বিজয়ের মাসের প্রথম প্রহরে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা বীরপ্রতীক তারামন বিবি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬২ বছর।
শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাতে কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার শংকর মাধবপুর গ্রামে নিজের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন খেতাবপ্রাপ্ত এই নারী মুক্তিযোদ্ধা।
তারামন বিবি দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের সংক্রমণ, শ্বাসকষ্ট আর ডায়েবেটিসে ভুগছিলেন। গত মাসেও তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাতে তারামন বিবির অবস্থা খারাপের দিকে যায়। রাত ১টা ২৭মিনিটে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
এই বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বামী আবদুল মজিদ, এক মেয়ে ও এক ছেলে রেখে গেছেন।
বীরপ্রতীক তারামন বিবির মুত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বার্তায় শোক প্রকাশ করেছেন।
রাষ্ট্রপতি মরহুমার রুহের শান্তি ও মুক্তি কামনা এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, জাতি এবং স্বাধীনতা প্রিয় জনগণ চিরকাল তারামন বিবিকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তারামন বিবির অসামান্য অবদান গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে তারামন বিবি অস্ত্র হাতে নিয়ে যে সাহসী ভূমিকা পালন করেছিলেন, তার সেই অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
শনিবার রাজিবপুর উপজেলার কাচারীপাড়া তালতলা কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তারামন বিবিকে দাফন করা হবে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
কুড়িগ্রামের শংকর মাধবপুরে ১১ নম্বর সেক্টরে কমান্ডার আবু তাহেরের অধীনে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তারামন বিবি। মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা, তাদের অস্ত্র লুকিয়ে রাখা, পাকিস্তানিদের খবর সংগ্রহের পাশাপাশি অস্ত্র হাতে সম্মুখ যুদ্ধেও তিনি অংশ নিয়েছেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৩ সালে তারামনকে বীর প্রতীক খেতাব দেয়। কিন্তু ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তাকে খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি।
এরপর ১৯৯৫ সালে ময়মনসিংহের একজন গবেষক প্রথম তাকে খুঁজে বের করেন। ওই বছর ১৯ ডিসেম্বর সরকারের পক্ষ থেকে তারামন বিবির হাতে সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়। খেতাবপ্রাপ্ত দুই নারী মুক্তিযোদ্ধার একজন তারামন বিবি।