পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের হেনস্তা ও গায়ে হাত তুলেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শেখ হাসিনা হলের আবাসিক ছাত্রীরা। সেসময় একজন সাংবাদিকের মোবাইল ফোনও কেড়ে নেন তারা।
গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে শেখ হাসিনা হল ও ভিসির বাসভবনের সামনের চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।
এদিন শেখ হাসিনার ম্যুরাল ও নৌকা প্রতীক ভাঙতে কয়েক দফায় ছাত্ররা হলের সামনে যান। কিন্তু ছাত্রীদের প্রতিরোধের মুখে তাদের সরে যেতে হয়। পরে রাত ১১টার দিকে একদল ছাত্র হাসিনার ম্যুরাল ও নৌকা প্রতীক ভাঙার চেষ্টা করলে হলের ছাত্রীরা হলের পশ্চিম দিকের গেইট ভেঙে বেরিয়ে এসে ছাত্রদের ধাওয়া করে ইট-পাথর ছুঁড়ে।
এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহের কাজ করতে থাকলে সাংবাদিকদের ওপরও চড়াও হন তারা। ছবি কিংবা ভিডিও ধারণ করতে পারবে না বলে সাংবাদিকদের ঘিরে বিভিন্ন ধরনের উচ্চবাচ্য করতে থাকেন। একজন সাংবাদিকের মোবাইল ফোনও ছিনিয়ে নেন ছাত্রীরা।
এছাড়াও ভিসির বাসভবনের সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে সাংবাদিকরা কেনো ঘটনার ছবি-ভিডিও নিচ্ছিলেন, সেজন্য ছাত্রীরা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। এমনকি তাদের মধ্যে কয়েকজন তেড়ে এসে দুইজন সাংবাদিকের গায়ে হাতও তোলেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঘটনাস্থলে উপস্থিত একজন নারী সাংবাদিকসহ সকল সাংবাদিককেই হেনস্তা করেন শেখ হাসিনা হলের ছাত্রীরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডি তাদের থামানোর চেষ্টা করলে প্রক্টরিয়াল বডির সাথেও ছাত্রীদের উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায়।
হেনস্তার শিকার নারী সাংবাদিক অনিন্দিতা সরকার প্রথা বলেন, ‘আমরা সাংবাদিক, আমরা ফোর্থ স্টেট। কেউ আমাদের ক্যামেরা অফ করার জন্য অর্ডার করতে পারে না। ছবি তোলার জন্যও অর্ডার করতে পারে না। আমরা সত্যনিষ্ঠ কাজটা করতে যাই। আজকে শেখ হাসিনা হলের মেয়েরা সাংবাদিকদের সাথে যে আচরণ করেছে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা তাদের সমস্যাটাই জানতে গিয়েছি।’
ঘটনার বিবরণ দিয়ে ঢাকা মেইলের ক্যাম্পাস প্রতিবেদক ভুক্তভোগী সাংবাদিক রেদ্ওয়ান আহমদ বলেন, ‘একদল ছাত্র রাত ১১টার দিকে শেখ হাসিনা হলের সামনে থাকা হাসিনার ম্যুরাল ও পাকা-নৌকা ভাঙতে যায়। ঘটনার খবর পেয়ে আমরা কয়েকজন ক্যাম্পাস সাংবাদিক সেখানে পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য ছুটে যাই। মেয়েরা হলের পশ্চিম দিকের গেট ভেঙে শেখ হাসিনার ম্যুরাল এবং নৌকা প্রতীক ভাঙতে বাঁধা দিয়ে ছাত্রদের ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকলে একপর্যায়ে তারা সরে যান।’
তিনি আরও বলেন, ‘এসময় আমরা ঘটনার ছবি-ভিডিও ধারণ করলে ছাত্রীরা আমাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাঁধা দেন। সাংবাদিকের হেনস্তা করে উচ্চবাচ্য করেন, গালিগালাজ করেন, ফোনও কেড়ে নেন। এমনকি ছবি-ভিডিও ধারণ করলে তারা দুইজন সাংবাদিকের গায়ে হাত তুলেন। আমরা এই ঘটনার দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার চাই। আমরা ক্যাম্পাসে স্বাধীন সাংবাদিকতা করতে চাই।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’