মিলি ম্যাম ক্লাসে এলেন। সবাই দাঁড়াল। বলল শুভ সকাল ম্যাম!
মিলি ম্যাম বললেন শুভ সকাল! সবাই বসো! মিলি ম্যাম সব সময়ই হাসিখুশি থাকেন। আজ যেন একটু বেশি হাসিখুশি ও ফুরফুরে মেজাজে আছেন।
মিলি ম্যাম বললেন তোমরা কি পড়া শিখেছো?
সবাই গলা ছেড়ে বলল জি ম্যাম।
কী যেন পড়া ছিল?
অঞ্জলি দাঁড়িয়ে বলল কবিতা সকাল বেলার পাখি।
কবিতাটা যেন কে লিখেছেন?
কাজী নজরুল ইসলাম।
মিলি ম্যাম বললেন তোমরা সবাই খুব ভালো। প্রতিদিন পড়া শেখো। আমরা কিন্তু এত ভালো ছিলাম না। নানা অজুহাতে মাঝে মাঝে পড়া করতাম না। আজ তাহলে আমরা একটু গল্প করি।
গল্প! সবার চোখে-মুখে আনন্দ খেলে গেল। মিলি ম্যাম বললেন বলো তো আমাদের জাতীয় কবি কে? অঞ্জলি বলল কাজী নজরুল ইসলাম।
অঞ্জলিকে দেখে কাজী নজরুল ইসলামের জীবনের একটা ঘটনা মনে এসে গেল। মানে ‘অঞ্জলি’ নামটার কারণে।
সবাই অবাক চোখে তাকালো অঞ্জলির মুখে। ওর নামের কারণে কাজী নজরুল ইসলামের জীবনের কী গল্প এসে যেতে পারে? মিলি ম্যাম বললেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৯২১ সালে কুমিল্লায় বেড়াতে গিয়ে উঠেছিলেন ইন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের বাড়িতে। ইন্দ্র কুমারের মেয়ের নাম ছিল অঞ্জলি। সে ছিল আমাদের অঞ্জলির মতোই মিষ্টি। নজরুল একদিন দেখলেন অঞ্জলি একটি গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ওপরে তাকিয়ে কার সঙ্গে যেন কথা বলছে। নজরুল গিয়ে দেখলেন মেয়েটি পেয়ারাগাছের কাঠবিড়ালির সঙ্গে কথা বলছে। আর সে থেকে তিনি লিখে ফেললেন তার কালজয়ী কবিতা খুকী ও কাঠবিড়ালি। মজার না? কবি-লেখকরা যেকোনো ঘটনা থেকেই কত সুন্দর কিছু লিখে ফেলতে পারেন।
মিলি ম্যাম বললেন, বড় মানুষদের সম্পর্কে জানলে তাদের জীবন থেকে অনেক কিছু শেখা যায়। আচ্ছা কেউ কি জানো কাজী নজরুল ইসলামকে ছোটবেলায় আদর করে কী নামে ডাকা হতো?
তপু বলল দুখু মিয়া।
তোমরা তো অনেক কিছু জানো দেখছি। কাজী নজরুল ইসলামের শৈশবটা অনেক কষ্টের ছিল। আট বছর বয়সে বাবা মারা গিয়েছিলেন। দারিদ্র্যের কারণে অর্থ উপার্জনে নামতে হয়। মক্তবে শিক্ষকতা, লেটো গান, রুটির দোকানে চাকরি করেছেন। এত পরিশ্রমের মাঝেও ফুরসত পেলেই বসে যেতেন কবিতা লিখতে, গান করতে। দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় স্কুল পালিয়ে যুদ্ধে চলে যান। ব্রিটিশদের পক্ষে জার্মানির সঙ্গে যুদ্ধ করেন। দক্ষতা ও মেধার বলে সাধারণ সৈনিক থেকে দ্রুতই হাবিলদার পদে পদোন্নতি পান। সেখানেও তিনি অবসরে গান-কবিতা লিখতেন, গান গাইতেন। যুদ্ধ থেকে ফিরে তিনি দেশের স্বাধীনতার জন্য কলমযুদ্ধ শুরু করেন। এর জন্য ব্রিটিশ সরকার তাকে জেলে বন্দি করে। কিন্তু দমাতে পারেনি।
মিলি ম্যাম ঘড়ি দেখলেন। একটু পরেই ঘণ্টা পড়ে যাবে। তার মানে গল্পে গল্পে অনেকটা সময় চলে গেছে। কিন্তু গল্প তো এখনো অনেক বাকি! মিলি ম্যাম বিমর্ষ কণ্ঠে বললেন কিন্তু কবি সারাজীবন লিখতে পারেননি। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন, বোধ শক্তিও। বাকি জীবন স্তব্ধ হয়েই কাটিয়েছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। তাকে জাতীয় কবির মর্যাদা দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের পাশে তার সমাধি আছে। গেলে দেখে এসো। তার সম্মানে দুটো ফুল রেখে এসো সমাধিতে।
এসো আমরা সবাই মিলে কবিতাটা পাঠ করি, ভোর হলো দোর খোল/খুকুমণি ওঠ রে/ঐ ডাকে জুঁই শাখে/ফুলখুকি ছোট রে।......
ঢং করে ঘণ্টা বেজে উঠল।