২০২৬ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের অন্যতম আয়োজক দেশ মেক্সিকোর আজটেকা স্টেডিয়ামে শ্রম পরিদর্শন ঠেকানোর অভিযোগ উঠেছে ফিফার বিরুদ্ধে। আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন বিল্ডিং অ্যান্ড উড ওয়ার্কার্স ইন্টারন্যাশনাল (বিডব্লিউআই) দাবি করেছে, প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা পরিদর্শকদের স্টেডিয়ামে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি।
৮০ হাজার দর্শক ধারণক্ষম আজটেকা স্টেডিয়ামের সংস্কারকাজ চলছে বিশ্বকাপের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে। সোমবার শ্রম পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সেখানে যাওয়ার কথা ছিল বিডব্লিউআই প্রতিনিধিদের। তবে মাঠে পৌঁছানোর পর তারা জানতে পারেন, স্টেডিয়ামে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি।
বিডব্লিউআই-এর অভিযোগ, বিশ্বকাপের প্রকল্পগুলোর ওপর মেক্সিকোতে শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে পর্যবেক্ষণ নেই বললেই চলে। এতে ‘ব্যবস্থাগত অস্বচ্ছতা’ তৈরি হয়েছে। সংস্থাটির দাবি, ২০২৬ বিশ্বকাপের আয়োজক তিন দেশ—মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় যৌথ পরিদর্শনের বিষয়ে ফিফার সঙ্গে সমঝোতা হয়েছিল। কিন্তু চূড়ান্ত স্বাক্ষরের আগেই ফিফা নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়।
ফিফা তাদের মানবাধিকার নীতিতে বলেছে, তারা সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক শ্রমিক অধিকার সংরক্ষণের চেষ্টা করে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িক অংশীদারদের মাধ্যমে শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে চায়।
তবে বিডব্লিউআই-এর মহাসচিব আম্বেট ইউসন বলছেন, ফিফা তাদের দায় এড়িয়ে যাচ্ছে। ‘বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য তারা বড় বড় প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু সেই আয়োজনের জন্য যেসব শ্রমিক পরিশ্রম করছেন, তাদের সুরক্ষার বিষয়ে কোনো দায় নিচ্ছে না,’ বলেন ইউসন।
তিনি আরও বলেন, ‘ফিফার প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে হাসিমুখে ছবি তোলেন, অথচ শ্রমিকদের মৌলিক সুরক্ষার নিশ্চয়তা দিতে পারেন না। কাতার ও রাশিয়া থেকে কিছুই শেখেনি ফিফা। আর কোনো অজুহাত নয়, আর কোনো বিলম্ব নয়—ফিফাকে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।’
এদিকে ফিফার এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘আজটেকা স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ ফিফার সরাসরি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে না। তবে, আমাদের মানবাধিকার নীতি অনুযায়ী, শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা ও আন্তর্জাতিক শ্রম মান নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
তিনি জানান, স্থানীয় ইউনিয়ন কনফেডারাসিওন অটোনোমা দে ত্রাবাহাদোরেস ই এম্পলাদোস দে মেক্সিকো স্টেডিয়ামের শ্রমিকদের অধিকার পর্যবেক্ষণ করছে। মেক্সিকোর কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রি চেম্বার-এর সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে শ্রম অধিকার ও মান নিশ্চিত করতে।
গত বছর ফিফার এক বিশেষ কমিটি স্বীকার করেছিল, কাতার বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে ফিফার দায় রয়েছে বলে ‘বিশ্বাসযোগ্য যুক্তি’ রয়েছে। বিডব্লিউআই কাতারসহ গত চারটি বিশ্বকাপে শ্রম পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে ছিল।
উল্লেখ্য, ১৯৭০ ও ১৯৮৬ বিশ্বকাপের ফাইনাল আয়োজন করা ঐতিহ্যবাহী আজটেকা স্টেডিয়াম ২০২৬ বিশ্বকাপে পাঁচটি ম্যাচ আয়োজন করবে। স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজে ১০০০-এর বেশি শ্রমিক নিযুক্ত হয়েছেন, যেখানে বাজেট ধরা হয়েছে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার (৭৭৩ মিলিয়ন পাউন্ড)।
তবে ফিফার বিরুদ্ধে শ্রমিকদের সুরক্ষা নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, তা বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রক্রিয়াকে আবারও বিতর্কের মুখে ফেলছে।