কিডনী রোগীদের একটি সাধারণ জিজ্ঞাসা যে, তিনি রোজা করতে সক্ষম কিনা? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ করে থাকেন। একজন কিডনী রোগী রোজা পালন করতে পারবেন কি-না, তা মূলত নির্ভর করে তার সার্বিক শারীরিক সুস্থতা এবং কিডনীর কার্যক্ষমতার উপরে।
ক্রনিক কিডনী ডিজিজ (সিকেডি)’কে মূলত ৫ ভাগে ভাগ করা যায়ঃ স্টেইজ্-১ থেকে স্টেইজ্-৫; আর শেষধাপ ইসআরডি , যখন একজন রোগীকে ডায়ালাইসিস নির্ভর থাকতে হয়। এক্ষেত্রে যারা , স্টেইজ্-৪ স্টেইজ্-৫ ও ইসআরডি রোগী, বা যারা পেরিটোনিয়াল, বা হেমোডায়ালাইসিস নির্ভর, তারা রোযা রাখার জন্য সম্পূর্ণভাবে অনুপযুক্ত। তবে সিকেডি স্টেইজ্-১, স্টেইজ্-২ ও স্টেইজ্-৩ এ আক্রান্ত রোগী একজন কিডনী রোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থেকে, তার নির্দেশনা মেনে এবং আনুষঙ্গিক স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনা করে রোজা রাখতে পারেন।
কিডনী রোগীদের একটি বিরাট অংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এক্ষেত্রে যাদের ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত এবং ইতোমধ্যে যারা নানাবিধ ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা যেমন, হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে চিনির পরিমান কমে যাওয়া), হাইপারগ্লাইসেমিয়া (রক্তে চিনির পরিমান মাত্রাতিরিক্ত বেশী হয়ে যাওয়া) ও ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস এ ভুগেছেন, এবং যাদেরকে দিনে তিন বা ততোধিক বার ইনসুলিন গ্রহণ করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়, তারা রোজা রাখার জন্য উপযুক্ত নন্।
যে সব কিডনী রোগী বারে বারে কিডনী পাথরে আক্রান্ত হন বা যাদের প্রায়শঃই প্রস্রাবে ইনফেকশন হয়, তাদের জন্য রোজা রাখা ঝুঁকিপূর্ণ কারণ পানিশূন্যতা এই রোগের উপসর্গগুলো বাড়াতে পারে। এক্ষেত্রে তারা রোজা রাখলেও রোজা ভাঙ্গার পর পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে এবং কিডনী বিশেষজ্ঞের পরামর্শে কিডনীর কার্যকারীতা নিয়মিত পরীক্ষা করাতে হবে।
কিডনী ট্রান্সপ্ল্যান্ট রোগীর কিডনী পূর্ণ কার্যক্ষম থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ইমিউনোসপ্রেসেন্টস সেবন করতে হয়, কিন্তু রোজা রেখে ঠিকসময়মতো এই ওষুধ গ্রহণ করা অনেকক্ষেত্রে সম্ভব হয়না বিধায় তাদের রোজা রাখা অনুচিত। উল্লেখ্য যে, নিয়মিত ও সঠিক সময়ে এই ওষুধ গ্রহণ না করলে কিডনী অকার্যকর হয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে ।
কিডনী রোগীদের শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা অন্যান্য রোগীদের তুলনায় সাধারণত বেশী থাকে। মাত্রাতিরিক্ত পটাশিয়াম হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়, কাজেই তাদেরকে পটাশিয়াম যুক্ত খাবার যেমন খেজুর, কলা, কমলা, মালটা, ডাব প্রভৃতি ফল বর্জন করতে হবে।