রোববার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

জুলাই ‘শহীদের’ মেয়েকে তুলে নিয়ে দল বেঁধে ধর্ষণ!

আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ০৬:২৯ এএম

পটুয়াখালীর দুমকিতে এক কলেজছাত্রীকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের আলগি গ্রামের জলিল মুন্সীর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী দুমকি সরকারি জনতা কলেজের শিক্ষার্থী। তার বাবা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ঢাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন।

পুলিশ জানিয়েছে, ভুক্তভোগী গতকাল বুধবার থানায় এসে অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে একজনকে আটক করা হয়েছে।

স্থানীয় লোকজন ও ভুক্তভোগীর স্বজনরা জানিয়েছেন, ঘটনার দিন নিজ বাড়ি থেকে নানাবাড়ি যাওয়ার পথে একই গ্রামের মামুন মুন্সীর ছেলে সাকিব মুন্সী (১৯), সোহাগ মুন্সীর ছেলে সিফাত মুন্সী (২০) ও মালেক মুন্সীর ছেলে ইমরান মুন্সী (১৯) ওই কলেজছাত্রীকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে পার্শ্ববর্তী জলিল মুন্সীর বাগানে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে এবং মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করে রাখে। এ ঘটনা কাউকে বললে ভিডিও অনলাইনে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। ওই কলেজছাত্রী গতকাল বেলা ১১টায় দুমকি থানায় হাজির হয়ে অভিযোগ করেন। তবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত মামলা নিতে পুলিশ গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী।

তবে দুমকি থানার ওসি মো. জাকির হোসেন বলেন, একজনকে আটক করা হয়েছে। এখনই এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।

এদিকে চাঁদপুরে পাওনা টাকা আদায় করতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ঢাকার আশুলিয়ার এক গৃহবধূ। গত সোমবার রাতে মতলব উত্তর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের মিঠুনকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার ওই নারী মতলব থানায় ওই গ্রামের আ. মজিদ প্রকাশ টুটুল (৪৩) ও মো. মামুনের (৪৫) বিরুদ্ধে মামলা করেন।

পুলিশ সূত্র জানা গেছে, ওই নারী মিঠুরকান্দি গ্রামের মুক্তামণিকে এক বছর আগে টাকা ধার দেন। ওই টাকা নেওয়ার জন্য সোমবার বিকেলে তিনি মুক্তামণির বাড়িতে আসেন। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় মুক্তামণির অনুরোধে তিনি তাদের বাড়িতে থেকে যান। রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘরের বাইরে গেলে টুটুলের সহায়তায় মামুন (৪৫) তাকে ধর্ষণ করেন। এ বিষয়ে মুখ খুললে কিংবা আইনের আশ্রয় নিলে ওই নারীকে হত্যার হুমকি দেয় অভিযুক্তরা। তবে রাতেই বিষয়টি তিনি মুক্তামণিকে জানান। তার পরামর্শে পরদিন থানায় অভিযোগ করেন ওই নারী। অভিযোগের পর টুটুলকে আটক করে পুলিশ।

গতকাল মতলব উত্তর থানার ওসি মো. রবিউল হক জানান, ঘটনাটি জানার পর পুলিশ এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। অন্য আসামি ধরতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ। আজ (বুধবার) ওই নারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা হওয়ার কথা। মেডিকেল টেস্ট করা হবে।

গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জেলার গোবিন্দগঞ্জে আজাদুর রহমান (৬৫) নামে অবসরপ্রাপ্ত এক সেনাসদস্যের বিরুদ্ধে ১১ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ওই শিশুর বাবা বাদী হয়ে গতকাল গোবিন্দগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। অভিযুক্ত আজাদুর রহমানের বাড়ি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটাবাড়ী ইউনিয়নের নাসিরাবাদ গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের পূর্বপাড়ার মৃত আফসার উদ্দীন আহমেদের ছেলে।

গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি বুলবুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় আজাদুর ইসলামকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা হয়েছে। পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে।

খিলক্ষেতে অভিযুক্ত কিশোর সংকটাপন্ন ও ভুক্তভোগীর অবস্থার উন্নতি : রাজধানীর খিলক্ষেতে শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার এক কিশোরকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে ব্যাপক মারধর করে স্থানীয় লোকজন। এ ঘটনার পর থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মো. রবিউল নামে ওই কিশোর। চিকিৎসক, স্বজন এবং পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চিকিৎসাধীন গ্রেপ্তার ওই কিশোরের শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন। তার শরীরের বিভিন্ন অংশে গভীর জখম হয়েছে।

এদিকে ধর্ষণের শিকার ছয় বছরের শিশুটি এখন ভালো আছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) সমন্বয়ক ডা. সাবিনা ইয়াসমিন। তিনি জানান, গতকাল বুধবার সকালে শিশুটির ফরেনসিক, এক্স-রেসহ আরও বেশ কিছু পরীক্ষা করা হয়েছে। সেগুলোর রিপোর্ট আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে। তবে শিশুটির অবস্থা ভালো আছে। শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়েছে এটি প্রাথমিকভাবে বোঝা যাচ্ছে।

এর আগে গত মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে রাজধানীর খিলক্ষেতে শিশু ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার ওই কিশোরকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে ‘উত্তেজিত জনতা’। গ্রেপ্তার আসামিকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশের ওপর হামলা করা হয়। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়ি। এতে খিলক্ষেত থানার ওসিসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। অভিযুক্তকে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় খিলক্ষেত বাজার এলাকা ঘেরাও করে এলাকাবাসী। রবিউলকে মারধরের পাশাপাশি ভাঙচুর চালানো হয় পুলিশের গাড়িতে। পরে সেনাবাহিনী পৌঁছে নিয়ন্ত্রণে আনে পরিস্থিতি। এরপর পুলিশের ওপর হামলায় ঘটনায় মামলা করা হয় এবং এ ঘটনায় জড়িত দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তারা হলেন মোবারক হোসেন সজীব (১৮) ও ইউসুফ (১৯)। এ ছাড়া শিশু ধর্ষণের অভিযোগে শিশুটির বাবা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। মামলায় অভিযুক্ত চিকিৎসাধীন ওই কিশোরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

রবিউলের স্বজনদের অভিযোগ, মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে পূর্বশত্রুতার জের ধরে রবিউলকে এভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

হাসপাতালে আহত কিশোরের মা মাহফুজা বেগম জানান, তাদের বাড়ি কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে। সেখানে একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসায় পড়ে ওই কিশোর। তার বাবা জীবিত নেই। মা খিলক্ষেত এলাকায় ফুটপাতে চা-সিগারেট বিক্রি করেন। তিন-চার মাস আগে ওই কিশোর মাদ্রাসা থেকে খিলক্ষেতে মায়ের কাছে বেড়াতে আসে। এরপর থেকে এখানেই ছিল। চলতি মাসের ১০ তারিখ তার মা তাকে খিলক্ষেত এলাকায় খালার বাসায় রেখে তিনি নিজে গ্রামের বাড়িতে যান একটি অনুষ্ঠানে। রাতে তার ছেলেকে মারধরের খবর পান তিনি। এরপর গ্রাম থেকে ঢাকায় আসেন। এসে ছেলেকে হাসপাতালে দেখতে পান।

তিনি আরও বলেন, রোজার ১০ দিন আগে আমার ছেলের সঙ্গে ওই মেয়ে শিশুটির মামা নয়নের তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়েছিল। আমার ছেলেকে সে মারধর করেছিল। সেই ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই গতকাল আমার ছেলেকে এভাবে মারধর করেছে। আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত চাই।

হাসপাতালটির ক্যাজুয়ালটি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. শিশির কুমার ঘোষ জানান, ওই কিশোরের অবস্থা স্থিতিশীল। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম আছে। মাথায়ও আঘাত রয়েছে। তবে মাথার ভেতরে কোনো রক্তক্ষরণ হয়নি। হাসপাতালের কাগজে-কলমে তার বয়স দেখানো হয়েছে ১৬ বছর, কিন্তু তার স্বজনরা বলছে তার বয়স হবে ১২-১৩।

গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ রিয়াজুল হক বলেছেন, খিলক্ষেতে ধর্ষণের অভিযোগে আটক কিশোরকে ছিনিয়ে নিয়ে মারধরে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আইন অনুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, মব জাস্টিসের নামে আইন হাতে তুলে নেওয়ার সুযোগ নেই। মারধরে জড়িতদের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে শনাক্ত করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মব সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আগেই নির্দেশনা দিয়েছে।

খিলক্ষেত থানার ওসি কামাল হোসেন জানান, অভিযুক্ত কিশোরের অবস্থা সংকটাপন্ন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাকে শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

ধর্ষণের অভিযোগে দুদক কর্মকর্তা বরখাস্ত : ধর্ষণ মামলার পলাতক আসামি হওয়ার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক এস এম মামুনুর রশীদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন এ অফিস আদেশে স্বাক্ষর করেন। দুদক পরিচালক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ) দাউদ হোসেন চৌধুরী স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, এস এম মামুনুর রশীদের বিরুদ্ধে সময় নিউজে ‘ধর্ষণ মামলার পলাতক আসামি অফিস করছেন দুদকে’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদে বলা হয়, তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলেও তিনি নিয়মিত অফিস করছেন। তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভুক্তভোগীকে হেনস্তা করেছেন। এজন্যই তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। দুদকের তথ্যমতে, মামুনের কার্যকলাপে দুর্নীতি দমন কমিশনের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে এবং তার কর্মকাণ্ড দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮-এর ২(ঝ) (৫) অনুযায়ী অসদাচরণের পর্যায়ভুক্ত শাস্তিযোগ্য অপরাধের শামিল। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮-এর বিধান অনুযায়ী কমিশন কর্র্তৃক চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। তিনি সাময়িক বরখাস্তকালীন বিধি অনুযায়ী খোরাকি ভাতা প্রাপ্য হবেন। সাময়িক বরখাস্তের এ আদেশ জারির তারিখ থেকে কার্যকর হবে। মামুনুর রশীদ ২০২২ সালে সহকারী পরিচালক হিসেবে দুদকে যোগ দেন।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত