যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর দুই সপ্তাহও বাকি নেই। প্রচারণার শেষ দিকে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন শিবির। শুক্রবার দুই প্রার্থীর মাঝে শেষ বিতর্কও অনুষ্ঠিত হয়ে গেল।
নির্বাচনের আগে নিয়ম অনুযায়ী দুইটি টিভি বিতর্কে অংশ নেন ট্রাম্প ও বাইডেন। মুখোমুখি এ দুই বিতর্কে কে জিতেছেন আর কে হেরেছেন, এ নিয়ে বিভিন্ন জরিপে অংশ নেন দর্শকেরা।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন তাদের জরিপের ভিত্তিতে জানায়, দ্বিতীয় ও শেষ বিতর্কে জয়লাভ করেছেন জো বাইডেন।
নির্বাচনের মাত্র ১২ দিন আগে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকাল) টেনেসি অঙ্গরাজ্যের ন্যাশভিলের বেলমন্ট ইউনিভার্সিটিতে দ্বিতীয় ও শেষ বিতর্কে মুখোমুখি হন ট্রাম্প ও বাইডেন।
দর্শকদের মতামতের ভিত্তিতে সিএনএন পোল বলছে, চূড়ান্ত বিতর্কে ট্রাম্পের চেয়ে ভালো করেছেন বাইডেন।
প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যমটির জরিপ অনুযায়ী, শেষ বিতর্কে বাইডেন জয়লাভ করেছেন বলে মত দিয়েছেন ৫৩ শতাংশ দর্শক। অন্যদিকে ৩৯ শতাংশ দর্শকের মতে এই বিতর্কে জিতেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
সিএনএন ছাড়াও আরও দুটি জরিপে দেখা গেছে, বিতর্কে বাইডেন জয়ী বলে মত দিয়েছেন দর্শকেরা।
ডেটা প্রোগ্রেস জরিপে ৫২ শতাংশ দর্শক মত দিয়েছেন বাইডেনের জয়ের পক্ষে। অন্যদিকে বিতর্কে ট্রাম্পের জয়ের পক্ষে মত দিয়েছেন ৪১ শতাংশ দর্শক।
আরেকটি জরিপ ইউএস পলিটিকস অনুযায়ী, ৫২ শতাংশ দর্শকের মতে বিতর্কে বাইডেন জয়ী। আর ট্রাম্পকে জয়ী মনে করছেন ৩৯ শতাংশ দর্শক।
রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটের দুই প্রার্থীর মধ্যে প্রথম বিতর্কেও বাইডেন জয়ী হয়েছিলেন বলে বিভিন্ন জরিপে উঠে আসে।
প্রথম বিতর্কের পর সিএনএন পোলে দেখা গেছে, সেই বিতর্কে ৬০ শতাংশ দর্শক বাইডেনকে জয়ী বলেছেন। অন্যদিকে ট্রাম্পের জয় হয়েছে বলে মনে করেন ২৮ শতাংশ দর্শক।
দুই প্রার্থীর মধ্যকার প্রথম বিতর্ক নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়। সে বিতর্কে বিশৃঙ্খল ও ব্যক্তিগত আক্রমণ দেখা যায়। দ্বিতীয় বিতর্কের আগে স্ত্রী মেলানিয়াসহ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন ট্রাম্প।
তবে প্রথম বিতর্কের তুলনায় দ্বিতীয় বিতর্কে উভয় প্রার্থীই ছিলেন অনেকটাই সংযত। বিভিন্ন বিষয়ে পরস্পরের সমালোচনা ও পাল্টাপাল্টি আক্রমণ থাকলেও সব ক্ষেত্রেই সম্মান বজায় রেখেছেন তারা।
এদিকে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে দুই শিবিরের শেষদিকের প্রচারণার দিকে নজর গোটা যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের।
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস ও একটি লিবারেল আর্টস কলেজের জরিপ বলছে, হেভিওয়েট দুই প্রার্থীর মধ্যে ভোটারদের পছন্দে এগিয়ে আছেন ‘লড়াকু’ মেজাজের ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন।
তার নিজের জীবনের ট্র্যাজেডি থেকে শুরু করে বারবার ব্যর্থ হয়েও রাজনীতির ময়দানে একের পর এক এগিয়ে যাওয়ার চিত্রপট যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের মনে দাগ কাটছে। গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে ট্রাম্পের চেয়ে বড় ব্যবধানে ভোটারদের সমর্থন পাচ্ছেন তিনি।
করোনা মহামারির ক্ষেত্রে ট্রাম্পের তুলনায় ১২ পয়েন্ট বেশি সমর্থন পেয়েছেন বাইডেন। আবার সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে ভোটাররা ট্রাম্পের চেয়ে বাইডেনেই বেশি আস্থা রাখছেন। এক্ষেত্রে বাইডেন এগিয়ে আছেন ৬ পয়েন্টে।
তাছাড়া দেশকে একতাবদ্ধ রাখার প্রশ্নেও মার্কিন জনগণ বাইডেনকে বেশি যোগ্য মনে করছেন। এক্ষেত্রে প্রায় ২০ পয়েন্ট বেশি সমর্থন আছে বাইডেনের ঝুলিতে। সব মিলিয়ে জো বাইডেন হয়ে উঠেছেন ‘সবচেয়ে সুপরিচিত এবং জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী’।
হোয়াইট হাউসের দৌড়েও বাইডেন এবারই প্রথম নন। বরং আরও দুইবার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে নেমে ব্যর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু হাল ছেড়ে না দেওয়ার মানসিকতা তাকে বারবার যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে।
এবারের নির্বাচনে জয় পেলে ওবামা আমলে দীর্ঘ আট বছর ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করা জো বাইডেনই হবেন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট।