যাত্রী পরিবহন সক্ষমতা বাড়াতে ব্রডগেজ লাইনের জন্য ভারত থেকে রেলের ২০০টি আধুনিক যাত্রীবাহী কোচ কেনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। আগামী ২০২৬ সালের শুরু থেকে পর্যায়ক্রমে এসব কোচ দেশে এসে পৌঁছাবে বলে আশা করছেন রেলওয়ে কর্মকর্তারা।
গতকাল সোমবার রাজধানীর রেলভবনে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান আরআইটিইএস লিমিটেডের সঙ্গে এ-সংক্রান্ত একটি চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
রেলওয়ে বলছে, বগিগুলো হবে স্টেইনলেস স্টিলের, দ্রুতগতিসম্পন্ন, বগির ছাদে এসি থাকবে, অটোমেটিক এয়ার ব্রেকপদ্ধতি ও পরিবেশবান্ধব হবে। এই বগিগুলো পরে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনগুলোর সঙ্গে যুক্ত করা হবে।
চুক্তি অনুযায়ী সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে ২০ মাসের পর থেকে বগি দেওয়া শুরু হবে, যা চলবে ৩৬ মাস পর্যন্ত। অর্থাৎ ১৬ মাসের মধ্যে রেলওয়ে এই বগিগুলো পাবে।
বাংলাদেশ সরকার ও ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (ইআইবি) অর্থায়নে এসব কোচ কিনতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২৯৮ কোটি ৫৮ লাখ ৭৭ হাজার ১৩৯ টাকা (ডলারের বিনিময়মূল্য ১১৬ টাকা ৭১ পয়সা হিসেবে)। অর্থাৎ গড়ে প্রতি বগির দাম পড়বে ৬ কোটি ৪৯ টাকা।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রেলপথমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম বলেন, ‘চুক্তিতে ক্যারেজ (যাত্রীবাহী কোচ) কবে দেওয়া হবে সে সময় নেই। একটা সময় নির্ধারণ করা হলে আমাদের সুবিধা হবে। সে অনুযায়ী আমরা পরিকল্পনা করতে পারি। আগামী দুই মাসের মধ্যে যদি দুই সেট ক্যারেজ দেওয়া যায়, তবে সেটা আমাদের জন্য ভালো হবে। বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে নিলে হবে।’
তিনি বলেন, ‘রেলের কর্মকর্তারা সেøা। এটা আমার জন্য দুঃখজনক। তারা ভাবে এটা পাঁচ থেকে ছয় মাস লাগবে। আমাদের আরও বগি লাগবে।’
রেল সচিব হুমায়ুন কবীর বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের দক্ষিণ অংশের সঙ্গে রেলের সংযোগ স্থাপন হয়েছে। এতে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণের জেলাগুলোর যোগাযোগ বাড়ছে। এর ফলে এসব প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ রেল যোগাযোগকে ত্বরান্বিত করবে।
রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, রেলের লক্ষ্য হচ্ছে যোগাযোগ পরিধি বাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রেল সংযোগ স্থাপন করা এবং যাত্রীসেবা দেওয়া। আর এই প্রকল্পের মাধ্যমে সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে অনেক সহায়ক হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আরআইটিইএস লিমিটেডের চেয়ারম্যান রাহুল মিত্তাল, ভারতীয় রেলওয়ের প্রোডাকশন ইউনিটের অতিরিক্ত সদস্য সঞ্জয় কুমার পংকজ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের হেড অব করপোরেশন মিচেল ক্রেজা প্রমুখ।
সারা দেশে রেলের নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে পড়লেও যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে রেলওয়ে পিছিয়ে রয়েছে বলে তাদের নিজেদের নথিতেই স্বীকার করেছে। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বাংলাদেশে রেলপথে যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে প্রত্যাশা কর্মকর্তাদের।
এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ইতিমধ্যে পদ্মা রেলসেতু চালু হয়েছে। খুলনার সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগের কাজও প্রায় শেষের পথে। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণের কাজও চলছে দ্রুতগতিতে। প্রকল্প দুটি পরিপূর্ণভাবে শেষ হলে, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যাত্রী বহনের সুবিধার্থে সাহায্য করবে।