সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

রাশিয়ায় বিদেশি শিক্ষার্থীর রমজান অভিজ্ঞতা

আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২৫, ০২:৩০ এএম

রাশিয়ার মুসলমানরা উচ্ছ্বাস ও আনন্দের সঙ্গে পবিত্র রমজান মাসকে স্বাগত জানায়। এ মাসে শহরের চেহারা পাল্টে যায়। প্রথম তারাবির নামাজের জন্য মস্কোসহ রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের মুসলমানরা মসজিদে একত্র হন। রমজান শুরুর সম্মানে রাশিয়ার মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন আন্তরিক শুভেচ্ছা পাঠান। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা, যা রাশিয়ার মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পুতিনের প্রতিশ্রুতিকে প্রতিফলিত করে। এটি ধর্মীয় বোঝাপড়া ও সহনশীলতাকে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে রাশিয়ান সরকারের প্রতিশ্রুতিকেও নির্দেশ করে। পুতিন তার বার্তায় মুসলমানদের জীবনধারা ও সংস্কৃতির প্রতি তার প্রশংসা প্রকাশ করেন। এটি রাশিয়ার বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি ও বোঝাপড়া বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আমি একজন পাকিস্তানি শিক্ষার্থী। মস্কোর হায়ার স্কুল অব ইকোনমিক্স (এইচএসই) বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করছি। এটি আমার প্রথম রমজান, যা আমার পরিবারের বাইরে কাটাচ্ছি। একজন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী হিসেবে আমি বুঝতে পারছি, পরিবার ছাড়া রমজান কাটানো কতটা একাকিত্বের হতে পারে। পরিবারের বাইরে শিক্ষার্থীদের জীবন বেশ কঠিন। বিদেশে আসার ফলে আমার জীবনধারা পরিবর্তিত হয়েছে। তবে আমি কখনো ভাবিনি যে রমজান এই পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে।

আমাদের বাড়িতে রমজান শুরু হয় এক সপ্তাহ আগেই, যখন মা ঘোষণা করেন যে রমজানের জন্য সব কেনাকাটা করতে হবে। রমজান শুরু হওয়ার কয়েক দিন আগে থেকেই রান্নাঘর ধীরে ধীরে নানান উপকরণে ভরে যায়। বাড়িতে রমজান মানেই রাত ৩টায় মায়ের তৈরি পরোটার সুগন্ধে ঘুম ভাঙা, মসজিদের লাউড স্পিকারের আওয়াজে সাহরির সমাপ্তি ও ফজরের সূচনা সম্পর্কে জানা, দিনের বেলায় দীর্ঘ ঘুম এবং জোহরের সময় মাকে নামাজ পড়তে দেখে নিজেও নামাজে দাঁড়ানো। এভাবেই রমজানের অর্ধেক দিন কেটে যায়।

রমজান মানেই মায়ের সঙ্গে ইফতারের সময় নানা রকম ভাজাপোড়া রান্না করা, বাবার হাতে তৈরি ফলের জুস ও স্বাস্থ্যকর পানীয় পান করা, তারাবির সময় মাকে নামাজ পড়তে দেখে মসজিদে গিয়ে তারাবি পড়া এবং সারা রাত বোনের সঙ্গে বসে ইফতারের থেকে যাওয়া খাবার খেতে খেতে গল্প করা। এভাবেই রমজানের এক মাস কেটে যেত। সবাই একসঙ্গে খেত, একসঙ্গে প্রস্তুতি নিত, একসঙ্গে নামাজ পড়ত। কিন্তু রাশিয়ায় এসব কিছু একেবারেই অনুপস্থিত। এখানে এসে আমার রমজান অনেকটাই পাল্টে গেছে। বাড়িতে থাকার সময় আমি সাধারণত শুধু তারাবির নামাজ পড়তে মসজিদে যেতাম। কিন্তু মস্কোতে মসজিদে যাওয়ার নতুন উপলক্ষ পাই। প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয় শেষে মস্কো ক্যাথেড্রাল মসজিদে যাই, যা আমার কাছাকাছি বৃহত্তম মসজিদ। রমজানে হাজার হাজার মুসলমান এখানে একত্র হয়ে নামাজ পড়েন। আমি বিভিন্ন দেশের মুসলমানদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছি এবং তাদের বৈচিত্র্যময় রীতিনীতি সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এটি সত্যিই অনন্য অভিজ্ঞতা।

মস্কো ক্যাথেড্রাল মসজিদের কাঠামো নির্মাণশৈলী অসাধারণ। অভ্যন্তরীণ নকশায় সাদা মার্বেলের সঙ্গে সবুজ, নীল ও সোনালি অলংকরণ দৃষ্টিনন্দন চিত্র তৈরি করেছে। মসজিদের দুটি প্রধান মিনার রাশিয়ান ও তাতার জাতির সংহতির প্রতীক। একটি সোনার গম্বুজ মস্কোর অর্থোডক্স স্থাপত্যের সঙ্গে চমৎকারভাবে মিশে গেছে। এখানে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা আছে। নারী ও পুরুষের প্রবেশপথ আলাদা এবং নারীদের জন্য বিনামূল্যে হুডযুক্ত আলখাল্লা দেওয়া হয়। মসজিদের তৃতীয় তলায় একটি ইসলামি জাদুঘর রয়েছে। এখানে প্রাচীন কোরআনের পাণ্ডুলিপি, কাবার গিলাফের টুকরো ও অন্যান্য দুর্লভ নিদর্শন সংরক্ষিত আছে। রমজানে প্রতিদিন মসজিদে বিনামূল্যে ইফতার পরিবেশন করা হয়। এটি মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার চমৎকার সুযোগ। মস্কোতে রমজান পালন কঠিন হলেও তা অত্যন্ত উপভোগ্য। আমি একা নই, বরং নতুন নতুন বন্ধু ও অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। রমজানের এই অভিজ্ঞতা আমি সারাজীবন মনে রাখব।

এইচএসই ক্যাম্পাস থেকে ভাষান্তর আতিকুর রহমান

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত