বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

ঈদে যানজট এড়াতে বাড়ছে আকাশপ্রীতি  

আপডেট : ১৫ জুন ২০২৪, ১০:৫২ পিএম

প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানী ঢাকা ছেড়ে বাড়ির পথে যাত্রা শুরু হয়েছে। রোজার ঈদ ও কোরবানির ঈদে রাজধানী ছেড়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা এতটাই বেশি যে এই সময়টাতে ঢাকার চিত্রই বদলে যায়। ঢাকার ব্যস্ত রাস্তা ফাঁকা হয়ে যায়, বছরে এই দুটা সময়েই হাফ ছেড়ে নিশ্বাস নিতে পারে ২ কোটি মানুষের শহর ঢাকা।

বিপরীতে এই সময়টাতে ঢাকার যানজট ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে। ২ ঘণ্টার রাস্তা ৫ ঘণ্টায়ও ফুরাতে চায় না। সড়কে তৈরী হয় যানবাহনের দীর্ঘ সারি। গরম, উত্তাপ আর যাত্রাপথের দীর্ঘ যানজটের ফলে দুর্বিষহ হয়ে উঠে মানুষের জীবন। শুধু তাই নয় ঈদ যাত্রায় বাসের টিকিট পাওয়া আরেক ভোগান্তির নাম। দীর্ঘ অপেক্ষার পর টিকিট পেলেও নির্দিষ্ট সময়ে বাস না ছাড়ার অভিযোগ তো চির পরিচিত। এরসঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনার আতঙ্ক তো রয়েছেই।

অপরদিকে যাত্রাপথের নিরাপদ বাহন হিসেবে পরিচিত রেলওয়ের টিকিট পাওয়া তো সোনার হরিণ। অনলাইনে টিকিট ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা শেষ হয়ে যায়। কম টাকায় যাত্রার আশায় মানুষের মিছিল কমলাপুর রেলস্টেশনে এমন হয় যে ট্রেনের ছাদেও পা ফেলার জায়গা নেই।

তবে যাদের আর্থিক অবস্থা তুলনামূলক ভালো, তারা এসব ঝক্কি ঝামেলা এড়াতে শরণাপন্ন হচ্ছেন আকাশপথের। এখানে টিকিট পেতে লাইনে দাঁড়াতে হয় না, যানজটের ভয় নেই ফলে অবস্থাসম্পন্ন মানুষের দিনে দিনে আকাশপ্রীতি বাড়ছেই। বাস ট্রেনের চেয়ে আকাশপথে খরচ কয়েকগুণ বেশি হলেও যাত্রাপথে শান্তি পেতেও ও নিরাপদে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঈদের এই সময়টাতে ভিড় জমেছে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সে। ঈদ উপলক্ষ্যে নিয়মিত টিকিট শেষ হয়ে যাওয়ায় এয়ারলাইন্সগুলো চালু করেছে অতিরিক্ত ফ্লাইট। এরপরও মানুষের চাহিদার তুলনায় তা পর্যাপ্ত নয় বলে মনে হচ্ছে।

রাজধানীর একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আবুল কাশেমের বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায়। ঈদ যাত্রায় তিনিও এবার রওনা হয়েছেন বেসরকারি একটি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে সন্ধ্যার ফ্লাইটে সিলেট এলাম। এসি বাসের তুলনায় খরচ বেশি হয়েছে কিন্তু যাত্রাপথের দীর্ঘ ক্লান্তি এড়িয়ে বাড়ি পৌঁছাতে পেরেছি এটাই স্বস্তি। মানুষ টাকা উপার্জন করে শান্তির জন্য, সুখের জন্য।

তিনি বলেন, রোজার ঈদে বাসে করে সিলেট গিয়েছিলাম। একদিকে যানজট ও রাস্তার বেহাল দশা অন্যদিকে গাড়িতে বসতে বসতে পা ও কোমরের ব্যথা। আমার ছোট ছেলেটাতো অসুস্থই হয়ে গিয়েছিল। ফলে আকাশপথকেই বেছে নিতে হলো।

উওরের জেলা নীলফামারীর ফরিদা বেগম ঢাকার একটি বেসরকারী হাসপাতালের চিকিৎসক। তিনিও আকাশপথকেই বেছে নিয়েছেন ঈদ যাত্রায়। কেন আকাশপথেই যাত্রা এমন প্রশ্নের জবাবে এই চিকিৎসক দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত ঈদের সময় ঢাকা থেকে বাড়ি পৌঁছাতেই সময় লেগেছিল ১৪ ঘণ্টা। এবার মাত্র ৫ দিনের ছুটি ম্যানেজ হয়েছে। এখন গাড়িতে যেতে ও আসতেই যদি ৩০ ঘণ্টা ও যাত্রাপথেই ভ্রমণ ক্লান্তি দূর করতে আরও অনেক ঘণ্টা চলে যায় তাহলে ঈদের আনন্দ কীভাবে উপভোগ করি। ফলে আকাশপথকেই বেছে নিতে হয়েছে।

তবে টিকিটের অতিরিক্ত দামের কারণে হতাশ গণমাধ্যমকর্মী দুলাল হোসেন। তিনি ঈদের পরদিন পরিবার নিয়ে কক্সবাজার ঘুরতে যেতে চান। দুলাল হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমি ও আমার স্ত্রী দুজনই চাকরিজীবী ফলে একসঙ্গে ছুটি পাওয়া কষ্টকর। আবার মেয়েটার স্কুলের ছুটিও মেলে না। এবার যেহেতু ঈদ উপলক্ষে সবাই একসঙ্গে ঈদের ছুটি পেয়েছি তাই কক্সবাজার ঘুরতে যাব। কিন্তু অনলাইনে ৩ জনের ভাড়া দেখাচ্ছে ২৬ হাজার টাকা। এত ভাড়ায় যাওয়া তো কষ্টকর।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত