মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

২২ ঘণ্টা রোজা রাখেন আইসল্যান্ডের মুসলমানরা

আপডেট : ১২ মার্চ ২০২৫, ১২:০৮ এএম

ইউরোপ মহাদেশের প্রজাতান্ত্রিক দ্বীপ রাষ্ট্র আইসল্যান্ড। সরকারি হিসাব অনুযায়ী ১ হাজার ৩০০ মুসলমানের বসবাস এ দেশে, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। তবে পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, এ দেশে প্রায় ১০ হাজার মুসলমান বসবাস করেন। এ দেশের দিন সবচেয়ে বেশি দীর্ঘ। প্রায় ২২ ঘণ্টা রোজা রাখতে হয়। এখানে মধ্যরাতে সূর্য অস্ত যায় এবং দুই ঘণ্টা পর আবার উদিত হয়।

যেসব দেশে সূর্য অস্ত যায় না অথবা মাত্র কিছু সময়ের জন্য অস্ত যায়, সেসব দেশে বসবাসকারী মুসলমানরা ইসলামি স্কলারদের প্রদত্ত তিনটি সমাধানের যেকোনো একটি অনুসরণ করতে পারেন। তারা নিকটতম কোনো দেশের সূর্যাস্তের সময় অনুসারে ইফতার করতে পারেন, যেখানে দিনের স্থায়িত্ব দুয়েক ঘণ্টা কম হয়। কিংবা নিকটবর্তী কোনো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের সময় অনুসরণ করতে পারেন অথবা সৌদি আরবের সময় অনুযায়ী ইফতার করতে পারেন। অন্যথায় তারা স্থানীয় সময় অনুযায়ী রোজা পালন করবেন। আইসল্যান্ডের ইসলামি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত আছেন করিম আসকারি। তিনি বলেন, ‘আমি রেইকিয়াভিকের স্থানীয় সময় অনুসরণ করি। এতে ২২ ঘণ্টা না খেয়ে থাকতে হয়, এটা খুব দীর্ঘ সময়। তবে আল্লাহর ইচ্ছায়, রেইকিয়াভিকের বেশিরভাগ মুসলমান এটি পালন করছেন।’

আইসল্যান্ডের রাজধানী রেইকিয়াভিকের দুটি মসজিদের মুসল্লিরা সম্মত হয়েছেন যে, তারা স্থানীয় সময়ের ওপর ভিত্তি করে ইফতার করবেন। অন্য কিছু মসজিদ ও সংস্থা ইউরোপের অন্যান্য দেশের সময় অনুসরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আসকারি বলেন, ‘রেইকিয়াভিকের একটি মসজিদ ফ্রান্সের সময়সূচি অনুসরণ করছে। তারা যা খুশি তা বেছে নিতে পারে। আমাদের সম্প্রদায়কে আমরা এ ধরনের স্বাধীনতা দিই। কিছু মানুষ এই সত্যটি মেনে নিতে পারেন না যে, তারা সূর্য থাকার সময় খাবেন, এমনকি যদি এটি মধ্যরাতের কাছাকাছিও হয়। কারণ তারা নিজ দেশে সূর্যাস্তের জন্য অপেক্ষা করতে অভ্যস্ত। তাই তারা স্থানীয় সময় অনুসরণ করেন। অন্যরা এটি মেনে নিতে পারেন যে, সূর্যের আলো থাকলেও ইফতার করা যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে মুসলমানরা আলাদা আলাদা সময়ে ইফতার করেন। এখানে যারা রোজা পালন করেন, তাদের কাছে এটিই ইসলামের সৌন্দর্য। মুসলমানদের জন্য নমনীয়তা রয়েছে। প্রত্যেক ব্যক্তি তার সুবিধামতো যা চান, তা করতে পারেন। আমরা কেবল আমাদের হৃদয়ের অনুভূতি অনুসারে পরামর্শ দিতে পারি। মুসলমানরা যেখানে থাকুক না কেন, তাদের মধ্যে এই নমনীয়তা বিদ্যমান।’

রাজধানী রেইকিয়াভিকের নুর মসজিদে ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ইসমাইল মালিক। আইসল্যান্ডে রোজার সময়সূচির কমবেশি সম্পর্কে তুরস্কের সংবাদ সংস্থা আনাদুলু এজেন্সিকে তিনি বলেন, ‘এখানে ২২ ঘণ্টা সূর্যের আলো থাকে। আমাদের মসজিদ ইউরোপিয়ান কাউন্সিল ফর ফাতাওয়া অ্যান্ড রিসার্চের ফতোয়া অনুসরণ করে এবং ৪৫তম উত্তর অক্ষাংশের ভিত্তিতে রমজানের সময়সূচি নির্ধারণ করে। ইউরোপীয় কাউন্সিলের ফতোয়া ছাড়াও আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়েরও একটি ফতোয়া রয়েছে, যাতে বলা হয়েছে, রোজার সময় সংক্ষিপ্ত করা যেতে পারে এবং ২২ ঘণ্টার রোজা রাখা বাধ্যতামূলক নয়।’

তারা স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৯টার দিকে সূর্যাস্তের আগেই ইফতার করেন। তিনি বলেন, ‘সম্ভবত আমাদের এ মসজিদের মুসল্লিরাই একমাত্র রোজাদার, যারা সূর্যাস্তের আগেই ইফতার করেন। আমরা যখন আমাদের ইফতার করি, এমনকি তারাবির নামাজ আদায় করি, তখনও সূর্য আলো দেয়।’

আইসল্যান্ডের জনগণের মধ্যে ইসলামের ব্যাপারে ইতিবাচক ধারণা তৈরির জন্য তারা কাজ করছেন উল্লেখ করে ইসমাইল মালিক বলেন, ‘আমরা আইসল্যান্ডের মানুষদের সঙ্গে ইফতারের সময় একত্র হই, এতে তারা আমাদের নামাজ পড়তে দেখে এবং ইসলাম সম্পর্কে জানার সুযোগ পায়। আইসল্যান্ডের বেশিরভাগ নাগরিকই ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করেন।’ (সংক্ষেপিত ও ঈষৎ পরিমার্জিত)

সিএনবিসি থেকে ভাষান্তর আতিকুর রহমান

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত