সুনামগঞ্জের হাওরগুলোতে চলছে ধান কাটা ও মাড়াই করে শুকনো ধান গোলায় তোলার মৌসুম। এ কারণে জেলার প্রায় সকল হাওরের পাশে খলা (ধান শুকানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থান) তৈরি করা হয়েছে। সেখানে গৃহস্থরা ধান এনে জমা করে গোলায় নেওয়ার জন্য এই স্থানে ধান শুকান। কিন্ত ধান শুকানো ও গোলায় তুলতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় বৃষ্টি।
সিলেট অঞ্চলে অন্য বিভাগের তুলনায় এমনিতেই বৃষ্টির পরিমাণ বেশি। যায় ফলে অন্য বছর মার্চ ও এপ্রিল মাসে মুষলধারে বৃষ্টি হলে বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যেত ফসল অথবা অতি বৃষ্টি বা শিলা বৃষ্টির কারণে নষ্ট হয়ে যেত সোনালি ফসল। কিন্তু কয়েক বছর পর এবার আর বৃষ্টি বা বন্যা আঘাত হানেনি হাওর অঞ্চলে। তাই খুশি মনে ফসল ঘরে তুলছেন কৃষকরা।
কিন্তু গত দুই দিন থেমে থেমে সামান্য বৃষ্টি হয়েছে। এতেই দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কৃষকের মনে। কারণ বৃষ্টি হলে ধান শুকানো যাবে না। আবার কয়েক দিন ধান স্তুপ করে রাখলে ধানে ঘেরা (চারা গজিয়ে যায়) চলে আসে। এতে চাল নষ্ট হয়ে যায়। তাই সুনামগঞ্জের তথা পুরো হাওর অঞ্চলের কৃষকরা এই তীব্র গরমের মধ্যেও চান না বৃষ্টি। তারা এখন আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছেন যেন আরও ১০ থেকে ১৫ দিন যেন পুরোপুরি রোধ থাকে।
জানা যায়, আগামী ৩ মে থেকে সিলেট অঞ্চলে ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, আশা করা যাচ্ছে আগামী ৩ মের মধ্যেই ধান কাটা শেষ হবে।
তবে কৃষকরা বলছেন তার ঠিক উল্টো। ৩ মের মধ্যে ধান কাটা সম্ভব না। তারা তো আগে বলেছিলেন ৫ মের কথা, এখন আরও দুই দিন কমিয়ে দিলেন তাদের সুবিধা অনুযায়ী।
তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওরের গৃহস্থ আওয়াল মিয়া জানান, এ বছর ধানের ফলন খুব ভালো হয়েছে। আবহাওয়াও অনুকূলে ছিল। দুই দিন দিনের বেলা ও রাতে কিছু বৃষ্টি হয়েছে। আজকে আবার বৃষ্টি হয়নি। তাই খলায় ভালো করে ধান শুকাতে পারছি। এখন একটাই চাওয়া গরম থাকুক, বৃষ্টি যেন না হয়।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খড়চার হাওরের কৃষক মনফর আলী বলেন, আমরা এবার অনেক খুশি ধানের ফলন ভালো হওয়ায়। অন্যবার বন্যা-বৃষ্টির চোখ রাঙানি থাকত। কিন্ত এবার কিছুই নেই। আবহাওয়া আমাদের পক্ষে। এখন গরম লাগছে কিন্তু এটা আমাদের ধানের জন্য ভালো। ধানগুলো পরিপূর্ণ শুকিয়ে গোলায় তুলতে পারব।
সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলার ছোট-বড় ১৩৭টি হাওরে এবার ২ লাখ ২৩ হাজার ৪০৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১৩ লাখ ৭০ হাজার ২০০ মেট্রিক টন। এবার ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা পারভীন দেশ রূপান্তরকে জানান, আমি সুনামগঞ্জের একদম সীমান্তবর্তী উপজেলা তাহিরপুরে কাজ করছি। প্রথম থেকেই কৃষকদের ধান চাষের ব্যাপারে খোঁজ রাখছি। সার, বীজে যেন কোনো কারসাজি না হয় সে ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন খুবই সর্তক ছিল। এখন যেন বৃষ্টি না হয় সেই কামনা করছি। আর কয়েক দিনের মধ্যে ধান সকল কৃষকের গোলায় উঠে যাবে। পরে হাওরে পানি এলে বা বৃষ্টি হলে কোনো সমস্যা হবে না।
সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম দেশ রূপান্তরকে জানান, প্রায় ৭৩ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে হাওরের ধান কাটা মোটামুটি শেষ হয়ে যাবে। ধান কাটায় কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করছে কৃষিবিভাগ।