শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষে প্রাণ গেল পথচারীর

আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২৫, ০৪:১০ এএম

চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে বিএনপির উপজেলা ও দুই পৌরসভার নতুন কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় নেতাকর্মীদের দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল থেকে উপজেলার বারইয়ারহাট পৌরবাজারে কয়েক দফায় সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে। এ সময় মো. জাবেদ (৪৫) নামে এক পথচারী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়াও আহত হয়েছেন কমপক্ষে আরও ৩০ জন।

নিহত জাবেদ চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানার বাংলাবাজারের নীলগিরি আবাসিক এলাকার জাহাঙ্গীরের ছেলে। তিনি একটি কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি ছিলেন।

জানা গেছে, গত ২৪ মার্চ মীরসরাই উপজেলা, মীরসরাই পৌরসভা ও বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই তিন কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণার পর থেকে উপজেলাজুড়ে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। এ নিয়ে গত মঙ্গলবার দুপুরে এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে পরদিন উপজেলাজুড়ে নতুন তিন কমিটির সদস্যদের প্রতিরোধ করার ঘোষণা দেওয়া হয়। এর জেরে গতকাল সকালে স্বাধীনতা দিবসে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপির ওই দুই গ্রুপ। এমন পরিস্থিতিতে উপজেলা পরিষদ চত্বর ও তার আশপাশের ৫০০ গজের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু ১৪৪ ধারা ভেঙে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালনে মাঠে নামেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। বারইয়ারহাট পৌরবাজারে দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানের পর একপর্যায়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব আজিজুর রহমান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সকাল ১০টায় বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক মাঈন উদ্দিন লিটনের বাড়ির সামনে আমাদের নেতাকর্মীদের পথ অবরুদ্ধ করে হামলা ও মোটরসাইকেল ভাঙচুরের পর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে দুপুর ১২টায় আমরা নেতাকর্মীদের নিয়ে মিছিল সহকারে বারইয়ারহাট পৌরবাজারে প্রবেশ করলে নুরুল আমিন চেয়ারম্যান গ্রুপের লোকজন অস্ত্রসহ হামলা চালান। হামলায় জাবেদ নামে এক পথচারী নিহত হন। আহত হয়েছেন আরও কমপক্ষে ৯ জন।’

পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মাঈন উদ্দিন লিটন বলেন, ‘সকালে দিদারুল আলম মিয়াজীর নেতৃত্বে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে। এ সময় ১০-১৫ জন আহত হন। হামলার পর দুপুরে তারা আমাদের বাড়িতে গিয়ে ভাঙচুর চালায়।’

তবে পাল্টা অভিযোগ করে বারইয়ারহাট পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক দিদারুল আলম মিয়াজী বলেন, ‘বিএনপি নেতা মোজাম্মেল হোসেনসহ আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব আজিজুর রহমান চৌধুরী ও মাঈন উদ্দিন লিটনের নেতৃত্বে হামলা হয়েছে। পরে শান্তিরহাট রোডের মুখে তাদের সঙ্গে আমাদের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় জাবেদ নামে একজন পথচারী নিহত হন। সংঘর্ষে যুবদল ও ছাত্রদলের সুমন, বাবুল, মিজান, নুর উদ্দিন, আরিফসহ ৮-১০ জন আহত হয়েছেন।’

আহতদের মধ্যে সুমন, গোলাম মোর্শেদ, ইলিয়াস হোসেন ও রাশেদ নামে চারজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহতদের সবার শরীরেই ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে বলে জানা গেছে।

মীরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রাজিয়া আফরিন জানান, এই সংঘর্ষের ঘটনায় জাবেদ নামে একজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তার পেটে ছুরির আঘাতের চিহ্ন ছিল। আহত আরও ১০-১২ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থানীয় জোরারগঞ্জ থানার ওসি সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘বিএনপির কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে দুদিন ধরে উত্তেজনা চলে আসছিল। তবে বর্তমান পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’

মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহফুজা জেরিন জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না হয়, সেজন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু বিএনপির এক পক্ষের নেতাকর্মীরা ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিল নিয়ে উপজেলা পরিষদ চত্বরে ঢুকে পড়েন। সেই মিছিলের দৃশ্যের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত