মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

চলে গেলেন আবুল হাসনাত

আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২০, ০৩:২৯ এএম

সাহিত্য পত্রিকা ‘কালি ও কলম’-এর সম্পাদক ও বাংলা একাডেমির ফেলো আবুল হাসনাত মারা গেছেন। রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে গতকাল রবিবার সকাল ৮টার দিকে তিনি শেষ নিঃশ^াস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। স্ত্রী নাসিমুন আরা হক মিনু ও এক মেয়েসহ অসংখ্য স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন তিনি।

তার মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে প্রগতিশীল ও মুক্ত সংস্কৃতি চর্চায় আবুল হাসনাতের অবদান জাতি সবসময় শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।’ প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন বলে তার দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।

অনেক দিন ধরে ফুসফুস সংক্রমণে ভুগছিলেন আবুল হাসনাত। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত ১৪ অক্টোবর থেকে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন আবুল হাসনাত। ফুসফুস সংক্রমণসহ বেশকিছু রোগে তিনি আক্রান্ত ছিলেন। তবে করোনা পরীক্ষার রেজাল্ট নেগেটিভ ছিল।’

আবুল হাসনাতের মরদেহ গতকাল দুপুরে ধানম-ির বেঙ্গল শিল্পালয় ও ছায়ানট প্রাঙ্গণে নেওয়া হয়। সেখানে সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বাংলা একাডেমি, বেঙ্গল ফাউন্ডেশন, ছায়ানটসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজীসহ সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেকে। বাদ আসর ধানম-ি-৭ এর বায়তুল আমান জামে মসজিদে জানাজা শেষে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে। সেখানেই তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।

আবুল হাসনাতের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ শোকবার্তায় বলেন, ‘সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায় পদচারণার মাধ্যমে আবুল হাসনাত বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিতে অবদান রেখেছেন। তার মৃত্যুতে সংস্কৃতি ক্ষেত্রে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।’

বাংলা একাডেমির শোক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আবুল হাসনাত বাংলাদেশের সাহিত্য সম্পাদনার ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় নাম। গণসাহিত্য, দৈনিক সংবাদের সাহিত্যসাময়িকী এবং সর্বশেষ সাহিত্য-মাসিক কালি ও কলম সম্পাদনায় তিনি অনন্য রুচি-মেধা এবং অসামান্য সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। তার চিত্রসমালোচনায় যেমন ছিল উল্লেখযোগ্য স্বাতন্ত্র্য তেমনি ‘মাহমুদ আল জামান’ নামে তিনি কবিতা ও শিশু-কিশোর সাহিত্যের জগতেও ছিলেন নিবিষ্ট। ১৯৭১ সালে ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গে অবস্থানকালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সাংস্কৃতিক লড়াইয়েও তিনি পালন করেছেন বিশেষ ভূমিকা। বাংলা একাডেমির সঙ্গে আবুল হাসনাতের ছিল সুদীর্ঘকালের সংযোগ। একাডেমি থেকে তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে নানা রবীন্দ্রনাথের মালা, ঢাকা ১৯৭১ এলবাম এবং শামসুর রাহমান রচনাবলি (দুই খ-)। বাংলা একাডেমি আবুল হাসনাতের প্রয়াণে গভীর শোকপ্রকাশ করছে এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি জ্ঞাপন করছে আন্তরিক সমবেদনা।’

ছায়ানটের শোক বার্তায় বলা হয়েছে, ‘তিনি ছায়ানট ট্রাস্টের সদস্য, কার্যকরী সংসদের প্রাক্তন সহ-সভাপতি ও বর্তমান সদস্য এবং ছায়ানট ট্রাস্ট পরিচালিত নালন্দা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি। তার মৃত্যুতে সংস্কৃতি অঙ্গনে গভীর শূন্যতার সৃষ্টি হলো। ছায়ানট তার এই আকস্মিক মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছে।’

এছাড়া বেঙ্গল ফাউন্ডেশন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকেও শোক জানানো হয়েছে। এক শোকবার্তায় জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি সাইফুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আবুল হাসনাতের মৃত্যুতে সাহিত্য ও সাংবাদিকতার অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।

আবুল হাসনাত ১৯৪৫ সালের ১৭ জুলাই পুরান ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক ছাত্র আবুল হাসনাতের ছদ্মনাম ছিল মাহমুদ আল জামান। দীর্ঘ ২৪ বছর দৈনিক সংবাদের সাহিত্য সাময়িকী সম্পাদনা করা আবুল হাসনাত আমৃত্যু কালি ও কলমের সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। পাশাপাশি চিত্রকলাবিষয়ক ত্রৈমাসিক ‘শিল্প ও শিল্পী’রও তিনি সম্পাদক ছিলেন।

তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘জ্যোৎস্না ও দুর্বিপাক, ‘কোনো একদিন ভুবনডাঙায়’, ‘ভুবনডাঙার মেঘ ও নধর কালো বেড়াল’। শিশু ও কিশোরদের জন্য তিনি লিখেছেন ‘ইস্টিমার সিটি দিয়ে যায়’, ‘টুকু ও সমুদ্রের গল্প’, ‘যুদ্ধদিনের ধূসর দুপুরে’, ‘রানুর দুঃখ-ভালোবাসা’। ১৯৮২ সালে ‘টুকু ও সমুদ্রের গল্প’র জন্য অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য পুরস্কার পান তিনি। ২০১৪ সালে তিনি বাংলা একাডেমির সম্মানসূচক ফেলো মনোনীত হন।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত