বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

করোনার দেড় বছরে তিন হাজার ছাত্রীর বাল্যবিয়ে

আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০২১, ০২:৪০ এএম

করোনা মহামারীর মধ্যে গত দেড় বছরে খুলনায় তিন হাজারের বেশি ছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে। তাদের মধ্যে সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রীও রয়েছে। জেলার ডুমুরিয়া উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ৭৫১ এবং কম দিঘলিয়ায় ৬ ছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে। করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থেকে বাল্যবিয়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন অভিভাবকরা।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যমতে করোনার দেড় বছরে ডুমুরিয়ায় ৭৫১, কয়রায় ৬৮১, পাইকগাছায় ৪৮৩, দাকোপে ২৯১, রূপসায় ২১৭, মহানগরীতে ১৫৮, তেরখাদায় ১৪৯, ফুলতলায় ২৪০, বটিয়াঘাটায় ৩৩ ও দিঘলিয়ায় ৬ ছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে। বিদ্যালয় অনুযায়ী, রূপসার বেলফুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ ৭০, কয়রার কালনা মহিলা দাখিল মাদ্রাসায় ৫২, মদিনাবাদ মহিলা মাদ্রাসায় ৫০, ডুমুরিয়ার মহিলা দাখিল মাদ্রাসায় ৩৮, তেরখাদার কুশলা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৩৭, মহানগরীর হ্যানে রেলওয়ে গার্লস স্কুলের ১৭ ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে।

মেয়েকে অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়ার বিষয়ে একাধিক অভিভাবক জানান, গরিবের নানান সমস্যা থাকে। ফলে অভাবের সংসারে কর্মজীবী ছেলে পেলে কেউই হাতছাড়া করে না। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউনে রোজগার বন্ধ। মেয়ে স্কুলে যেতে পারে না, এলাকার পরিবেশও ভালো নয় সব মিলিয়ে মেয়েকে বিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানান তারা।

বাল্যবিয়ের শিকার এমন কয়েক ছাত্রী জানায় স্কুল বন্ধ, সংসারেও অভাব। ফলে পড়ালেখার আগ্রহ থাকলেও পরিবারের চাপে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছে। এখন শ্বশুরবাড়ি থেকেই লেখাপড়া চালিয়ে যেতে আগ্রহী তারা। তবে এজন্য স্বামীর পরিবারকে বোঝাতে বেগ পেতে হচ্ছে।

ফুলবাড়ী গেটের ইউসেপ এম এ মজিদ স্কুলের সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীর মা রহিমা খাতুন বলেন, ‘অভাবের সংসারে ছেলেমেয়েদের পাতে ভাত দেওয়াই কষ্টকর। স্কুল বন্ধের মধ্যে কর্মজীবী ছেলে পাওয়ায় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। এখন তার স্বামী চাইলে লেখাপড়া করাবে। আমারও ১৩ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল। মেয়েও ঠিকই সংসার করতে পারবে।’

ডুমুরিয়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীর মা বলেন, ‘নিরাপত্তাহীনতার কারণে মেয়েকে গত সপ্তাহে বিয়ে দিয়েছি। একে তো অভাব, তার ওপর সাত বছর আগে স্বামী মারা গেছেন। উপায় না পেয়ে বিয়ে দিয়েছি।’

আটরা শ্রীনাথ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহসেন বিশ্বাস জানান, করোনার বন্ধে তার বিদ্যালয়ের ১২ ছাত্রী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। তবে বিদ্যালয় খোলার পর শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি সন্তোষজনক। যতটুকু খোঁজ নিয়ে দেখেছি, নিম্ন আয়ের পরিবারের মেয়েরাই বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে।

খুলনা জেলা নিকাহ রেজিস্ট্রার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুল্লাহ সাচ্চু বলেন, ‘খুলনায় বাল্যবিয়ে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। স্থানীয় ইমাম-মুয়াজ্জিন নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিয়েগুলো দিচ্ছেন। কতিপয় অসৎ কাজীর মাধ্যমেও বাল্যবিয়ে সম্পন্ন হচ্ছে। বাল্যবিয়ে ঠেকাতে হলে আইনের কার্যকর প্রয়োগ দরকার।’

ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল ওয়াদুদ জানান, বাল্যবিয়ে বন্ধে তার প্রশাসন সব সময় কঠোর। করোনার মধ্যে বিগত ১০ মাসে অভিযান চালিয়ে অন্তত ৫০টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, ‘বাল্যবিয়ের পরও অনেক ছাত্রী বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করছে। তবে সবাই যাতে বিদ্যালয়ে আসে বা আসতে পারে সেজন্য সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করা হচ্ছে।’

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত