বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তাদের ছেড়ে যাওয়া কূটনীতিক হিসেবে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা ১২টি বিলাসবহুল গাড়ির হদিস নেই। বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে বিলাসবহুল ওই গাড়িগুলোর নথিপত্র শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরে জমা দেওয়া হলেও সেগুলো এখন কোথায় আছে জানে না ঢাকা শুল্ক কর্র্তৃপক্ষ। এসব গাড়ির বিপরীতে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাওনা রয়েছে। এ বিষয়ে এখনো কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনে কর্মরত বিদেশি নাগরিকরা শুল্কমুক্তসুবিধায় (কার্টেন ডি প্যাসেজ) গাড়ি নিয়ে থাকেন। কূটনৈতিক সুবিধা নিয়ে যাদের নামে এসব আমদানি করা গাড়ি আনা হয় দায়িত্ব পালন শেষে তাদের চলে যাওয়ার সময় তা শুল্ক কর্র্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের অনেক কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন শেষে ঢাকা ছেড়ে গেলেও তারা গাড়ি ও গাড়ির পাসবুক জমা দিয়ে যাননি।
২০১৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি একটি চিঠি দিয়ে এরকম ১৬টি গাড়ির নথিপত্র তলব করে বিশ্বব্যাংককে সাত দিন সময় দেয় শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ। চিঠি পেয়ে গাড়িগুলোর তথ্য দিতে ছয় মাস সময় চায়। পরে তারা শুল্ক পরিশোধ করে চারটি গাড়ি ছাড়িয়ে নেয়। অপর গাড়িগুলোর বিষয়ে বিশ্বব্যাংক এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।
শুল্ক গোয়েন্দার চিঠিতে বলা হয়, শুল্ক সুবিধায় আনা গাড়ির বিপরীতে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব অনাদায়ী রয়েছে। এটি শুল্ক আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ। ১৯৬৯ সালের শুল্ক আইনে এবং ২০১২ সালের অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনে এ ধরনের অপরাধের বিস্তারিত শাস্তির কথা বলা হয়েছে। তদন্ত সংস্থা যেকোনো সময় এসব গাড়ি জব্দ করতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শহীদুল ইসলাম গতকাল রবিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিশ্বব্যাংকের ১৬টি গাড়ির মধ্যে চারটি গাড়ির প্রয়োজনীয় শুল্ক পরিশোধ করে ছাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে। অপর গাড়িগুলোর নথিপত্র ঢাকা কাস্টম হাউসে দেওয়া হয়েছে। এর সর্বশেষ অবস্থা তারা বলতে পারবে। গাড়ির শুল্ক নির্ধারণসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা তারাই (ঢাকা কাস্টম হাউস) করে থাকে।
ওই গাড়িগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার আ. মান্নান শিকদার রবিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ওই ১২টি গাড়ি কোথায় কী অবস্থায় আমার জানা নেই। আমরা গাড়িগুলোর কোনো হদিস পাচ্ছি না।’শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আনা এসব কর্মকর্তা হলেনÑ বিশ্বব্যাংকের আইএফসি উইংয়ের কর্মকর্তা প্রমিতা দাস গুপ্ত (এজব ০৭৭), শকুন্তলা আকমিমানা (এজে ২৭-০৪৩), ক্যাথিনোয়ের খু (ডিএ ৪০২৫), বিনয় সরূপ (এজে ২৭-০৪২), ওসমানি সেকেল (এজব ০৬৩), জোস অ্যাডগার্ডো লোডেজকামডস (এজে ২৭-০৪৩), মিরভা তুলিয়া (এজব ০৭১), দায়িদ (ডিএ ৪১-০৪৩), মি. গ্রিনা ইগরচায়না নিকডর বকরগার (এজেজে ২৭-০৩১), মৃদুলা সিং (এজেটি ০৬৮), তাহসীন সৈয়দ খান (এজব ০৬৮), মায়োমি ইসোগায়েন (জিআরই ০৫৬), মিস তানিয়া মানা ডি মাইতারাজকো (ডিএ ৩১-০৫), সেরেন ওজের (এজট ০৩০), ফাবিকো পিতালুগা (একেডি-২৮১) ও হেলেন জয় ক্রেক (ডিএ ০৪১)। এর মধ্যে ফিনল্যান্ডের নাগরিক মির্ভা তুলিয়া ও ভারতের নাগরিক মৃদুলা সিংয়ের গাড়ি শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের হাতে তুলে দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। পরে আরও দুটি গাড়ি জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় শুল্ক পরিশোধ করে ছাড়িয়ে নেয়। অপর ১২টি গাড়ির বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।