দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই লক্ষ্যে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনাসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে নতুন ট্রাম্প প্রশাসন। তবে সে আলোচনায় ইউক্রেনকে অন্তর্ভুক্ত না করায় উদ্বেগের সৃষ্টি হয় কিয়েভ ও তাদের ইউরোপীয় মিত্রদের মধ্যে। তবে পরিস্থিতি নাটকীয় মোড় নেয় গত মাসের শেষ দিকে। যখন সম্ভাব্য শান্তি আলোচনা ও ইউক্রেনের খনিজ বিষয়ক চুক্তি সই করতে ওয়াশিংটন সফরে আসেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তবে হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে জেলেনস্কির মধ্যে তীব্র বাদানুবাদের পর এই যুদ্ধের ভবিষৎ নিয়ে শঙ্কার সৃষ্টি হয়। তবে শঙ্কার সেই কালো মেঘের মধ্যেই যুদ্ধের অবসানে একটি কাঠামো নির্ধারণে আলোচনা করতে আগামী সপ্তাহে সৌদি আরবে বৈঠকে বসতে চলেছেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের কর্মকর্তারা। এবার সে বৈঠকের আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনার জন্য কিয়েভ পুরোপুরি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনি লিখেছেন, যুদ্ধের প্রথম মুহূর্ত থেকেই শান্তি চাচ্ছে ইউক্রেন। আলোচনার টেবিলে বাস্তবসম্মত প্রস্তাব রাখা আছে। এখন কেবল প্রয়োজন দ্রুত সেগুলোর বাস্তবায়ন। তিনি আরও বলেন, আমরা গঠনমূলক আলোচনায় সম্পূর্ণ অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে প্রস্তুত আছি। আগামী সোমবার সৌদি আরব সফরে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন জেলেনস্কি। এই সফরে তার সঙ্গে থাকবেন ইউক্রেনের কূটনৈতিক ও সামরিক প্রতিনিধিবৃন্দ। তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে পরদিন বৈঠকের জন্য অপেক্ষা করবেন বলে জানিয়েছেন জেলেনস্কি।
দুই দেশের মধ্যে বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। তিনি জানান, রাশিয়ার সঙ্গে তিন বছরের যুদ্ধের অবসানের জন্য ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তিচুক্তির কাঠামো নিয়ে আলোচনা করেছেন। বৈঠকটি সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ কিংবা জেদ্দায় অনুষ্ঠিত হতে পারে। এর আগে দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে তীব্র বাগ্বিত-ার পর কিয়েভের সঙ্গে সামরিক সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় স্থগিত করে ওয়াশিংটন। তাতে বিপাক বাড়ে ইউক্রেনের। সৌদি আরবে সফরে ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদলে থাকবেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রিই সিবিহা, জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফ আন্দ্রিই ইয়েরমাক এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ। গত মাসে মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে হওয়া বৈঠকটিরও আয়োজক ছিল রিয়াদ।
এদিকে, গত বছরের গ্রীষ্মে রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ঢুকে লড়াই শুরু করা হাজার হাজার ইউক্রেনীয় সেনাদের বর্তমানে প্রায় ঘেরাও করে ফেলেছে রুশ বাহিনী। যুদ্ধে এই ধরনের পরিস্থিতি মানেই বিপর্যয়ের বার্তা। কুরস্কের দখলকৃত এলাকার নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখে রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনার সময় দর কষাকষিতে কাজে লাগাতে চেয়েছিল ইউক্রেন। তবে দেশটির সেই আশাও ভেস্তে যেতে চলেছে। বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, গত তিনদিনে কুর্স্কর পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। যুদ্ধ পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর হালনাগাদ মানচিত্রে দেখা গেছে, রুশ বাহিনী পাল্টা আক্রমণের মাধ্যমে কুরস্কের অনেক এলাকা দখলমুক্ত করেছে।
তবে যুদ্ধবিরতির তৎপরতার মধ্যেও ইউক্রেনে হামলা অব্যাহত রেখেছে রাশিয়া। ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় শহর দোব্রোপিলিয়া ও খারকিভ অঞ্চলে রুশ বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ জনে। প্রাণঘাতী এ হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, এসব হামলায় প্রমাণিত হয় রাশিয়া শান্তির সপক্ষে নয়। এ হামলার পাল্টা জবাব দিতে শনিবার গভীর রাতে রাশিয়ায় ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। রবিবার রুশ বিমান বাহিনী জানায়, ৮৮টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। তবে হামলায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বেলগোরোদ অঞ্চলে সীমান্তের কাছে ৫২টি ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে। লিপেটস্ক অঞ্চলে ১৩টি এবং রোস্টোভ অঞ্চলে ৯টি ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে। অবশিষ্ট ইউক্রেনীয় ড্রোনগুলো ভোরোনেয, আস্ট্রাখান, ক্রাসনোডার, রিয়াযান ও কুরস্ক অঞ্চলে ধ্বংস করা হয়েছে।
তবে ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা পরিষদের অধীনে থাকা সেন্টার ফর কাউন্টারিং ডিসইনফরমেশনের প্রধান লেফটেন্যান্ট আন্দ্রি কোভালেঙ্কো দাবি করেন, লিপেটস্কর অঞ্চলের নোভোলিপেতস্ক মেটালার্জিক্যাল প্ল্যান্ট হামলার শিকার হয়েছে। তবে এর সপক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি তিনি।