রূপগঞ্জের গাজী টায়ার ফ্যাক্টরির ছয়তলা ভবনের ভেতরে আটকাপড়া ব্যক্তিরা মোবাইলের টর্চ লাইট জ্বালিয়ে ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত তাদের বাঁচাতে সাহায্যের জন্য আবেদন করেছিলেন বলে জানিয়েছেন কারখানার পাশে থাকা স্থানীয়রা।
কারখানাটির পাশে বসবাসকারী রূপসী এলাকার রাজু আহমেদ বলেন, ‘আগুন লাগার পর রাত ১২টা পর্যন্ত মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে ভেতরে আটকাপড়া লোকজন তাদের বাঁচানোর জন্য সাহায্য চেয়েছিল। আগুন ছড়িয়ে পড়ার কারণে আমরা তাদের সাহায্য করতে পারিনি। ১২টার পর তাদের আর সাড়া শব্দ পাওয়া যায়নি আর কোনো মোবাইলের টর্চ জ্বলতে দেখা যায়নি।’
এখন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের কাছে ১৭৬ জন নিখোঁজ ব্যক্তির তালিকা দিয়েছেন স্বজনরা। বেশির ভাগ নিখোঁজের বাড়ি উপজেলার মিকুলী, রূপসী কাজিপাড়া, ছাতিয়ান, মুগরাকুল, কাহিনা, বরপা, মাসাবো, তারাব, বরাবো, চনপাড়া, মুড়াপাড়াসহ আশপাশের এলাকায়।
ভবনটির নিচতলার শাটারের গেটটি তালাবন্ধ না করলে আগুন লাগার পরও আটকে থাকারা বেরিয়ে আসতে পারত বলে জানান মিলের শ্রমিকরা। কিন্তু একটি অস্ত্রধারী গ্রুপ গেটের শাটারে তালা দিয়ে কেমিক্যালে আগুন ধরিয়ে দেয়। আটকে পড়া ব্যক্তিরা গেটে তালা দিয়ে দেওয়া পরের তলাগুলোয় গিয়ে আশ্রয় নেন। আগুনের লেলিহান শিখা দ্রুত পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে।
স্বজনদের খোঁজে গাজী টায়ার কারখানার ভেতরে ও বাইরে স্বজনদের ভিড় জমাতে দেখা গেছে। এ ছাড়া স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠছে।
বরপা এলাকার ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমার বন্ধু আলী আসাদ, আবু সাঈদ, স্বপন খান, শাহিনসহ পাঁচজন নিখোঁজ রয়েছে। তারা কারখানার ওই ভবনে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢুকে আর বের হয়নি। মোবাইল ফোনে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কথা হয়েছে। তখন বলেছে তারা ভবনে আটকা পড়েছে। আমাদের বাঁচান। এরপর আর ফোনে পাওয়া যায়নি।’
মুড়াপাড়া এলাকার আব্দুল হাই বলেন, রাত ১১টার দিকে আমার পোলা শাকিল (১৪) বন্ধুগো লগে আইছিল মিলের লুটপাট দেহার লাইগা। এরপর থেইকা হের আর কোনো খোঁজ পাইতাছি না। মোবাইলডাও বন্ধ পাইতাছি।’ চাচা মিলন গাজী বলেন, ‘আমার ভাতিজা স্বাধীনের বাবা ছোটবেলাতেই মারা গেছে। সে এতিম ছিল। আমরাই তারে কোনো রকম দেখে রাখতাম। গতকাল রাত থেকে স্বাধীনের আর কোনো খোঁজ পাচ্ছি না।’