শরীর সুস্থ রাখতে রাতে টানা ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম যেমন জরুরি, তেমনই কোন ভঙ্গিমায় শুয়ে ঘুমাচ্ছেন, তা-ও গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই বলেন, রাতে ঘুমিয়ে উঠে সকালে সারা গা-হাত-পায়ে ব্যথা হয় অথবা ঘাড়ে এমন যন্ত্রণা হয়, যা সারা দিন ভোগায়। এসবের কারণই হয় ভুল ভঙ্গিমায় ঘুমানো। সঠিক ভঙ্গিমায় না শুলে পেশির ব্যথা যেমন ভোগাবে, তেমনই অনিদ্রাজনিত সমস্যাও দেখা দেবে। রাতে শুয়ে শ্বাসকষ্ট হয় অনেকেরই। তারও একটি অন্যতম কারণ হলো ‘সিøপ প্যাটার্ন’। ক্ষেত্র বিশেষে স্লিপ অ্যাপনিয়ার সমস্যাও কিন্তু দেখা দিতে পারে। বাঁ দিক বা ডান দিকে ফিরে দুই হাঁটু এবং দুই হাত বুকের কাছে জড়ো করে গুটিসুটি মেরে শোয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এভাবে শুলে বুকের ওপর চাপ পড়ে, রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা হয়। দিনের পর দিন এমনভাবে শুলে পিঠে, ঘাড়ে ব্যথা তো হবেই, শ্বাসের সমস্যাও হতে পারে।
উপুড় হয়ে ঘুমানোর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে মেরুদন্ডে। পেটে চাপ দিয়ে শোয়ার ফলে শরীরের পুরো ওজনটাই পেটের ওপর পড়ে। দীর্ঘদিন এমন ভঙ্গিতে ঘুমালে মেরুদন্ডের ব্যথা ভোগাতে পারে। ঘাড়ের পেশিতেও টান পড়ে। ফলে ঘাড়, পিঠ এবং কাঁধের ব্যথাতেও ভোগেন অনেকে। ত্বকের সমস্যাও দেখা দিতে পারে এমনভাবে ঘুমালে। চামড়া কুঁচকে যেতে পারে, বলিরেখা পড়তে পারে ত্বকে। চিত হয়ে শুলে দুই হাত সোজা মাথার ওপর দুপাশে করে শোয়া অথবা দুই হাত প্রসারিত করে দুই পাশে রেখে শোয়ার অভ্যাসও ঠিক নয়। এমনভাবে ঘুমালে স্লিপ অ্যাপনিয়ার সমস্যা হতে পারে। ঘুমের সময়ে শ্বাস নিতে কষ্ট হবে, নাক ডাকার সমস্যাও দেখা দেবে। যেকোনো এক পাশ ফিরে একটি পায়ের হাঁটু বুকের কাছে মুড়ে রেখে এবং দুই হাত সামনের দিকে প্রসারিত করে শোয়ার অভ্যাসও সঠিক নয়। দীর্ঘদিন এমনভাবে ঘুমালে শরীরের ভার সমানভাবে বিছানায় থাকে না। ফলে কাঁধের ওপর চাপ পড়ে। কাঁধ, ঘাড় ও কোমরের ব্যথা ভোগাতে পারে।
যেভাবে ঘুমানো উচিত
বাম পাশ ফিরে ঘুমানো শরীরের জন্য ভালো। স্বাস্থ্যের দিক থেকে দেখলে, এর অনেক উপকারিতা রয়েছে। বাঁ দিক ফিরে শুলে গ্যাস-অম্বলের সমস্যা কম হবে, অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যায় যারা ভোগেন তারা আরাম পাবেন। পাশাপাশি, পেশির ব্যথা কম হবে, হৃদ্যন্ত্রের ওপর চাপ কম পড়বে। সিøপ অ্যাপনিয়ার সমস্যা থাকলেও পাশ ফিরে শোয়া ভালো। পাশ ফিরে কাত হয়ে শুলে ঘাড়, কাঁধের ব্যথাও কমবে। সে ক্ষেত্রে দুই হাঁটু মুড়ে বুকের কাছে আনবেন না। বরং দুই পায়ের মাঝে বালিশ রাখতে পারেন। তাতে পেশির আরাম হবে। দুই হাত প্রসারিত করে নয়, কনুই ভেঙে হাত মাথার কাছে রাখতে পারেন। তাতে কাঁধের ভার সমানভাবে পড়বে। যদি চিত হয়ে শুতে হয়, তাহলে দুই পায়ের নিচে বা কোমরের নিচে বালিশ রেখে শুলে সমস্যা কম হবে।