প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় আমরাই একমাত্র জাতি যারা অনেক রক্তের বিনিময়ে দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধকে চিরতরে দমিয়ে দিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালে এ দেশে বর্বর ও নির্মম গণহত্যা চালায়। পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোনো দেশে এত অল্প সময়ে এরকম কোনো গণহত্যা ঘটেনি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এ নারকীয় গণহত্যার এখনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া যায়নি। বিলম্ব হলেও একাত্তরের গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ের এখনই উপযুক্ত সময় এবং সবার সম্মিলিত প্রয়াস থাকলে এ গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় হবেই।
গতকাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়ার আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি’ শীর্ষক এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন (ইউসিএল) এবং সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান (কার্জন) এবং ইউসিএলের সহযোগী অধ্যাপক ড. বায়েস আহমেদ বক্তব্য রাখেন।
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান আরও বলেন, বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সংঘটিত গণহত্যার চিত্র বিশ^বাসীর কাছে তুলে ধরতে হবে। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংস হত্যার পর এ দেশে যে অগণতান্ত্রিক সরকারগুলো এসেছে, তারা যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসিত করেছে এবং গণহত্যার ইতিহাস মুছে দিতে চেয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
তিনি বলেন, ৯ মাসে ৩০ লাখ শহীদ হওয়ার নজির সারা পৃথিবীতে নেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে চার বছরে ৬০ লাখ মারা গেছে। মুক্তিযুদ্ধে দৈনিক গড়ে ১১ হাজার হত্যা করা হয়েছে। আধুনিক ইতিহাসে এটা সর্বোচ্চ রেকর্ড। ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশনের এমন কোনো ধারা নেই, যা পাকিস্তানি বাহিনী সংঘটিত করেনি। অথচ স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও আমাদের গণহত্যার স্বীকৃতির দাবি জানাতে হচ্ছে। আমরা কেন এত পিছিয়ে পড়লাম সেটির কারণ খুঁজে বের করতে হবে। স্বাধীনতার বিরোধিতাকারীরা কীভাবে এ দেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয়েছে সেটি জানতে হবে। তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছে। এখনো সেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, গণহত্যার স্বীকৃতির জন্য একটা শক্তিশালী ও বিস্তৃত ডেটাবেজ প্রয়োজন। যেমন ৭১-এর অনেক বদ্ধভূমি আমাদের অজানা রয়েছে। সেগুলো আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। ডকুমেন্টেশন করতে হবে। সেজন্য প্রত্যেকেই যার যার অবস্থান থেকে অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে জেনোসাইড স্টাডিজকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তাহলেই তরুণদের আগ্রহ সৃষ্টি হবে। তারা এ বিষয়ে গবেষণা করতে এগিয়ে আসবে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংস গণহত্যার চিত্র তুলে ধরে বলেন, এ ন্যক্কারজনক গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে হবে। এজন্য ব্রিটিশ একাডেমির অর্থায়নে পরিচালিত একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সবার সহযোগিতায় বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যা সম্পর্কে পরিপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত নিয়ে একটি সমৃদ্ধ ডেটাবেজ তৈরি করা হবে। এই ডেটাবেজ বিশ্ববাসীর কাছে উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে, যাতে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ অভিযানের নামে পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনী পরিচালিত নারকীয় গণহত্যা সম্পর্কে সবাই জানতে পারে।