উচ্চ আদালত এক রায়ে বলেছে, এমবিবিএস-বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া কেউ নামের আগে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবে না। ‘ডিএমএফ’ ডিগ্রিধারীদের (যারা ডিপ্লোমাধারী হিসেবে নিবন্ধিত) নামের আগে যথাযথ সম্মানসূচক শব্দচয়ন (প্রেফিক্স) করতে সংশ্লিষ্টদের ছয় মাসের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে বলেছে হাইকোর্ট।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পৃথক রিট আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে গতকাল বুধবার বিচারপতি রাজিক আল জলিল ও বিচারপতি সাথীকা হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ রায় দেয়। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি শুনানি শেষে রায়ের জন্য ১২ মার্চ (গতকাল) দিন ধার্য করেছিল হাইকোর্ট।
আইনজীবীদের তথ্যমতে, ২০১০ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) আইন হয়। ‘ডিএমএফ’ ডিগ্রিধারীদের ক্ষেত্রে আইনটির বৈষম্যমূলক প্রয়োগের অভিযোগ করে বাংলাদেশ ডিপ্লোমা মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএমএ) তৎকালীন আহ্বায়ক শামসুল হুদাসহ কয়েকজন ২০১৩ সালে আইনটিকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন। অন্যদিকে বিএমডিসি আইনের ২৯ ধারার বৈধতা নিয়ে বিএমডিএ’র সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ও সেক্রেটারি মনির আহমেদ গত বছর আরেকটি রিট করেন।
বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইনের ২৯ (১) ধারায় বলা হয়েছে, এ আইনে নিবন্ধিত কোনো মেডিকেল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক এমন কোনো নাম, পদবি, বিবরণ বা প্রতীক এমনভাবে ব্যবহার বা প্রকাশ করবেন না, যার ফলে তার কোনো অতিরিক্ত পেশাগত যোগ্যতা আছে বলে কেউ মনে করতে পারে, যদি না তা কোনো স্বীকৃত মেডিকেল চিকিৎসাশিক্ষা যোগ্যতা বা স্বীকৃত ডেন্টাল চিকিৎসাশিক্ষা যোগ্যতা হয়ে থাকে। ন্যূনতম এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রিপ্রাপ্তরা ছাড়া আর কেউ তাদের নামের আগে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না। ২৯ (২) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি উপধারা (১)-এর বিধান লঙ্ঘন করলে তা অপরাধ হবে এবং এর জন্য তিনি তিন বছর কারাদন্ড বা এক লাখ টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হবেন এবং ওই অপরাধ অব্যাহত থাকলে প্রতিবার পুনরাবৃত্তির জন্য অন্যূন ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।
২০১৩ সালের ১১ মার্চ প্রথম রিটের প্রাথমিক শুনানির পর হাইকোর্ট রুলের পাশাপাশি অন্তর্র্বর্তীকালীন আদেশ দেয়। দ্বিতীয় রিটের ওপর শুনানি নিয়ে গত বছরের ২৫ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল দেয়। বিএমডিসি আইনের ২৯ ধারাকে কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না জানতে চায় আদালত। এর ধারাবাহিকতায় রুলের ওপর একসঙ্গে শুনানি হয়। হাইকোর্ট প্রথম রুল খারিজ ও দ্বিতীয় রুলের নিষ্পত্তি করে গতকাল রায় দেয়।
আদালতে প্রথম রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. সাইদুর রহমান। দ্বিতীয় রিটে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির ও মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ এম সাইফুল করিম। বিএমডিসির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী কাজী এরশাদুল আলম।
অ্যাডভোকেট সাদ্দাম হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এমবিবিএস বা বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া অন্য যারা এতদিন ডাক্তার পদবি ব্যবহার করেছেন তাদের ক্ষেত্রে মামলা বা কোনো শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না বলে হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে।’ তিনি বলেন, রিট পিটিশনাররা চাইলে হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে।