মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

বৈচিত্র্যময় কানাডায় রোজার প্রভাব

আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২৫, ১২:২২ এএম

পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র কানাডা, যা উত্তর আমেরিকা মহাদেশের ৪১ শতাংশ এলাকা নিয়ে গঠিত। বিশাল দেশটির জনসংখ্যা মাত্র ৪ কোটি। এর মধ্যে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫ শতাংশ। শীতলতম দেশগুলোর মধ্যে কানাডা অন্যতম শান্তিপূর্ণ, বহুজাতিক সংস্কৃতি ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতার দেশ। এখানে মুসলমানের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে রমজান এখন দেশটির সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপকভাবে পালিত ও দৃশ্যমান একটি বিষয় হয়ে উঠছে। কানাডার শীর্ষ রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক নেতারা রমজানকে সম্মান জানিয়ে বিবৃতি দেন এবং ইফতার আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন। কানাডার প্রধানমন্ত্রী রমজান উপলক্ষে বিশেষ বিবৃতি দেন এবং কানাডার মুসলমানদের অবদানের স্বীকৃতি প্রদান করেন।

মুসলিম জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি ইসলাম সম্পর্কে কানাডার জনগণের মধ্যে বোঝাপড়া বাড়িয়েছে। যে শহরগুলোতে বড় মুসলিম সম্প্রদায় রয়েছে, সেগুলোতে রমজান মাসে মসজিদ, ইসলামিক সেন্টার এবং হালাল রেস্তোরাঁগুলোর কার্যক্রম বেড়ে যায়। রমজান পালন করতে হালাল খাদ্য পাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেসব শহরে মুসলমানের সংখ্যা বেশি, সেখানে হালাল গ্রোসারি শপ এবং রেস্তোরাঁর সংখ্যাও অনেক। সেগুলোতে যথেষ্ট সাহরি ও ইফতারসামগ্রী পাওয়া যায়।

রমজান মাসে কানাডার মসজিদগুলো মুসলিম সম্প্রদায়কে আত্মিকভাবে উজ্জীবিত এবং সবাইকে একত্র করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মসজিদের পক্ষ থেকে প্রায়ই বড় বড় ইফতার সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন দান-অনুদান এবং তহবিল সংগ্রহেরও ব্যবস্থা করা হয়। যাতে গৃহহীন, শরণার্থী ও নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোকে সাহায্য করা যায় এবং তাদের জন্য খাবার, কাপড় এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ব্যবস্থা করা যায়। যদিও এই সেবাগুলো সারা বছরই চালু থাকে, তবে রমজানে এগুলো আরও প্রসারিত হয়।

মসজিদগুলো প্রায়ই জাকাত সংগ্রহ ও অন্যান্য দান কর্মসূচির আয়োজন করে, যা ‘ইসলামিক রিলিফ কানাডা’-এর মতো সংস্থাগুলোর মাধ্যমে বিতরণ করা হয়। যাতে জাকাতের অর্থ কানাডা ও বিশ্বব্যাপী সত্যিকারের অভাবগ্রস্তদের কাছে পৌঁছে যায়। রমজানের প্রতি রাতে মসজিদে মসজিদে তারাবির নামাজের ব্যবস্থা করা হয়। বছর জুড়ে অনেক মসজিদে কোরআন শিক্ষার ক্লাস ও আলোচনা চক্র পরিচালিত হয়, যেখানে সব বয়সের মানুষ অংশ নিতে পারে। কিছু সংগঠন কোরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতার আয়োজন করে, যাতে কোরআন মুখস্থ করা ও বোঝার প্রতি উৎসাহ সৃষ্টি হয়।

টরন্টো ইয়ুথ মুসলিম কাউন্সিলের সদস্য লায়লা সোলিমান। সে বিশপ স্ট্রাচান স্কুলের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার চার সহপাঠীকে সঙ্গে নিয়ে নাথান ফিলিপস স্কয়ারে রমজান মাসব্যাপী প্রদর্শনের জন্য ২৫ ফুট দীর্ঘ এবং ৮ ফুট উচ্চতার একটি বৃহৎ ‘রামাদান মোবারক’ সাইন তৈরি করেছেন। এটি বিভিন্ন ধর্মের দর্শকদের উচ্ছ্বাস ও সমর্থন লাভ করেছে। লাইলা সোলিমান জানান, এই সাইনটি স্থাপনের উদ্দেশ্য হলো, মানুষ যেন রমজানের গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারে যে, এটি পবিত্র সময়, যখন মুসলিমরা সারা বিশ্বে রোজা, নামাজ, কৃতজ্ঞতা ও আধ্যাত্মিক চর্চায় মনোনিবেশ করেন। টরন্টোর মেয়র অলিভিয়া চাউ দ্য স্টারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে টরন্টোর বৈচিত্র্যময় মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রশংসা করেন এবং সাইনটি তৈরির উদ্যোগকে ‘আমাদের শহরের কেন্দ্রস্থলের গুরুত্বপূর্ণ স্কয়ারে টরন্টোর মুসলিম সম্প্রদায়ের উদযাপনের একটি অসাধারণ উপায়’ বলে অভিহিত করেন।

টরন্টো শহরকে মসজিদের শহর বললেও ভুল হবে না। এখানে বেশ কিছু নান্দনিক, সুসংগঠিত ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন মসজিদ রয়েছে। প্রতিটি মসজিদেই নামাজ আদায়ের পাশাপাশি ইসলামি শিক্ষা বিস্তারের জন্য রয়েছে স্কুল ও মাদ্রাসা। রমজান মাসে টরন্টোর প্রায় প্রতিটি মসজিদেই বিশেষ আয়োজন থাকে। তারাবির নামাজ পরিচালনার জন্য পাঁচ থেকে ছয়জন কোরআনের হাফেজ নির্ধারিত থাকেন, যারা পালাক্রমে ২০ রাকাত নামাজ পড়ান। অন্যান্য শহরেও একই ধরনের আয়োজন লক্ষ করা যায়।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত