বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

আবারও হাসপাতাল ছেড়েছেন ‘বৃক্ষমানব’

আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৪:০৬ এএম

দ্বিতীয়বারের মতো হাসপাতাল ছেড়েছেন ‘বৃক্ষমানব’ আবুল বাজানদার (২৮)। এই দফায় প্রায় ২০ দিন থেকেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে কেবিন না পাওয়ায় চিকিৎসা না নিয়েই গত বুধবার চলে যান তিনি। অনেক দিন চিকিৎসার পরও পুরোপুরি সুস্থ না হওয়ায় বিদেশে গিয়ে চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা কামনা করেছেন বাজানদার। তিন বছর ধরে ঢামেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন আবুল বাজানদার। এরই মধ্যে তার শরীরে ২৫ বার অস্ত্রোপচার করা  হয়েছে। কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ হননি, কবে হবেন তা বলতে পারছেন না চিকিৎসকরা। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় বাজানদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার শরীরে গত তিন বছরে ২৫টি অপারেশন হয়েছে। একেকটা অপারেশনে কী যে যন্ত্রণা তা কাউকে বোঝাতে পারব না। এখনো সুস্থ হলাম না। আমি স্যারদের (চিকিৎসক) বলেছি, দেশের বাইরে চিকিৎসা নিলে হয়ত ভালো হয়ে যেতাম। আমাকে বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।’

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি একই রোগে আমার থেকে খারাপ অবস্থার দুজন আমেরিকাতে চিকিৎসা নিয়ে ৯০ ভাগ ভালো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সহায়তা করলে আমি স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে পারতাম।’ বিরল রোগে আক্রান্ত এই রোগী বলেন, ‘বর্তমানে আমার সংসার চলে মানুষের সহায়তায়, একমাত্র মেয়েকে (৫) স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। জানি না ওর ভবিষ্যৎ কী।’ কেবিন না পাওয়া ও মায়ের অসুস্থতার কারণে বুধবার খুলনার পাইকগাছায় নিজ বাড়িতে চলে যান বলে জানিয়েছেন তিনি।

ঢামেক কর্র্তৃপক্ষ জানায়, প্রথম দফা অস্ত্রোপচার শেষে চিকিৎসার মাঝপথেই কাউকে না জানিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছিলেন আবুল বাজানদার। গত জানুয়ারিতে হাত ও পায়ে সমস্যা নিয়ে আবারও হাসপাতালে ফেরেন তিনি। ঢামেকের শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেন বলেন, ‘গত বুধবার আবুল বাজানদার হাসপাতাল ছেড়েছেন। যাওয়ার সময় বলে গেছেন ১৫ দিন পরে আসবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘হাত ও পায়ে অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসার মাঝপথেই তিনি হাসপাতাল ছেড়েছিলেন। ৮ মাস বাড়িতে কাটিয়ে গত ২০ জানুয়ারি হাত ও পায়ে শিকড়ের মতো বাড়তি অংশ নিয়ে আবার হাসপাতালে আসেন। এরপর চিকিৎসকরা তার অপারেশন করাতে চাইলে তিনি রাজি হননি।’ ডা. সামন্তলাল বলেন, ‘এবার আবুল কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাননি। তার কোনো অপারেশনও হয়নি। রোগী যদি হাসপাতাল থেকে বারবার চলে যায় তাহলে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না।’

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে হাত-পায়ে গাছের শিকড়ের মতো শক্ত অতিরিক্ত অংশ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন আবুল বাজানদার। দেশে প্রথম এই ধরনের রোগীর চিকিৎসায় পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করে ঢামেক কর্র্তৃপক্ষ। তার চিকিৎসা সহায়তায় এগিয়ে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্দেশ দেন আবুলের সব খরচ রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করার। একসময় প্রায় সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। পরে চিকিৎসা শেষ না করেই ২০১৭ সালের ২৬ মে হাসপাতাল ছাড়েন বাজানদার। অসুস্থ হওয়ার আগে তিনি ভ্যান চালাতেন। কিন্তু এই রোগের কারণে এখন কোনো কাজ করতে পারছেন না।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত