চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় প্রায় ৬০ হাজার টিউবওয়েল (নলকূপ) অকেজো হয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে পুকুর, খাল, ডোবা ও কৃষিকাজে ব্যবহৃত সাবমার্সিবল পাম্প থেকে পানি সংগ্রহ করছেন বাসিন্দারা। সুপেয় পানির সংকটের ফলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের।
জানা গেছে, নারায়ণহাট, দাঁতমারা, বাগানবাজার, ভূজপুর, হারুয়ালছড়ি, সুন্দরপুর, পাইন্দং, কাঞ্চননগরসহ ১৫ ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকায় এ সংকট বিরাজমান। আমন ধান রোপণ করা হয় ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে। এপ্রিলে এ ধান কেটে ঘরে তুলেন কৃষকরা। মূলত এ সময় বৃষ্টিপাত কম হয়। ধান রোপণের সময় খাল, পুকুর ও ডোবার পানি পাওয়া গেলেও মার্চ মাসে সাধারণত এসব জলাশয় শুকিয়ে যায়। তাই, ধান কাটার আগ পর্যন্ত জমিতে পানির জোগান দিতে কৃষকদের ডিপ টিউবওয়েলের ওপরই নির্ভরশীল হতে হয়। এসব গভীর নলকূপ ও সাবমার্সিবল পাম্প দ্বারা অতিমাত্রায় পানি উত্তোলনের ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গিয়ে অকেজো হয়ে পড়ে আশপাশের টিউবওয়েলগুলো।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরও শুষ্ক মৌসুমে উপজেলায় পানি সংকট দেখা দিয়েছিল। চলতি বছর এ সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রায় ৯৮ শতাংশ টিউবওয়েল ও শ্যালো মেশিনে পানি উঠছে না।
গভীর নলকূপ ও সাবমার্সিবল পাম্পের সঠিক সংখ্যা উপজেলা জনস্বাস্থ্য কার্যালয়ের জানা নেই। তাদের বরাদ্দকৃত নলকূপের সংখ্যা দুই হাজার ৩৪০টি। প্রস্তাবিত আছে আরও ২১৬টি। এছাড়া পুরো উপজেলায় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ১০ হাজারের বেশি গভীর নলকূপ স্থাপিত হয়েছে।
নারায়ণহাট ইউনিয়নের চান্দপুর গ্রামের বাসিন্দা বোরহান বলেন, ‘আমাদের গ্রামে ধান চাষ করার জন্য দুটি সাবমার্সিবল পাম্প আছে। এসবের কারণে গ্রামের সব টিউবওয়েল বন্ধ হয়ে গেছে। মহিলারা অনেক দূরে গিয়ে জমির পাম্প থেকে পানি আনে। খাওয়া ও ব্যবহার্য পানি নিয়ে অনেক কষ্টে আছি।’
একই এলাকার কৃষক সুমন জানান, এ বছর তিনি চার বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। সাবমার্সিবল পাম্পের মাধ্যমে জমির পানি পেয়ে থাকেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৫০ ফুটের বেশি নিচে নেমে যায়। এ কারণে অগভীর নলকূপগুলো পানি পায় না। নলকূপ বসানোর ক্ষেত্রে ৬০-৮০ ফুট পর্যন্ত গভীরতা নিশ্চিত করে বসালে, শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর কিছুটা নিচে নামলেও পানি পাওয়া যাবে। এই সমস্যা সমাধানে গভীর নলকূপের বিকল্প নেই।’
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কৃষক এবং বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনা করে কৃষকদের বলে দিয়েছি গভীর নলকূপের পানি রাতে নির্দিষ্ট সময়ে তুলতে।’