গাজীপুরের টঙ্গীতে তুরাগ নদের তীরে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমা শুরু হবে আর মাত্র পাঁচ দিন পরই। তাবলিগ জামাতের বিবদমান দুই পক্ষের বিবাদ এড়াতে সরকার এবার আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে উভয় পক্ষের জন্য ২ দিন করে একটানা ৪ দিন ইজতেমা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কড়া নিরাপত্তায় এখন সেখানে চলছে প্যান্ডেল তৈরিসহ ময়দান প্রস্তুতির কাজ। প্রতিদিন শত শত স্বেচ্ছাসেবী মুসল্লি বিভিন্ন এলাকা থেকে দলবেঁধে ইজতেমা ময়দানে এসে যোগ দিচ্ছেন প্রস্তুতিকাজে। আগামী বুধবার নাগাদ ইজতেমা মাঠের প্রস্তুতিকাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।গতকাল শনিবার ইজতেমা ময়দানে গিয়ে দেখা যায়, ময়দানের বিশাল এলাকাজুড়ে বাঁশের খুঁটি বসানো হয়েছে। চটের শামিয়ানা বিছানো এবং বিদ্যুৎ ও মাইকের তারের সংযোগ দেওয়াসহ চলছে নানা কাজ। মুসল্লিদের ওজু, গোসল ও পয়োনিষ্কাশনের স্থানগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। ইজতেমা ময়দানের উত্তর দিকে বিদেশি নিবাসের কাজও চলছে পুরোদমে। সেখানে টিনের চালা ও বেড়া দিয়ে বিদেশিদের খিত্তাটি তৈরি হচ্ছে। রান্নার জন্য গ্যাস সংযোগের কাজও চলছে।
সাধারণ মুসল্লিদের পাশাপাশি স্বেচ্ছাশ্রমে যোগ দিয়েছেন স্থানীয় কিছু মাদ্রাসার ছাত্ররাও। তবে এদের মধ্যে ময়দানে মাওলানা জোবায়েরপন্থি লোকের সংখ্যাই বেশি দেখা গেছে।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর থেকে আসা ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন জানান, ইজতেমা মাঠের প্রস্তুতিকাজে অংশ নিতে শতাধিক মুসল্লি নিয়ে তাদের একটি জামাত এসেছে। তিনি বলেন, ‘ইজতেমা মাঠে এসে দিনের জন্য শ্রম দিতে পেরে ভালো লাগছে। তাবলিগের সঙ্গে আমি ছোটকাল থেকে জড়িত। ইজতেমায় যোগ দেওয়া মুসল্লিরা যেন মাঠে অবস্থান নিয়ে সুন্দরভাবে বয়ান শুনতে পারেন সেজন্য মেহনত করছি।’
ইজতেমার বয়ান মঞ্চ তৈরি এবং সাফাই জামাতের জিম্মাদার ফকির আতাউর রহমান বলেন, ‘১০ জন শূরা সদস্যের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন জামাতে বিভক্ত হয়ে মাঠ প্রস্তুতের কাজ চলছে। তাবলিগ জামাতের প্রায় ২০ হাজার সাথী আজ স্বেচ্ছাশ্রমে মাঠ প্রস্তুতের কাজ করছেন।’ আগামী বুধবারের মধ্যে মাঠ প্রস্তুতের কাজ শেষ হতে পারে বলে জানান আতাউর রহমান।
এদিকে তাবলিগ জামাতের বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে যেকোনো ধরনের বিবাদ এড়াতে ইজতেমা ময়দানে ব্যবস্থা করা হয়েছে কড়া নিরাপত্তার। জানতে চাইলে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমান বলেন, ‘ইজতেমায় যেকোনো ধরনের নাশকতা ও নৈরাজ্য রোধে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ময়দানের চারপাশে সার্বক্ষণিক নজরদারি করছে। সাদা পোশাকে মুসল্লিদের সঙ্গেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন।’
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মাওলানা জোবায়েরের অনুসারীরা ১৫ ফেব্রুয়ারি ইজতেমা শুরু করে পরদিন ১৬ ফেব্রুয়ারি মাগরিবের আগে আখেরি মোনাজাত শেষ করে মাগরিবের পরে চলে যাবেন। আর মাওলানা সা’দ অনুসারীরা ১৭ ফেব্রুয়ারি ফজরের নামাজের পর ইজতেমা মাঠে ঢুকে ইজতেমার কার্যক্রম শুরু করবেন।
এর আগে গত বছরের পহেলা ডিসেম্বর ইজতেমা মাঠে সা’দপন্থি ও জোবায়েরপন্থি মুসল্লিদের মধ্যে সংঘর্ষে ২ জন নিহত ও শতাধিক আহত হন। এর পরিপ্রেক্ষিতে জানুয়ারি মাসে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত করা হয়। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হওয়া বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে তিন দিনব্যাপী ইজতেমা শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু দুই পক্ষ আলাদাভাবে ইজতেমা অনুষ্ঠানে অনড় থাকায় ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে এক বৈঠকে দুদিন করে একটানা চার দিনব্যাপী ইজতেমা অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেওয়া হয়।