বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

বিদ্রোহে গা করছে না আ.লীগ

আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০২:২৯ এএম

৮৭ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের নাম গতকাল শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করার পর আওয়ামী লীগের তৃণমূলের বেশ কয়েকটি জায়গায় বিদ্রোহের আভাস পাওয়া গেছে। বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির বর্জনের ঘোষণার কারণে নির্বাচনকে জমজমাট করতে বিদ্রোহীদের প্রতি ক্ষমতাসীন নেতৃত্ব নমনীয় থাকবে বলে জানিয়েছেন দলটির কয়েকজন নেতা।দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজশাহীর বাগমারা, দুর্গাপুর, পুঠিয়া, বাঘা ও চারঘাট এই পাঁচটি উপজেলায় যে পাঁচজনকে চেয়ারম্যান পদে চূড়ান্তভাবে মনোনীত করেছে আওয়ামী লীগ, তাদের নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাঝে ভীষণ ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। মনোনয়নপ্রাপ্তদের বেশির ভাগই এমপিদের ‘কাছের লোক’ হিসেবে পরিচিত বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয় নেতারা। তাই এই পাঁচ উপজেলায় দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত প্রার্থীর বিপক্ষে নির্বাচন করবেন। এ ছাড়া বাঘা, তানোর, গোদাগাড়ী ও পবায়ও বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে ভাবছে এসব উপজেলার স্থানীয় অনেক নেতা। খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, হবিগঞ্জ জেলার সদর উপজেলা, নবীগঞ্জ, লাখাই, বাহুবল, মাধবপুর, চুনারুঘাট, আজমিরীগঞ্জ ও বানিয়াচংয়ে আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ আছে। এসব উপজেলার দায়িত্বশীল কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সঠিকভাবে চূড়ান্ত প্রার্থী মনোনয়ন দেয়নি দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড। অনেক নেতা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার প্রস্তুতি

আওয়ামী লীগের উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী যারা-পৃষ্ঠা ৯

একাদশ সংসদ : সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন পেলেন যারা-পৃষ্ঠা ৩

নিচ্ছেন। সুনামগঞ্জ সদর, শাল্লা, ধর্মপাশা, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায়ও আওয়ামী লীগের ঘোষিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড়ানোর আভাস পাওয়া গেছে। জামালপুর জেলার সদর উপজেলা, বকশীগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ীতে দলের চূড়ান্ত প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন স্থানীয় কয়েকজন নেতা। নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুরী, দুর্গাপুর, কলমাকান্দা উপজেলাতেও আছে প্রার্থী নিয়ে অসন্তোষ। কেন্দুয়া উপজেলার প্রার্থীও বিদ্রোহী প্রার্থীর মুখোমুখি হতে পারেন।  এসব উপজেলায় খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, প্রার্থী বাছাইয়ে দলীয় সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে

তৃণমূলের। কোনো কোনো উপজেলায় এমনও অভিযোগ পাওয়া গেছে, বর্ধিত সভায় ভোটাভুটি করে যেসব নাম কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য চূড়ান্ত করে তৃণমূল আওয়ামী লীগ, সেসব নাম কেন্দ্রে জমাই পড়েনি। ‘প্রভাবশালীদের কলকাঠিতে’ জনপ্রিয় প্রার্থীরা বাদ পড়েছেন। তাই অনেক উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি চলছে। কোনো কোনো উপজেলায় দলীয় অনেক নেতা রয়েছেন, যারা নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক বিদ্রোহী প্রার্থী হতে চান। ভেতরে ভেতরে কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতার সমর্থন পেলে ভোটের মাঠ ছাড়বেন না তারা। এদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, বিএনপির নির্বাচন বর্জনের ফলে উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন নিয়ে সন্দিহান আওয়ামী লীগ। তাই নির্বাচনকে উৎসবমুখর ও অংশগ্রহণমূলক করতে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সর্বশেষ দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তমতো নির্দলীয় রাখা হয়েছে। একই কারণে কোথাও কোথাও বিদ্রোহী দমনে অনেকটা নমনীয় থাকবে কেন্দ্র। সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কায় প্রকাশ্যে বিদ্রোহীকে সমর্থন না দিলেও ভেতরে ভেতরে দেবে। আর কেন্দ্রের এই মনোভাবের ‘সুযোগ নিয়েই’ চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তৃণমূলের বঞ্চিত নেতারা।

এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ সংগঠন। এখানে নেতাকর্মী ও সমর্থক অনেক বেশি। কাউকে মনোনয়ন দিলে অন্য কারও ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকবেÑ এটাই স্বাভাবিক। তবে মনোনয়ন বোর্ড মনোনয়ন দেয় বিভিন্ন সার্ভে রিপোর্টের ভিত্তিতে।’ তিনি বলেন, ‘জয়ের সম্ভাবনা যার বেশি থাকে তিনিই মনোনয়ন পান। ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকলেও শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহী থাকবে বলে মনে করি না।’ অপর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমানও প্রায় একই প্রতিক্রিয়া জানান। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘যোগ্য প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেওয়ার চেষ্টা করে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড। আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচনে আমাদের কৌশল থাকবে। সে অনুযায়ী তৃণমূল নেতারা কাজও করবেন।’

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত