প্রায় সবকিছুই নিয়ন্ত্রণে এসেছে, যে মূল্যস্ফীতি ছিল ১১.৬৬ শতাংশের ওপর, তা নেমে এসেছে সিঙ্গেল ডিজিটে। আগামী জুন-জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশে নেমে আসবে বলে আশার বাণী শুনিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর। রপ্তানি আয় বেড়েছে, শ্রমিক অসন্তোষও সহনীয় মাত্রায় এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে একমাত্র উদ্বেগ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, যা কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। বিষয়টি নিয়ে অনেকটাই বিব্রত সরকারের নীতিনির্ধারকরা।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী পরিস্থিতির উন্নয়নে বিভিন্ন সময়ে নানা পদক্ষেপের ঘোষণা দিলেও তাতে কোনো আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন না নীতিনির্ধারকরা। সব মিলিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ওপর আর আস্থা না রাখার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সরকারের দায়িত্বশীল একটি সূত্রে জানা গেছে। শুধু স্বরাষ্ট্রের দায়িত্ব থেকে তাকে সরানোর প্রক্রিয়াটি কতটা সম্মানজনকভাবে হবে, তা নিয়ে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের আলোচনা। এ বিষয়ে সম্ভাব্য পদক্ষেপ চূড়ান্ত না হলেও নতুন কাউকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে সরকারের অধিকাংশ উপদেষ্টাই একমত। সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, শারীরিকভাবেও পুরোপুরি সুস্থ নন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
এ প্রসঙ্গে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একজন বুধবার (১২ মার্চ) রাতে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ব্যক্তি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা একজন সরল ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে আন্তরিক মানুষ। কিন্তু দেশের যে পরিস্থিতি, সেখানে তিনি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। একদিকে পাড়া-মহল্লায় ছিঁচকে চুরি বেড়েছে। কোথাও কোথাও ডাকাতি আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নারীরা রাস্তাঘাটে চলাচলে অনিরাপদ বোধ করছেন। দেশের নানা প্রান্তে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ঘটছে। পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে জনগণের দূরত্ব কমছে না। এমন পরিস্থিতি সরকারকে নতুন করে ভাবাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মূলধারার গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয় আইনশৃঙ্খলা। রাত হলেই নানা গুজবে আতঙ্ক বাড়ছে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে সেনাবাহিনী রয়েছে। তবুও সমালোচনা থামছে না। ছোট ছোট দাবি আদায়ের ইস্যুগুলো প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ঘেরাও পর্যন্ত যাচ্ছে। সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ট্রল হচ্ছে এসব নিয়ে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ব্যর্থ বলছে জনসাধারণ। পুলিশের ওপর হামলা, মবের ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে। এসব নিয়ন্ত্রণে নানা ধরনের উদ্যোগের কথা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন হচ্ছে, কিন্তু তাতে আস্থা ফিরছে না। কিছুদিন আগের রাত আড়াইটায় সংবাদ সম্মেলন ডেকেও প্রশ্ন তৈরি করা হয়েছে। এটি নিয়েও সরকার বিব্রত হয়েছে।’
অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে শারীরিকভাবেও সুস্থ নেই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। উচ্চ রক্তচাপ ও বার্ধক্যজনিত রোগের কারণে তিনি এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এ দপ্তরের কাজটি তিনি আগের মতো করতে পারবেন কি না, সেটি নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।’
সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে অবশ্য আলোচনা রয়েছে সরকারের আকার বাড়ছে ঈদের আগেই। আলোচনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নামটিও রয়েছে।
সম্প্রতি মাগুরায় আট বছরের শিশু ধর্ষণসহ একের পর এক ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের ঘটনা ঘিরে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। এরই মধ্যে খুন হয়েছেন হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজের সাবেক শিক্ষক। মাদারীপুরে তিন ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আবার শাহবাগকেন্দ্রিক প্রতিবাদ কর্মসূচিতে নাকাল রাজধানীবাসী। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনাও থামছে না।
যদিও এসব সামাল দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। যার মধ্যে রয়েছে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে তল্লাশিচৌকি এবং অপরাধপ্রবণ এলাকায় টহল সংখ্যা বাড়ানো। সেনাবাহিনী, পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট ও বিজিবি সদস্যদের সমন্বয়ে যৌথ বাহিনী গঠন করে টার্গেট এলাকায় জোরদার অভিযানও পরিচালনা করা হচ্ছে। এর বাইরেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিতে আরও একগুচ্ছ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।