মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

গতিহারা প্রশাসন!

আপডেট : ১০ মার্চ ২০২৫, ১২:৩২ এএম

একটি গণতান্ত্রিক দেশে বুরোক্র্যাসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে, সিভিল বুরোক্র্যাসি। সেখানে যদি অস্থিরতা থাকে, তাহলে কোনো কাজই সরকারের পক্ষে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। বিগত সরকারের পতনের পর সেই যে প্রশাসনে অস্থিরতা শুরু হয়েছে, তা এখনো চলমান। জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার সাত মাসেও প্রশাসনে গতি ফেরাতে পারেনি। প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয় থেকে শুরু করে মাঠ প্রশাসনে চলছে দায়সারা গোছের কাজ। আগের সরকারের ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের ওপর নীতিনির্ধারকদের আস্থার সংকট রয়েছে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, অন্তর্বর্তী সরকার বর্তমান প্রশাসন নিয়ে স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারছে না। যে কারণে সমাজের বিভিন্ন সেক্টরে বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে। 

প্রশাসনে গতি বাড়ানোর জন্য ২০১৫ সালে চালু করা হয়েছিল বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি বা এপিএ। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের যাবতীয় কাজের স্বাভাবিক গতি চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যে কারণে এমন পরিস্থিতিতে এপিএ-এর মতো আরও কর্মসূচি দরকার। কিন্তু গতি বাড়ানোর কর্মসূচি এপিএ নিজেই এখন গতিহারা। কর্মসূচিটি চালু রাখা হবে কি না, তা নিয়ে তীব্র মতবিরোধ রয়েছে। এক পক্ষের মন্তব্য আওয়ামী লীগ সরকারের এপিএ কর্মসূচি অর্থহীন। মন্ত্রণালয়ের কাজের জন্য অধীনস্থ দপ্তরের সঙ্গে চুক্তি করার কোনো প্রয়োজন নেই। অপর পক্ষের বক্তব্য হচ্ছে, ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো সংশোধনের পর তা চালু রাখা উচিত। সাবেক সচিব ও রেক্টর আবদুল আউয়াল মজুমদার জানাচ্ছেন ‘এপিএ প্রক্রিয়ার সঙ্গে আমি একমত নই। এসব চুক্তি করে সমাধান আসে না। এখানে কাজের চেয়ে আনুষ্ঠানিকতা বেশি। জবাবদিহি যদি না থাকে তাহলে এসব কর্মসূচি কোনো ফল দেয় না। অযোগ্য, দুর্নীতিবাজ ও দলবাজ লোক দিয়ে কাজ চালানো এক ধরনের প্রতারণা।’ আবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ জানাচ্ছেন ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, এপিএ থাকা উচিত। তবে পুরো বিষয়টিকে কীভাবে আরও যুক্তিযুক্ত করা যায়, তা দেখা হচ্ছে।’ বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ও ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলছেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এর প্রয়োজন রয়েছে। বছরের শুরুতে একটা পরিকল্পনা হয়ে যায়। পরে তা বছর জুড়ে বাস্তবায়ন করা হয়।’

বর্তমানে ঝিমিয়ে পড়া প্রশাসনে সরকারি কাজের গতি বাড়াতে হার্ডলাইনে যাচ্ছে সরকার। কাজকর্মে গাফিলতি ধরা পড়লে সংশ্লিষ্টরা পাবেন শাস্তি। দায়িত্ব থেকে সরিয়ে প্রয়োজনে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হবে। অন্যথায় করা হবে ওএসডি, দেওয়া হবে দ্বিতীয় টায়ারে থাকা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব। সেটা না হলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে কাজকর্মে গতি ফিরিয়ে আনা হবে। সরকারের নজরে এসেছে, সাম্প্রতিক সময়ে গতি নেই নথি নিষ্পত্তিতে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফাইল পড়ে থাকছে। কাজকর্মে একশ্রেণির কর্মকর্তার মধ্যে দেখা যাচ্ছে ঢিলেমি ভাব। অগ্রাধিকার ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নেও ঘটছে কালক্ষেপণ। সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি কাজে গতি কমেছে, মানুষ সরকারি সেবা কম পাচ্ছে এমন মনোভাব পোষণ করছেন একাধিক উপদেষ্টা। অযাচিত কারণে সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ঝুলে থাকছে। নানা জটিলতা তৈরি করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকেও শ্লথ করে দেওয়া হচ্ছে। বিগত সরকারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একটি অংশ চরম দলবাজি শুরু করেছে। অতি উৎসাহী কিছু সরকারি কর্মকর্তা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মতো আচরণ করেছে।

প্রশাসনের বিভিন্ন স্থানে ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগীরা দাপটের সঙ্গে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। ফলে প্রায় ১৬ বছর ধরে যারা বঞ্চিত তাদের ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে। এপিএ নিয়ে মতবিরোধের মধ্যেই এ কর্মসূচিটি থাকবে কি না তা নিয়ে ইতিমধ্যেই একাধিক বৈঠক হয়েছে। সেসব বৈঠকেও নীতিনির্ধারকরা একমত হতে পারেননি। সবকিছু বিশ্লেষণ করে বলা যায়, প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা ইচ্ছাকৃতভাবে জটিলতা তৈরি করছেন। কী করলে প্রশাসনে গতি ফিরে আসবে, তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাই ভালো জানেন। আমরা শুধু দেখতে চাই, প্রশাসন নিয়ে কোনো মহলে, কোনো ধরনের অভিযোগ নেই। ‘এপিএ’ থাকা বা না থাকা, কোনোভাবেই প্রশাসনে গতিশীলতা আনার একমাত্র উপায় হতে পারে না। সেখানে জবাবদিহির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত