যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) সিনিয়র ড্রাইভার মো: মফিজুর রহমান নিজের শরীরে পেট্রোল ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। এরপর গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তার শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে। এদিকে তার আত্মহত্যার চেষ্টার পেছনে পরিবহন প্রশাসকের অসৌজন্যমূলক আচরণকে দায়ী করে যবিপ্রবি রেজিস্ট্রার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে যবিপ্রবি কর্মচারী সমিতি।
অভিযোগে বলা হয়েছে, পরিবহন দপ্তরের পরিবহন প্রশাসক প্রফেসর ড. জাফিরুল ইসলাম যোগদান করার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবহন দপ্তরের কর্মরত ড্রাইভার-হেলপারদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। তেল মাপা কমিটি কর্তৃক মাইলেজ নির্ধারণ করে দেওয়ার পরেও পরিবহন প্রশাসক বিভিন্ন সময় কর্মরত ড্রাইভার-হেলপারদের তেল চোর বলতেন।
এমনকি তারা মসজিদে নামাজ পড়তে গেলেও বলেন, তোরা তো তেল চোর, তোদের নামাজ পড়ে কি হবে? এভাবে তাদেরকে বিভিন্নভাবে হেয় প্রতিপন্ন করেন। প্রত্যেক ড্রাইভার-হেলপারদের সঙ্গে তুই-তোকারিসহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। তার ব্যক্তিগত কাজে গাড়ি ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিবহন দপ্তরের ড্রাইভার-মেকানিক-হেলপার ব্যবহার করেন।
এছাড়া একজন সিনিয়র ড্রাইভারকে বিনা অপরাধে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় সিনিয়র ড্রাইভার মফিজুর রহমানকে অফিসের দায়িত্ব দেওয়া হলে তিনি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন এবং অপমানিত হওয়ায় রাতে গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করতে চেষ্টা করেন। মফিজুর বেঁচে গেলেও এখন ঢাকা মেডিকেলে (শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট) মৃত্যু শয্যায়।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, অগ্নিদগ্ধ মফিজুর হাসপাতালে যাওয়ার সময় তার স্ত্রীকে বলেন, আমার যদি কিছু হয় তুমি যানবাহন কর্মকর্তা ও পরিবহন প্রশাসকের নামে মামলা করবে।
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসক প্রফেসর ড. জাফিরুল ইসলাম বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ করা হয়েছে তা মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। গতকাল যেটি হয়েছে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়য়ের দুটি বাস নষ্ট হয়ে পড়ে থাকায় দুইজন ড্রাইভার এমনিতে বসে ছিলেন। অফিসে কোনো পিওন না থাকায় উপাচার্য মহোদয়ের নির্দেশে তাদের একজনকে অফিসের কাজের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল এবং এটা নিয়ে চিঠিও দেওয়া হয়। ব্যক্তিগতভাবে ড্রাইভারদের সঙ্গে আমার খারাপ সম্পর্ক নেই। তিনি (মফিজুর রহমান) এমনিতেই পারিবারিক সমস্যার মধ্যে ছিলেন। কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হেলপারের স্ত্রীকে পালিয়ে বিয়ে করেছেন। পারিবারিক কারণে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করে থাকতে পারেন। তার আত্মহত্যার চেষ্টার পেছনে আমি কোনোভাবে দায়ী নই।
ড্রাইভারদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, তেল চুরি, পাইপ চুরিসহ নানা অপকর্ম না করতে পারায় কিছু ড্রাইভারদের ব্যক্তিগত সমস্যা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমারা কয়েকজনকে এই রকম অপকর্মের প্রমাণসহ ধরেছি এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের কাজ চলমান। হতে পারে এই কারণে ব্যক্তিগত আক্রোশের ফলে আমার নামে এমন অভিযোগ করেছে তারা।
এ বিষয়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং তার চিকিৎসার জন্য খরচ প্রয়োজন হলে আমরা তাকে সহযোগিতা করব।
মফিজুরের আত্মহত্যার চেষ্টার বিষয়ে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে মফিজুরের সহকর্মীদের থেকে জানা যায়, তিনি বেশ কয়েকদিন যাবত পারিবারিক সমস্যার মধ্যে ছিলেন।