জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা অভিযোগ করেছেন, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়লাভ করতে যারা সরকারকে ‘ভোট ডাকাতিতে’ সহায়তা করেছে তাদের এখন পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কালো ব্যাজ ধারণ ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে এ কথা বলেন তারা। এ সময় কারাবন্দি খালেদা জিয়াসহ রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তির দাবিতে নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন।
তবে বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত এ কর্মসূচিতে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের অনুপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এ প্রসঙ্গে ফ্রন্টের নেতা ও জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘ড. কামাল হোসেনের পায়ের ব্যথা বেড়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে রয়েছেন। একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানের কারণে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী এই কর্মসূচিতে আসতে পারেননি।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদও কর্মসূচিতে অংশ নেননি।
কর্মসূচিতে আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানকে দলের অধীনে নেওয়া হয়েছে। এখন পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে যারা ভোট ডাকাতি করেছে। যে রাষ্ট্রের সকল প্রশাসন দুর্নীতি ও ঘুষ খেয়ে ভোট ডাকাতি করে সে রাষ্ট্র আর রাষ্ট্র থাকে না। আগামী দিনে আর প্রতিবাদ নয়, এখন থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের চেতনাকে, মানুষের বিবেককে হত্যা করে ৩০ তারিখে ভোটের ফলাফলের নামে নাটক করেছে। নির্বাচনে ১১৭ ভাগ ভোট ডাকাতি হয়েছে। আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি ফ্রন্টের যে গণশুনানি হবে তার মাধ্যমে নির্বাচনে অনিয়মের বিষয় তুলে ধরে সমস্ত কিছু উলঙ্গ করে দেওয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু লোক, প্রশাসনের একটি অংশ মিলে যে ডাকাতি করেছে সেই ডাকাতিতে শকুনরা উৎসব করতেছে। শকুনদের মেলা বসেছিল গণভবনে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি কোনো ভোটার ভোট দেন নাই। আর ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন হয়নি, প্রহসন হয়েছে। এবারের নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে দলীয় সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না।’
গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘সরকার গণতন্ত্রকে লাশ বানিয়ে তার ওপর দাঁড়িয়ে কীর্তন করছে। এমন নির্লজ্জ সরকার বিশ্বের কোথাও নেই। ৫ জানুয়ারি ২০১৪-তে এক কান কাটা গিয়েছিল। এবার ৩০ ডিসেম্বর বাকি কানটাও কেটে গেছে। ফ্যাসিবাদী, স্বৈরাচারকে ছাড়িয়ে যাওয়া সরকারের নোবেল পাওয়া উচিত।’
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘২৯ ডিসেম্বর রাতে বাংলাদেশে জনগণের অধিকার লুণ্ঠন হয়েছে। বিনা জানাজায় ৩০ ডিসেম্বর তাকে কবর দেওয়া হয়েছে। এই কবর যারা দিয়েছিল সেই আমলা ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়েছে।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালামের সভাপতিত্বে এবং গণফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক মোশতাক আহমেদ ও বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদের পরিচালনায় কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির সেলিমা রহমান, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কাজী আবুল বাশার; জেএসডির আবদুল মালেক রতন; গণফোরামের জগলুল হায়দার আফ্রিক, রফিকুল ইসলাম পথিক; নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, মমিনুল ইসলাম; জনদলের এ টি এম গোলাম মওলা চৌধুরী প্রমুখ।