মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

অরাজনৈতিক আন্দোলন নিয়ে সতর্ক সরকার

আপডেট : ১৫ জানুয়ারি ২০১৯, ০৩:১৫ এএম

রাজনৈতিক আন্দোলনের চেয়ে অরাজনৈতিক আন্দোলন নিয়ে বেশি সতর্ক

থাকবে সরকার। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা মনে করছেন, রাজনৈতিক আন্দোলন মাঠে গড়াতে সময় নেবে। বাড়তি সতর্ক না থাকলে অরাজনৈতিক সংগঠনগুলোর আন্দোলন হতে পারে। সেই আন্দোলনে ‘ভর করে ফায়দা নিতে পারে’ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলো। বিষয়টি মাথায় রেখে সরকার ও দল উভয়ই সতর্ক থাকবে। এ প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক গতকাল সোমবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশ পরিচালনায় অনাহূত আন্দোলন বা অস্থিরতা এড়িয়ে চলতে চায় সরকার। এ ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়ার মানসিকতাও নেই সরকারের।

আওয়ামী লীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলন নিয়ে তেমন চিন্তিত নয় সরকারের শীর্ষ পর্যায়। তবে শ্রমিক সংগঠনগুলোর বিভিন্ন সেক্টরের অসন্তোষ ও ‘হঠাৎ গজানো’ অরাজনৈতিক আন্দোলন নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে সরকারে। তাই বিশেষ করে ঢাকাকে আন্দোলনমুক্ত রাখতে চায় সরকার। এর কারণ ব্যাখ্যায় তারা আরও জানান, সরকারের গত মেয়াদে অরাজনৈতিক সংগঠনের বেশ কয়েকটি আন্দোলন সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দেয়। বিশেষ করে ছাত্র আন্দোলন সরকারকে বড় ধরনের ‘ভোগান্তিতে’ ফেলেছিল। তাই এবার প্রথম থেকেই অরাজনৈতিক সংগঠনগুলো নিয়ে সতর্ক থাকবে সরকার।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঢাকাকে আন্দোলনমুক্ত রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে আমাদের। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার আগামী দিনগুলোতে শান্তিপূর্ণভাবে দেশ পরিচালনা করতে চায়। কোনো ধরনের অসহিষ্ণু পরিস্থিতি দেশে বিরাজ করুক আর জনগণের ভোগান্তি সৃষ্টি হোকÑ তা চাই না। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সবসময় প্রস্তুত প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য, দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও সতর্ক এসব ব্যাপারে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রতিকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আগেই যাতে টের পাওয়া যায় সেজন্য রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপে আরও জানা গেছে, বেসরকারি বিভিন্ন সেক্টরে বাড়তি নজরদারি করছে সরকার। যাতে আন্দোলনের পূর্বাভাস পাওয়া যায়; কেউ আন্দোলনমুখী হওয়ার আগেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তারা জানান, শপথগ্রহণ করেই পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলন নতুন সরকারকে বেকায়দায় ফেলেছে। বেতন-ভাতায় সুবিধা দিয়ে শ্রমিকদের কর্মস্থলে ফেরত পাঠানোর ত্বরিত উদ্যোগ নিয়ে সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম হয়েছে। সরকারের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, কোনো সেক্টরে অসন্তোষ দেখা দেওয়ার আগে যাতে তার সমাধান করে ফেলা যায় সে ব্যাপারে ‘সিরিয়াস’ সরকার। তাদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা গেছে, আন্দোলন সংগঠিত হওয়ার আগেই সংশ্লিষ্টরা যাতে অবগত হতে পারেন এবং দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনÑ সে ব্যাপারে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তৎপর থাকবে।

গতকাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ‘বিরাট বিজয়ের পাশাপাশি গভীর চক্রান্তের’ বিষয়েও খেয়াল রাখতে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যত বড় জয়, তত বড় শঙ্কা আছে। বিপুল বিজয়ে আত্মতুষ্টি বা আত্মহারা হওয়ার কোনো কারণ নেই। ৭৫-এর আগেও অনেক বড় বিজয় এসেছিল। এরপরই আমরা বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, সরকারের কাছে তথ্য আছে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলো আপাতত আন্দোলনমুখী হবে না। তবে অরাজনৈতিক কোনো সংগঠনের আন্দোলন সংগঠিত হলে সেখানে ‘ভর করে ফায়দা নেওয়ার’ চেষ্টা করবে রাজনৈতিক দলগুলো, যাতে সরকারকে বেকায়দায় ফেলা যায়। এ কারণে সরকার রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর আন্দোলনের চেয়ে অরাজনৈতিক সংগঠনের আন্দোলনের ব্যাপারে সতর্ক থাকবে আগে থেকেই।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত