি। আইফোনেও কাজ করবে এটি। ভার্জের প্রতিবেদন বলছে, ‘স্লাইডএবল পিসি’ ভাবনাটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়েই আছে। এটি কবে নাগাদ বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে বাজারে আসবে সে প্রসঙ্গে কোনো তথ্য দেয়নি ইনটেল ও স্যামসাং ডিসপ্লে।
সংক্ষিপ্ত সফরে নেপাল হয়ে বিকেলে ঢাকায় এসেছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল। আজ শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনা মো. হাশিম।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি শ্রমবাজারের জটিলতা নিয়ে আলাপ করবেন। কিভাবে দেশটিতে আমরা সহজে কর্মী পাঠাতে পারি; সেগুলো আলোচনায় উঠে আসবে। আমাদেরও কিছু প্রস্তাব রয়েছে। আমাদের কর্মীদের স্বার্থ আগে আমরা চাই, সবার জন্য বাজার খুলে দেওয়া হোক। নিয়োগকর্তার পছন্দমতো রিক্রুটিং এজেন্সি নিয়োগ— এটা আমরা চাই না। অভিবাসন ব্যয়
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার গত কয়েক বছর ধরে অস্থির। দেশটিতে প্রত্যাশিত শ্রমিক পাঠাতে পারছে না বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমবাজারটির জটিলতা নিরসনে আলোচনা করতে সংক্ষিপ্ত সফরে নেপাল হয়ে ঢাকায় আসছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল।
তার সফরে শ্রমবাজারটি গতিশীল করতে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) পরিবর্তন, অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় কমানোসহ দেশের সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য বাজার উন্মুক্ত করার প্রস্তাব দেবে ঢাকা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ২৪ ঘণ্টার সফরে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করবেন। পাশাপাশি তিনি সেনাকল্যাণ সংস্থার সঙ্গেও একটি বৈঠক করবেন।
'পাঠান' মুক্তির আগে থেকেই অনুরাগীদের সঙ্গে শাহরুখের যোগাযোগের একটাই মাধ্যম, টুইটার। শনিবার ফের টুইটারে 'আস্ক এসআরকে' সেশনে ধরা দিলেন শাহরুখ। হালকা মেজাজে, খোলামেলা আড্ডায় মাতলেন অনুরাগীদের সঙ্গে। অনুরাগীদের প্রশ্ন উত্তর দিলেন। সেখানেই একজন টুইটার ব্যবহারকারীর উপদেশ- বয়স অনুযায়ী চরিত্রে অভিনয়ের করার। পাল্টা জবাব দেন শাহরুখও। বলেন, 'তিনি হিরো ছিলেন, আছেন, থাকবেন'।
অনুরাগীরা যেমন রয়েছেন, তেমনই ট্রোল করার লোকের সংখ্যাও কম নয় শাহরুখের সোশালে। বছর সাতান্নর 'তরুণ' এই অভিনেতাকে একজনের প্রশ্ন, 'আপনি কি এভাবেই হিরোর চরিত্রেই অভিনয় করবেন, নাকি কোনো দিন নায়ক-নায়িকার বাবার চরিত্র করার পরিকল্পনাও রয়েছে?' তাতে শাহরুখ যা জবাব দিয়েছেন, তা রীতিমত ছড়িয়ে পড়েছে সোশালে।
এমনিতেই রসিক মানুষ শাহরুখ। তবে কোন কথায় কাকে কী উত্তর দেবেন, তা ভালোই জানা তার। বাদশাহ লেখেন, 'তুই বাপ হ… আমি হিরোর চরিত্রেই ঠিক আছি।'
শনিবারের 'আস্ক এসআরক'-এ সেশনে, শাহরুখের কাছে জানতে চাওয়া হয় 'পাঠান'-এর মোট আয়ের পরিসংখ্যান। তাকেও ফেরাননি শাহরুখ। উত্তর দিয়ে লেখেন, 'ভালোবাসা ৫ হাজার কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে, ৩ হাজার কোটি প্রশংসা, ৩২৫০ কোটি হাগ, ২০০০ কোটি হাসি এখনও গণণা চলছে। তোমার অ্যাকাউন্ট্যান্ট কী বলছেন?'
'পাঠান' ঘিরে উন্মাদনা নজিরবিহীন। প্রেক্ষাগৃহের বাইরে এই ছবি দেখার ঢল। শাহরুখ অভিনীত ছবিটি লম্বা রেসের ঘোড়া, বলেছেন সিনেমা বিশেষজ্ঞরা। ৪ বছর পর শাহরুখ পর্দায় ফিরেছেন বলেই শুধু নয়, ৭ দিনে বক্স অফিসে ৭০০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে 'পাঠান', যা বলিউডে বছরের সেরা ব্লকবাস্টার হিসাবে গণ্য হতে চলেছে।
দুঃসময় পিছু ছাড়ছে না লিভারপুলের। প্রিমিয়ার লিগে টানা তিন ম্যাচে জয়হীন থেকে মাঠে নেমেছিল তারা। ভাঙতে চেয়েছিল ব্যর্থতার বৃত্ত। কিন্তু পারেনি, উল্টো উলভারহ্যাম্পটন ওয়ান্ডারার্সের ধরাশায়ী হয়েছে তারা। পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থাকা দল হেরে গেছে বড় ব্যবধানে।
নিজেদের মাঠে শনিবার ৩-০ গোলে জিতেছে উলভস। লিভারপুলের বিপক্ষে লিগে আগের ১১ ম্যাচে হারের পর জয়ের স্বাদ পেয়েছে তারা।
শুরুর ১২ মিনিটে দুই গোল হজম করে দিশেহারা লিভারপুল ঘুরে দাঁড়ানোর পথই খুঁজে পায়নি। দ্বিতীয়ার্ধে হজম করেছে আরও একটি গোল। তার আগেই ছিটকে যায় ম্যাচ থেকে। দারুণ জয়ে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেন উলভসের ফুটবলাররা।
শুরু থেকে একের পর এক আক্রমণে লিভারপুলের রক্ষণ কাঁপাতে থাকে উলভস। দলটির সমর্থকরা আনন্দে মেতে ওঠার উপলক্ষ পেয়ে যায় পঞ্চম মিনিটে। আত্মঘাতী গোল করে লিভারপুল। বাইলাইনের কাছাকাছি গিয়ে হাং হি-চান শট নেওয়ার পরিস্থিতি না দেখে তিনি বক্সে বাড়ান বল, জোয়েল মাতিপের পায়ে লেগে বল পোস্ট ছুঁয়ে গোললাইন পেরিয়ে যায়। আলিসনের প্রাণপণ চেষ্টা যায় বিফলে।
দ্বাদশ মিনিটে আবারও গোল হজম করে বসে লিগে ধুঁকতে থাকা লিভারপুল। ইংলিশ ডিফেন্ডার ক্রেইগ ডসনের পায়ের জোরাল শটে বল খুঁজে নেয় জাল। উলভসের হয়ে অভিষেকেই গোল পেয়ে যান তিনি। ২-০ গোলের ব্যবধান নিয়ে বিরতিতে যায় উলভস।
বিরতির পরও চলে আক্রমণ আর পালটা আক্রমণ। ৭১তম মিনিটে মাঝমাঠে জো গোমেজ ও স্তেফান বাইচেতিস আটকাতে পারেননি জোয়াও মৌতিনিয়োকে। এই পর্তুগিজ মিডফিল্ডারের পাস ধরে বক্সে আড়াআড়ি ক্রস বাড়ান আদামা ত্রাওরো। নিখুঁত টোকায় বাকি কাজ সারেন রুবেন নেভেস। ম্যাচের ভাগ্যও লেখা হয়ে যায় অনেকটাই।
এই হারে লিগ টেবিলে সেরা চারে থাকার পথটা আরও কঠিন হয়ে গেল লিভারপুলের। ২০ ম্যাচে ২৯ পয়েন্ট নিয়ে দশম স্থানে আছে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। তাদের চেয়ে ১০ পয়েন্ট বেশি নিয়ে চার নম্বরে নিউক্যাসল ইউনাইটেড। ২১ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে ১৫তম স্থানে উঠে এসেছে উলভস।
ছবি মুক্তির ১০ দিন পার। এখনও বক্স অফিসে 'পাঠান' রাজ। শুধু দেশের মাটিতেই নয়, বিদেশেও অব্যাহত 'পাঠান' ঝড়। বিশ্বজুড়ে ৭০০ কোটির বেশি ব্যবসা ইতিমধ্যেই করে ফেলেছে শাহরুখ খানের এই ছবি। এমনকি, ভারতের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানেও 'পাঠান' জ্বরে ভুগছেন আমজনতা। নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও সে দেশে প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হলো 'পাঠান'। খালি রইল না প্রেক্ষাগৃহের একটি আসনও, হাউসফুল সেই শো।
অন্য ভারতীয় ছবির মতোই পাকিস্তানে মুক্তির ছাড়পত্র পায়নি সিদ্ধার্থ আনন্দ পরিচালিত ছবি 'পাঠান'। তবে সে দেশের সিন্ধ সেন্সর বোর্ডের সেই নিষেধাজ্ঞাকে একপ্রকার বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শন করল শাহরুখের ছবি। কানায় কানায় ভর্তি প্রেক্ষাগৃহ দেখল রুপালি পর্দায় 'বাদশাহ ম্যাজিক'।
পাকিস্তানি মুদ্রায় ৯০০ টাকার টিকিটেও হাউসফুল 'পাঠান'-এর শো। নিষেধাজ্ঞা থাকায় বেআইনিভাবেই জোগাড় করে দেখানো হলো 'ওয়াইআরএফ স্পাই ইউনিভার্স'-এর এই ছবি।
পাকিস্তানের 'ফায়ারওয়ার্ক ইভেন্ট' নামক এক সংস্থা আয়োজন করে 'পাঠান' ছবির প্রদর্শনের। ছবির টিকিটমূল্য রাখা হয় পাকিস্তানি মুদ্রায় ৯০০ টাকা। তাতেই ছবির টিকিট পাওয়ার জন্য কাউন্টারের বাইরে লম্বা লাইন পড়ে সিনেপ্রেমীদের। অল্প সময়ের মধ্যেই শো হাউসফুল ঘোষণা করে দেওয়া হয়। তবে পাকিস্তানি সেন্সর বোর্ডের কানে এ খবর যেতেই নড়েচড়ে বসে তারা। 'ফায়ারওয়ার্ক ইভেন্ট'কে অবিলম্বে 'পাঠান'-এর সব প্রদর্শন বন্ধের নির্দেশ দিয়ে বিবৃতি জারি করে সিন্ধ সেন্সর বোর্ড। কেউ যদি এর পরেও বেআইনিভাবে 'পাঠান' প্রদর্শন করে, তাহলে অপরাধের শাস্তিস্বরূপ তার ১ লাখ টাকা জরিমানা থেকে ৩ বছরের জেল পর্যন্ত হতে পারে, হুঁশিয়ারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
সাভারের আশুলিয়ায় মহাসড়কের পাশের একটি ডোবা থেকে মো. ইমাম হোসেন (৪৬) নামে এক ব্যক্তির ভাসমান লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার সন্ধ্যায় সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের পার্শ্ববর্তী ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পশ্চিম পাশের ডোবা থেকে নিহতের ক্ষতবিক্ষত মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত ইমাম হোসেন জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার ভালুকগড়ি গ্রামের আমিনুল ইসলামের ছেলে। তিনি পরিবার নিয়ে আশুলিয়ার জিরাবো পুকুরপাড় এলাকার ভাড়া বাসায় থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
থানা পুলিশ জানায়, স্থানীয়দের খবরের ভিত্তিতে সন্ধ্যায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী একটি ডোবা থেকে লুঙ্গি এবং জ্যাকেট পরিহিত অজ্ঞাত এক ব্যক্তির ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পিবিআইকে খবর দেওয়া হলে তারা এসে মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করে।
নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আল-মামুন কবির বলেন, ইমাম হোসেন বৃহস্পতিবার অটোরিকশা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। মরদেহটি উদ্ধারের খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা থানায় এসে লাশ শনাক্ত করেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে দুর্বৃত্তরা তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে গেছে এবং নিহতের মরদেহটি ডোবার মধ্যে ফেলে গেছে।
মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আশুলিয়া থানায় মামলা দায়েরের পাশাপাশি হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার এবং গায়েব হওয়া অটোরিকশাটি উদ্ধারে অভিযান চালানো হবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
নাগরিকত্ব বিষয়ক জটিলতার জেরে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে দেশের উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ ও পার্লামেন্টে আসন হারিয়েছেন নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী রবি লামিছানে। শুক্রবারের রায়ে আদালত জানিয়েছে, এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকত্বও নেই তার।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র বিমল পৌদেল বার্তা সংস্থা এএফপিকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় অনুযায়ী, ২০২২ সালের জাতীয় নির্বাচনে নাগরিকত্ব বিষয়ক আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেছে রবি লামিছানের বিরুদ্ধে। এ কারণে এখন থেকে আর পার্লামেন্টের সদস্য নন তিনি।’
নেপালের এক সময়ের জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব রবি লামিছানে দেশটির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল ইনডিপেনডেন্ট পার্টির শীর্ষ নেতা। ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর নেপালের পার্লামেন্ট প্রতিনিধিসভার নির্বাচনে তার দল ২০টি আসনে জয়ী হয়েছে। তারপর গত ডিসেম্বরে ক্ষমতাসীন জোট সরকারে নিজের দলসহ যোগ দিয়ে নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন লামিছান।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিত্ব ছিল লামিছানের; কিন্তু নেপালের সংবিধানে দ্বৈত নাগরিকত্ব স্বীকৃত না হওয়ায় ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করে নির্বাচন করেছিলেন তিনি। শুক্রবারের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর নেপালের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার কথা ছিল লামিছানের; কিন্তু তা করেননি তিনি। ফলে এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকও নন লামিছান। এদিকে, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর লামিছানের প্রতিক্রিয়া জানতে তার মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে গিয়েছিলেন সাংবাদিকরা; কিন্তু লামিছানে তাদের বলেন, ‘যেহেতু এই মুহূর্তে আমি কোনো দেশেরই নাগরিক নই, তাই আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করা আমার পক্ষে উচিত নয়, সম্ভবও নয়।’
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন হিরো আলম বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘সদরের কেন্দ্র সব দখল হয়্যা গ্যাছে। ডিসি-এসপিক কয়্যাও কোনো কাম হচ্চে না। সদরের আশা সব শ্যাষ। কাহালু-নন্দীগামের অনেক কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেকছি। ভোট খুব সুষ্ঠু হচ্চে। মাঠের অবস্থা ভালো। কাহালু-নন্দীগ্রামে নিশ্চিত এমপি হচ্চি।’
এর আগে, সকালে সদর উপজেলার এরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান তিনি। ভোট দেওয়ার পর হিরো আলম বলেন, ‘বগুড়া-৬ আসনে আগে থেকেই গোলযোগের আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই সত্যি হয়েছে। নির্বাচনি এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে বগুড়া-৪ আসনে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। এভাবে সুষ্ঠু ভোট হলে এই আসনে আমিই বিজয়ী হবো।’
এদিকে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট বাদে অন্য এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সকালে হিরো আলমসহ তিনজন প্রার্থী এ অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করা হয়।