একাধিক শিশু অপহরণের ঘটনায় দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তারা রাজধানীতে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ফ্ল্যাট বাসায় সাবলেট ভাড়া নিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে পাশাপাশি পরিবারের সঙ্গে সুন্দর একটা সম্পর্ক গড়ে তোলেন। পরিচয় গোপন রেখে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে শিশুদের অপহরণ করেন। পরে সেই পরিবারের কাছে বিপুল পরিমাণ মুক্তিপণ দাবি করেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মোস্তফা কামাল ওরফে উজ্জ্বল ওরফে জুয়েল রানা (৩১) ও তার স্ত্রী প্রমি আক্তার (২৫)। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার শিমরাইল সাতপাড়া এলাকার বাসিন্দা তারা। গত বুধবার ভোর রাতে কসবা এলাকা থেকে মোস্তফাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে মোস্তফার স্ত্রী প্রমিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আজ শনিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন ডিবির মিরপুর বিভাগের পল্লবী জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (এডিসি) রাশেদ হাসান। তিনি বলেন, ২০২৩ সালের ১৮ নভেম্বর রাজধানীর মিরপুরের পল্লবী এলাকায় একই কৌশলে মাদরাসা পড়ুয়া এক শিশুকে অপহরণের ঘটনায় দায়ের করা মামলা তদন্তে নেমে এই দম্পতির সন্ধান পাই। প্রায় তিন মাসের চেষ্টায় গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হার মেনে তারা দুজনেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। এই অপহরণকারী স্বামী-স্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে আসছিলেন। তাদের অপহরণের হাত থেকে রক্ষা পায়নি পরিবারের সদস্যরাও।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এডিসি রাশেদ হাসান জানান, অপহরণ চক্রের মাস্টারমাইন্ড মোস্তফা কামাল ও তার স্ত্রী প্রমি মিলে দীর্ঘ দিন ধরে অপহরণ করে আসছিলেন। তারা বিভিন্নভাবে মানুষের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে আবার কখনো ফ্ল্যাট বাসায় সাবলেট হিসেবে উঠে টার্গেট করা শিশুদের অপহরণ করেন। এমনকি তাদের অপহরণের তালিকায় পরিবারের সদস্যরাও আছে। এ ছাড়া মোস্তফার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগও রয়েছে।
এডিসি রাশেদ বলেন, মিরপুরের পল্লবী থানার সেকশন ৭ নম্বরে ইয়াসিনের পরিবার একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকে। এই ঘটনার ৫ মাস আগে মোস্তফা কামাল ও প্রমি সাবলেট ভাড়ায় ওঠেন। তারা আগে থেকে টার্গেট করে বাসা ভাড়া নেন। এই সময়ে পরিবারটির সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে অপহরণ পরিকল্পনা সাজান। গত বছরের ২৮ নভেম্বর খেলনা কিনে দেওয়ার কথা বলে শিশু ইয়াসিন আরাফাতকে অপহরণ করেন। এরপর রাজধানীর ভাটারা, বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন এলাকায় স্থান পরিবর্তন করেন তারা। অপহরণের পুরো প্রক্রিয়ায় মোস্তফাকে সহযোগিতা করে তার স্ত্রী প্রমি। অপহরণের পর তারা ভাটারা এলাকার একটি বস্তিতে বাসা ভাড়া নিয়ে অবস্থান করছিলেন। এই সময় নানা কৌশলে শিশুটিকে তাদের সঙ্গে রাখেন। আর অন্য দিকে শিশু ইয়াসিনের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে হুমকি ধমকি দিয়ে ১ লাখ ১৭ হাজার টাকা আদায় করেন। তবে টাকা আদায় করলেও শিশু ইয়াসিনকে ফেরত দেননি অপহরণকারীরা। পরে মামলা হলে তাদের গ্রেপ্তারে মাঠে নামে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে পুলিশের তৎপরতা টের পেয়ে রাস্তায় শিশুটিকে ফেলে পালিয়ে যায় এই দম্পত্তি।