বর্তমান বিশ্বে আলোচিত যে কজন শিশু রয়েছে, তাদের মধ্যে ফাতিহা আয়াত অন্যতম। সে একাধারে লেখক, পরিবেশবাদী সংগঠক ও মানবাধিকারকর্মী। ২০১১ সালের ১৩ অক্টোবর রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত তদানীন্তন আমেরিকান সুপার স্পেশালিটি হসপিটালে (কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল) জন্মগ্রহণ করেন সে। বর্তমানে সে বাবা-মার সঙ্গে নিউ ইয়র্কে বসবাস করছে। ছোটকাল থেকে হিজাব পরতে অভ্যস্ত ফাতিহা আয়াত হিজাব পরেই নিয়মিত উপস্থিত হয় জাতিসংঘ, ইউনিসেফসহ আন্তর্জাতিক ফোরামের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। এ জন্য তাকে সবাই ‘হিজাবিকন্যা’ বলে অভিহিত করে।
২০১৭ সালে ৫ বছর বয়সে ন্যাশনাল ম্যাথমেটিকস পেন্টাথলন অ্যাকাডেমিক টুর্নামেন্টে তিনটি ইভেন্টে জয়ী হয়ে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ‘অনারেবল মেনশন’ খেতাব অর্জন করে। ২০১৮ সালে সাত বছর বয়সে জাতিসংঘের ইকোসক চেম্বারে আন্তর্জাতিক যুব দিবস সম্মেলনে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে বক্তব্য রাখে। ২০১৯ সালে সে জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ অধিবেশনে শিশু অবমাননা, লিঙ্গবৈষম্য ও পারিবারিক সহিংসতা বিষয়ে বক্তব্য রাখে। একই বছর সে আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইয়েমেন, ফিলিস্তিন ও কাশ্মীরের শিশুদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে মানবাধিকার দিবসে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশনে বক্তব্য রাখে।
২০২১ সালে সে স্কটল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য গ্লাসগো অ্যাগ্রিমেন্টের খসড়া তৈরিতে জলবায়ু পরিবর্তনের রূপরেখা সম্মেলনের অধীনে একজন অংশীদারের ভূমিকা পালন করে। ওই বছর সে জাতিসংঘের ৭৬তম সাধারণ অধিবেশনের বিজ্ঞান সম্মেলনের ফিচারড স্পিকারের এবং জর্জিয়া টেক বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশ্বিক জলবায়ু কর্মসূচি সম্মেলনের লাইটনিং স্পিকারের সম্মাননা পায়। দশ বছর বয়সে ফাতিহা আয়াতের তিনটি বই প্রকাশিত হয়। বইগুলো হলোবেয়ার উইথ অ্যা বেয়ার, সিস্টার্স রিইউনিয়ন এবং ডায়েরি অব মুসলিম কিড। তার একটি সংগঠন রয়েছে। ওই সংগঠনের মাধ্যমে সে জলবায়ু, স্বাস্থ্য, তথ্য, শিক্ষা ও উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে। এ ছাড়া নিজের ফেইসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে শিশুদের জন্য গণিত, বিজ্ঞান, কোডিং, আন্তর্জাতিক সংবাদ, গল্প বলা, কোরআন তেলাওয়াত ও তাফসির উপস্থাপন করে।
ফাতিহা আয়াতের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু ২০১৬ সালে লুইস সিমিওনি স্কুলে কিন্ডারগার্টেনে ভর্তির মাধ্যমে। পরবর্তী বছরে সে নিউ ইয়র্ক সিটি ডিপার্টমেন্ট অব এডুকেশনের গিফটেড অ্যান্ড ট্যালেন্টেড প্রোগ্রামের আওতায় ন্যান্সি ডিবেনেডিটিস স্কুলে ভর্তি হয়। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ৫ম শ্রেণি থেকে ‘নিউ ইয়র্ক সেস্ট অ্যাসেসমেন্ট’র দুটো বিষয়েইইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ আর্টস এবং ম্যাথ সর্বোচ্চ স্কোর, সর্বোচ্চ স্টেট লেভেল, সর্বোচ্চ প্রফিসিয়েন্সি রেটিং এবং নিউ ইয়র্ক সিটি পার্সেন্টাইল রেঞ্জের সর্বোচ্চ কোয়ার্টারে স্থান পায়। একই সঙ্গে সে পবিত্র কোরআন হিফজ করছে।
ফাতিহা আয়াত এরই মধ্যে অনেক সম্মাননা ও পুরস্কার লাভ করেছে। সে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটাল এসেনশিয়ালস সনদ, বিবিসি জানালার প্রফেশনাল এক্সেল মাস্টারক্লাস সনদ, গার্লস ইন পলিটিকস ইনিশিয়েটিভের মিনি ক্যাম্প কংগ্রেস ফর গার্লস সনদ ছাড়াও ফ্ল্যামেনকো ভিভো কার্লোটা সান্টানা থেকে রেসিডেন্সি সনদ, ফ্রাঙ্কলিন ইনস্টিটিউট থেকে জিএসকে সায়েন্স ইন দ্য সামার সনদ এবং ইউনিসেফ থেকে টেলেনর চাইল্ড অনলাইন সেইফটি সনদ লাভ করে। ২০১৭ সালে সে নর্থ আমেরিকান বাংলাদেশি কমিউনিটিতে অনন্য অবদানের জন্য স্পেশাল ট্যালেন্ট ক্যাটাগরিতে এনআরবি অ্যাওয়ার্ড লাভ করে।
ফাতিহা আয়াত বিখ্যাত গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার ও বিবৃতি দিয়েছে। নিজেও প্রচুর বিখ্যাত মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। সমসাময়িক বিষয় এবং মুসলিম বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে সব সময় সরব থাকে এই পরিবেশবাদী হিজাবিকন্যা।
ফাতিহা চায় বড় হয়ে এমন কিছু করে বিশ্বসভ্যতায় অবদান রাখতে, যেন আর একটি শিশুও ক্ষুধাকাতর দিন না কাটায়। আর যদি জেনেটিক সায়েন্টিস্ট হই, বিভিন্ন খাবারের ডিএনএ প্রোফাইল আবিষ্কার করে সেগুলোকে শিশুদের জন্য আরও বেশি পুষ্টিকর করতে চাই।