রাজধানীর গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে বেশ ঘটা করে চালু হয়েছিল ই-টিকেটিং ব্যবস্থা। শুরুতে এ নিয়ে যাত্রী থেকে শুরু করে বাস মালিকদেরও বেশ আগ্রহ ছিল। কিন্তু বছর না গড়াতেই এটি মাত্র কয়েকটি বাসে নেমে আসে। এখন ২১ মাস পর কোনো বাসেই এ পদ্ধতি নেই বললেই চলে।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে রাজধানীতে ই-টিকেটিং ব্যবস্থা চালু করেছিল ঢাকা সড়ক পরিবহন বাস মালিক সমিতি। ধাপে ধাপে ৪০টি রুটে এ পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ই-টিকেটিং ব্যবস্থা চালুর পর অনেক রুটের বাসেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ হয়েছিল। কিন্তু এ পদ্ধতি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আবারও সড়কে শুরু হয়েছে ‘ভাড়া নৈরাজ্য’।
সরেজমিনে গত রবিবার রাজধানীর সদরঘাট, গুলিস্তান, মগবাজার, শাহবাগ, মিরপুরসহ বেশ কয়েকটি রুটে ঘুরে দেখা গেছে, কোনো বাসেই নেই ই-টিকেটিং ব্যবস্থা। এমনকি সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতাদের গাড়িতেও এর দেখা মেলেনি। সব রুটেই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী রিফাত হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অফিসের কাজে বাংলামোটর থেকে বিহঙ্গ পরিবহনে আগারগাঁও গিয়েছিলাম। কনডাক্টরকে ৫০ টাকার নোট দিলে আমার কাছে থেকে ২০ টাকা ভাড়া নেন। অথচ এ পথে বিআরটিএর ভাড়া চার্টে ১২ টাকার মতো নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু আমার কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয়। কনডাক্টর হেলপারকে ই-টিকেটিংয়ে ভাড়া কাটার কথা বললে আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন।’
আফরোজা মীম নামের আরেক যাত্রী বলেন, ‘সন্ধার পর ২০ টাকার ভাড়া ৪০ টাকা হয়ে যায়। ই-টিকেটিংয়ের মাধ্যমে ভাড়া কাটার সময় নির্ধারিত ভাড়া দিয়েই যাতায়াত করা যেত। কিন্তু যখন থেকে ই-টিকেটিং চলে (বন্ধ) গেল ফের সব রুটেই ভাড়া নৈরাজ্য আবার শুরু হলো। সরকারের উচিত গণপরিবহনের এসব ভাড়া নৈরাজ্য ঠেকাতে কঠোর মনিটরিং করা।’
ই-টিকেটিংয়ে কেন ভাড়া নেওয়া হয় না জানতে চাইলে ‘তানিজল পরিবহনের’ এক চালকের সহকারী বলেন, ‘ই-টিকেটিংয়ে কেউ চালায় না। তাহলে আমরা কেন চালাব? আগে মেশিন দিয়ে ভাড়া কাটা হতো। এখন আর ই-টিকেটিং নেই। তাই হাতে হাতে ভাড়া কাটা হয়।’
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সড়কে চাঁদাবাজি বহাল রেখে ই-টিকেটিং ব্যবস্থা থেকে কোনো সুফল পাওয়া যাবে না। ফলে এখন আর ই-টিকেটিং নেই সড়কে। তাছাড়া গণপরিবহনে আরও অনেক সমস্যা আছে। সেগুলোর এখনো সুরাহা হয়নি। দিনের পর দিন এ সমস্যাগুলো সড়কে রয়েই গেছে। আর যাত্রীদের জিম্মি করে চলছে ভাড়া নৈরাজ্য।’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. মো. হাদিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সড়কের বাদবাকি বিশৃঙ্খলার সমাধান না করে শুধু ই-টিকেটিং ব্যবস্থা রেখে কোনো সুফল মিলবে না। আর মনিটরিংয়ের অভাবে এই সুন্দর সিস্টেমটিও এখন আর সড়কে দেখা যায় না। তাছাড়া গণপরিবহনের কাঠামোগত অনেক সমস্যা আছে। তাই এসব বিষয়ের দিকেও নজর দিতে হবে।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা চাই সড়কে ভাড়া নৈরাজ্য ঠেকাতে, যার জন্য ই-টিকেটিং সিস্টেম চালু করা। আমাদের সমিতি থেকে একটি টিম কাজ করে। কিছু জায়গায় তো চলছে, যেগুলো বন্ধ আছে সে সব জায়গায় মনিটরিং আরও বাড়ানো হবে।’