পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ও জেলা প্রশাসন। পর্যটনের বিকাশে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতকে আধুনিকায়নের প্রকল্প নিয়ে তা বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তুলতে বিল্ড অপারেট ট্রান্সফারের মাধ্যমে উন্নয়ন পরিকল্পনাও নিয়েছে সংস্থাটি। কিন্তু এ প্রকল্পের মধ্যেই পার্কিং স্পেস ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের এ বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধে সিডিএও আজ মঙ্গলবার গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি স্বাক্ষরিত গত ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ইজারা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৬ জানুয়ারি বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে পতেঙ্গা সি-বিচের নির্ধারিত পার্কিং এলাকা ইজারা দেওয়ার নিমিত্তে আগ্রহী দরপত্রদাতাদের কাছ থেকে নির্ধারিত ফরমে সিলমোহরযুক্ত খামে দরপত্র আহ্বান করা হচ্ছে। আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ এবং একইদিন বেলা ৩টায় দরপত্র বাক্স খোলা হবে বলে জানানো হয়।
এদিকে জেলা প্রশাসনের এই দরপত্র বিজ্ঞপ্তির প্রতিবাদ জানিয়েছে সিডিএ। এজন্য গতকাল ১৭ ফেব্রুয়ারি সিডিএ সচিব রবীন্দ্র চাকমা স্বাক্ষরিত একটি চিঠি চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়। সিডিএ কর্তৃক জিওবি ও জাইকা অর্থায়নে ‘চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড’ (পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা) প্রকল্পের আওতায় পতেঙ্গা সি-বিচসংলগ্ন বিশ^মানের পর্যটন এলাকার উন্নয়ন স্থানে জেলা প্রশাসন কর্তৃক পার্কিং এলাকায় ইজারা প্রদান প্রসঙ্গে শীর্ষক চিঠিতে বলা হয়, সিডিএ পতেঙ্গা সৈকতে প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় পর্যটন এলাকা সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি প্রকল্প নিয়েছে এবং তা একনেকে অনুমোদিত প্রকল্প। এই প্রকল্পের আওতায় সি-বিচ এলাকায় ওয়েল ওয়াল, রিটেনিং ওয়াল, সি-বিচসংলগ্ন বেড়িবাঁধের ওপর চার লেনের বাঁধ কাম সড়ক নির্মাণ, পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য স্ট্রিট লাইট, সৈকতে ওঠানামার সিঁড়িসহ অন্যান্য অবকাঠামো সুবিধা সৃষ্টি করেছে।
এতে আরও বলা হয়, সি-বিচসংলগ্ন এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এলাকা পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত রয়েছে। এ ছাড়া উন্নতমানের টয়লেট ও ইবাদতখানা নির্মাণেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু গত ১৬ ফেব্রুয়ারির চট্টগ্রামের আঞ্চলিক পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনে দেখা যায় জেলা প্রশাসন পতেঙ্গা সি-বিচ এলাকায় পার্কিংয়ের জন্য ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। আর এতে সিডিএর চলমান প্রকল্প বাধাগ্রস্ত হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিডিএর চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পতেঙ্গা সি-বিচ এলাকাকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন এলাকা হিসেবে উন্নীত করে সিডিএর প্রকল্পটি চলমান রয়েছে। তাই এ এলাকায় অন্য কোনো সংস্থা প্রকল্প নিলে সিডিএর সঙ্গে সমন্বয় করে নেওয়া প্রয়োজন।’
এ বিষয়ে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘সিডিএ হলো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা। আর বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির আওতায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন তা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবে। এই ব্যবস্থাপনা করতে গিয়েই আমরা পার্কিং ও দোকান বরাদ্দ দেওয়ার কাজ শুরু করেছি।’
কিন্তু জেলা প্রশাসনের এ কার্যক্রম নিয়ে সিডিএর বিরোধিতা রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সিডিএর সঙ্গে যদি কোনো জায়গায় বিরোধ হয়, তাহলে আমরা তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করে নেব।’
এদিকে সিডিএর আউটার রিং রোড প্রকল্পের পরিচালক ও সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতকে আধুনিকায়ন করেছি আমাদের প্রকল্পের আওতায়। এ প্রকল্পের আওতায় দুটি জোনকে আমরা বিশেষায়িত পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তুলব। এজন্য বিল্ড অপারেট ট্রান্সফার পদ্ধতিতে প্রাইভেট বিনিয়োগকারী আহ্বান করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় দুই হাজার গাড়ি পার্কিং করার জন্য দুটো পৃথক পার্কিং স্পেস নির্মাণ করা হচ্ছে। বর্তমানে রাস্তার ওপরে আট হাজার বর্গফুট এলাকায় একটি অস্থায়ী পার্কিং স্পেস আমরা নির্মাণ করেছি। এখন এই জায়গাটি জেলা প্রশাসন ইজারা বরাদ্দ দিতে চায়।’
আউটার রিং রোডের পতেঙ্গার নেভাল থেকে সাগরিকা পর্যন্ত প্রায় ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ পুরো এলাকা ঘিরে বিশাল পর্যটন স্পট গড়ে তুলেছে সিডিএ। এর মধ্যে সাত কিলোমিটার এলাকা নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে সংস্থাটি। ইতিমধ্যে এই অংশে গ্যালারি ও ওয়াকওয়ে নির্মাণেরর পর দর্শনার্থীদের ভিড় বেড়েছে।